জীবনটা কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে হয়ে যাচ্ছে। জীবনটা আকাশের চরিত্রের মতো হয়ে যাচ্ছে। শীতের সকালে ঘাসের কুয়াশার মতো। কেমন যেন! এই ক্ষণেই সব আছে আবার ক্ষণেই কিছু নেই! সবকিছু কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে।
রাস্তার নেড়ি কুকুরটার সাথে আমার খুব মিল খুঁজে পাচ্ছি। পারলে ওর সাথে হামাগুড়ি দিয়ে জিহবা বের করে কিছুটা সময় হাঁটতাম রাস্তায়। প্রশান্তি বলে যে একটা কথা আছে তা একেবারে নেই। সবকিছু অগোছালো। ইদানিং চাকরি করি না দেখে বাসায় বেশি থাকা হয়।মাঝেমধ্যে মাজায় গামছা কষে বেঁধে কবিতা লিখি, গল্প বুনি।
রুমের মধ্যে সুবোধ ঘোষের ছবি টানানো। আব্বা হঠাৎ করে এসেই ছবিটা টেনে ছিড়ে ফেলল। বড় বড় চোখ করে আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বিদায় নিল।যা বলার আমাকে বলতো। সুবোধ ঘোষ তাকে কি করেছে? তাকে দেখেই তো জীবনের পথ আঁকছি আমি! বেচারার মনে কষ্ট দিয়ে কি সুখ পেল বাবা একমনে তা বুঝলাম না। আমি তারপরেও কবিতা বিড়বিড় করছি। রুমের এক কোণে রবিঠাকুর গান গাইছে আপন মনে।আহা........জীবনটা এখন শান্তির চাইতেও শান্তিময় লাগছে।
মিছেমিছি মনকষাকষি ওসব প্রেম-ভালোবাসায় আমার জুড়ি নেই। তারপরেও কেন জানি ভালোবাসি অপ্সরাকে।সে আমাকে আদর করে গুড্ডি বলে শুধায়। মেয়েটা আমাকে আদর সোহাগ দিয়ে ভরিয়ে রাখে সবসময়। আমার শ্যামলা রংয়ের গালটা চুমু খেয়ে লাল করে রাখে। মাঝেমধ্যে ঠোঁট বাকিয়ে বাকিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনায়।
এক বিকেলে রিক্সা করে আমি আর অপ্সরা যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কি মনে করে আমার শ্যামলা রংয়ের ময়লাযুক্ত হাতে চুমু খেয়ে ঠোঁট গোল করে বললো, লাভিউ। আমি উপলব্ধি করলাম, আর যাইহোক এমন ভালোবাসা আমার কপালে আর কোনো সময় জুটবেনা। তাই আমার কালচে ঠোটখানা বাকিয়ে তাকে আদুরে গলায় বললাম, ভালোবাসি তোমাকে ভালোবাসি। রিক্সার মধ্যে তাকে জড়িয়ে ধরে নগরের সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে উচ্চস্বরে আবারো বলে উঠলাম, ভালোবাসি তোমাকে আমি। এক পৃথিবী ভালোবাসি। রিকশাচালক মামা মুখের মধ্যে হাত দিয়ে জোরে-শোরে শিষ বাজিয়ে ভাটিয়ালি গান ধরে আপন-মনে টানতে থাকলো রিকশা।
বাসার ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারে বসে বুদ্ধদেব গুহের "মাধুকরী" উপন্যাস টা পড়ছি। আকাশে গোল একটা চাঁদ উঠেছে। খুব জ্বলজ্বল করছে। মাঝেমধ্যে জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে মিছেমিছি চাঁদের বুড়ির সাথে কথা বলছি।মনগড়া সব কথাবার্তা।হঠাৎ করে অপ্সরা ফোন করে নিষিদ্ধ এক প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসলো। সে নাকি তার শরীরের সমস্ত গন্ধ আর ভালোবাসা দিয়ে কফি বানিয়ে আমাকে খাওয়াবে।ঘোলাটে প্রস্তাবে আমি সাদামাটাভাবে রাজি হয়ে গেলাম।
আজ আমার জীবনের মত আকাশের রংটা পালটাচ্ছে! আকাশটা ঘন কালো হয়ে রিমঝিম আওয়াজ তুলবার তোড়জোড় করছে। অপ্সরা তার সমস্ত শরীরে গন্ধটুকু দিয়ে কফি বানিয়ে খাওয়াবার জন্য আমার কাছে এসেছে। বাতাসে কেমন জানি একটা প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি। জ্যোৎস্নার আলো গায়ে মেখে গোসলের অভ্যেস এক মানবী আমার সামনে এসে বসেছে।কিছুটা বুনো আদর করবার জন্য। শরীরের এখানে সেখানে সে বিলাসীগন্ধি বোতল কাত করে এসেছে।সম্ভবত তার চাচা প্যারিসে থাকেন। আমরা দুজন খুব কাছাকাছি। আদর পর্ব শুরু হবে।
হুট করে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখি আব্বা ঘরে ঢুকে আমার চুল ধরে ঝাঁকাচ্ছে। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে," কোলবালিশকে ধরে এত জড়াজড়ি কিসের? কি বোঝাতে চাচ্ছিস? হারামজাদা বদ। আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বিছানা ছাড়ি। ব্যালকনিতে গিয়ে হাই তুলে বুড়ো বরই গাছটাকে চোখ মারি। বাবা পাশের রুম থেকে তখনো বলছে, "শোন- আজ থেকে তোর হাফপ্যান্ট পড়ে ঘুমানো নিষিদ্ধ। বিচ্ছিরি পায়ের লোম দেখা যায়। আজ থেকে আমার মত কুচি দিয়ে লুঙ্গি পড়বি।ঘরে মধ নেই। আমি বাসার নিচে টং দোকানের দিকে পা বাড়াই এক কাপ চা খাবো বলে। স্বৈরচারী তবু নির্বিরোধী চা।