somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণিত বিষয়ক ফিকশান: পিঁপশঙ্কের রাজ্যাভিযান (পর্ব ১)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[১]
শুনশান নীরব দুপুর, ১৫ ই জানুয়ারি ২০১০
মেঘনা-তিতাসের বাঁক, কাশবনের ধার, গ্রামের জংলা ঝোঁপ


প্রিইইই...
তীক্ষ্ণ চিৎকারে হঠাৎ ভেঙে পড়ে নীরবতা। ক্ষীণতর হয়ে গেল নদীর কুলকুল ধ্বনি, ঝরা পাতার মচমচ শব্দ, কাশবনের সরসর দোল। চমকে উঠে ফারিন, দ্রুত চোখ বোলায় চারপাশে। কিন্তু না, চোখে পড়ছে না কিছুই!

প্রিইইই..., এবার আরো জোরালো হলো শব্দ, আরো কাছ থেকে আসছে মনে হলো।
"এগুবে না, এগুবে না আর! দেখতে পাওনা, একেবারে গায়ের উপর এসে পড়লে যে!"

পায়ের দিকে এবার তাকায় ফারিন। দৃশ্য দেখে হাসি চেপে রাখতে পারে না কোনো মতেই: শুঁড় আর সামনের দু'টি পা উঁচু করে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গিতে মুষ্ঠিযোদ্ধার মতো দাঁড়িয়ে একটি পিঁপড়া।

"ভয় পেয়ো না, আমি তোমাকে মারব না। সত্যি বলতে কী, পিঁপড়াদের খুবই ভালোবাসি আমি।" আশ্বাস দেয় ফারিন।
"আমার নাম পিঁপশঙ্ক—পিঁপ অশঙ্ক, মানে অদম্য সেই পিঁপড়া শঙ্কা জানে না যে। ভয় আমি পাইনি মোটেও, কিন্তু তোমরা যদি কাউকে ভালোই বাস, তাহলে তার সাথে কীভাবে উদ্ধত অবজ্ঞার আচরণ করো?"
"এর মানে কী, পিঁপশঙ্ক? অবাক হয় ফারিন।
"এই যে বললে পিঁপড়াদের ভালোবাস তুমি। তাহলে জমিনের উপর দিয়ে এভাবে সংবেদনহীন, অসতর্কভাবে কীভাবে হেঁটে যেত পার? আমি তোমাকে না দেখলে এবং চিৎকার না করলে তো পিষেই ফেলছিলে!" ক্ষোভে-মেশানো কণ্ঠ পিঁপের।
"আসলেই আমার ভুল হয়েছে, আর এরকম হবে না কখনো।" অনুতপ্ত গলায় জবাব দেয় ফারিন।
"আমার নাম ফারিন, আলোকিত ও অভিযানপ্রিয়। আমি তোমার বন্ধু, পিঁপ।" বলতে বলতে পিঁপশঙ্ককে হাতে তুলে নেয় সে।
হাসি ফুটে উঠে পিঁপের ঠোঁটের কোণ, শুঁড় বাড়িয়ে স্পর্শ করে ফারিনের হাতের তালু। "ধন্যবাদ তোমাকে।"

"তুমি কী করছিলে?" ফারিনের প্রশ্ন।
"আমি একজন অনুসন্ধানী পিঁপড়া, বেরিয়েছি আমার গোত্রের জন্য নতুন রাজ্য খুঁজতে।"
"নতুন রাজ্য কেন? আগের রাজ্য কি ধ্বংস হয়ে গেছে?"
"না, ধ্বংস হয়নি। ঐ যে, পাকুড় গাছটা দেখছ, তার পাশে আমাদের বর্তমান রাজ্য। কিন্তু আমাদের জন্যসংখ্যা বেশ বেড়ে গেছে তো, শিশুদের ভালোভাবে বেড়ে উঠার জন্য নতুন, প্রশস্ত এলাকা দরকার।"
"ওখানেই নতুন বাসা বানিয়ে নাও না কেন তোমরা?"
"আমরা তোমাদের মতো অবিমৃষ্যকারী নই যে সবাই রাজধানীর দিকে ছুটব আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকব।" মানুষের বোকামির কথা ভেবে উষ্ণ হয় পিঁপের কণ্ঠ। "জনসংখ্যার সাথে আমাদের বাসস্থানের আকারের সুনির্দিষ্ট একটি আনুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। জীবনের সুষ্ঠু বিকাশে অনুপাতটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই কষ্ট হলেও প্রয়োজনে খোলামেলা রাজ্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি আমরা। আমার মতো আরো অনেক স্কাউট বেরিয়েছে চারদিকে, তবে আশা করছি সবার আগে আমিই ভালো একটা জায়গার সন্ধান পেয়ে যাব।" হাসিতে উদ্ভাসিত হয় পিঁপের মুখ।

"কীভাবে রাজ্য খুঁজ তোমরা আমি দেখব।" অনুরোধ করে ফারিন।
"আচ্ছা, হাত থেকে নামিয়ে দাও আমাকে। তারপর আমার পেছন পেছন আস।"
হাতের তালু থেকে পিঁপশঙ্ককে নামিয়ে দিল ফারিন। এগিয়ে যেতে থাকে অদম্য সেই পিঁপড়া শঙ্কা জানে না যে।

বেশ অনেক ক্ষণ হাঁটার পর বিশাল এক অশ্বত্থ গাছের পাশে শক্ত লালমাটির একটি ঢিবি দেখতে পায় পিঁপ। তার ধার বেয়ে তরতর করে উপরে উঠে সে, তারপর হঠাৎই দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়।
"পিঁপ, পিঁপ, পিঁপশঙ্ক! কোথায় গেলে তুমি?" চিৎকার করে ডাকে ফারিন।
প্রায় দু'মিনিট পর পিঁপের শুড় দেখা যায়, দুর্বাঘাসের আড়ালে একটি গর্তের মুখে।
"সম্ভাব্য রাজ্য দেখে এলাম একটা, ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করলাম তার চারপাশটা।" হাসে পিঁপ।
"তুমি তো দেখলাম গর্তের ভেতর ঢুকলে। অন্ধকারে আবার কী পরীক্ষা করলে, কীভাবেই বা করলে!" বেশ অবাক হয় ফারিন।
"হ্যাঁ, ভেতরটা একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আলকাতরার মতো কালো। তবে আমরা তো আর চোখে দেখে কোনো জায়গার আয়তন হিসেব করি না, স্পর্শ করে করে আয়তন বের করি।" রহস্যময় ভঙ্গিতে শব্দ করে হাসে পিঁপ, চোয়াল প্রশস্ত হয় তার।

ফারিনের কাছে আসে পিঁপশঙ্ক। তারপর ঘুরে আবার রওয়ানা দেয় গর্তের দিকে।
"আরে, আরে, কোথায় যাচ্ছ আবার?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ফারিন।
"আমার কাজ শেষ হয়নি তো এখনও, গর্তে ঢুকতে হবে আরেকবার। তারপরই আয়তনের হিসেব শেষ হবে।"
"ঘাসের ভেতর তো অনেক গর্ত, আগের গর্ত চিনতে পারবে?"
"গর্তের দেয়াল ঘেঁষে আমার শরীর থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থের একটা পথ বানিয়ে এসেছি, যাকে বলে ফেরোমোন ট্রেইল। আমাদের প্রত্যেক স্কাউটেরই রয়েছে যার যার নিজস্ব ফেরোমোন ট্রেইল বানানোর ক্ষমতা, একটির সাথে অন্যটির ঝামেলা হয় না কখনো। গন্ধ শুঁকে আমার সঠিক গর্তটি ঠিকই বের করে ফেলব।" পিঁপের কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয়।

ঘাসের ভেতর হারিয়ে যায় পিঁপ। এবার বেশ অনেকটা সময় পর বেরিয়ে আসলো সে, মুখের হাসিটি আরো বিস্তৃত হয়েছে তার।
"পছন্দ হয়েছে জায়গাটা, হিসেব করলাম আয়তন। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আর চারপাশের বিন্যাস সব মিলিয়েও চমৎকার। যাই, সবাইকে নতুন রাজ্যের খবর দিয়ে আসি।"
"কিন্তু তোমার মতো আরো অনেকেই হয়তো এরকম নতুন রাজ্যের সন্ধান নিয়ে যাবে, তাই না? কারটা চূড়ান্ত হবে?"
"হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ, ফারিন। আর আমরা পিঁপড়ারা গণতান্ত্রিকও বটে। আমি এখন বেশ কয়েকজনকে রিক্রুট করব জায়গাটা দেখার জন্য, তারাও সেটি পরীক্ষা করে দেখবে। যার রাজ্য সবচেয়ে বেশি পিঁপড়ার পছন্দ হবে, সেটিই নির্বাচিত হবে নতুন নিবাস হিসেবে।"
"কিন্তু ঠিকমতো বাসায় পৌঁছতে পারবে তো তুমি?" ফারিন প্রশ্ন।
"হ্যাঁ," মাথা ঝাঁকায় পিঁপ, "বাসা থেকে এ পর্যন্ত আমি ৩৩,০০০ কদম এসেছি। গুণে গুণে ঠিকই বাড়ি ফিরে যেতে পারব।"

তারপর একটু বিষণ্ণ যেন হয় পিঁপের স্বর। "আচ্ছা, যাই তাহলে, পরে কথা হবে। খুব ভালো লাগল তোমাকে দেখে। ও হ্যাঁ, বাড়ি যাবার সময় একটু সাবধানে, নিচের দিকে তাকিয়ে যাবে কিন্তু।" অনুরোধ করে সে।
মৃদু হাসল ফারিন, "হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু নতুন রাজ্যের আয়তনটা কীভাবে বের করলে, বলো না?"
"এটি তোমার জন্য একটি ধাঁধা," দুষ্টু হাসি হাসে পিঁপ, "পরের বার যখন দেখা হবে, উত্তরটা জানাবে আমাকে।"
"ওহ," একটু মনমরা হয় যেন ফারিন, কিন্তু পিঁপের মায়াকাড়া দুষ্টু চেহারা দেখে হেসে ফেলে, "আচ্ছা।"

ক্রমশ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:০৯
৩৩টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×