বসন্তের ফুলের মত চারিদিকে সুভাস ছড়াচ্ছি। দুর্বা ঘাসের কচি পাতার মতো দেখতে সদ্য ফুটেছি। আমাকে দেখলে সমাজের যে কোনো প্রতিষ্ঠিত ভদ্রলোকের কামনা-বাসনা জাগবে।
রাত প্রায় একটা বাজে। নির্জন শহর। আক্ষরিক অর্থেই নির্জন। চারিদিক নিস্তব্ধ। চারিদিকে বিষন্ন বাতাসের তোড়জোড়। ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোর নিচে কিছু কুকুর প্রহসনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আকাশের দিকে মুখ করে। আকাশের রংটা আবছা কালো। নগরীর কিছু নরপশুর দল নরমাংসের বিকিকিনি করছে।
আমি কায়দা করে আজ কুচি দিয়ে শাড়ি পড়েছি। শাড়ির এক অংশ দিয়ে আমার নাভির কিয়দংশ দেখা যায়। কপালের মাঝ বরাবর ছোট্ট লাল টিপ। কমলা রংয়ের জাদুকরী লিপস্টিক ঠোঁটে। নির্জন শহরের নির্জন রাস্তার পাশ দিয়ে অভিনেত্রী পরিমনির মতো দেখতে এক যুবতী নারী হাঁটছে। বাতাসে নিষিদ্ধ লোলুপ এক গন্ধ। কিছু রাতের পাখি হুটহাট ডাকা শুরু করে। আমার পায়ে নুপুরের রিমঝিম শব্দে মানুষের মতো দেখতে চারজন নরপশুর দল এসে আমাকে আমাজনের মতো দেখতে গহীন জংগলে তুলে নিয়ে আসে। আমাকে আজ খাবে বলে।
আমার মুখের মধ্যে মাছের আইস গন্ধযুক্ত তেনা গুজে দেয়। এক এক করে চারজন আমার শরীর নিয়ে বেরসিকভাবে খেলা শুরু করে। নরমাংসের গন্ধ পেয়ে ক্ষেপাটে হয়েছে চার নরমাংসের বিকিকিনির দল।
হঠাৎ করে শীতের বৈরি আবহাওয়াতেও দরদর করে ঘামতে থাকে চার আসল পুরুষ। জংগলের প্রতিটা গাছের পাতা ভয়াবহ উত্তাপে পুড়ে যাচ্ছে। আচমকা চাঁদ ডুবে সূর্যের আলো। ঘুমিয়ে থাকা পাখি তোড়জোড় করে পালানো শুরু করে। ঝিঝি পোকার শব্দ নিস্তব্দ হয়ে যায়। এক ভয়ংকর নারীর আগমন।চুলগুলো উস্কো খুস্কো জমাটবাঁধা। রান হাটুর উপরে ছেড়া কাপড়। বুকের অংশে কোন কাপড় নেই। গালের ডান পাশের ক্ষততে পুজ জমে কিছু সাদা পোকা কিলবিল করছে। প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে তার শরীরে। ভয়ংকর নারী অট্টহাসি হেসে আমাকে বলল, বছর দুয়েক আগে শীতের সাদামাটা কুয়াশার মধ্যে তাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে এই চার নরপশুর দল।
ভয়ংকর নারীর হাতের ইশারায় চার আসল পুরুষ এক চুল নড়াচড়া করতে পারেনি। ধারালো নতুন ব্লেড দিয়ে একেকটার পুরুষাঙ্গ ক্যাচ ক্যাচ করে কেটে মাটিতে ফেলে দেয়। চারদিকে রক্তের ঢেউ। কালোটে পুরুষাঙ্গ গুলো কই মাছের মত লাফাতে বিশুদ্ধ মাটির উপর নিষিদ্ধ হয়ে। ভয়ংকর নারী ড্রাকুলা সেজে একেকটার ঘাড়ে কামড় দিয়ে রক্ত চোষা শুরু করে। খানিকক্ষণ পর মাটিতে পড়ে থাকা পুরুষাঙ্গ চাক চাক করে কাটে ব্লেড দিয়ে। চোখের সামনে দেখেও দেখি না কোনকিছু।
ভয়ংকর নারী হঠাৎ করে বুড়ী মানবীর মতো কান্না শুরু করে। কাউকে হারানোর কান্না, না পাওয়ার কান্না। তার আতচিৎকার শুনে নগরীর সমস্ত মৃত মানুষ জেগে উঠে। চোখের সামনে একেকটা মৃত মানবের একবুক কষ্ট দেখি। কিছুক্ষণ পর চোখের কোণে হাত দিয়ে আবিষ্কার করি অল্প-আধটু জল জুমেছে। আত্মর আতচিৎকার কেউ শুনে না। আকাশের অনেক উপর দিয়ে ভেসে বেড়ানো তারাদেরও কষ্ট আছে। বাতাসের কষ্ট আছে। কষ্টের কষ্টখানি ব্যস্ত নগরী বুঝবে না, বুঝবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩