(জানুয়ারী মাসে সর্বশেষ দশম পর্ব লেখা হয়েছিল আমার এই ধারাবাহিকটার। এই ধারাবাহিকে আলহামদুলিল্লাহ ভালই সাড়া পেয়েছি কয়েকটি পর্বে। একবার মনে হয়েছিল হয়তো কোন ধারাবাহিক আমার পক্ষে লেখা সম্ভব না। কারন আমার মধ্যে কনসিস্টেন্সি খুবই কম। তারপরও ২০১৬ এর অক্টোবরে শুরু করা এই ক্ষনিকের ডায়েরী ধারাবাহিকটা কেমন যেন চলমান থেকে গেছে। যদিও দীর্ঘ বীরতিতে হচ্ছে । তারপরও খারাপ না। অন্তত একটা কাজে ধারাবাহিকতা থাকুক। )
নামাযের চর্চাটা আমাদের পরিবারে বরাবরই ছিল এবং আছে। আমি ছোটবেলায় আব্বুর হাতে পড়ার জন্য যতটা না মার খেয়েছি তার চেয়ে বেশী মার খেয়েছি মাগরিবের নামায দেরীতে পড়ার জন্য। সিক্সে বা সেভেনে পড়ি তখন প্রচন্ড ক্রিকেট খেলার নেশা ছিল। কলোনির মাঠে ক্রিকেট খেলতে খেলতে মাগরিবের আযান পার হয়ে যেত তাও খেলা শেষ না করে উঠতাম না। মসজিদ থেকে আবার মাঠটা দেখা যেত। আব্বু মসজিদে প্রবেশের সময় আমাকে মাঠে দেখে ফেলত আর প্রায়শই বাসায় উত্তম মধ্যম চলত।
এভাবে দু চার ঘা খেতে খেতে নামাযে অভ্যস্ত হওয়া শুরু করলাম। আরও একটা স্মৃতি শেয়ার করতে চাই। আমার গরম গরম জিলাপি খুব প্রিয়। যখন আরও একটু ছোট ছিলাম মানে থ্রি বা ফোরে পড়ি , তখন আব্বু জুম্মা'আর নামায পড়ার জন্য সাইকেলের পিছনে আমাকে চড়িয়ে অনেক দূরের মসজিদে নিয়ে যেতেন। বাসায় আসতেন ভিন্ন পথ দিয়ে। আর আসার সময় আমার হাতে গরম জিলাপি দিতেন। সাইকেলের পিছনে বসে চোখ বন্ধ করে খাওয়া সেই জিলাপির স্বাদ এখনও চোখ বন্ধ করলে মনে পড়ে ।
চিত্রঃ গুগল
এখনও বাসায় গেলে একইসাথে নামাযে যাওয়া হয়। একইভাবে আব্বুর সাইকেলের পিছনে বসে নামাযে যাই। কিন্তু কেন যেন জিলাপি আর খাওয়া হয় না। আগেরমত এখনও আব্বু সাইকেলে প্যাডেল দেওয়ার আগ মূহুর্তে জিজ্ঞাস করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি কিনা? আব্বু কেন যেন মানতে চায় না আমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছি। এখন বুঝেছি নামায কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এক সময় ছোট বেলায় দেখে দেখে পালন করা ধর্ম এখন বুঝে পালন করতে শিখেছি। এখন সন্ধ্যার পরের সেই মারের ভয় নেই কিন্তু পরকালে আগুনে পোড়ার ভয় আছে।
আমার খুব ভাল লাগে এই ভেবে যে, আমার সাথে বাবার মধুর স্মৃতি বেশীরভাগ নামাযকে কেন্দ্র করে। আব্বুর হাত ধরে কুয়াশা ভেজা মাঠ পেরিয়ে ফযরের নামাযে যাওয়া কিংবা তুমুল বর্ষনের ভিতর ছাতার নিচে বাবার পাঞ্জাবী ধরে গুটিগুটি পায়ে যোহরের নামাযে যাওয়া এই দৃশ্যগুলো সবার কপালে জোটে না। হয়তোবা বাবাকে নিয়ে কারও মধুর স্মৃতি বাবার হাত ধরে প্রথম হারমোনিয়াম বাজানোর অভিজ্ঞতা কিন্তু বাবাকে নিয়ে আমার মধুর স্মৃতি সাইকেলের পিছনে বসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে মসজিদে যাওয়া। আর আমি এটাই মুসলমান হিসাবে যেকোন সন্তানের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি বলে মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩৬