somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“দেবী” সব মিলিয়ে ভালো কিন্তু…….!

২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সিনেমার গল্প,চরিত্র,ক্যামেরার কারুকাজ,ডায়লগ,শব্দের খেলা,আলো আধারের বিশেষ ব্যবহারে অনম বিশ্বাসের “দেবী” সিনেমাটি যেন আরো বিষেশায়িত হয়েছে। একদিকে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমদের মৌলিক গল্পের প্লট অন্যদিকে “আয়নাবাজি” কাঁপানো স্ক্রীপ্ট রাইটারের নিখুঁদ কারুকার্য সাথে দক্ষ অভিনয় শিল্পীদের দূদার্ন্ত অভিনয় নৈপূন্য সব মিলিয়ে ‘দেবী’ কে যেন বাস্তবিক দেবীতে দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন যথার্থ ভাবে এবং প্রশংসিত বাক্য এই সিনেমার জন্য জায়েজ হয়ে গেছে। ভৌতিক এবং রহস্যতার মিশ্রণে উত্তেজনায় ঠাসা সাথে অপ্রাকৃতিক শক্তিকে সূক্ষ যুক্তির অভয়বে এমন বিভ্রম ছবিতে আনা হয়েছে যেখানে দর্শকদের কপালে চোখ উঠে যাবে,তিলা চমকানো অনুভূতি হবে,মিসির আলীর যুক্তিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ সাথে সিনেমায় স্বাদ পরিমিত করার জন্য লবণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে রসাত্নক ডায়লগ। যাতে করে দর্শকরা মজার ভিতরে ভয়,ভয়ের ভিতর মজা,মজার ভিতরে যুক্তি,যুক্তির ভিতরে মজা বেশ নান্দনিকতা,উপভোগ্যতা খুঁজে যার পাবে বলেই আমার ধারণা । দর্শকরা বাধ্য সিনেমার ভিতরে ডুকে যেতে এবং ভরপুর উত্তেজনা নিয়ে সিনেমার শেষ অবধি পর্যন্ত সিনেমা হলে বসে থাকতে। সিনেমাটিতে ক্লাইমেক্স গুলো মনে এমন শিহরিত করবে “দেবী” কে পুনরায় দেখতে চোখের এবং মনের তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়াটাই হবে স্বাভাবিক।

বিভ্রম দিয়েই সিনেমার শুরু। সিনেমার প্রধান চরিত্র দেবী অর্থাৎ রানুকে বলি করতে গিয়ে অপ্রকাশিত ভিলেন জামাল উদ্দিনের অপ্রত্যাশিত ভাবে ধর থেকে মাথা ছিটকে পরার পরমমুহূর্ত দিয়ে দর্শকরা বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েই সিনেমায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করবে। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই প্রত্যাবর্তন হবে মিসির আলীর যার সূক্ষ এবং তীক্ষ্ন যৌক্তিক ব্যাখ্যা নিয়ে। একবার বিশ্বাস হবে অতি প্রাকৃত শক্তি বলে কিছু নেই আবার তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা ভুল প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠিত হবে অতি প্রাকৃত শক্তি বলে ভয়ংকর কিছু আছে। লজিক এবং ইলজিকে দ্বিধাদন্দে জটিল ক্লাইমেক্সে ঠাসা উত্তেজনায় দর্শকদের পর্দায় থেকে চোখ সরানোর সুযোগ নেই। হুটহাট ভয় আবার মিসির আলীর তীক্ষ্ন যুক্তির কাছে সেই ভয় ফিকে হয়ে যাওয়া শেষ পর্যন্ত রানুর ভিতরে ভর করা অপশক্তির বিরদ্ধে রুখে দাড়ানো দেবী যেভাবে স্থূলসিক্ত হয় নীলুর উপর সেটা মিসির আলীর সূক্ষ,তীক্ষ্ন যুক্তিকে হার মানিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে নারীর ক্ষমতা জাহির করার এবং সবকিছু যে বিজ্ঞানের যুক্তিতে খন্ডানো সম্ভব না অতিপ্রাকৃত শক্তি বলেও পৃথিবীতে অদৃশ্যভাবে বিরাজমান সেটা প্রমাণ করে।

হুমায়ূন আহমদের দেবী উপন্যাস এবং দেবী সিনেমার যদি গভীরতা খুঁজি তাহলে দেখতে পাবো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে বশবর্তী করার জন্য যে আইন কানুন প্রতিষ্ঠিত করা এবং যুক্তির মারপ্যাঁচে নারীকে সর্বদা অবহেলিত হতে হয়,দ্বিতীয় লিঙ্গ বলেই তারা গৃহপালিত পশুর মতো থাকবে এমন ধারণাকে উপ্রে ফেলে নারীর ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করার হয়েছে দেবী রূপে। যে কিনা পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে,প্রতিবাদী হবে,সব অপশক্তি বিনাশ করবে। সিনেমাতে সম্প্রতি ফেসবুকের একটা কুফল দিক তুলে ধরেছেন অনম বিশ্বাস। ফেসবুকের মাধ্যমে হুটহাট অপরিচিত ব্যক্তির সাথে প্রেমে জড়িয়ে পরা যে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে ‘‘দেবী” সিনেমাটিতে তুলে এনছেন।

এবার দেবী সিনেমার ভিতরে ডুকা যাক, কিশোরী বয়সে গ্রামে জামার উদ্দিন নামের এক লোক সিনেমার প্রধাণ চরিত্র রানুকে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষন করতে তার পায়জামা খুলে.. রানুর সাথে পেরে না উঠে একপর্যায় জামাল উদ্দিন রানুকে বলি দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় অকসাৎ রানুর ধর থেকে মাথা আলাদা না হয়ে জামাল উদ্দিনের ধর থেকে মাথা আলাদা হয়ে মাটিতে পরে থাকে। রানুর ধারণা সেই থেকে রানুর উপর মন্দিরে থাকা দেবী মূর্তি ভর করেছে এবং সেই থেকে সে ভবিষৎ বলে দিতে পারে আর বড় কথা হচ্ছে সেই দিন থেকে ঐ দেবী মূর্তিটা মন্দির থেকে উদাও হয়ে যায়। রানুর বিয়ের পর সে অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে,দেবীর উপস্থিতি টের পায়,একা একাই কথা বলে। রানুর স্বামী আনিস নাম ডাক খ্যাতি সম্পন্ন তীক্ষ্ন চিন্তাবিদ,যুক্তিবিদ,গোয়েন্দা মিসির আলরি সরনাপন্ন হয়। আর এখান থেকেই সিনেমার ক্লাইমেক্স শুরু। একদিকে রানুর বিশ্বাস অন্যদিকে মিসির আলীর অবিশ্বাসের যুক্তি আর অযুক্তিকের অভিনব খেলা চলতে থাকে পুরো সিনেমা জুড়ে যা অনম বিশ্বসের নিখুঁদ হাতে বেশ ভালো ভাবেই ফূটিয়ে তুলেছেন। মিসির আলী প্রথমে নিজের পরিচয় না দিয়ে আনিস আহম্মেদকে হারবাল চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে দেয়া,কমোটে ফুলের চাষ করে ব্যাখ্যা দাড় করানো গোবরে পদ্মফুলের রসিকতা,গ্রামে রানু সম্পর্কে জানতে গিয়ে গ্রামবাসীর সহজ সরল উত্তর…মুচরামুচরি করে মরে গেছে কিংবা মাইয়াগো গল্প শুনা নিয়ে মিসির আলীকে অপ্রকৃতস্থ করা,কলা হাতে নিয়ে যাওয়া এক লোককে কলা ভাই বলা..রসিকতার এই ডায়লগ গুলো সিনেমাকে আর প্রানবন্ত করেছে। তিলা কাঁপানো ভৌতিক শব্দে আতঙ্কে আতকে উঠার মতো ভয়,মিসির আলীর সূক্ষ তীক্ষ্ন যুক্তির যৌক্তিক ব্যাখ্যার সংমিশ্রণ এবং শেষে রোমাঞ্চকর ভাবে রানু থেকে দেবীর স্থূলসিক্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন নীলু শুধু উত্তেজনায় বাড়ায়নি ছবিতে,ছড়িয়েছে শ্বাসরূদ্ধকর অনুভূতি। শেষে প্রধান চরিত্র রানুকে আত্নহুতি দিয়ে পার্শ্ব চরিত্র নীলুকে সামনে এনে এই উপলদ্বি উন্মোচন করেছে দেবী রূপী নারীর ক্ষমতা শুধূ একজনের মধ্যে সীমাবন্ধ নয় আস্তে আস্তে এই ক্ষমতা পুরো নারী জাতিকে কায়েম করতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীর প্রবর্তকের ধারাবহিকতা সর্বত্র চলমান….

একটু আলাদা করে যদি বলতে হয়,যারা ভৌতিক এবং রহস্যের সিনেমা দেখে অবস্থ তারা মনে করতে পারে সিনেমাটিতে ভৌতিক আবহ পরিবেশ পরিবেশেনে আরো একটু সময় নেয়া প্রয়োজন ছিলো হুটহাট যেন সবকিছু হয়ে যাচ্ছে এবং যারা মিসির আলীর ভক্ত তারা রহস্যের রাশভারী জটপাকানো পরিবেশনা কম মনে করতে পারেন। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে গল্পের প্রয়োজনে ভৌতিক এবং রহস্য বিষয় দুটোকে একসাথে উপস্থাপন করা জন্যই এমনটা হয়েছে এবং গল্পটা টাইট করতে,ঠাসা উত্তেজনা ভরপুর রাখতেই খুব যত্ন করে নিখুঁদ ভাবে সিনেমাটি তৈরী করা হয়েছে।

আমার এই কথাগুলো আপনার মাথার উপর দিয়ে যাওয়াটা অস্বাবাভিক কিংবা অমূলক নয় তাই “দেবী” কে যদি সামনা সামনি দেখতে চান,দেবীকে উপলব্দি করতে চান,মিসির আলীর বাস্তবিক যুক্তি খন্ডানো উপভোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বড় পর্দায় অর্থাৎ সিনেমা হলে গিয়ে দেখা অত্যাবশ্যক। কেননা সিনেমায় ক্যামেরার কারুকাজ,ব্যাকরাউন্ডে শব্দের খেলা,আলোছায়ার অভয়বে বাস্তবতা খূজে পাওয়া,ভৌতিক-রহস্যের বিভ্রমতার আমেজ বড় পর্দায় দেখা না ছাড়া এই অভিজ্ঞতা পাওয়া অসম্ভব।

মৌলিক ধাঁচের “দেবী” সিনেমা বাংলা সিনেমা জগতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে যা এর আগে অন্য কোন বাংলা সিনেমাতে দেখা যায়নি। তাই যারা সিনেমাপ্রেমী তাদের জন্য “দেবী” দেখা জায়েজ হয়ে গেছে এটা আমার “দেবী” সিনেমার মতোই যেন বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের বিভ্রম হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে আয়নাবাজিকে ছাড়িয়ে গিয়ে নুতন রেকর্ড গড়তে চলেছে “দেবী”। তাই বলতে হচ্ছে “দেবী” সব মিলিয়ে ভালো কিন্তু অসাধারণ !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৫৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×