somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই যোগ দুই,সমান সমান চার ............... l

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিনের মতো আজকেও বেশ পরিপাটি হয়েই অফিসে যাওয়ার জন্য নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো বেলী l বাসা থেকে বের হয়ে ১০ মিনিটের রিক্সার পথ তারপরেই বাস স্ট্যান্ড l বাসে উঠে পর পর ৩ টা রবীন্দ্রসংগীত শুনলেই বেলীর বাস একদম বেলির অফিসের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে যায় l
অফিসে যাওয়ার সময় কিছুটা প্রবলেম হলেও ব্যপারটা এতোদিন কিছুটা কষ্ট করে হলেও ম্যনেজ করে নিয়েছে বেলী l

রিক্সা থেকে নেমে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে বাসের জন্য স্টান্ডে দাড়িয়ে বাসের জন্য ওয়েট করতে থাকে বেলী l
কিছুক্ষণ দেরিতে হলেও বাস এসে স্টান্ডে দাড়ানো মাত্র যাত্রীদের বাসে উঠার লাইনের সবার শেষে দাড়ানো রহিম সাহেব,বয়স আনুমানিক ৫৫ l উনি এক লাফে লাইনের শেষ মাথা থেকে সবার সামনে এসে বলে, আমি মুরুব্বি মানুষ আমি আগে উঠি l উনাকে কনসিডার করে বাকি যাত্রীরা ভাবলো আর কাউকে কনসিডার করা মানে নিজেই কনসিডারড হয়ে যাওয়া l এজন্য যে যার মতো পারলো বাসে উঠে গেলো l

সবাই ঠিক মতো উঠতে পারলেও লাইনের মাঝামাঝি দাড়িয়ে থাকা বেলী কে উঠতে হলো সবার শেষে l বাসের ভেতরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল বিধাতার হাতে একটা সিট ও অবশিষ্ট নেই বেলীকে বসতে দেয়ার মতো l ৯ টি লেডিস সিটের মধ্যে ৬ টি সিট দখল করে বসে আছে ৬ জন পুরুষ আর বাকি ৩ টি সিটে ৩ জন মহিলা কোনভাবে গাদাগাদি করে বসতে পেরেছে l বেলীর ঠিক পেছনেই দাড়িয়ে আছে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তন্ময় মন্টি l

অখেয়াল্বশত মন্টি বার বার গিয়ে ঝুকে পরছে বেলির উপর l ব্যপারটি বেশ দৃষ্টি কটু হওয়া সত্তেও সেটা নিয়ে ভাবার ফুরসত কারো নেই l কারণ অফিসে লেট করে গেলে আজ কি হবে সেটা নিয়েই যার যার চিন্তা l উপায়ন্তর না দেখে বেলি নিজেই তার পেছনে দাড়ানো তন্ময় মন্টি কে বললো, এই যে ভাই,আপনি বার বার এসে আমার উপরে পড়ছেন ক্যনো? তন্ময় মন্টি যেনো কিছুই বুঝতে না পারার ভান করে কিছু শোনেনি এমন ভাব করে একটু সরে গিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কার সাথে যেন মোবাইল ফোনে কথা বলা শুরু করলো l
ছেলেটার উপর মনে মনে বেজায় চটে আছে বেলী l বেলীর ঠিক পাশেই দাড়ানো এক ভদ্রলোক l দেখে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (কাজী আহমেদ পারভেজ) l উনি মনে হয় বেলির প্রবলেম বুঝতে পেরে বললো আমার সামনের সিট টা একটু পরেই খালি হবে,তখন আপনি চাইলে এই সিটে বসতে পারবেন l আমি সামনেই নেমে যাবো,সিটে বসার দরকার নাই l
এই কথা শোনা মাত্রই ওই সিটে বসা লোকটি বাজখাই গলায় পারভেজ সাহেব কে বলে বসলো ওই মিয়া এত বেশি বুঝেন ক্য ? আপনেরে আমি কইছি নাকি যে আমি সামনে নামমু ? শিক্ষিত ভদ্রলোক পারভেজ সাহেব লজ্জায় পরে গিয়ে বলে,ওকে ওকে ভাই ঠিক আছে l আমি সরি l ভুল করে বলে ফেলেছি l আপনিই বসেন l
এমন সময় লেডিস সিটে বসে থাকা একলোক (ইমরুল কায়েস) পারভেজ সাহেব কে বললেন,এইযে ভাই আপনে নিজে সিট পান্না আবার আইছেন আরেকজনের জইন্য উকালতি করতে মিয়া ! ভালো হয়ে যান l তখন পাশ থেকে আরেক ভদ্রলোক (সান শান্ত) বললেন,ভাই আপনিতো নিজেই মহিলা সিটে বসে আছেন,আপনে উঠে এই ভদ্রমহিলা কে বসতে দিলেই পারেন,উল্টা ঝারি নিতেছেন !
এই কথা শুনে ওই লেডিস সিটে বসে থাকা লোকটি (ইমরুল কায়েস) বলে উঠলো ওই মিয়া আপনে জানেন না,নারী পুরুষের সমান অধিকার ? না জাইনা কথা কন মিয়া ! ফাউল !
লেডিস সিটে বসা ওই লোকের কথা শুনে তার পাশের লেডিস সিটে বসা আরেকজন (জুয়েল আহমেদ) বললো আমরা যখন দারায়া থাকি মিয়া তখন কি কোনো মহিলা আমগোরে সিট দেয় নাকি ?এই সব ভুংভাং কথা ছাইরা নিজের ছিটে নিজে বইসা থাকেন l
তার পরপরই নারী নেতৃত্তাধীন এই সমাজে পুরুষের অধিকার বঞ্চনা নিয়ে ২ জন হুজুর পাশ থেকে হাদিসের উধৃতি দিয়ে বয়ান শুরু করা মাত্রই গাড়ি এসে দাড়ালো বেলীর অফিসের সামনের স্টান্ডে l প্রচন্ড বিব্রত এবং বিরক্ত হয়ে থাকা বেলী গাড়ি থেকে নেমে যেন স্বস্তির শাস ফেললেন l রাস্তা পার হয়ে অফিসের গেটে ঢুকতেই দেখা হয়ে গেলো কলিগ রবিউল রবিনের সাথে l দেখা হওয়া মাত্র এক বিশাল হাসি দিয়ে বেলীকে কনগ্রাচুলেশন জানালো রবিন l অবাক হয়ে বেলী তার কারণ জানতে চাইলে রবিন জানালো আপনাকে এমডি স্য্র খুজছেন l আপনি আর দেরী না করে এখনি সারের রুমে চলে যান l যা বলার উনিই বলবে l বলে হাসতে হাসতে চলে যায় রবিন l
কলিগের কথার আগা মাথা কিছু না বুঝতে পেরে এমডি সারের রুমে গিয়ে উকি দিয়ে এমডি স্য্র কে সালাম দিয়ে ভেতরে আসার অনুমতি চায় বেলী l বেলীকে দেখেই এমডি বলে উঠে,আরে মিস বেলী যে,আসুন আসুন প্লিজ,বসুন l কনগ্রাচুলেশনস....!
বেলী অবাক হয়ে যায় এমডির কথা শুনে,বেলির অবস্থা বুঝে এমডি হেসে বলে, দেখুন মিস বেলী আপনি আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে আছেন আজ ৩ বছর,আপনার কাজের উন্নতি দেখে কোম্পানি আপনাকে এই কোম্পানির জনশক্তি নিয়োগ বিভাগের জি.এম পদে প্রমোশন দিয়েছে l আশা করবো আপনি আরো নিষ্ঠার সাথে আপনার দায়িত্ব পালন করবেন l আর হ্য,এখন থেকে আপনি অফিসের গাড়িতেই সব সময় চলাফেরা করবেন l এমডির এসব কথা শুনে আনন্দে আটখানা হয়ে থাকা বেলী কোনভাবে নিজের আবেগ সামলে রেখে বস কে ধন্যবাদ জানিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে বাইরে সব কলিগরা বেলীকে কনগ্রাচুলেট করার জন্য দাড়িয়ে আছে lতারপর থেকে বেলীকে আর কখনো পাবলিক গাড়িতে করে অফিসে আসতে হয়নি l
প্রথম প্রথম অফিসের গাড়িতে করে পরবর্তিতে করে নিজের কেনা গাড়িতে করে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে শুনতে বেলী অফিসে যায় আজকাল l
সৃষ্টিকর্তার কাছে হয়তো সেদিন বেলির ভাগ্গে বাসের একটি সিটের বরাদ্দ ছিলনা l কিন্তু তিনি নিরাশ করেননি বেলীকে l ঠিক সময়েই বেলীর হাতে তুলে দিয়েছে সৌভাগ্যের চাবি l আজ বেলী সেই কোম্পানির একজন এমডি l সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত l কারণ এই পুরুষ শাসিত সমাজে মেধাবী আর কর্মদক্ষ বেলীরা একা না l কারণ তাদের সাথে ইশ্বর থাকে l
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×