নতুনের জয়গান মন যেমন পোড়ালো: পোড়ামন ২ রিভিউ
--------------------------------------------------------------------
ছবি: পোড়ামন ২
পরিচালনা: রায়হার রাফী
অভিনয়: সিয়াম, পূজা চেরী, বাপ্পারাজ, সাঈদ বাবু, নাদের চৌধুরী, আনোয়ারা প্রমুখ
পরিবেশনা: জাজ মাল্টিমিডিয়া
মুক্তি: ঈদ উল ফিতর ২০১৮
সিয়াম ভাই খুব কাছের মানুষ ।ছোট হিসেবে আমাকে অনেক স্নেহ আর ভালবাসা দিয়েছেন।সিয়াম ভাইয়ের প্রথম ছবি তাই দেখতে তো হবেই।সিয়াম ভাই খুব কাছের দেখে মুভিটার প্রশংসা করছি না আসলে মুভিটা অনেক ভালো হয়েছে।পঞ্চম সপ্তাহে এসেও মুভিটা ৮৭ টি হলে চলছে ।
দেখব দেখব করেও সময় করে উঠতে পারছিলাম না, তাই ঈদের পর কিছুদিন পেরিয়ে যাবার পর পোড়ামন - ২ দেখতে গেলাম।সিনেমা শেষ করে সিয়াম ভাইকে কল করলাম। কল করেই অভিনন্দন জানালাম ।কাছের মানুষগুলো যখন খুব ভালো কিছু করে তখন মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এ সিনেমার প্রমোশানে অল্প হলেও যুক্ত ছিলাম, নতুন নায়ক সিয়ামের প্রতি আগ্রহ ছিল। পূজা চেরীর অভিনয় নিয়ে প্রশংসাবাণী শুনে তার অভিনয় দেখার ইচ্ছেটাও ছিল। পাশাপাশি ছিল মিডিয়ায় চলা পোড়ামন-২ ঝড়।
বিশেষত ১৯৯৩ সালে নতুন জুটি সালমান শাহ - মৌসুমীর পর আরেকটি ঈদ-উল-ফিতরে আরেক জোড়া নতুন জুটির সিনেমা দেখার আবেদনটা ভালোই কাজ করছিল মনের ভেতর। তাই সুযোগ পেয়েই দেখে নিলাম রায়হান রাফীর পোড়ামন - ২।
সিনেমার শুরুটা ছিল বেশ চমকপ্রদ। প্রথম অর্ধ পুরোটাই উপভোগ করেছি। বিশেষ করে ছোট ছোট ফানি সিন, সংলাপ আর সিনেমাটোগ্রাফি। যথারীতি গ্রামের ধনী পরিবারের মেয়ের সাথে গরিব শ্রমিকের ভাইয়ের প্রেম নিয়ে গল্প। ভাল লেগেছে ২৫ বছর আগের সিনেমা "কেয়ামত থেকে কেয়ামত" চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসার চিত্রায়ন। সিনেমায় প্রায়ই "কেয়ামত থেকে কেয়ামত" সিনেমার গানের সুর ভেসে উঠছিল আর আমি নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলাম। নায়ক সিয়াম আহমেদ যেভাবে সালমানের ভক্ত ছিল আমি তেমন না হলেও কমও ছিলাম না সে সময়। সিয়ামের অভিনয় ভাল লেগেছে, সাবলিল ছিল।
সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে মূল কাহিনী শুরু হয়। ভালোবাসার মাঝে পারিবারিক, সামাজিক ব্যবধানের দেয়াল প্রকট হতে শুরু করে। ভালোবাসা আবেগী, অন্যদিকে সমাজ তো আবেগ দেখেনা। সে দেখে তার যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিয়মনীতি। তাই সংঘর্ষ হয় অনিবার্য, প্রেমের সাথে বংশ গরিমার ও অর্থনৈতিক অবস্থানের। সিনেমার শেষটা একটু ব্যতিক্রম। তবে কেন এমন হলো তা সহজেই অনুমান করতে পেরেছিলাম আমি। আমার অনুমানের বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রমি কোন টুইস্ট যদি দেখতাম খুশি হতাম।
পুরো সিনেমার প্রাপ্তি হলো নতুন জুটি সিয়াম-পূজা। পূজা মেয়েটার চোখে, এক্সপ্রেশানে আমার মনে হয়েছে সে সবকিছু সামলে চলতে পারলে ভবিষ্যতে দারুণ একজন অভিনেত্রী হবে, নায়িকারা অভিনেত্রী হতে পারাটা বিশাল ব্যাপার। পূজার চোখে আমি সে সম্ভাবনা দেখেছি। কেন যেন মনে হয় সেই হতে যাচ্ছে পরবর্তী শাবনূর। সিয়াম হয়তো সালমান শাহ হবেনা কিন্তু তারও সম্ভাবনা রয়েছে জনপ্রিয় নায়ক হবার।
বাপ্পারাজ যথারীতি ট্র্যাজিক নায়ক রয়ে গেলেন, তাকে কেন যেন এমন চরিত্রেই মানায়। প্রাইম টাইমে তিনি নায়িকার সুখের জন্য নিজে সরে যেতেন, এবার ভাইয়ের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিলেন। স্যালুট নায়করাজ তনয়কে। তবে তার চরিত্রের আরো গভীরতা আশা করেছিলাম।
সিনেমায় প্রিয়দর্শিনী মৌসুমীর করা "রেশমি" চরিত্রটিকে হাস্যকরভাবে দেখানো হয়েছে যা অপ্রত্যাশিত ছিল। এ চরিত্রটি অনেকের কাছে বিশেষ কিছু, সে আবেগ নিয়ে এভাবে না খেললেও পারতেন পরিচালক।
ফজলুর রহমান বাবু ছিলেন অনবদ্য। তার প্রতিটি দৃশ্য ছিল মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো। ভিলেন হিশেবে সাইদ বাবু সম্ভাবনাময়। নাদের চৌধুরী, আনোয়ারা, রেবেকা রউফ প্রমুখ স্ব স্ব চরিত্রে সফল ছিলেন।
সিনেমাটোগ্রাফি ভালো ছিল, গানগুলো ছিল শ্রুতিমধুর। তবে কিছু কিছু জায়গায় পূজাকে মনে হয়েছিল অত্যন্ত অল্পবয়েসী, নায়িকাদের যে আবেদন থাকতে হয় তা আনতে পূজার আরো সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। তার অন্যতম প্লাস পয়েন্ট অভিনয়, এটি পুঁজি করে সে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারে। পূর্ণিমার পরে অলরাউন্ডার কোন নায়িকা আসছিল না, পূজা হতে পারে সে শূণ্যস্থানের শিল্পী। অন্যদিকে সিয়ামের হাইট, ফিটনেস বাদ দিলে সে ভালোই করেছে। অভিনয়ে আরো ভালো করার স্কোপ ছিল, আমি আশাবাদী সামনে সিয়াম দর্শক মাতাবে।
সিনেমার নেগেটিভ দিক লেগেছে গল্পের শেষটুকু। হঠাৎ করে প্রত্যাশিতভাবেই শেষ করে দেয়া হলো, ইচ্ছে করলেই কিছু টুইস্ট নিয়ে আসা যেত।
সবমিলিয়ে সিনেমাটি শতভাগ তৃপ্ত না করতে পারলেও হতাশ করেনি। পরিবার নিয়ে দেখার মতো সিনেমা, আইটেম গান নামক অপ্রয়োজনীয় কিছু না থাকায় স্বস্তিতে ছিলাম।
পোড়ামন - ২ মন পোড়াতে না পারলেও ভাবিয়েছে কিছুটা। নতুন পরিচালক রায়হান রাফীর কাজ আশাব্যঞ্জক। "দহন" চলচ্চিত্রে তিনি এ সিনেমার ত্রুটিগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে বিশ্বাস করি।
তরুণ নায়ক-নায়িকা, পরিচালক নিয়ে সিনেমা বানিয়ে বাজী ধরায় জাজ মাল্টিমিডিয়া একটি ধন্যবাদ দাবী রাখে। প্রত্যাশা রইল এমন বাজী তারা নিয়মিত ধরবেন। বাংলা সিনেমার স্বার্থে নতুনদের নিয়ে কাজ করা সময়ের দাবী
ব্যক্তিগত রেটিং - ৮.৫/১০
(যদি ৫ সপ্তাহের হললিস্ট চান তাহলে জানাবেন)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:১১