somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালী মনমানসিকতা- অতীত ও বর্তমান

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালে কালিগ্রাম পরগনায় জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এই জমিদারির মূল কার্যালয় ছিল পতিসরে। শহরে মানুষ হওয়া রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গ্রামের এখানেই বোধহয় প্রথম পরিচয় হয়েছিল। এখানেই তিনি গ্রামের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এবং অমানবিক জীবনযাপনের বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এ সময় তিনি তাঁর জমিদারির অধীনস্ত গ্রামগুলিতে উন্নয়নের চিন্তা এবং চেষ্টায় নিজেকে অনেকটা নিয়োজিত করেছিলেন। তাঁর চেষ্টার প্রথম লক্ষ্য ছিল, কী করে গ্রামের দুঃখী-দরিদ্র, বঞ্চিত মানুষের মানসিক দূর্বলতা দূর করা যায়। এ সময় তিনি নানা ধরণের পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন যে, মানুষ নিজেদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে বসে আছে। তখন নবাব জমিদাররা প্রজার কল্যাণে কিছু কিছু কাজ করতেন এবং প্রজারা সেটাই ভিক্ষার দান হিসাবে পেতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু এর ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস ও নিজেদের উপর নির্ভরশীলতা অতি মাত্রায় দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। এমনকী, জমিদারের অনেক সৎ প্রচেষ্টাকেও তারা সহজে মেনে নিত না।

তখনকার দিনে গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব ছিল। গ্রামবাসীরা দৈনন্দিন কাজের জন্য নদী কিংবা জলাশয়ের পানি ব্যবহার করত। রবীন্দ্রনাথ একবার তাদের ডেকে বলেছিলেন, তোমরা নিজেরা জলের জন্য একটা কুয়ো তৈরী কর, আমি সেটা বাঁধিয়ে দিব। তাঁকে সমালোচনা শুনতে হল যে, উনি তৃষ্ণার্তদের জল দিয়ে স্বর্গে যাবেন। আমাদের কী উপকার হবে?
তাঁর কাছারি বাড়ি থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত একটি রাস্তা তৈরী করেছিলেন, প্রজাদের ডেকে বলেছিলেন, এটা তোমাদের রাস্তা, তোমরা এটা রক্ষণাবেক্ষণ করবে। উত্তর পেলেন, বাবুরা আরামে কুষ্টিয়া যাতায়াত করার জন্য রাস্তা তৈরী করেছেন। এটা ঠিক না থাকলে তাঁদের আসা-যাওয়ায় অসুবিধা হবে। রাস্তা ঠিক বা বেঠিক থাকলে আমাদের কি আসে, যায়?
গ্রামবাসীর এই সব মনোভাব দেখে রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পারলেন যে, এই সব মানুষের মন মেরুদন্ডহীন প্রানীর বেঁচে থাকার মত অভ্যাসের দাস। এরা নিজেরা কিছু করতে জানেনা এবং শেখেনি। এমনকী, নিজের ঘরে আগুন লাগলে পাশাপাশি দশজনকে নিয়ে সে আগুন নেভাবার চেষ্টাও তারা করেনা। বাঁচাটা নিয়ম, তাই তারা বাঁচতেন। আর সব কিছুই তারা “কপালের লেখা” বলে মেনে নিতেন।

ব্রিটিশ আমলে নাকি কোনো এক রাজাকে পরাজিত করে ইংরেজরা কয়েকটা নৌকা বোঝাই করে সোনা-দানা, মণি-মুক্তাসহ অনেক ধন-সম্পদ নদী পথে নিয়ে যাচ্ছিল। নদীর পাড় ধরে দাঁড়িয়ে ছিল হাজার হাজার মানুষ। পরবর্তীতে এক ইংরেজ বলেছিলেন যে, ঐ দিন যদি প্রত্যেক গ্রামবাসী একটা করে পাথরখন্ড নৌকার দিকে ছুঁড়ে মারত, তবে ধন-সম্পদ বোঝাই নৌকাগুলো ঐ রাজ্যের সীমানাই পার হতে পারত না। কিন্তু প্রজারা চিন্তা করেছিল যে, এই সম্পদতো আমাদের কাছ থেকেই, আমাদের উপর অত্যাচার করেই রাজা কামিয়েছে। আমরা এই সম্পদ ভোগ করতে পারিনি, এখন রাজাও ভোগ করতে পারবেনা।

রবীন্দ্র যুগ শেষ হয়ে গেছে, এখন আর আর সেই জমিদারী কিংবা ব্রিটিশ আমল নাই। এই স্বাধীন বাংলাদেশেও এখনো আমরা সেই জমিদারদের প্রজাদের মত মনোভাব নিয়ে বসে আছি। আমাদের লাভ হোক বা না হোক, অন্য কারো ক্ষতি হলে বা ক্ষতি হতে দেখলে, আমরা তাতে আনন্দ পাই। আমরা নিজেরাতো উপরে উঠার চেষ্টা করিইনা, অন্য কেউ উপরে উঠতে চাইলে আমরা তার মই কেড়ে নিই। এখনো যখন কেউ ভাল কিছু করতে চায়, আমরা তাকে উৎসাহ না দিয়ে বরঞ্চ তার কাজের বিভিন্ন খুঁত ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তার কাজের ভিন্ন মানে খুঁজার চেষ্টা করি। আমরা অপেক্ষা করি, কেউ দয়াপরবশ হয়ে আমাদের জন্য কিছু করে দেয় কিনা। আসলে, ভিখিরী দিয়ে বিপ্লব বা উন্নয়ন কোনওটাই সম্ভব নয়। ভিক্ষাবৃত্তি মন-প্রাণকে নিঃস্ব করে দিলে, সে মন নিয়ে কোনো স্বপ্নও দেখা যায় না। আবার, নেতিবাচক মন-মানসিকতা দিয়েও আমরা কখনোই দেশের উন্নতি করতে পারবনা।

খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন, শেখ হাসিনা বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। দেখা না করার পিছনে অনেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন, আবার দেখা করতে যাওয়ার পিছনে অনেকে শেখ হাসিনার অন্য কোনো মতলব খুঁজে বের করছেন, আবার কেউ কেউ দেখা না করার জন্য খালেদা জিয়ার মুন্ডু চপকাচ্ছেন। বর্তমানে আমরা খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে বাস করতেছি। আমরা সবাই এ থেকে উত্তরণ চাই। এই মুহুর্তে জলঘোলা না করে, সবারই উচিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পরামর্শ দেয়া এবং এ জন্য এগিয়ে আসা। তা না হলে হয়ত নিকট ভবিষ্যতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেনা শাসন, যা কারোরই কাম্য নয়।

আমার কাছে মনে হয়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যদি ঐ যুগে ‘বিধবা বিবাহ’-এর প্রচলন না করে যেতেন, আর এখনকার সময় এসে যদি কেউ তা প্রচলন করার চেষ্টা করত, তবে কি হত? আমরা সবাই তার পিছনে লাগতাম, আর বলতাম যে, সে নিশ্চয়ই কোনো বিধবার প্রেমে পড়েছে (আমাদের দেশে ক্ষমতাবান বিধবার-তো অভাব নাই), তাই সে বিধবা বিবাহ প্রচলন করতে চায়। ভাগ্য ভালো যে, বিদ্যাসাগর এই যুগে জন্মগ্রহণ করেননি।

সবশেষে ফেসবুক থেকে সংগৃহীত একটি কৌতুক বলি-
এক লোক আরেকজনকে প্রশ্ন করছে-
- আচ্ছা বলেনতো, কাবাডি আমাদের দেশের জাতীয় খেলা কেন?
- কারণ এটা আমাদের দেশে বহু আগে থেকে প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা।
- আরে না। কারণ এই খেলায় যখন কেউ নিজের দলকে জেতানোর জন্য নিজের সীমানায় ফিরে আসতে চায়, তখন অন্যরা তাকে জোর করে ধরে রাখতে চায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×