সময়টা ১৯৯৩ সালের । আমরা তখন থাকি দিনাজপুর ক্যান্টরমেন্ট-এ সরকারী কোয়ার্টারে। ক্লাগ থ্রিতে পড়ি। চারদিকে ছেলে ধরার অদ্ভুত সব কথা শোনা যাচ্ছে। বাসার কাজের ছেলেটা প্রতিদিন বাজারে যায় বাজার করে নিয়ে আসে। স্কুল বন্ধ থাকায় আমিও একদিন তার সাথে বাজারে যাওয়ার বায়না ধরলাম। অনেক কাঠ-খড়া পুড়িয়ে তবে বাজারে যাওয়ার অনুমতি পেলাম।
মনের আনন্দে বাজারে ঘুড়ছি, এটা-সেটা দেখছি। ছেলে ধরার ভয় ছড়িয়ে পড়ায় হয়তো এতদিন বাহিরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি, তা ভালভাবেই বুঝতে পারছি। বাজার করা শেষে বাসায় ফিরার পথে দেখতে পেলাম বট গাচের নীচে বিশাল জটলা। অনেক মানুষ গোল হয়ে ঘিরে রেখেছে দু’জন লোককে। আমরাও ভিরের মধ্যে মিশে গেলাম।
দু’জনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লোকটি বলতে লাগলো- যাদু, যাদু, যাদু----------------------------------------------------------
দেখে যান আমার যাদু, আশ্চার্যজনক যাদু, বিষ্ময়কর যাদু। জীবনে প্রথম সরাসরি যাদু দেখব বলে আমার সেকি উত্তেজনা। নিঃষ্পলকভাবে তাকিয়ে আছি লোকটির দিকে। সে কি করছে, কি বলছে, কি কেরামতি দেখাচ্ছে যেন কিছুই বাদ না যায়।
প্রথমে সে উৎসাহী দর্শকের হাতে কিছু কাগজ দিল, তারপর মুঠো বন্ধ করতে বলল এবং চোখও। এদিকে সে কিসব বলছে এবং একটু পরেই হাতের মুঠ খুলতে বললো। অবাক হয়ে সবাই দেখতে পেলাম কাগজের যায়গায় নতুন ১০০/- টাকার নোট। আমারতো চক্ষু চরক গাছ। কি করে সম্ভব ?
এবার যাদুওয়ালা সে তার সহকারীর হাতে ২টি পেয়াজ দিল। সহকারী একটি খালি খাঁচা এনে সবাইকে দেখালো এবং খাঁচার ভিতরে সেই ২টি পেয়াজ রেখে দিয়ে খাঁচা একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল। যাদুকর মন্ত্র পড়তে লাগলো চোখ বন্ধ করে। মন্ত্র পড়া শেষে হাত নাড়তে লাগেলো খাঁচার উপড় এবং হঠাৎ একটানে কাপড় সড়িয়ে দিতেই দেখা গেল খাঁচার ভিতরে দু’টি জীবন্ত টিয়া পাখি। দর্শক আনন্দে হাততালি ও চিৎকার করে উঠল।
যাদুকর এবার বলতে লাগলো- খুন, খুন, খুন-----------------------এবার আপনাদের সামনে মানুষ খুন হবে দেখি কেমনে বাঁচান ? মানুষ খুনের কথা শুনে অনেকে ভড়কে গেল। আমিও খুব ভয় পেলাম। যাদুকর হঠাৎ তার কোমড় থেকে ২টি চকচকে ছুড়ি বের করলো। তার সহকারীকে ১টি টেবিলে শুয়ায়ে হাসতে হাসতে তার তলপেটে ২টি ছুড়িই ঢুকিয়ে দিল। সহকারী আর্তচিৎকার করে উঠল, রক্তে ভেসে গেল তার পড়নের কাপড় ও টেবিল। যাদুকর বললো সবাই দেখলেনতো খুন হয়ে গেছে আমার ছেলেটি। এবার তাকে বাঁচিয়ে তুলবো। টেবিলের চারপাশে তাবুর মত খাটিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো। যাদুকর বাহিরে কিসব বলছে এবং তাবুতে ফুঁ দিচ্ছে। হাতে নানা প্রকার জিনিস- পত্র। একসময় ছেলেটি জীবিত বের হয়ে এল সবার সামনে এবং জামা খুলে দেখালো তার তলপেটে কোন প্রকার দাগ বা চিহ্ন নেই।
ভয় আর আতঙ্ক শেষে বাসায় ফিরলাম নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:১৯