somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্যগ্রহণের সংবাদ এবং মেষের চামড়ায় ধূর্ত নেকড়ের গল্প

২১ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক: অবাধ তথ্যপ্রবাহ যুগে সূর্যগ্রহণের সংবাদ

কোম্পানির ডিভিশন হেডের কাছে এমডি'র চিঠি
আজ সকাল ১১টায় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এটি হচ্ছে এমন একটি সময় যখন চাঁদের আড়ালে সূর্য অদৃশ্য হয়ে যাবে দুই মিনিটের জন্য। যেহেতু এটি এমন এক ঘটনা যা প্রতিদিন ঘটে না, সেহেতু পার্কিং লটে সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য কর্মচারীদের সময় দেয়া হবে। স্টাফদেরকে পার্কিং লটে হাজির হতে হবে ১১টা বাজতে ১০ মিনিট সময়ে, যখন আমি সূর্যগ্রহণের উপর ছোটখাট একটি ভাষণ দেব। অল্প মূল্যে নিরাপদ গগলস সরবরাহ করা হবে।

ডিপার্টমেন্ট হেডের কাছে ডিভিশন হেডের চিঠি
আজ সকাল ১১টা ১০-এ সব স্টাফকে কার পার্কে উপস্থিত থাকতে হবে। এর পরই সম্পূর্ণ গ্রহণের মধ্য দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে সূর্য, যা দেখা যাবে দুই মিনিট ধরে। অল্প মূল্যে গগলসের সাহায্যে একে নিরাপদ রাখা হবে। এমডি সাহেব সবাইকে কিছু তথ্য দেয়ার জন্য আগেই ছোট একটি ভাষণ দিবেন। এটি এমন কিছু নয় যা প্রতিদিন দেখা যায়।

ফ্লোর ম্যানেজারের কাছে ডিপার্টমেন্ট হেডের চিঠি
এমডি আজকে ছোট একটি ভাষণ দিবেন যাতে গ্রহণের মধ্য দিয়ে দুই মিনিটের জন্য সূর্য অদৃশ্য হয়ে যাবে। এটি হচ্ছে এমন ঘটনা যা প্রতিদিন ঘটে না, তাই ১০-১১টায় স্টাফরা কার পার্কে মিলিত হবে। সামান্য কিছু মূল্যের বিনিময়ে একে নিরাপদ রাখা হবে।

সুপারভাইজারের কাছে ফ্লোর ম্যানেজারের চিঠি
১০-১১ জন স্টাফকে আজ কার পার্কে উপস্থিত থাকতে হবে, যেখানে এমডি দুই মিনিটের জন্য সূর্যের গ্রহণ সম্পন্ন করবেন এবং তা অদৃশ্য হয়ে যাবে। এটি প্রতিদিন ঘটে না, এবং বরাবরের মতো তোমাদের কিছু মূল্য দিতে হবে এর জন্য।

স্টাফের কাছে সুপারভাইজারের চিঠি
কতিপয় স্টাফ আজকে কার পার্কে উপস্থিত হবে এমডির অদৃশ্য হয়ে যাওয়া দেখতে। পরিতাপের বিষয় এ ধরণের ঘটনা নিয়মিত ঘটে না।

দুই: প্রাচীন যুগে মেষের চামড়ায় ধূর্ত নেকড়ের গল্প

মেষপালক ও তার শিকারী কুকুরগুলোর জন্য ভেড়াদের কাছে ঘেঁষতে পারছিল না নেকড়ে। শিকার না পেয়ে ব্যর্থ দিন কাটছিল তার।

ইতঃস্তত ঘুরে বেড়ানোর সময় নেকড়ে একদিন দেখল রাস্তায় এক মেষের চামড়া পড়ে আছে। দ্রুত চিন্তা খেলে গেল তার মনে, এদিক ওদিক তাকাল সে। না, কেউ চোখ রাখছে না তার উপর। চট করে মেষের চামড়াটা পরে ফেলল সে। তারপর পাহাড়ের ধারে ঝর্ণায় নিজের ছায়ার দিকে তাকাল। খুশিতে নেকড়ের দাঁত বের হয়ে গেল, একেবারে নিখুঁত মেষের মতো দেখাচ্ছে তাকে।

পায়চারি করতে করতে মেষপালের কাছে গেল নেকড়ে। পাল থেকে খানিক দূরে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে একটা মেষশাবক।
"শুভ অপরাহ্ন, ছোট্ট মেষশাবক।" সম্ভাষণ জানায় নেকড়ে।
"শুভ অপরাহ্ন," অবাক হয়ে তাকায় মেষশাবক, "আপনাকে চিনতে পারলাম না তো!"
"আমি হচ্ছি উচ্চ-জ্ঞানী মেষ, জগতের সব জ্ঞান আমার নখদর্পণে।" হাসতে হাসতে বলে নেকড়ে।
পরক্ষণেই খুব দুঃখিত ভঙ্গীতে বলে, "ওহ্‌, কী ক্ষুদ্র, বাজে জায়গায়ই না তুমি খেলছ! আমার সাথে চলো ঐ পাহাড়ের ধারে, সেখানে রয়েছে নয়নাভিরাম চমৎকার এক জায়গা। টলটলে জলের ঝর্ণা, সবুজ ঘাসের মাঠ, পুষ্পশোভিত অরণ্য। রাজ্যের সব পশু-পাখিশাবক সারাক্ষণই খেলা করে সেথায়। আনন্দে হল্লায় সময় কাটবে তোমার।"
"সত্যি!" বিশ্বাস হতে চায় না মেষশাবকের, কারণ এত কাছে এরকম চমৎকার জায়গার কথা নিশ্চয়ই তার বাবা-মা কিংবা মেষসমাজের কথা কেউ না কেউ জানত।
"সত্যি বলছি, আমি হলাম উচ্চ-জ্ঞানী মেষ।" নেকড়ে আশ্বাস দেয়।

নেকড়ের পেছন পেছন অগ্রসর হয় মেশশাবক। পাহাড়ের আড়ালে যাওয়ার সাথে সাথেই তীক্ষ্ণ নখরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় তার দেহ, মারা যায় সে অসহায়ের মতো।
_____________________
দুই যুগের দুই গল্প, ভিন্ন দুই প্রেক্ষাপট, তবু মিল একটি যেন রয়েই যায়। জ্ঞান আহরণ মহত্তম শ্রদ্ধা পুণ্যের কাজ, কিন্তু মানবতার কল্যাণে তথ্য আদান-প্রদান কিংবা জ্ঞান অন্বেষণের কাজে, প্রাচীন যুগের মেষ কিংবা অবাধ তথ্যপ্রবাহ যুগের নিবেদিত কর্মী, সবারই নিশ্চিত হওয়া উচিত তথ্যের সত্যতার ব্যাপারে একজন স্বাভাবিক মমতাময় শ্রদ্ধাশীল মানুষ হিসেবে আমার হৃদয় কী বলে; তথ্যটি অসহিষ্ণু, ফাসাদ সৃষ্টিকারী না তো; তথ্য সরবরাহকারী মেষের চামড়ায় নেকড়ে না তো!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:৩৩
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×