বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নিজেকে গণতন্ত্রের একমাত্র জিম্মাদার হিসাবে মনে করে ঘোষণা করেছে ’গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা’! হরতাল, অবরোধোর চেয়ে তারপরেও এ অভিযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক। যে দলে গণতন্ত্রের লেশমাত্র চর্চা নেই সেই দল এবার গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ’অভিযাত্রা’ ঘোষণা করেছে! অথচ আমরা দেখেছি ১৯৯৬ ও ২০০৬ এ এরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন মনে হয়নি যে বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, তখন এরা ভুলেই গিয়েছিল যে তারা আবার বিরোধী দলে যাবে। যদি মনে থাকত যে ক্ষমতা কারো চিরস্থায়ী নয় তাহলে তারা নিশ্চিৎ বর্তমান সংকটের চিরস্থায়ী সমাধান করেই ক্ষমতা ছাড়ত।কিন্তু বিষয় হলো যখন যে দল বিরোধী দলে থাকে তারা হয় গণতন্ত্রের কান্ডারী ও আবার যখন ক্ষমতায় যায় তখন তারা হয় সবচেয়ে জঘণ্য স্বৈরাচার! আজকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে দেখুন, তাদের স্বৈরাচারী হাবভাব দেখে মনেই হবে না যে এরা অল্পদিনের মধ্যে বিরোধী দলে যাবে -মনে হচ্ছে যেন সৃষ্টিকর্তা আওয়ামীলীগকে বাংলাদেশের চিরস্থায়ী ক্ষমতা দান করেছেন ।সংকটের এই চিরস্থায়ী সমাধান কোনো দলই চায় না । সবাই চায় ক্ষমতা দাও, ক্ষমতায় যাওয়ার পথ করে দাও, লুটপাটের সুযোগ করে দাও।সংকটের চিরস্থায়ী সমাধান করলে ক্ষমতা উপভোগ করা যাবে না, লুটপাট করা যাবে না, ক্ষমতা নিয়ে রোমান্স করা যাবে না!
সংকটের চিরস্থায়ী সমাধান জনগণকেই করতে হবে এই দুই দলকে প্রত্যাখান করে, কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশের জনগণ এখনো পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।নতুন দল আম আদমির সফলতা ভারতের গণতন্ত্রের জন্য একটি মাইল ফলক।বাংলাদেশের যে কোনো দলের চেয়ে আম আদমির সফলতা অনেক বেশি কারণ দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের নেতা আন্না হাজারের ভাবশিষ্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মাত্র মাস কয়েক আগে জন্মানো ’আম আদমি’ পার্টি রাজনৈতিক পণ্ডিতদের সব হিসেব উল্টে দিয়ে এখন দিল্লির মসনদে! আমাদের বর্তমান মন্ত্রী উপদেষ্টারা যেখানে ইসির কাছে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করতেছেন সেখানে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সাফ বলেই দিয়েছেন তিনি কোনো সরকারী নিরাপত্তা গ্রহন করবেন না, সরকারী বাড়িতেও থাকবেন না ! ভারতকে আমরা সবদিক দিয়ে অনুসরণ করতেছি, কিন্তু ভারতের এই দিকগুলো অনুসরণ করি না কেন ? তা করব না কারণ-’ব্যাধিই সংক্রামক স্বাস্থ নয়।’
জোটভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য আর এক অভিশাপ। এই জোটভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের দ্বিদলীয় ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত ও শক্তিশালী করেছে করেছে। জনগণের সামনে কোনো বিকল্প নেই -তারা রোবটের মত ভোট দিত, কিন্তু সমঝোতাতন্ত্র সে ভোটের অধিকারও কেড়ে নিয়েছে! বাংলাদেশের মানুষ বৃত্তের জালে বন্দী থাকতে যেমন ভালবাসে তেমনি সেই বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার আদৌ চেষ্টা করে না। বাংলাদেশের মানুষ বুঝে শুধু তাদের বর্তমান ব্যথা-গতবারের পেটের ব্যথা ভুলে যেয়ে এবার মুক্তি চায় দাঁতের ব্যথা থেকে, কিন্তু দুই চিকিৎসকই তাদের ব্যথা দুর করতে শুধু ব্যর্থ নয় তারা অপদার্থও বটে !