সকাল থেকেই কাইকরের মা তাড়াহুড়ো করে সবকিছু করছে। করবেই না বা কেন! আজ কাইকরের বাবার জন্মদিন বলে কথা।ছোঁট বেলা থেকেই কাইকর দেখে আসছে,বাবার জন্মদিনে মা নিজ হাতে সব করেন আর মায়ের জন্মদিনে বাবা নিজ হাতে সব করেন। তারা দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কাইকর কখনো তাদের ঝগড়া করতে দেখেনি।আজকে ওর বাবার চল্লিশ তম জন্মদিন। এখনো তাদের দুজনকে ইয়াং কাপল বলা চলে।কাইকরকে অনেক ভালোবাসে তারা দুজন। কাইকর সাহেবও তাদের স্বপ্ন পরুণে ব্যস্ত। জন্মদিনের সময় ওদের বাসায় হরেক রকমের আয়োজন হয়।কাছের সব মানুষজন ফুলের তোরা হাতে নিয়ে এসে শুভ কামোনা জানাই। প্রতিবছর এই দিনে ভালোই আনন্দ -আমেজে কাটাই ওরা। কেক কাটে তিনজন মিলেই। ভালোবাসা কি? কাইকরদের পরিবারকে দেখলেই বুঝা যায়।তবে,মজার বেপার হলো,বাবা-মায়ের জন্মদিনে লাভের শিখিটা কাইকরের খাতায় এসেই জমা হয়।ওর জন্য বড় কোন গিফট উপহার হিসেবে থাকে।এক কথায় সুখী একটা পরিবার।
এতক্ষণ যাবত উপরে যা পড়েছেন তা সবই সত্য।শুধু কাইকরের বাবা নেই আজ।দুবছর আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। এক্সিডেন্টা খুবই জঘন্য ছিল।হাত,পা গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো রাস্তার মধ্যে। তবে সেটা কাইকরকে বাঁচাতে গিয়েই।সেদিন ছিলো কাইকরের মায়ের জন্মদিন। তাই নিজ হাতে বাজার করতে এসেছিলো বাপ-বেটা। তবে সেটা আজ কাল হয়ে ওদের পরিবারকে কুড়ে-কুড়ে খাচ্ছে।
কাইকরের বাবার জন্মদিন আসলেই ওর মা পাগলের মতো আচরণ করে।যে মানুষটার মুখে সবসময় হাসি ফুটে থাকতো। সে আজ নিশ্চুপ হয়ে দিন গুণে কাছের মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য।বিধবা নারী জানে কাছের মানুষকে হারানোর ব্যাথা।কাছের মানুষদের কেউ কখনো হারাতে চাইনা।যদি রেখে দেওয়া যেতো তবে হয়ত আজ কেউ আর এই জগৎ ছাড়তে পারতো না। এই পৃথিবীতে যার কেউ নেই, তারও একজন আছে। চোখ ভিজিয়ে তারপরেও বাবার জন্মদিনের কেক কাটে কাইকর। শুধু আগের মতো বাসার মধ্যে সব মানুষের আগমন নেই। নেই সেই কাছের মানুষগুলো। নেই বাবার মুখের অট্রহাসি। কাইকর ওর মাকে নিয়েই "শুভ জন্মদিন" বলে কেকের মধ্যে ধারালো ছুড়ি ঢুকিয়ে নিজের বুকের মধ্যে থাকা পাথরটাকে আরো বেশী শক্ত করে।কেক আছে, সব আছে, শুধু নেই আজ বাবা।এখন আর কেউ এই দিনে কাইকরকে বড় কিছু গিফট করে না। রোজ বিকেলে পুকুরপাড়ে আর গোধূলির রোদ শরীরে মাখতে যাওয়া হয়না।হয়না আর একসাথে বসে খাবার খাওয়া।কেউ আর কাইকরকে আলাদাভাবে মাছের বড় টুকরো টা প্লেটে তুলে দেইনা।
হয়ত কাইকরের মতো কাইকরের বাবা আজ তাদের অনেক অনুভব করছে। হয়ত আজ সে খুব রহস্যময় জায়গাতে বসে জন্মদিনের কথা ভাবছে! যেখানে আরো ভালো আত্মরা শেষ বিকেলে বসে দাবা খেলতে খেলতে ফেলা আসা পৃথিবীর সুখ-দুঃখের গল্প করছে। সেখানে হয়তো খুব জমাট আড্ডার মাঝে কাইকরের বাবা বলে বসবে, "জানি কথাটা লজিক্যাল না,তবে আমার আদুরে সন্তানটা হয়ত আমাকে অনেক অনুভব করছে।যেন ঘনকুয়াশার দেশে এক টুকরো আশীর্বাদের রোদ ভেসে ভেসে উপড়ে আসার মতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:০৭