রোমানার আসল নাম রোমানা নয় তেমনি রোহানের আসল নামও রোহান নয়। বছর খানেক ধরে এক জন আরেক জনের সাথে ফোনে কথা বলছে। তাদের পরিচয় পর্বটায় কিছুটা নাটকীয়তা রয়েছে।
একদিন বিকালে এক বান্ধবীকে রোহান ফোন দিলে একটি মাত্র সংখ্যার হেরফেরে কল চলে যায় রোমানার কাছে। সেই থেকে শুরু। ধীরে ধীরে একজন আরেকজনকে জানতে বুঝতে আরম্ভ করে। নামের ক্ষেত্রে একজন যখন বলে আমি-রোমানা তখন অন্যজন র এর সাথে মিলিয়ে নাম বলে রোহান।
রাতের পর রাত কথা বলে বলে দুজনেই দুজনার আপন হয়ে উঠে। এখন আর শুধু কথা বলেই মনে ভরে না। দেখার আকাঙ্খা জেগে উঠে।
কিন্তু দেখা দেওয়াতে দু’জনেরই ভয় । হয়তো দেখা হওয়ার পর আর সম্পর্কটা থাকবে না। ভেঙ্গে যাবে এতদিনের সাজানো স্বপ্ন।
রোমানা ৩৫ বছরের স্বামী পরিত্যাক্তা এক নারী। রোহান বেকার যুবক। কিন্তু মিথ্যা তথ্যের আদান-প্রদানে তারা কলেজের ছাত্র-ছাত্রী।
সব হারানোর ভয় নিয়েই রোমানা ফোনে রোহানকে বলে- জানি দেখা হওয়ার পর মোহ কেটে যাবে। তুমি আমাকে আর ভালবাসবে না এমন কি আর যোগাযোগও হবেনা। তবুও একবার তোমাকে দেখব। প্রাণ ভরে দেখব। তারপর বাকি জীবন স্মৃতির মনিকোঠায় রাখব।
এ কথা শুনে রোহানও বেশ আবেগী হয়ে উঠে। সে বলে- আচ্ছা দেখা হওয়ার পর আমরা অতীতেকে ভুলে গিয়ে বর্তমানকেই নিয়ে না হয় পথ চলব। আগামীকাল বিকালে নির্দিষ্ট স্থানে দেখা করার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয় কথোপকথন।
আজ রমনা পার্কে দুজনার প্রথম দেখা । নীল পাঞ্জাবীতে রোহান আর ফিরোজা রঙের শাড়িতে রোমানাকে দারুন মানিয়েছে। দু,জনে অনেকক্ষণ দুজনকে দেখলো।
রোহান তার অতীত জীবন সম্পর্কে সবই বলল কোন বিন্দু বিষর্গ বাদ দেয়নি। রোমানাও বলেছে তার জীবনের সাতকাহন, বলেছে তার দুর্ভাগ্যের নিয়তি। কথা বলার কোন ফাঁকে যে চোখের জল বাধা না মেনে গড়িয়ে পড়েছে তা সে লক্ষ্য করেনি। রোমানার চোখের জল মুছে দিয়ে হাত হাত রাখলো রোহান। এক অপার্থিব আনন্দে ভরে গেল দুটি হৃদয়।
রেস্তোরাঁয় খেতে খেতে রোমানা বলল- আচ্ছা যদি আমাদের কখনো দেখা না হত তাহলে সম্পর্কটার নিশ্চিত মৃত্যু ঘটতো।
রোহান বলল- আমাদের দেখা কোননা কোন ভাবে হতই। সত্যিকারের ভালবাসা হেরে যেতে পারেনা।
সেই ফাল্গুনের বিকালে দু’জনার দেখা স্বার্থক হলো।
ছবি : প্রথম আলো পত্রিকা থেকে মোবাইলে তোলা ছবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৬