somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্মির মেয়ে

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘটনাটা ফরিদা কখনোই ভুলতে পারিনি। আর কোন দিন ভুলতে পারবে বলেও মনে হয়না।যে বার বাসার সামনের বিল্ডিয়ের পিছনের শিমুল গাছটি রক্তিম ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছিল, যে বার সবচেয়ে বেশি গাছটিতে ফুল ধরেছিল, সেবারই ঘটনাটা ঘটেছিল।

খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্ট-এর বাসায় প্রথম প্রথম ভাল লাগতোনা ফরিদার। কেমন যেন খোলা যায়গার মধ্যেই হঠাৎ করে যেন সব বিল্ডিং, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল আরও অন্য সবকিছু গজিয়ে উঠেছে। আর একারণেই এর নাম খোলাহাটি হয়েছে । এমটাই ফরিদা ভাবতো এবং বিশ্বাস করত।

বান্ধবী বলতে পাশের বাসার জুলি আর অন্য বাসার শারমিন। তবে জুলির সাথেই বেশি ভাব। আর স্কুলে গ্রাম থেকে যেসব মেয়ে তাদেরকে সে পাত্তাই দেয়না। মেয়েদের মধ্যে ওর রোল নং-ই ১০ এর মধ্যে আর জুলির ২০ এর মধ্যে। ভাল ছাত্রী হিসাবে ফরিদার নাম আছে। সে কারণে অহংকারও কম নয়।

ক্লাসের সব মেয়ের মধ্যে সে সবার লম্বা। জুলি সবচেয়ে সুন্দরী আর আঙ্গুরীর চুল সবচেয়ে ঘন, কাল ও দীঘল। মেয়েদের ক্যাপ্টিন ও সে।
সব ভাই বোনদের মধ্যে ছোট হওয়ায় বাবা-মা আদরও করে বেশি।

একদিন বিকেলে সে জুলিকে বলছে- জানিস ক্লাসে দু'একটা ছেলে আমাকে অফার করতে চায়। এমনকি তোকেও ? জুলিও অবাক হয়ে বলল-ওমা তাই নাকি !

কোন ছেলেগুলো ? নাম জানিস ?

অনুমান করেছি, তবে তোকে এখন বলব না। বললেও তুই বিশ্বাস করবি না।

কেউ জানলে আমাদের মান-সম্মান সব শেষ হয়ে যাবেরে ফরিদা। তুই এটা কি শুনিয়েছিস আমাকে, ভাল লাগছেনা।

দূর বোকা মেয়ে। এত ভাবনা কিসের। আমি আর্মির মেয়ে। দেখে নিব কি হয়। সবকটা মিচকে শয়তানকে উচিৎ শিক্ষা দিব।

কিছুদিন পর স্কুলে হ্যান্ড বল প্রতিযোগিতা শুরু হল। ৭ম শ্রেণির ছাত্রীদের প্রতিপক্ষ ৯বম শ্রেণির ছাত্রীরা। ফরিাদা ৭ম শ্রেণির লিডার। সে
নিজে গোলরক্ষক। জুলি ও রুনিকে রাখল আক্রমনাত্মক খেলার সহ অধিনায়ক হিসাবে। তার পরামর্শ ও লিডারশীপে দল পর পর দু,বার জয়ী হল। সে এই মর্মে দীক্ষা নিল আর্মির মেয়ে কখনো হেরে যেতে পারেনা। তার সফলভাবে গোল ঠেকিয়ে দেওয়া দেখে দর্শক হাততালি দিতে লাগলো ঘন ঘন। অবশেষে তার অদম্য সাহসীকতায় দল ফাইনালে উঠল।

ফাইনালের দিন সে ও তার দলের সদস্যরা যেন এক একজন অগ্নিকন্যা। সালমান শাহ ইস্টালে মাথায় কাল কাপড় বেধে অতন্ত্র প্রহরীর মত সে গোল পোস্টে দাড়িয়ে রইল।
টান টান উত্তেজনায় খেলার ১মার্ধের শেষ মূহুর্তে প্রতিপক্ষের ৩টি গোল ঠেকিয়ে দিয়ে সে তখন সবার আসরের মধ্যে মনি। শেষমেষ ফরিদার দল ২ গোলে জয়ী হলো।

ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হলো -ফরিদা পারভীন।

ফুরফুরে মেজাজে ক'দিন কাটাল ফরিদা, জুলিরা। কিছুদিন পর আবার যথারিতী ক্লাস চলতে লাগলো। সেই ছেলেগুলো আরও বেশি অস্থির হয়ে উঠেছে প্রেম নিবেদনে এই তথ্য যথাসময়ে ফরিদার কানে আসল।

মনে মনে সে পরিকল্পনা করছে কি ভাবে কি করা যায়। এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে চরম শিক্ষা হয়। আর মেয়েদের যেন বিরক্ত না করতে পারে।

সে দিন ক্লাসে একটা ছেলে পড়া-লেখার বিষয়ে কি যেন একটা প্রস্তাব দিল। সব ছেলেরা একমত। এখন মেয়েদের মতামত নেওয়া হবে।
রনি নামের ছেলেটিকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হল-মেয়েদের কি কি বলতে হবে।

প্রস্তাব শুনে ফরিদা একবাক্যে না করে দিল। এতে ছেলেরা বেশ অপমানিত বোধ করল। নাটের গুরু লিমন এবার একটা চিঠি লিখল ফরিদাকে।

যার সারমর্ম হচ্ছে-এত দেমাগ ভাল নয়। সব কাজে না করতে নেই।

ব্যস আর যায় কোথায়। ফরিদা একটা ভাল উছিলা পেয়ে গেল। সে রাগে ফুলতে ফুলতে ক্লাস টিচারকে বলল-

স্যার লিমন আমাকে প্রেম পত্র দিয়েছে সাথে আরেকটা চিঠি। মেকি কান্নায় তার চোখ ভরে উঠল অশ্রুতে। স্যার ২টি চিঠি দেখতে চাইলেন।

ফরিদা একটি চিঠি দিল এবং বলল-প্রেম পত্র ছিড়ে ফেলেছে। একটা লিখিত কাগজের খুব ছোট ছোট অংশের কয়েকটা টুকরা স্যারকে দিয়ে বলল, এই সেই চিঠির অংশ।
অন্য মেয়েরাও তাতে সায় দিল। শুধু বিচার দিয়েই সে ক্ষান্ত নয় সে এ বিষয় তার বাবাকে ও আর্মি অফিসকে জানাবে।

স্যার বললেন- না বিচার এখানে হবে। তুমি আর কাউকে জানাবেন না। প্রথমে রনিকে জিজ্ঞাসা করা হলো। তারপর লিমনকে।

লিমন সব দায় স্বীকার করল। কিন্তু সে কোন প্রেম পত্র দেয়নি বলে জানালো। ০৩টি বেত একত্র করে লিমন ও রনিকে সবার সামনে বেদম মার দেওয়া হল। মারের চোটে রনি কান্না শুরু করে দিল।
লিমন বলল- স্যার রনির কোন দোষ নেই। যা শাস্তি আমাকে দেন।

একথা শুনে স্যার ক্ষেপে গিয়ে আরো জোড়ে জোড়ে লিমনকে প্রহার করল। সবাই ভয়ে স্তব্দ হয়ে গেল।

আর ফরিদা মনে মনে হাসছে আর বলছে-আমি আর্মির মেয়ে। এত সহজে কাউছে ছাড়ার পাত্রী নই।

এই ঘটনা ফরিদা আজও ভুলতে পারেনা । অনাগত দিনে ভুলতে পারবে কিনা জানেনা।








সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×