১৯৯৪ সালের কোন এক সকালে সৈয়দপুরের সরকারী বাসা থেকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলে যাচ্ছি। ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ি। অন্যান্য বন্ধু আগেই স্কুলে চলে যাওয়ায় একাই সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে হেটে হেটে যাচ্ছি। প্রায় ৩০ মিনিটের হাটা পথ। রাম্তা দিয়ে যাচ্ছি আর এটা-সেটা ভাবছি। হঠাৎ সামনে দেখতে পেলাম সেনাবহিনীর এক সৈনিক সাইকেল চালিয়ে আসছে সামনের দিক থেকে। তার সাইকেলের সামনে বিভিন্ন প্রকার গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল। কাছাকাছি আসতেই আমার ইচ্ছা হলো ওনার থেকে ফুল নেওয়ার কিন্তু একজন অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে কি ভাবে ফুল চাওয়া যায় জানিনা। মনে মনে বলতে থাকলাম-ইস্ যদি একটা ফুল পড়ে যেত, তাহলে আমি নিয়ে নিতাম।
সৈনিক আমাকে ক্রস করে চলে গেল। আমিও সামনের দিকে পা বাড়ালাম। কি মনে করে পিছন দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম একটা রজনীগন্ধার স্টিক সেই সাইকেল থেকে নীচে পড়ল। অপ্রত্যাশিতভাবে মনটা খুশীতে ভরে গেল। কিন্তু ঠিক তখনই বিপরীত দিক থেকে একটা গাড়ী ধেয়ে আসছে। নির্ঘাত ফুলটিকে পিষ্ট করবে, সবকিছু ভুলে একদৌড়ে ফুলটিকে ছোঁ মেরে হাতে নিয়ে রাস্তার পাশে এসে দাড়ালাম আর অমনি গাড়িটি সাই করে চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল। আর একটু দেড়ি হলে ফুলসহ আমি পিষ্ট হয়ে পৃথিবী থেকে চিরদিনের তরে চলে যেতাম।
ফুলটির ঘ্রান শুকতে শুকতে স্কুলে পৌছলাম। তখনও ক্লাস শুরু হয়নি, ব্যাগ রেখে মাঠে গেলাম। বন্ধুরা ফুল দেখে কেউ বলল-কোথা থেকে এনেছ, কেউ বলল-নিশ্চয় চুরি করেছ, অন্যকেউ বলল-উপহার পেয়েছ, বাগান থেকে ছিড়ে এনেছ ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ? সবশেষে আমি আসল ঘটনাটা খুলে বললাম। তখন সবাই ফুলটি নিজের করে নিতে চায়। আমি বললাম-একটা ফুলতো আর সবাইকে দিতে পারবনা। তারচেয়ে এটা আমার কাছেই থাকুক।
তারপর থেকে রজনীগন্ধা ফুল দেখলেই সেই অন্যরকম ইচ্ছা পূরণের ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩১