somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

অদ্ভুত জীবন (ছোট গল্প)

২৮ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমার বন্ধু কাইকর, এলাকার সবচেয়ে সুদর্শন এবং সব বিষয়ে পটু। এলাকার সব মেয়েদের পিছন পিছন ঘুরায়। শহরের নামি-দামি পার্লারে গিয়ে হেয়ারস্টাইল বদলায়। ঘুম থেকে বেলা বারোটা বাজে উঠে চায়ের কাপে মুখ দেয়। সমাজের প্রভাবশালী হিসেবেই পরিচিত তাঁরা। বাসা থেকে বের হবার আগে শরীরের এপাশে-ওপাশে নামিদামি ব্র্যান্ডের সুগন্ধি ঢেলে বের হয়। কাইকরের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকেই। একই এলাকায় বড় হয়েছি।আমি বাস্তবতার শিকার হয়ে এখন ছোটখাটো একটা চাকরি করি।প্রতিদিন সকালে অফিসের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ফেরার কোন ঠিক নেই!

চার মাসেক পর। হঠাৎ করে আমার বন্ধু কাইকর কথা নেই বার্তা নেই হুট করে পাগল হয়ে গেল! সারাদিন মনে মনে কবিতা বিড়বিড় করে! আমি অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে দেখি, কাইকর শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে পাগলামি করছে। আমি সামনে যেতেই আমার শার্টের কলার ধরে বললো," এই ফকিন্নিরপুত, তুই এখানে কি করিস? যা আবাসিকে গিয়ে শুয়ে থাক। আমি শুনে গম্ভীর হতে গিয়েও ফিক করে দাঁত বের করে হেসে দিলাম। গা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে গন্ধ!হয়তো ওর জীবনের অভিধান থেকে গোসল নামের শব্দটা উঠে গেছে! প্রতিদিন এভাবে অফিস থেকে ফেরার পথে ওর খবর নিতাম।

একদিন অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, পুরো নগ্ন হয়ে রোদের সাথে খেলা করছে কাইকর।সবাই দেখে বেশ মজা নিচ্ছে। আমি বাস থেকে তাড়াহুড়া করে নেমে কাইকরের কাছে গেলাম। কাইকরকে পাশের টং দোকানে যত্ন করে বসিয়ে চা,বিস্কুট কিনে খাওয়ালাম।শেষে একটা বাংলাদেশি বেনসন সিগারেট ধরিয়ে দিলাম।কাইকর খুশিমনে সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে বলল, মামা তুমি অনেক ভালা। দোয়া করি সানিলিওনের মত একটা ভবিষ্যতে বউ পাও। শুনে আমার চোখে জল জমে এলো। পাড়ার সবচাইতে সুদর্শন আর পটু ছেলেটা আজ রাস্তার পাগল!

এককালে কাইকর ভালোবাসতো অপ্সরাকে! দুজন মিলে কতনা আড্ডা জমিয়েছে রমনার পার্কে। এক পূর্ণিমার রাতে ফুটফুটে চাঁদ ও তার আলো গায়ে মেখে অপ্সরা তাকে কথা দিয়েছিল, হাজার ঝড় আসলেও তাকে ছেড়ে যাবে না কোনদিন। শুনে প্রশান্তির এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছিল কাইকর।অপ্সরার ভালোবাসা পেয়ে ফ্লাটিং করা ছেলেটা কোন মেয়ের দিকে তাকাতো না।কারণ -এখন সে এক পৃথিবী ভালোবাসে অপ্সরাকে। হঠাৎ কাইকরকে না জানিয়েই প্রবাসী সুমুনের গলায় সুরক্ষা মালা পরিয়ে দিয়ে এখন সিডনিতে সুখে-পরিতৃপ্তিতে ঘর সংসার করছে অপ্সরা। অপ্সরা এখন মহাসুখে। মাঝেমাঝে সিডনির বড় বড় অভিজাত রেস্টুরেন্টে বসে বার্গার চিবুতে চিবুতে বর্তমান স্বামী সাথে মহাসুখে দিন কাটাচ্ছে।

কাইকর এসবের খবর রাখেনা। রোজ রাতে নেড়ি কুকুর টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। ফুটপাতের পাশে পড়ে থাকা ময়লা গন্ধযুক্ত রুটি খেয়ে থাকে। রাতে ড্রেনের দুপাশে দুই পা ছড়িয়ে আরাম করে বসে প্রাকৃতিক কাজটা সারে। ড্রেনের পানিতে চাঁদের আলো আরো চিরযৌবনা দেখায়। অপ্সরার নাম উচ্চারন করতে করতে চাঁদকে চুমু খেতে গিয়ে নোংরা পানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাইকর।খুব কাঁদতে থাকে।পাশ দিয়ে যাওয়া দুই তিনজন পথচারী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখে। কেউ কেউ তো আগবাড়িয়ে সেলফি তুলে ফেলে গোটা কয়েক। তারা তো আর জানে না আমার বন্ধু কাইকর পাগল হয়ে গেছে!

রাতে নর্দমার পাশে আধা ময়লা গন্ধযুক্ত জায়গায় প্রশান্তির ঘুম দেয় নাক ডেকে। তার সঙ্গী সাথী এখন ফুটপাতের নেড়ি কুকুর গুলো আর মশা-মাছি। ভোরের আলো তার গায়ে এসেই প্রথমে পরে। সে সূর্যমামার সাথে খেলা করতে করতে হাই তুলে। পকেট থেকে কমদামি একটা আকিজ বিড়ি বের করে ধরিয়ে মহাসুখে টানে। আমার বন্ধু কাইকর শহরের আট-দশটা ধান্দাবাজদের থেকে ভালই আছে। সুখে আছে, মহাসুখে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×