মিলি ভাবতেই পারেনি এভাবে সে নায়িকা হওয়ার একটা সুযোগ পাবে। সেদিন মল্লিকার জন্য কফে-নিরিবিলিতে বসে ছিল। দুই বান্ধবীতে আড্ডা দেওয়াই উদ্দেশ্য। কিন্তু অনেকক্ষণ বসে থাকার পরও মল্লিকার দেখা নেই। কারো জন্য অপেক্ষা করা যে এত বিরক্তিকর তা মিলি প্রথম টের পেল। অনেকটা সময় পর মল্লিকা ফোনে বলল-আজ আর আসা হচ্ছেনা। জরুরী কাজ পড়ে গেছে অফিসে।
সবে কফি পান করে উঠতে যাবে তখনই ঘটল ঘটনাটা। একজন মাঝ বয়সী ভদ্রলোক এসে বলল-আমি কি আপনার সাথে দু’মিনিট কথা বলতে পারি, বলেই অমায়িক হাসি ফুটে উঠল লোকটার মুখে। মিলি আর না করতে পারেনি। দু’জনে বসে কথা হল। কথা বার্তার এক পর্যায়ে লোকটি বলল-
আপনি কি মডেলিং করেন ?
নাতো
কিন্তু আপনার চোখ মুখ বলছে আপনি অভিনয় জানা মেয়ে।
কি করে বুঝলেন ?
আমি চলচ্চিত্র পরিচালক। দেখেই বুঝতে পারি কোন ঝিনুকে মুক্তা আছে।
আপনি ভুল যায়গায় ডায়াল করেছেন।
আপনার নাম মিলি। আপনি নায়িকা হতে চান। কিন্তু কি ভাবে কাজ শুরু করবেন জানেন না। আমি কি ঠিক বলেছি ?
মিলি চমকে উঠে । আরে এ লোক তার মনের খবর জানল কি করে ! সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- আমাকে দিয়ে ওসব হবেনা।
আপনি এত হালকা সেজেছেন যে, তারপরও অপূর্ব লাগছে। আপনার চোখ ঋতুপর্ণার মত। আপনি রাজি থাকলে আমার একটা নতুন ছবিতে আপনাকে চান্স দিতে পারি।
মিলি কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল। জোনাকীর আলোর মত তার স্বপ্নগুলো যেন জ্বলছে আর নিভছে। সে রাজি হয়ে গেল।
ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়ার পর লোকটা বিদায় নিয়ে চলে গেলেও মিলি আরও অনেকক্ষণ বসে রইল। তার চোখে ভেসে উঠল- বাসায় লুকিয়ে প্রতিদিন আয়নায় অভিনয় করা। অভিনয়ের কথা শুনে মায়ের রেগে উঠা। বাবার উপদেশ- এ জগতটা অনেক খারাপ মা। মানুষ নষ্ট হয়ে যায়, তুই......................।
বাসায় আসার পর থেকে মিলি যেন অন্য মানুষ। তার কথা বার্তায় নায়িকা নায়িকা ভাব। মা বলল-এই তোর কি হয়েছে আজ ? সব কিছুতে এমন অভিনয় করছিস কেন ?
অভিনয় করবো কেন মা ? আসলে তুমি ইদানিং আমার খুঁত ধর বেশি। কদিন পরে দেখবে আমি............না কথাটা আর মিলির বলা হলোনা। ফোনটা বেজে উঠল। সেই পরিচালকের ফোন।
হ্যালো-মিলি, কেমন আছ ? ঘুমিয়ে গেছ?
জ্বী ভাল। আপনি কেমন আছেন ?
এইতো চলছে, শোন তোমার নতুন নাম ঠিক করেছি-অদিতি। নামটা কেমন ?
মিলি কিছুটা রাগ হল আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে, আবার নতুন নাম রেখেছে। তবুও হাসিমুখে বলল- নামটাতো সুন্দর।
অনেক কথা বলার পর এক পর্যায়ে পরিচালক বলল- আসলে ছবির জগৎটা চলে ‘গিভ এন্ড টেক’ নিয়মে। তোমাকে একটু কম্প্রোমাইজ করতে হবে। মানে ইয়ে..........। মানে ধর এক রাতের জন্য...............। এক রাতের জন্য আমরা একসাথে থাকলাম এই আরকি।
মিলি বলল- যা কথা বলার সামনা সামনি বলবো। আগামীকাল ক্যাফে নিরিবিলিতে আসুন।
ফোন রেখে রাগে সে ফুসতে লাগলো। ‘গিভ এন্ড টেক’ পলিসি কাকে বলে তোকে আগামীকাল দেখাচ্ছি হারামজাদা।
পরের দিন সন্ধ্যায় ক্যাফে নিরিবিলিতে বসে কফি পানের পর মিলি এদিক ওদিক তাকিয়ে পজিশন ঠিক আছে কি না দেখে তার পা থেকে জুতাটা নিয়ে আজমকা পরিচালকের গালে এক ঘা বসিয়ে দিয়ে বলল-‘গিভ এন্ড টেক’ ডন্ট মাইন্ড।
পরিচালক হাত দিয়ে মিলিকে ধরতে যাবে তার আগেই হেল্প বলে চিৎকার করে উঠল সে। আর অমনি হুড়মুড় করে জনা পাঁচেক যুবক মিলি ও পরিচাললকে ঘিরে ফেলল।
এবারের মত তোকে ভাল হওয়ার চান্স দিচ্ছি। ভবিষ্যতে যদি নায়িকা হওয়ার চান্সের কথা বলে কোন মেয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করিস তবে তার ফল ভাল হবেনা। নারীকে বাজের পণ্য মনে করা ঠিক নয়। আজ ছেড়ে দিলাম।
যুবকেরা পরিচাললকে টেনে হিড় হিড় করে বাহিরে নিয়ে গিয়ে গার্ট ছিড়ে দিয়ে মজা করে বলল- যা তোকে দৌড়ানোর চান্স দিলাম। ১০০০ মিটার দৌড় হবে। ওয়ন, টু, থ্রি।
ছবি : মুখচ্ছবি, নিজের আঁকা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৪০