চিত্রঃ গুগল
২
( ২০১৬ সালে গল্পদূত গ্রন্থে প্রকাশিত আমার সায়েন্স ফিকশন "মানোবট" এর ২য় পর্ব আজকে। অবশ্যই প্রথম পর্ব পড়ে এই পর্ব পড়বেন। ধারাবাহিক হওয়ায় আগের পর্ব না পড়লে এই পর্ব না বুঝতে পারার সম্ভাবনা বেশী। )
ক্লাশের রেজাল্ট ঘোসনার পরপর কৃকে বিশেষ পুরষ্কার দেয়া হল। যবের জিনেটিকাল ইকুয়েশন বের করার জন্য। তার ইকুয়েশন যদি সফলভাবে কাজ করে তবে এর সাহায্যে চাহিদা অনুসারে যবের প্রপার্টিজ দেয়া যাবে। ফলন এমনকি যবের আকার আকৃতিও নিয়ন্ত্রন করা যাবে।
ক্লাস শেষে পৃহা কৃকে চেপে ধরল এই অভুতপুর্ব আবিষ্কারের জন্য।
--আমাকে আর সুশানকে খাওয়াতেই হবে। (পৃহা)
--হাত উঁচু করে। আমি আপনার সাথে একমত মহামান্য পৃহা। (সুশান)
--তোরা কি শুরু করলি,একটু থামবি??(কৃ)
--থামাথামি পরে হবে আগে বল আন্টির হাতের ধাপড়া (যবের আটা দিয়ে তৈরি এক প্রকার খাদ্য) কবে খাওয়াবি?(পৃহা)
হঠাৎ কৃ অন্যমনস্ক হয়ে গেল। সুশান বলে উঠল পৃহা দেখ দেখ খাওয়ানোর কথা বলার সাথে সাথে কৃর মুখ কেমন শুকিয়ে গেল। পৃহা কৃকে জিজ্ঞাস করল তোর কি হয়েছে। এরকম একটা খুশীর দিনে এমন মনমরা হয়ে গেলি কেন? আচ্ছা তোদের কি মনে হয় না আমাদেরকে নিউরোলজি সাবজেক্ট থেকে দূরে রাখার কোন একটা কারন আছে। আগের পৃথিবীতে তো শিক্ষা উন্মুক্ত ছিল। যেকোন মানুষ যেকোন বিষয় নিয়েই শিক্ষা গ্রহন করতে পারত। কিন্তু এখন আমরা বঞ্চিত কেন? আর শুধুমাত্র নিউরোলজি বা কেন নিষিদ্ধ? এর উত্তর আমাকে বের করতেই হবে।
.
কৃ বাসাই এসে তার বাবার বইয়ের আলমারি ঘাটা শুরু করল। কয়েক হাজার বছর আগের পৃথিবীর ইতিহাস জানার জন্য। এবং একটা বই পেয়েও গেল। বইটার নাম আদিম পৃথিবী। বইয়ের একটা চ্যাপ্টার "মানোবট" কৃর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। বইটাতে লেখা আছে।
২৭২১ সাল। পৃথিবী বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অগ্রগতির সন্ধান পেল। প্রথমবারের মত পৃথিবীর মানুষ মানোবট আবিষ্কার করতে পারল। মানোবট এক ধরনের অতি আধুনিক রোবট যার ভিতরে মানবিক গুনাবলি প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। এই মানোবট গুলো একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ব্যাথা পেলে মুখে উহ! শব্দ করতে পারে, বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকাতে পারে, দু:খ পেলে কাঁদতে পারে। সর্বপ্রথম এই আবিষ্কারটি করেন সেই সময়কার বিশ্ব সেরা নিউরোলজিস্ট ড. ওয়াটসন। যদিও এই বিরাট আবিষ্কারের কিছুদিন পর অজ্ঞাত কোন কারনে ড. ওয়াটসন মৃত্যু বরন করেন। তাকে এই আবিষ্কারের জন্য সম্মাননা দেওয়ার আগেই তার এই অকাল পরিনতি হয়। পরবর্তীতে তার ফরমুলা কাজে লাগিয়ে জে.জে. কম্পানি বানিজ্যিক ভাবে মানোবট তৈরির কার্যাবলী শুরু করেন।
তারা মানোবট আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য রাখার জন্য মানোবটদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধাতু দিয়ে তৈরি করেন। যদিও মুখটা সম্পুর্ণ মানুষের মত। কিন্তু যে কেউ তার হাত, পায়ের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবে এরা মানোবট। এছাড়াও মেটাল ডিকেক্টরের সাহায্যে খুব সহজেই ডিটেক্ট করা যায় এদেরকে।
জে.জে. কম্পানি এখানেও একটা ধোঁয়াশা রেখে দেয়। তারা কখনও মানোবট তৈরির প্রক্রিয়া প্রকাশ করে নি। আজ পর্যন্ত কেউ তাদের মানোবটের ম্যানুফেকচারিং প্রসেস বের করতে পারে নি। বইতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কৃর নজর কাড়ল। প্রথমত মানোবট আবিষ্কারের পরপরই পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী বাচ্চারা নিখোঁজ হওয়া শুরু করল। এই বিষয়টা কৃকে খুব ভাবিয়ে তুলল।
সারাদিন এটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করল। শেষ পর্যন্ত অস্থির হয়ে পৃহার কাছে গেল।
--পৃহা দেখ জিনিসটা কেমন আশ্চর্যজনক। যখন প্রথম মানোবট আবিষ্কার হয় তার পর থেকে ছোট ছোট বাচ্চারা নিখোঁজ হওয়া শুরু হয়।
--তুই এগ্রিকালচার বাদ দিয়ে আদিম পৃথিবী নিয়ে পড়লি কেন?
--হঠাৎ করে নিউরোলজি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করল তাই।
--তুই আবার নিউরোলজি নিয়ে পড়েছিস? কিন্তু নিউরোলজির সাথে আদিম পৃথিবীর কি সম্পর্ক?
--আরে পৃথিবীতে নিউরোলজির অভুতপুর্ব আবিষ্কার জানতে হবে না?? নিউরোলজি পড়তে গিয়ে যার কথা সবচেয়ে বেশী উঠেছে তিনি ড.ওয়াটসন। একজন বড় মাপের নিউরোলজিস্ট ছিলেন। তিনি মানোবটের আবিষ্কারক।
--কৃর প্রথম দুইটা কথা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ পৃহা বলে উঠল আচ্ছা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস?
--কি জিনিস?
--আমাদের এলাকাতেও কিন্তু পাঁচ সাত বছরের বাচ্চার সংখ্যা কম।
--হুম তাইতো। নিউরোলজি, ছোট বাচ্চা এবং নিউরোলজিস্ট ড.ওয়াটসনের মানোবট আবিষ্কার। কি যেন একটা যোগসুত্র আছে।
--হুম ঠিক তাই।
--দাড়া এবার মানোবট আমাদের যবের ভাগ নিতে আসলে তাদের কারও সাথে কথা বলতে হবে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩৯