অপ্সরা ভালোবাসার রঙিন ফানুস আমার সাথে উড়িয়ে সুরক্ষা মালা পড়িয়েছে প্রবাসী চয়নের গলায়।
এককালে খুব করে বুনো আদর দিত আমাকে সে।আদর করে আমাকে গুড্ডি বলে ডাকত।হঠাৎ করে কি এমন হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না!সাতসকালে বন্ধু তপন কল দিয়ে বলে, অপ্সরার বিয়ে হয়ে গেছে।শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা থাকায় আমার আধা ময়লা বুকের লোমগুলো আঙ্গুল দিয়ে আনমনে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে চোখের জল ফেললাম কিছুক্ষণ।অপ্সরা এখন পাড়ি জমিয়েছে নীল তিমির দেশে। যেখানে সাতসকালে উঠে ব্ল্যাক কফির সাথে থাকে সুস্বাদু বার্গার।
ছোটবেলায় মা বাবা হারিয়ে বড় হয়েছি বড় ফুপুর বাসায়।নানারকম অপমান সহ্য করতে না পেরে বেরিয়ে আসি ওখান থেকে অজানা উদ্দেশ্যে।ঐদিন ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম,মুক্তি পেয়েছে আমি। সত্যি মুক্তি পেয়েছি ।মুক্তি পেয়েছি আমি......
অপ্সরার বিয়ে হয়ে যাবার পর জীবনটা কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে হয়ে গেল।একাকীত্ব ভালো লাগা শুরু করলো।চেনা জানা মানুষ গুলোকে রেখে ভিড় জমানো শুরু করলাম রাতের আঁধারে আধোআলো ল্যাম্পোস্টের নিচে থাকা কুকুর গুলোর সাথে!
আমি এখন পাগল।মানুষ আমাকে এখন পাগল বলে শুধায়।প্রকৃতির নিয়মে আমার সাথে পরিচয় হয় গাজাখোর কামালের।কামাল রোজ বিকেলে স্বার্থ ছাড়াই আমাকে গাঁজা দিয়ে যায়।পাগলের সাথে পাগলের মিল!অতিরিক্ত পরিমাণ গাঁজা খাওয়ায় মাতা আউলেছে।আজ ১৭ তারিখ ।ভুলও হতে পারে!কারণ-আমি পাগল।কখন কি বলি ঠিক নেই তার।এক চাদরে ছয় ঋতু কাটাই।উদ্যানে রাখা ময়লা সিমেন্টের ব্যাগের উপর মাথা রেখে রাতে ঘুমিয়ে থাকি পুলিশের লাথি খেয়ে।শীত আসন্ন।এইতো আর কিছুদিন পর ......আচ্ছামতো গায়ে চাদর জড়িয়ে গাজা টানবো।
আমার পুরনো বন্ধুরা মাঝেসাঝে দেখা করতে আসে আমার সাথে।সেদিন কার কাছ থেকে যেন শুনে দেখা করতে এসেছিল একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তপন।সে তো নাছোড়বান্দা,আমাকে নিয়েই যাবে যেকোনোভাবে।চিকিৎসা করাবে।ভালো মন্দ খেতে দিবে।তোষক পাতা বিছানায় ঘুমোতে দিবে। আমি সবকিছু শুনে আমার বিচ্ছিরি দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বললাম,দোস্ত পঞ্চাশটা টাকা দিবি??এক পোটলা গাঁজা কিনতাম।দোস্ত আবার হতাশায় স্তব্ধ হয়ে শালা খোর বলে ঠিক তিন হাত দূরে থুথু ফেলে রেখে চলে গেল।
মাঝে মাঝে খুব মরে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছা করে গাছের পাতার ফাঁকে সেই অন্ধকার হয়ে যায়।
আমি পাগল নই।আমি মানুষ।রাস্তাঘাটে শুয়ে থাকলেই কেউ পাগল হয়ে যায় না।আমারও খিদে লাগে। কেউ মারলে ব্যথা পাই ।কামবোধ জাগ্রত হয়।অপ্সরাকে প্রথম কোমর জড়িয়ে চুমু খাওয়ার কথা মনে পড়ে।পতিতা মাধুরী কখনো ভাই ডেকে রাতের খাবারের ভাগ দিলে চোখের কোণে জল জমে।চাদের আলো এড়িয়ে সেটা কাউকে দেখতে দেই না।
শীত এসে শীত যায়।গায়ের উত্তাপ একটাবার এসে দেখে যাবার কেউ নেই।এখন আর চোখের দুপাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়া জল মুছবার তোড়জোড় করিনা।ভোর সকালে চোখের দুপাশে লেপ্টে থাকা জলের দাগ মুছবার তোড়জোড় করিনা।বখাটে রোদ খুব সমারোহে চোখে লাগার পরেও ময়লাযুক্ত টি-শার্ট পরা ছেলেটা জোর করে চোখ বুজে পেট বুজে শুয়ে থাকে।তোমরা দূর থেকে যাকে উঁচুগলায় নিচুমতোন পাগল বলে গর্ববোধ কর।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৯