somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

আমাদের সমাজের নীল পরী ( ছোট গল্প)

৩০ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিরপুরে একটি ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। ব্যাচেলর জীবন বুঝতেই পারছেন।রুম তো নয় যেন একটা গোডাউন। রুমের মধ্যে কোনো জানালা নেই। রুমের বাম পাশে ছোট্ট একটা ময়লা চাদর পাড়া সাথে বালিশ নামের শক্ত পাথর মাথার নিচে দিয়ে শয়ন করি।মাথার ডান পাশে আমার বেগ পত্র। আমার যাবতীয় সব কিছু এর মধ্যেই থাকে। তাই হাতের পাশেই রেখে দিয়েছি। দেয়ালের সাথে ছোট ছোট দুটো বম কাটা মেরে দড়ি ঝুলিয়েছি যাতে করে আমার ময়লা শার্টগুলো যত্ন সহকারে রাখতে পারি।

আমার দুটো শার্ট ও দুটো প্যান্ট। একটি অনেকদিন যাবত না ধোয়ার কারণে রং পাল্টে গেছে! অন্যটি কোনরকম চলে। রুমের মেঝের মধ্যে কম করে হলেও হাজারটা হলিউড সিগারেটের মতা আর প্যাকেট পড়ে আছে।যদি প্রত্যেকটা একটা করেও বিক্রি করতে পারতাম তাহলে হয়তো মাস শেষে এক পোটলা গাঁজা খাওয়ার পয়সা থাকতো।

আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো পদে চাকুরী করি। মাইনে যা পাই তা মাস শেষ হবার আগেই ফুরিয়ে যায়! সব ব্যাচেলরদের মধ্যে আবার একটা গুন আছে। মাস শেষে কারো পকেটে একটা সিগারেট খাবার পয়সা থাকেনা। এটা বোধহয় ব্যাচেলরদের জীবনের একটা ধর্ম।বাসের হেলপার দের সাথে অহেতুক ঝামেলা পাকাতাম। দশ টাকার ভাড়া আট টাকা বলে চালিয়ে দিতে চাইতাম।এটাও ব্যাচেলরদের একটি বিশেষ গুণ।

আজকে মাইনে পেয়েছি। তাই মনটা ফুরফুরে। সারা মাস নিজেকে যতই গালি দেই না কেন মাস শেষে মাইনে হাতে আসলে জগতের সব ঠান্ডা।
আমার বেতন বেশি না মাত্র সাত হাজার টাকা। বেতন পেয়ে সোজা কালু মামাকে কল দেই।কালু মামা গাঁজা ব্যবসায়ী।সে আমাকে শাহবাগের মোড়ে দাঁড়াতে বললো।সে আসার পরে একহাজার টাকার গাঁজা একসাথে নিলাম। রাত বারোটা নাগাদ তেজগাঁওয়ের ফুটপাত ধরে হাঁটছিলাম আর সিগারেট টানছিলাম। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নীল শাড়ি পরা এক যুবতী নারী। দেখেই থমকে গেলাম।কী মায়াবী চেহারা!কপালের মাঝ বরাবর একটা ছোট্ট লাল টিপ পড়েছে।

আমি দুদিন হল স্নান করি না।গা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে গন্ধ।বগলের নিচে হয়তো কখনো হাত দেওয়া হয়নি। তাই নীল পরীর দিকে যেতেও ভয় করছে।কিন্তু মনের টান কি আর গন্ধতে আটকে রাখতে পারে। নীলপরীর সামনে গেলাম ভয় পা কাঁপছে। এর আগে কোন নারীর প্রেমে পড়িনি আমি।এটাই প্রথম।পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে ধরালাম।সে রাস্তার একপাশে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।ঠোঠের একটু উপরে কালো রঙের একটা ছোট্ট তিল। আমি 'হা'করে তাকিয়ে দেখছি।যেন সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলছে ঘরের মধ্যে। চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় সে আমার দিকে কপাল কুচকে তাকালো।ভয়ে আমার শরীর ঘেমে উঠলো।পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে উপুড় হয়েশুয়ে নীলপরীকে নিয়ে হাজার স্বপ্ন সাজালাম।পুরো রাত নীলপরীকে নিয়ে ভবঘুরে ঘুরলাম।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি লুঙ্গি নেই সাথে।

দুদিন পর ভরপুর গাজা খেয়ে হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম।হঠাৎ করে আবার সেই নীল পরীর দেখা! আজকে লাল বেনারসি শাড়ি পড়েছে।কপালে কালো টিপ।দেখতে আজকে গোধূলির রং এর মতো লাগছে। ঠিক সময়ে বিয়ে করলে হয়ত এখন আট-নয় বছরের ফুটফুটে সন্তান থাকতো আমার।নীলপরীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার জন্য সামনে গেলাম।সে আমাকে সামনে যেতেই জিজ্ঞাসা করলো, কি মশাই লাগবে নাকি আজকে? আমি তার কথা না বুঝে সরাসরি তার হাত ধরে মনের সকল রস দিয়ে মনের সকল লুকানো কথা একদমে বলে দিলাম।গাঁজা বেশি করে খেয়েছিলাম বলেই হয়তো সাহস করে বলতে পেরেছিলাম। আমার কথা শুনে সে ফিক করে হেসে দিল।যেন এতক্ষন যাবৎ তাকে কেউ রাবীন্দ্রিক গান শুনাচ্ছে।আমি লজ্জার মুখ খেয়ে আবার তাকে বললাম, সত্যি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমাকে নিয়ে ছোট্ট একটা সংসার সাজাতে চাই।সে প্রসন্ন মুখে উত্তর দিল, তোমার মত হাজার পুরুষ এভাবে প্রতিদিন এসে হাজার স্বপ্ন দেখাই। এসব বাহানা বাদ দিয়ে বললেই তো হয়,এক রাত কত নিবে? তার মুখে এই কথা শুনে আমার নেশা এক নিমিষেই কেটে গেল।আমি তখনো বুঝতে পারছিলামনা যে, নীলপরী রাস্তার পতিতা। মানুষ তাকে বেইশ্যা নামে চেনে। সে আবার আমাকে বলল, কি মশাই কোথায় হারিয়ে গেলেন? আমি কোন কিছু না ভেবে সাথে সাথে বললাম, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি নীলপরী।তুমি আমার প্রথম সন্ধাতারা।সত্যি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।সে বিকট শব্দে উত্তর দিল,আমি রাস্তার বেইশ্যা।সংসার নামক নিষ্পাপ শব্দটা আমার সাথে যায় না। ভালো থাকবেন। এই বলে নীলপরী অন্য এক পুরুষের হাত ধরে রাত কাটাতে চলে গেল।


আমি আকাশের দিগে মুখ তুলে চাঁদকে জিজ্ঞাস করলাম, তোমার কি কোন কলঙ্কও নেই?জানি এই প্রশ্নের উত্তর থেকেও নেই।তাই চোখের কোণে জমে থাকা পানি বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মুছতে মুছতে প্রতিজ্ঞা করলাম,জীবনে বিয়ে করলে পতিতাকেই বিয়ে করবো। বিয়ে করলে ধর্ষিতা মেয়েকেই বিয়ে করবো।

ভালবাসা চেহারা দেখে হয় না,হয়না কোন জাত দেখে। ভালোবাসা হয় মন থেকে।পকেট থেকে একের পর এক সিগারেট বের করে টানতে থাকলাম আর পুরো শহরটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। চেনা সবকিছু অচেনা মনে হচ্ছে আজ।
নীল পরীর মত মেয়েরা যদি আজ সমাজের ধর্ষিতা মেয়ে হয় তাহলে, সমাজের প্রত্যেকটা পুরুষ এক একটা ধর্ষক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৩
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×