লেখালেখির ব্যাপারে কখনও ভাল কিছু আসে নি আমার মাথা থেকে। তবুও মানসিক একটা শান্তি পাই এই অদ্ভুত সাহিত্য জগতে। আমি অত্যন্ত স্মৃতিকাতর একজন মানুষ। অতীত স্মৃতি আমাকে খুব ভাবায়, আনন্দ দেয় এবং কাঁদায়। সেইসাথে ভবিষ্যৎ নিয়েও সংকিত করে তোলে। তবে অতীতটা কিন্তু সবারই খুবই প্রিয়। কেউ কেউ অতীতকে ধারন করে রাখে ক্যামেরাবন্দি করে, কেউ বা আবার নিজের হৃদয়ে অতীত স্মৃতির চিত্র এঁকে রাখে আর কেউ তার দৃশ্যত চিত্রগুলোকে বর্ণমালায় ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে। আমারও এরকম অসংখ্য মধুর অতীত রয়েছে। এই অসংখ্য অতীত থেকে একটি অতীত নিয়ে শুরু করব আমার কথা। এটাও মধুর অতীত, সাথে যুক্ত করি ভ্রমন কাহিনী সম্বলিত অতীত। যা মাত্র কিছুদিন আগে আমার স্মৃতির ভান্ডারে জমা হয়েছে।
শুরুটা ছিল আমাদের শেষ বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়া উপলক্ষে। ক্যাম্পাসে শেষ বর্ষে পদার্পণ করলে ফাইনাল ট্যুর বা র্যাগ ট্যুর নামক একটি ভ্রমনের ব্যবস্থা করা হয় পুরো ব্যাচকে নিয়ে। সেই ধারাবিকতায় আমাদেরও র্যাগ ট্যুর ছিল এই বছরের ১৬-২০ ফেব্রুয়ারি। আমাদের ক্যাম্পাসের অন্যান্য ব্যাচও তাদের ফাইনাল ইয়ারে এই ট্যুরের আয়োজন করে থাকে। তো আমি মোটামুটি বিস্তারিতভাবে আমাদের র্যাগ ট্যুর নিয়ে যাবতীয় তথ্য এবং ঘটনা শেয়ার করব ইন-শা-আল্লাহ।
চিত্রঃ ট্যুরের ব্যানার
চিত্রঃ ট্যুরের টি-শার্ট
আর সব অন্যান্য বছরের মত এ বছরও গতানুগতিক ভাবে নির্ধারিত ভ্রমন স্থান হওয়ার কথা ছিল সেইন্ট মার্টিন এবং কক্সবাজার। তবে আমাদের ব্যাচের সবাই একটু বেশী ভ্রমন পিপাষু বলে তালিকায় গতানুগতিক দুইটি স্থানের সাথে নতুন একটা স্থান যুক্ত করা হয়েছিল বান্দারবন। হুম কক্সবাজার, সেইন্টমার্টিন, সেইন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপসহ বান্দারবনের ছয়টি পর্যটন স্পট ছিল আমাদের ভ্রমন তালিকায়। যেহেতু তখন আমাদের তালিকায় থাকা সবগুলো স্পটেই ট্যুরিস্ট সিজন চলছিল, তাই আমাদের পরিকল্পনা এবং যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহন শুরু করতে হয়েছিল প্রায় একমাস আগে থেকে। বাজেট নির্ধারণ, ক্যাম্পাস থেকে বাজেট প্রাপ্তি, প্রত্যেকটা স্পটের হোটেল বুকিং, প্রত্যেকটা স্পট বিশেষ করে বান্দারবনে চাঁদের গাড়ি বুকিং করা সবই করতে হয়েছিল জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে অর্থাৎ ভ্রমনের ১৫-২০ দিন আগে।
সব কিছু জানুয়ারি মাসের ভিতরেই ঠিক করা হল। ক্যাম্পাসের বাস আমাদের সাথে থাকায় বাড়তি শুধুমাত্র একটা মাইক্রো আমাদেরকে ভাড়া করতে হয়েছিল। অন্যান্য ব্যাচের শুধু বাসেই সবার জায়গা হয়ে গেলেও স্যার, ড্রাইভার, মামাসহ আমাদের সংখ্যাটা ৬৫ জন হওয়াতে বাড়তি একটা মাইক্রো আমাদের নিতে হয়েছিল। গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পর পর্যটন স্পটগুলোতে থাকার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করাছিল আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আল্লাহর রহমতে সেইন্টামার্টিনের হোটেল বুকিং, কক্সবাজারের হোটেল বুকিং, বান্দারবানের হোটেল বুকিং এবং বিশেষত বান্দারবানের চাঁদের গাড়ির বুকিং আগেই করা হয়েছিল। আর এই বুকিংগুলো আমাদের ট্যুর কমিটির প্রত্যেকটা সদস্য নিরলসভাবে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করেছিল।
চিত্রঃ নাফ নদী
ফটোগ্রাফিঃ মেহেদী হাসান ভুঁইয়া
চলুন এবার সরাসরি ভ্রমনের বর্ণনাতে চলে যাই। নির্ধারিত দিন অর্থাৎ ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাত ১০:৩০ মিনিটে আমাদের যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আমরা প্রায় সবাই নির্ধারিত দিনে রাত ১০:৩০ মিনিটের অনেক আগেই আমাদের ক্যাম্পাসে রাখা বাসে এসে উপস্থিত হই। হল থেকে ক্যাম্পাসে আসতে খুব বেশী হলে ৫-১০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয় কিন্তু আমরা ৯:৩০ মিনিটে এসেই বাসের নিকট উপস্থিত। আসলে পরে আসলে বাসে সিট খালি পাওয়া যাবে না, শেষে বাধ্য হয়ে মাইক্রোতে যেতে হবে তাই সবার মধ্যে একটু মৃদু প্রতিযোগিতা হয়েছিল বলতেই হবে। কারন কেউ বাসের ৫০-৫৬ জনের একসাথে করা আনন্দ মিস করতে চাইছিল না। যাইহোক যথাযথ সময়ের আধাঘন্টা পরে অর্থাৎ ১১টা নাগাত আল্লাহর নিকট যাত্রাপথে বিপদাপদ যাতে না হয়, তাই প্রার্থনা করে আমাদের বাস যাত্রা শুরু করল মিরেরসরাই, জোরারগঞ্জ থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে। সেই হিসাবে আমাদের প্রথমে পৌঁছতে হবে চট্টগ্রাম।
চলবে…………….
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৯