somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

আমিও বাবা ( ছোট গল্প)

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি আর অপ্সরা দুজন একটা কম টাকার রুম ভাড়া নিয়েছি। বাড়িওয়ালা জানে আমরা দুজন নতুন বিয়ে করে এখানে এসেছি। অপ্সরা দেখতে চাঁদের জোস্নার মতো। আমি প্রথম দেখেই তার প্রেমে পড়েছিলাম। অপ্সরার উচ্চতা ৫: ৪ ইঞ্চি, গায়ের রঙ শ্যামলা। আমার শ্যামলা রঙের মেয়েদের ভাল লাগে। শ্যামলা রঙের মেয়েরা নাকী মনের দিগ থেকেও ভাল। যাইহোক,অপ্সরার চুলগুলো পায়ের হাটু অব্দি।গালের ডানপাশে একখানা কালো রঙের তিল যার জন্য আরো বেশী মায়াবী লাগে অপ্সরাকে। হাসলে গালে টোল পড়ে।

অপ্সরার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সংসদ ভবনের সামনের বকুল গাছতলায়। আমি বকুল গাছের নিচে সিঁড়ির উপর বসে বকুল ফুলের সুভাস নিচ্ছিলাম আর একটা হলিউড সিগারেট টানতে ছিলাম। আমি প্রতিদিন বিকেলবেলা বকুলতলায় বসতাম আর শফিক মামার দোকান থেকে এক কাপ চা এবং একটা সিগারেট ধরিয়ে খেতাম। নিকোটিনের ধোয়ার সাথে মনের সকল কষ্ট বের করে দিতাম।


ওহ প্রথম দিনের কথা বলতে ভুলেই গেলাম। আমি এক টান মেরে যখনি ঠোঁটের পাতায় অন্য টান দেবার জন্য সিগারেট বসিয়ে প্রস্তুত হলাম ঠিক তখনই অপ্সরার আগমন। পিছন থেকে কে যেন আমার কাছে আগুন চাইছে। আমি তাকিয়ে দেখি মায়াবতী সেই নারী অপ্সরা। আমি তার হাতে দিয়াশলাই দিয়ে অবাক হয়ে কিচ্ছুক্ষণ মুখের দিগে তাকিয়ে রইলাম। সে দিয়াশলাই পেয়ে আপন মনে সিগারেট ধরিয়ে টানছে। আমি মনে মনে ভাবলাম - এতো সুন্দর মায়াবী চেহারা কিন্তু ছাইপাঁশ খেয়ে আজ চেহারার বারোটা বাজিয়েছে । মনে হচ্ছে অনেক অসুস্থ। আমি গম্ভীরভাবে তার মুখের দিগে তাকিয়ে দেখছি। চোখের কোণায় কালো দাগ জমেছে। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সে একদমে সিগারেট শেষ করে দিলো। সিগারেট শেষ হবার সাথে সাথে আমাকে বলল - এই তোর কাছে সিগারেট হবে একটা? আমি কোন কথা না বলে প্যাকেট থেকে আরেকটি সিগারেট বের করে দিলাম। সেটাও শেষ করলো। তারপর আমার পাশে বসলো যেন আমি তার অনেক আগের চেনা কেউ। আমাকে নিচু গলায় জিজ্ঞাস করলো - কোথায় থাকিস তুই? আমি বিষন্ন মুখে উত্তর দিলাম- কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই আমার। ওহ একটু হেসে বললো - গাজা টাজা খাস নাকী চেহারার এই অবস্থা ক্যান??

আমি ওর কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। একটু পর হলুদ দাত বের করে হাসতে হাসতে বলল, ওহ বুঝতে পেরেছি তুই আমার লাইনের ওই মানুষ। যাকগে দুজন মিলে একসাথে বসে এখন থেকে টানা যাবে। আমি ওর কথাই শাই দিলাম। ও আরেকটু কাছে এসে বসলো আমার।আমি কাজের বাস্ততা দেখিয়ে উঠে পড়লাম ওখান থেকে। বাসায় আসার পর কিছুতেই ওর মায়াবী চেহারা ভুলতে পারছিলাম না।এতো সুন্দর মায়াবী চেহারা আর কি অবস্থায় থাকে!!!

সাত মাসেক পর, রাতের বেলায় আমি ফুটপাতের একটা দোকান থেকে দুটো সিগারেট কিনে রাস্তা দিয়ে টানতে ছিলাম আর হাটছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম রাস্তার একপাশে একটি মেয়ে পড়ে আছে। আমি সিগারেটে আরেকটা টান মেরে মেয়েটির কাছে গেলাম। দেখি সেই মেয়েটা যে আমার কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেয়েছিলো। পানি পিপাসায় কাতরাচ্ছে। মুখের উপর মাছি এসে পড়ছে। এতো রাতে একটা যুবতী নারীকে ধরে রাস্তার পাশে নিতেও ভয় করছে। যদি চিৎকার মেরে বসে তাহলে তো আমার বারোটা বাজবে। মনে সাহস নিয়ে রাস্তার একপাশে এনে বসালাম। একটু হেটে ফুটপাথের দোকান থেকে পানির বোতল আর একটা ৫ টাকা দামের পাউরুটি নিয়ে আসলাম। ওগুলো সাথে-সাথে খেয়ে ফেললো। এমন ভাবে পানি খাচ্ছিল যেন - হাজার বছর ধরে পানির সাথে দেখা নাই তার। আমি বুঝতে পাড়লাম সে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নেই তাই সাহস করে নাম,ঠিকানা সবকিছু জিজ্ঞাস করলাম! সবকিছু শোনার পর অনেক অবাক হলাম।



অপ্সরা ইংরেজিতে মাস্টার্স কমপ্লিট। তার বাবা ও মা সবাই আছেন।সে পরিবারের একমাত্র সন্তান তাই অনেক আদরের ছিলেন। কিন্তু একটা ছোট ভুলের জন্য আজকে তার এই অবস্থা। কলেজ জীবনে অপ্সরা মামুনের সাথে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে। সেই যে শুরু এক সময় অপ্সরা এবং মামুনের দৈহিক মেলামেশা শুরু হয়ে যায়। মামুন ভালোবাসার ফাদে ফেলে অপ্সরাকে প্রতিদিন ধর্ষণ করতো। এর মাঝে অপ্সরা তিনবার অন্তঃসত্ত্বা হয়। বার-বার ডাক্তারে কাছে গিয়ে ভিতরে থাকা নিষ্পাপ শিশু বাচ্চাটি কে মেরে ফেলে অপ্সরা। এই বেপারটা অপ্সরার পরিবার থেকে জানতে পারে। পরিবারের মধ্যে অনেক কোলাহল দেখা দেয়। এক সময় এলাকার সবাই বিষয়টা জেনে যায়। সবাই ছিঃ ছিঃ করে। অপ্সরার বাবা অপমানের বোঝা শয্য না করতে পেরে অপ্সরাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। অপ্সরা কোন কিছু না ভেবে মামুনের কাছে চলে আসে। মামুন অপ্সরাকে নিয়ে একটা হোটেলে উঠে। আবার শুরু হয় সেই মেলা-মেশা।ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি করার জন্য অপ্সরা বার-বার ধর্ষিত হচ্ছে। আবার প্রকৃতির নিয়মে অপ্সরার পেটে মামুনের সন্তান। মামুন অপ্সরাককে বাচ্চা নষ্ট করে দেবার জন্য আবার বলে। কিন্তু অপ্সরা এবার আর রাজি হয়নি। সে মামুনকে বিয়ে করতে বলে। সে সুখের একটা সংসার সাজাতে চাই।

ভালোবাসার মানুষটির জন্য সে ঘর ছেড়েছে। তাই এখন সে বিয়ে করে নতুনভাবে বাঁচতে চাই। কিন্তু মামুন তাতে রাজি হয়না। একসময় তাদের মাঝে তুমুল ঝগড়া হয়। ঝগড়া করে সেই যে মামুন চলে যায় আর ফিরে আসেনা।

অপ্সরা কোন উপায় না পেয়ে এখন রাস্তায়-রাস্তায় ছাইপাঁশ খেয়ে পড়ে থাকে। আলোকিত পৃথিবীর অন্ধকার এবং স্বার্থপর মানুষদের থেকে দূরে চলে যেতে চাই সে। শুধু ভিতরে থাকা ছোট মানুষটির জন্য এখনো এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেনি সে। এখন ৯ মাস চলছে কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত আলোর মুখ দেখবে ভিতরে থাকা নিষ্পাপ মানুষটি।

অপ্সরার মুখে এইসব কথা শুনে তার মায়াবী চেহারার প্রতি আরো বেশী করে প্রেমে পড়ে গেলাম। আমি কোন কিছু না বুঝেই অপ্সরাকে সাথে-সাথে বিয়ে করার প্রস্তাব দেই। অপ্সরা হাসতে থাকে। আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে তার হাত ধরে চোখের দিগে চোখ রেখে বলি - সত্য বলছি আমি তোমার সাথে বাকী জীবন কাটাতে চাই। আমি তোমার সন্তানের বাবা হতে চাই। আমার তো কেউ নেই এই পৃথিবীতে। সে আমার কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে গেল। আমি বুঝলাম অপ্সরা রাজি আছে।

গল্পের প্রথমে বলেছিলাম, আমি আর অপ্সরা একটা রুম ভাড়া নিয়েছি। আজ ৪ দিন হলো। গতকাল হঠাৎ করে অপ্সরার ব্যাথা উঠে আমি বাড়িওয়ালাকে জানাই। বাড়িওয়ালা এলাকার কিছু মহিলাদের খবর দেয়। আজকে হয়ত ভিতরে থাকা মানুষটির আগমন ঘটবে। আমি খুশি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় বাজারের উদ্দেশে। হাতে ৪৫০ টাকা ছিল। অপ্সরার জন্য একটা কাপড় কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসে শুনি মেয়ে হয়েছে। বাড়িওয়ালা বলছে আমাকে হেসে-হেসে মশাই মিষ্টি কোথায়? এবার যে ঘরে নতুন অতিথি এসেছে। আমি অনেক খুশি হলাম। হাতে যে টাকা ছিল তা দিয়ে একটা কাপড় কিনে এনেছি। মেয়েটির জন্য কিছু কিনে নিয়ে আসতে পাড়লাম না। তাই লজ্জার মুখ খেয়ে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাজার থেকে যাবতীয় সবকিছু কিনে নিয়ে আসলাম। বাজার থেকে আসার সময় ভাবতে-ভাবতে আসলাম অপ্সরা অনেক খুশি হবে। বাসায় আসার পড় দেখি রুমের সামনে অনেক মানুষের ভিড়। আমি ছুটে গেয়ে দেখি অপ্সরা আর নেই। সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে। আমার চোখ থেকে আড়াই ফোটা পানি বের হলো। চোখের পানি মুছে ছোট শিশুটির কাছে গেলাম। আজ থেকে এটাই আমার সন্তান, এটাই আমার নতুন পৃথিবী। অপ্সরাকে বললাম - আমি আসছি তোমার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে। আমার জন্য দোয়া করো। তোমার মতোই লক্ষী বানাবো এই বলে কোলে তুলে নিলাম আমার সন্তানকে।
[আজ থেকে আমিও বাবা...]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×