somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকাদুয়া বিয়ে

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সীমান্তবর্তী গ্রামের ছেলে শাহেদ। দেখতে সুন্দর হলেও গায়ের রংটা একটু তামাটে। এ গ্রামে কন্যা দায় গ্রস্থ পিতা সবচেয়ে বেশি। তাই শাহেদের পিতা-মাতা শংকিত থাকে কে কখন তাদের পুত্রকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কন্যাকে গছিয়ে দেয় শাহেদের ঘাড়ে।

গ্রামের নামটাও অদ্ভুত পৃত্রিস্বর। নাম করণের একটা ইতিহাস অবশ্যই আছে। অনেকেই মনে করে কন্যা দায় গ্রস্থ পিতার আক্ষেপের স্বর থেকেই পিতাস্বর এবং পিতাস্বর বিকৃত হয়ে পৃত্রিস্বর হয়েছে। সবুজে ছাওয়া গ্রামটা দেখতে সুন্দর। গ্রামের পাশেই নদীর মত একটি খাল যা বর্ষাকালেই কেবল যৌবন জোয়ারে ভাসে অন্য সময় হাটু পানি আবার কখনো বা পাতা পানি থাকে।

শাহেদ পড়ালেখা শেষ করতে পারেনি। নিকটবর্তী শহরে ব্যবসায় করে। গ্রামে এলে অনেক মেয়েই তার সাথে ভাব জমাতে চায়। কিন্তু প্রেম ভালবাসার মত রোমান্টিকতায় তার মন নেই। সে বুঝে কাজ আর টাকা। টাকা না থাকলে কারো মূল্য নেই। কথায় কথায় বলে টাকা না থাকলে যৌবন ধুয়ে কি পানি খাব।

ইদানিং ভারতে নাকি পাকাদুয়া বিয়ের জন্য তরুন ও যুবকদের অপহরন করা হচ্ছে। পত্রিকা পড়ে এই পাকা দুয়া বিয়ে কিনিষটা কি তা জেনে শাহেদ অবাক হল। এত দিন সে জানত বিয়ের জন্য কেবল মেয়েদেরই উঠিয়ে নেয়া হয় বা অপহরন করা হয় কিন্তু এখন দেখছে ছেলেরাও বিয়ের জন্য অবহৃত হচ্ছে।

বন্ধু শাহিনের সাথে একদিন কথায় কথায় বলল-এই ব্যবসায় আর দৌড়াদুড়ি ভাল লাগেনা। আমাকে কেউ যদি পাকাদুয়া বিয়ের জন্য ধরে নিয়ে যেত বেশ হত। কথা শুনে শাহিন বলল- পাকদুয়া মানে ?

মানে কিছুনা দোস্ত। ধর তরে কোন অবিবাহিত কন্যার পরিবারের লোকদের ভাল লেগে গেল। তারা তোকে একদিন জোড় করে তুলে নিয়ে বা অপহরন করে তাদের মেয়েকে গোপনে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিল এটাই পাকাদুয়া বিয়ে। উত্তর ভারতে হরদম চলছে এগুলো।

শাহিন বলল- তাহলেতো শিখার বাবাকে খবর দিতে হয়। তোকে ধরে নিয়ে শিখার সাথে বিয়ে দিয়ে দিক। মেয়ে সুন্দরী। কিন্তু মুখরা। তোকে পেলে শিখা আর আস্ত ছাড়বেনা। হা।হা। হা.............................

তুই থাম। বরং তুই বেকার আছিস। তোকেই মেয়ে পক্ষ নিয়ে কাজে লাগিয়ে দিবে। আর বেকার থাকবিনা। কর্ম ও পাবি, বউও পাবি। রাজত্ব আর রাজকন্যা একসাথে। কি বলিস।

শাহিন- তুই দেখছি সিরিয়াস। আমিতো মজা করলাম।

শাহেদ-এখন মজা করে নে । যখন ধরা খাবি তখন সাজা পাবি।

শাহিন-আমাদের দেশে এগুলো হয়নি। হবেনা।

শাহিন অনেকক্ষণ গল্প করে চা খেয়ে চলে গেল। শাহীনের চেহারা সুন্দর। পেটানো শরীর। শক্ত-সামর্থ যুবক। রাতে আবার আড্ডা দেওয়ার জন্য শাহিন ঘর থেকে বের হল। কিন্তু গভীর রাত অবধি ঘরে না ফেরায় তার মা চিন্তিত। সকালে শাহীনের বাবা সালামত খা-কে বলা হল শাহিন গত রাতে ঘরে ফিরেনি। তিনি রাগত গলায় বললেন-দেখ কোথায় আড্ডা মেরে , তাস পিটিয়ে পড়ে আছে। দুপুরে ক্ষিদে লাগলে চলে আসবে। এত বড় দামড়া হল তবুও কোন কাজের নাম নেই। বসে বসে বাপের হোটেলে বাবুগিরি করে।

কিন্তু দু’দিন হয়ে গেল শাহিনকে কোথাও খুজে পাওয়া গলনা।শাহেদ খোঁজ নিয়ে জানল শাহিন লাপাত্তা। তার মনে হঠাৎ বারি খেল-অপহরন হয়নিতো ? সেও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় খোজ-খবর নিল। কিন্তু না কিছুতেই কিছু হলনা।

এদিকে বাড়ি থেকে শাহেদকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বিয়ে করার জন্য। বিশেষ কেউ আছে কিনা ? থাকলে পরিবারকে জানাতে বলা হয়েছে। সে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাড়িতে পাকা ঘর না করে বিয়ে করবেনা। পরিবার নিরাশ হল।

তিন মাস পর এক আগুন লাগা ফাগুন সন্ধ্যায় শাহিন ফিরে এল সাথে একটি অপরিচিত মেয়ে। শাহিনের বেশ-ভূসা পাল্টে গেছে। প্রথমে মা-বাবা বিশ্বাস করতে পারছিলনা তার ছেলে বেঁচে আছে। ছেলেকে পেয়ে মা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। তার চোখে আনন্দ অশ্রু।
সাথের মেয়েটি শাহিনের বউ একথা জেনে শাহিনের বাবাতো রাগে অগ্নিশর্মা। পরে যখন বলল বিস্তারিত তখন তিনি কিছুটা ঠান্ডা হলেন।
ছেলের নামে জমি আছে, দোকানও লিখে দিয়েছে। প্রতি মাসে আয়ও কমনা। বউও কাজে-কামে পাতলা। সব মিলিয়ে তারা এই বিয়ে মেনে নিয়েছে।

বাতাসের আগে খবর ছড়িয়ে পড়ল। শাহিন-কে পাওয়া গেছে। রাতে গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে ঙেঙ্গে পড়ল। কাহিনি শুনে বউ দেখে তারা বিশ্বাস করতে পারছেনা এমন ঘটনা সত্যি ঘটতে পারে।

শাহেদের সাথে যখন শাহিনের দেখা হল শাহেদ বলল-যাক অবশেষে বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিড়ল। তানা হলে সারা জীবন উড়নচন্ডী হয়েউ থাকতি। শাহিন কথা শুনে বলল-আমাকে না নিয়ে তোকে নিলেই ভাল হত শালা। ঘর জামাই হয়ে থাকতি। তখন আর মুখে বড় বড় কথা বলতে পারতিনা।

সেই রাতে যখন শাহেদ অন্ধার পথে হাটছে তখন পিছন থেকে কে যেন তাকে ডাক দিল। সে পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলনা। সামনে দেখতে পেল তিন জন লোক হঠাৎ কোথা থেকে এসে দাড়িয়ে আছে। তাদের সাথে কথা-বার্তার এক পর্যায়ে পিচন থেকে রুমালসহ তার নাক কে যেন চেপে ধরে। জ্ঞান ফিরে দেখে অচেনা জায়গায় সে। তারপর ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও লোভ দেখিয়ে জোড় করে শিরিনের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেয়।

শাহেদ বলল- আমরা তোকে কত খুঁজেছি, থানায জানিয়েছি কিন্তু তুই লাপাত্তা। যাক ভালই হল ঘরনীও ঘরে এল, সওদাগর হযে ফিরলি মন্দ নয়। ভয়ে আছি দোস্ত কবে আবার আমিও এই পাকাদুয়া নামক অভিশপ্ত বিয়ের শিকার হই।

শাহিন কি বলবে ভেবে পেলনা। কথার ফাঁকে কথন চায়ের কাপের গরম ধোঁয়া বাতাসে মিলিয়ে গেল কেউ খেয়াল করলনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×