somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সায়েন্স ফিকশনঃ মানোবট/১-৪"

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(যারা কষ্ট করে প্রথম তিন পর্ব পড়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। আসলে পাঠক ছাড়া লেখকের লেখার কোন মুল্যই থাকে না। যাইহোক আজকে মোট চারটা পর্ব একসাথে দিয়ে দিচ্ছি। আশা করি যারা আগে ধারাবাহিক ভেবে পর্ব আকারে পড়েননি তারা পড়বেন। আর যারা আগের তিন পর্ব সাথে ছিলেন তারাতো অবশ্যই পড়বে। আর বিশেষভাবে আমার ১০১তম পর্বে স্বাগতম।)

"মানোবট"



কৃ আজ একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে। ঘুম থেকে উঠে কৃর জানালা দিয়ে বাইরে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকা অভ্যাস। আজকেও তাকিয়ে আছে। চারেপাশ গাঢ় সোনালী রঙে ছেয়ে আছে।ক্ষেতের সব যব পেঁকে গেছে এই বছর। তাদের বাড়িটা একটা ফাঁকা স্থানে। আর চতুর্দিকে যবের খেত। কৃ পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান। তার নাকি ছোট একটা বোন ছিল।কিন্তু কৃ তার বোন সম্পর্কে কিছুই জানে না। কি এক অজানা কারনে তার মা তার ছোট বোনের কথা তুলে না। আশ্চর্যের বিষয় হল এই এলাকায় কোন বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ থেকে সাত হয়ে যায় কোন এক অজানা কারনে তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। বিশেষ করে যে বাচ্চাগুলো একটু চটপটে প্রকৃতির হয় তারাই নিখোঁজ হয়।কৃর এখন এসব ভাবলে হবে না। তাকে দ্রুত নাস্তা সেরে স্কুলে যেতে হবে। স্কুলটা তাদের বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে। নাস্তার টেবিলে বসল কৃ। সামনে যবের রুটি , সকালের নাস্তা। এখন পৃথীবির একমাত্র খাদ্যবস্তু যব। যব ছাড়া অন্য কোন উদ্ভিদ আর জন্মে না এই পৃথিবীতে। কয়েক হাজার বছর আগে কোন এক ভাইরাসের সংক্রমনে সব উদ্ভিদ একে একে মারা যেতে শুরু করে। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে যব বেঁচে যায়। এখন সারা বিশ্বে যব চাষ করা হয়। এই যবের আটা দিয়েই তাদের তিন বেলার খাবার সারতে হয়।

কৃর স্কুলে আজ রেজাল্ট দেওয়ার কথা। কৃ স্কুলে ঢুকেই বারান্দায় সুশান আর পৃহাকে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। বুকটা ধক করে উঠল কৃর। পরীক্ষায় সে কি খারাপ ফলাফল করল? একটু জোর কদমে হেটে বারান্দায় আসল কৃ। এসেই সুশানের পিঠে থাবড়া দিয়ে জিজ্ঞাস করল...
--কিরে মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন?
--সুশান উত্তর দিল। তুইতো খুবই বাজে রেজাল্ট করেছিস।তোর গ্রেড সবচেয়ে কম।
--যাহ তোরা ঠাট্টা করছিস।
--সুশান ঠিকই বলেছে। (পৃহা)
--কিন্তু এত খারাপ হওয়ার তো কথা না??
কৃর খুবই মন খারাপ হয়ে গেল। ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল কৃ। এই বয়সে কি কেউ কাঁদে? সেতো বড় হয়ে গেছে। তার মুখের এই অবস্থা দেখে পৃহা হাসতে হাসতে বলল আরে গাধা তুই সবচেয়ে বেশী গ্রেড পেয়েছিস। তোর দেয়া যবের জিনেটিকাল ইকুয়েশনটা সবচেয়ে বেশী পছন্দ হয়েছে শিক্ষকদের। তোর ইকুয়েশন পরীক্ষামুলক ভাবে কাজে লাগাতে নির্দেশও দিয়ে দিয়েছেন আমাদের টিচার। কিন্তু আমারতো এগ্রিকালচার ভাল লাগে না। আমি নিউরোলজিকাল সাইন্স পড়তে চাই। সুশান তাকে চুপ চুপ বলে থামিয়ে দিল। তুই জানিস না নিউরোলজি সাবজেক্ট নিয়ে আলোচনা করা নিষিদ্ধ? কিন্তু আমার এগ্রিকালচার একদমই অপছন্দ। বাবার নিউরোলজির একটা বই দেখেছিলাম। কয়েকবছর আগে প্রথমদিকের কিছু অংশ খুবই ভাল লেগেছে কিন্তু পরের অধ্যায়গুলো কিছুই বুঝি না।
পৃথীবিতে যখন অজানা এক ভাইরাসের আক্রমণ হল আর উদ্ভিদ সব মারা গেল তখন থেকে নতুন খাদ্য উৎপন্ন করা মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল। সেই সাথে সকল স্কুলে নিউরোলজি বিষয়টা পড়ানো নিষিদ্ধ করা হল। এও নির্দেশ দেয়া হল যে ,যদি কেও নিউরোলজি নিয়ে কোন প্রকার আলোচনা করে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সব শিক্ষার্থী মহলেই এই প্রশ্নটা বিদ্যমান। এগ্রিকালচার এখন মুখ্য বিষয় হওয়া উচিৎ ঠিক আছে। অন্য সকল বিষয় থাকা সত্ত্বেও কেন নিউরোলজি সাবজেক্টটা নিষিদ্ধ করা হল? এর উত্তর কৃ, পৃহা, সুশান তাদের কারও জানা নেই। এমনকি এলাকার বয়স্ক কারও জানা নেই। এই নিয়ে কৃর মনে বিভিন্ন প্রশ্ন খুরপাক খায়। সবাই বিষয়টাতে তেমন গুরুত্ব না দিলেও কৃ এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য উঠে পরে লেগেছে।



ক্লাশের রেজাল্ট ঘোসনার পরপর কৃকে বিশেষ পুরষ্কার দেয়া হল। যবের জিনেটিকাল ইকুয়েশন বের করার জন্য। তার ইকুয়েশন যদি সফলভাবে কাজ করে তবে এর সাহায্যে চাহিদা অনুসারে যবের প্রপার্টিজ দেয়া যাবে। ফলন এমনকি যবের আকার আকৃতিও নিয়ন্ত্রন করা যাবে।
ক্লাস শেষে পৃহা কৃকে চেপে ধরল এই অভুতপুর্ব আবিষ্কারের জন্য।
--আমাকে আর সুশানকে খাওয়াতেই হবে। (পৃহা)
--হাত উঁচু করে। আমি আপনার সাথে একমত মহামান্য পৃহা। (সুশান)
--তোরা কি শুরু করলি,একটু থামবি??(কৃ)
--থামাথামি পরে হবে আগে বল আন্টির হাতের ধাপড়া (যবের আটা দিয়ে তৈরি এক প্রকার খাদ্য) কবে খাওয়াবি?(পৃহা)
হঠাৎ কৃ অন্যমনস্ক হয়ে গেল। সুশান বলে উঠল পৃহা দেখ দেখ খাওয়ানোর কথা বলার সাথে সাথে কৃর মুখ কেমন শুকিয়ে গেল। পৃহা কৃকে জিজ্ঞাস করল তোর কি হয়েছে। এরকম একটা খুশীর দিনে এমন মনমরা হয়ে গেলি কেন? আচ্ছা তোদের কি মনে হয় না আমাদেরকে নিউরোলজি সাবজেক্ট থেকে দূরে রাখার কোন একটা কারন আছে। আগের পৃথিবীতে তো শিক্ষা উন্মুক্ত ছিল। যেকোন মানুষ যেকোন বিষয় নিয়েই শিক্ষা গ্রহন করতে পারত। কিন্তু এখন আমরা বঞ্চিত কেন? আর শুধুমাত্র নিউরোলজি বা কেন নিষিদ্ধ? এর উত্তর আমাকে বের করতেই হবে।

কৃ বাসাই এসে তার বাবার বইয়ের আলমারি ঘাটা শুরু করল। কয়েক হাজার বছর আগের পৃথিবীর ইতিহাস জানার জন্য। এবং একটা বই পেয়েও গেল। বইটার নাম আদিম পৃথিবী। বইয়ের একটা চ্যাপ্টার "মানোবট" কৃর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। বইটাতে লেখা আছে।
২৭২১ সাল। পৃথিবী বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অগ্রগতির সন্ধান পেল। প্রথমবারের মত পৃথিবীর মানুষ মানোবট আবিষ্কার করতে পারল। মানোবট এক ধরনের অতি আধুনিক রোবট যার ভিতরে মানবিক গুনাবলি প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। এই মানোবট গুলো একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ব্যাথা পেলে মুখে উহ! শব্দ করতে পারে, বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকাতে পারে, দু:খ পেলে কাঁদতে পারে। সর্বপ্রথম এই আবিষ্কারটি করেন সেই সময়কার বিশ্ব সেরা নিউরোলজিস্ট ড. ওয়াটসন। যদিও এই বিরাট আবিষ্কারের কিছুদিন পর অজ্ঞাত কোন কারনে ড. ওয়াটসন মৃত্যু বরন করেন। তাকে এই আবিষ্কারের জন্য সম্মাননা দেওয়ার আগেই তার এই অকাল পরিনতি হয়। পরবর্তীতে তার ফরমুলা কাজে লাগিয়ে জে.জে. কম্পানি বানিজ্যিক ভাবে মানোবট তৈরির কার্যাবলী শুরু করেন।
তারা মানোবট আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য রাখার জন্য মানোবটদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধাতু দিয়ে তৈরি করেন। যদিও মুখটা সম্পুর্ণ মানুষের মত। কিন্তু যে কেউ তার হাত, পায়ের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবে এরা মানোবট। এছাড়াও মেটাল ডিকেক্টরের সাহায্যে খুব সহজেই ডিটেক্ট করা যায় এদেরকে।
জে.জে. কম্পানি এখানেও একটা ধোঁয়াশা রেখে দেয়। তারা কখনও মানোবট তৈরির প্রক্রিয়া প্রকাশ করে নি। আজ পর্যন্ত কেউ তাদের মানোবটের ম্যানুফেকচারিং প্রসেস বের করতে পারে নি। বইতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কৃর নজর কাড়ল। প্রথমত মানোবট আবিষ্কারের পরপরই পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী বাচ্চারা নিখোঁজ হওয়া শুরু করল। এই বিষয়টা কৃকে খুব ভাবিয়ে তুলল।
সারাদিন এটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করল। শেষ পর্যন্ত অস্থির হয়ে পৃহার কাছে গেল।
--পৃহা দেখ জিনিসটা কেমন আশ্চর্যজনক। যখন প্রথম মানোবট আবিষ্কার হয় তার পর থেকে ছোট ছোট বাচ্চারা নিখোঁজ হওয়া শুরু হয়।
--তুই এগ্রিকালচার বাদ দিয়ে আদিম পৃথিবী নিয়ে পড়লি কেন?
--হঠাৎ করে নিউরোলজি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করল তাই।
--তুই আবার নিউরোলজি নিয়ে পড়েছিস? কিন্তু নিউরোলজির সাথে আদিম পৃথিবীর কি সম্পর্ক?
--আরে পৃথিবীতে নিউরোলজির অভুতপুর্ব আবিষ্কার জানতে হবে না?? নিউরোলজি পড়তে গিয়ে যার কথা সবচেয়ে বেশী উঠেছে তিনি ড.ওয়াটসন। একজন বড় মাপের নিউরোলজিস্ট ছিলেন। তিনি মানোবটের আবিষ্কারক।
--কৃর প্রথম দুইটা কথা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ পৃহা বলে উঠল আচ্ছা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস?
--কি জিনিস?
--আমাদের এলাকাতেও কিন্তু পাঁচ সাত বছরের বাচ্চার সংখ্যা কম।
--হুম তাইতো। নিউরোলজি, ছোট বাচ্চা এবং নিউরোলজিস্ট ড.ওয়াটসনের মানোবট আবিষ্কার। কি যেন একটা যোগসুত্র আছে।
--হুম ঠিক তাই।
--দাড়া এবার মানোবট আমাদের যবের ভাগ নিতে আসলে তাদের কারও সাথে কথা বলতে হবে।



বর্তমান পৃথিবীতে মানোবটরা এখন গুটিকয়েক মানুষের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। পুর্বে যদিও তাদেরকে মানব সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রন করত। কিন্তু এখন এই নিয়ন্ত্রন সম্পুর্ণ মানোবটের হাতে। তারা শুধুমাত্র মানুষকে নিয়ন্ত্রনই করে না ঘৃনাও করে। নিউরোলজি সাবজেক্ট সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাতিল করার সিদ্ধান্তও তাদেরই গ্রহন করা। মানোবটরা এখন উন্নত এলাকাতে থাকে। মানুষদেরকে তারা নির্দিষ্ট এলাকাতে আবদ্ধ করে রেখেছে। কেউ নিজ এলাকা থেকে বাইরের কোন এলাকায় যেতে চাইলে তাকে অবশ্যই মানোবটের অনুমতি নিতে হবে। এই মানোবটরা বছরে একবারই মানুষের এলাকায় আসে পাঁকা যব উত্তোলনের সময়। তারা ফলনকৃত মোট যবের দুই তৃতীয়াংশ নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার সময় মানুষের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকায় মনে হয় একটা মানুষ কোন মাকড়সার দিকে তাকাচ্ছে। তাদের চোখে ঘৃনাটা এতটাই তীব্র ভাবে প্রকাশ পায়।এবারও যব পাঁকার সাথে সাথেই মানোবট কৃদের এলাকায় আসল। যথারীতি তাদের স্পেস সিপ উত্তর মাঠের খোলা প্রান্তে ল্যান্ড করল। স্পেস সিপ থেকে নেমে সবাইকে যব আনতে নির্দেশ দিল। যব পরিমাপ চলছে এই ফাঁকে কৃ আর পৃহা মানোবট একজনের সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিল। তারা মাঝারি আকৃতির একটা মানোবট ঠিক করল কথা বলার জন্য। কৃ মানোবটটার দিকে এগিয়ে গেল এবং জিজ্ঞাস করল স্যার একটু কথা বলতে পারি?মানোবটটা এরকম প্রশ্ন শুনে কেমন যেন ভেবাচেকা খেয়ে গেল। চোখ অন্য দিকে সরিয়ে বলল কি প্রশ্ন?
আপনাদের জন্ম কিভাবে হয়??প্রশ্ন শুনে মানোবট উত্তর দিল তোমাকে কেন বলব? কৃ যুক্তি দেখাল আপনিতো জানেনই স্যার মানুষের কৌতুহল একটু বেশীই হয়।
কিন্তু আমি কোন মানুষের সাথে কথা বলি না। কৃ দেখল এই মানোবট সহজে গলবার পাত্র নয়। সে পৃহাকে বলল কিছু করার জন্য। পৃহা যব পরিমাপের কাজ কতটুকু হয়েছে একবার আড়চোখে দেখে নিল। তারপরে নরম স্বরে বলল স্যার আমার অনেকদিনের সখ মানোবটদের সাথে কথা বলা। একটু গাছটার আড়ালে আসবেন? মানোবট ইতস্তত করা শুরু করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেতে রাজি হল। গাছের আড়ালে নেয়ার পর পৃহা উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করা শুরু করল। এভাবে অনেকক্ষন সময় নষ্ট করার পর মানোবট গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে দেখল স্পেস সিপ সব চলে গেছে। স্পেস সিপ নেই দেখার সাথে সাথে মানোবটটি দিশেহারা হয়ে গেল। পৃহা মানোবটটির কাছে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলল এভাবে অস্থির হলে তো আর স্পেস সিপ ফিরে আসবে না।
পৃহা বলল চলুন আপনাকে আমাদের বাসাই নিয়ে যায়।তারা আপনাকে নিতে আসবে। যাবেন তো আমাদের সাথে? মানোবটটি সন্দিহান দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেও শেষে ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাল।
যাক কৃর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে মানোবটটাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও কাছে পাওয়া গেছে। এখন শুধু নিউরোলজি আর মানোবটের মধ্যে যোগসুত্রটা খুঁজে বের করার পালা।
ভাগ্যিস মানোবটটিকে আড়ালে নেওয়ার বুদ্ধিটা পৃহার মাথা থেকে এসেছিল।
কৃ মানোবটকে তার বাসায় নিয়ে গেল। মা মানোবটকে দেখেই আঁতকে উঠলেন। তুই কি করেছিস এটা? মানোবট নিয়ে এসেছিস কেন বাসায়?

এরা খুব খারাপ হয়। মানুষকে এরা ঘৃনা করে।ও আমাদের বাসায় এসেছে এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে ওরা আমাদের ধ্বংস করে দেবে। মা তুমি বেশী চিন্তা কর। আমার ভিষন ভয় করে বাপু। আর ভয় পেয়ে কাজ নেই। মানোবটটাকে কিছু খেতে দাও তো? ও কি আমাদের যবের ধাপড়া খাবে?? দিয়েই দেখ। ধাপড়া দেওয়ার পর দেখা গেল মানোবট খুব সুন্দর করে তৃপ্তি সহকারে খেল।
বিকালের দিকে কৃ মানোবট থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যায় নাকি সেই চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু বিশেষ একটা সুবিধা করতে পারল না। সন্ধ্যার কিছুক্ষন পরে মানোবটটা কোথা থেকে একটা খেলনা জাতীয় জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করল। এটা দেখে মা চিৎকার করে উঠলেন। সাথে সাথে মানোবটের কাছ থেকে খেলনাটা ছিনিয়ে নিলেন। কৃ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে খুবই অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞাস করল মা সামান্য একটা খেলনার জন্য তুমি কি করতিছ? এটা সামান্য খেলনা না এর সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই খেলনার সাথে তোর বোনের স্মৃতি জড়িয়ে। এই খেলনায় তোর বোনের হাতের ছোঁয়া আছে।আজকে কৃ একটা সুযোগ পেয়ে গেল। মা নিজ মুখেই আজ বোনের কথা তুলেছে। কৃ মাকে বলল আজকে তুমি আমার বোনের সব কথা বলবে। বল মা কি হয়েছিল আমার বোনের?
মা শুরু করলেন। মানোবটও একটু এগিয়ে বসল মায়ের কথা শোনার জন্য।



প্রায় ২০ বছর আগের কথা। তখন তোর জন্মও হয় নি। সুহা মানে তোর বোনের বয়স তখন ছয় বছর। তোর বোন এমনিতে খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। সারাদিন শুধু মা মা করত। মাকে ছাড়া এক মুহুর্ত সে থাকতে চাইত না। আমিও তাকে সব সময় নিজের কাছে রাখতাম। এমনকি সে খেলতে গেলেও সাথে থাকতাম।তার মেধা অসাধারন ছিল। সে স্কুলে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে দ্বিতীয় স্টেপে উঠল। টিচাররা তার মেধা দেখে শংকিত বোধ করতে লাগলেন। কারন মানুষের মধ্যে মেধাবী শিশুরা সব সময় মানোবটদের কাছে প্রিয়। তারা কি কারনে যেন মেধাবী শিশুদের নিয়ে চলে যায় চির জীবনের জন্য। তোর বোনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। হঠাৎ একদিন সকালে মানোবটের স্পেস সিপ উপস্থিত হল। তারা জোর করে আমার সুহাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। কথা বলা শেষ হতেই দুফোঁটা পানি বেরিয়ে আসল চোখ থেকে। তোকেও নিতে আসছিল কিন্তু তোকে লুকিয়ে রাখছিলাম। কৃও চোখের পানি সামলাতে পারল না। ডুকরে কেঁদে উঠল মায়ের কান্না দেখে। কৃ চোখ মুছে মানোবটের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সেটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। গালে চোখের পানির দাগ লেগে আছে। ব্যাপারটা খুব খটকা লাগল কৃর কাছে। সাথে সাথে সে তার কাছে লুকিয়ে রাখা নিউরোলজির বইটা বের করল। মানুষ কখন অজ্ঞান হয় এটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে লাগল।কয়েকবছর আগে বইটা খুব বেশী বুঝত না এখন বড় হয়ে কি বুঝবে না? অজ্ঞান হওয়ার কয়েকটা কারনের মধ্যে একটা কারন তাকে শিহরিত করল। কারনটা দেখে সে আঁৎকে উঠল। সেখানে লেখা শিশুর মস্তিষ্কের নিউরন সমুহ একটা নির্দিষ্ট মাত্রার অনুভুতি সংবহন করতে পারে। এর মাত্রা যদি বেশী হয়ে যায় তবে সেই মস্তিষ্ক ভেংগে পড়ে সিদ্ধান্তহীনতায়। মস্তিষ্কে সাময়িক ভাবে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়।
হঠাৎ বিদ্যুৎপৃষ্ঠের মত চমকে উঠল কৃ। তাহলে এই মানোবট তৈরি করা হয় শিশুদের মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে। মস্তিষ্ক তাদের বডি নিয়ন্ত্রন করে। মস্তিষ্কে তারা আবেগের জন্য যে সংখ্যক নিউরন প্রয়োজন তার চেয়ে কম নিউরন দেয়। এছাড়া একটা শিশুর মস্তিষ্ক আবেগের চেয়ে কৌতুহল বেশী থাকে। মানোবট তৈরির উদ্দেশ্য হল স্বল্প আবেগের কিন্তু বুদ্ধিমান রোবট তৈরি করা। তাদের আবেগের একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। এই কারনে কৃর মায়ের গল্প শুনে মানোবট অজ্ঞান হয়ে গেছে। তার মস্তিষ্ক এই আবেগ নিতে পারে নি।
আর এই কারনেই নিউরোলজি সাবজেক্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।কারন যে কেউ হালকা পড়লেই বুঝতে পারবে। কৃর মনটা খুব হালকা হয়ে গেল বিষয়টা ধরতে পেরে।

পরেরদিন একটা স্পেস সিপ আসল কৃর এলাকায়। এসে মানোবটকে নিয়ে চলে গেল।
এবার পরিকল্পনার পালা। কৃ পৃহা আর সুশানকে নিয়ে বসেছে। কিভাবে মানোবটকে ধ্বংস করা যায়। কৃ বলল প্রচন্ড অনুভুতি মস্তিষ্কের নিউরনে কিভাবে প্রেরন করা যায় কোন পদ্ধতি আছে তোদের জানা ? সবাই ঠোঁট উল্টে না বলল। পৃহা তখন বলল অনুভুতি সৃষ্টি করার জন্য ওয়েভ পাঠাতে হবে তাদের মস্তিষ্কে। কিভাবে পাঠানো যায় সেই সিস্টেমটা তোদের জানা আছে?
পৃহা বলল আমরা আদিম পৃথিবীর পদ্ধতি ব্যবহার করি না কেন? কি পদ্ধতি শুনি? আমারতো ইচ্ছা করলেই ব্যহালার সুর বাজাতে পারি চড়া মাত্রায়। একদম ঠিক কথা, তোর মাথায় এত বুদ্ধি? একটা বেহালার ব্যবস্থা কর তোরা দুইজন।

প্রতিবারের মত এইবারও যবের ভাগ নিতে আসল মানোবটরা। প্রত্যেক মানোবট স্পেস সিপ থেকে নামার সাথে সাথে বেহালার করুন সুর বেজে উঠল। প্রত্যেকের মস্তিষ্কে তীব্র তরঙ্গ আঘাত করতে লাগল। কানে হাত দিয়ে বসে পড়ল। কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ল। এখন সময় এসে গেছে পৃথিবীটা মানুষের একান্ত নিজের করে নেওয়ার। এখন আর মানোবটদের অধিনে থাকতে হবে না মানুষকে। কারন মানুষ তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র পেয়ে গেছে। ভালবাসা, আবেগ অনুভুতির অস্ত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৫৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×