somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের নিরেট বাস্তবতায় নভেম্বর ১৯৭৫: একজন জিয়ার লিডারশীপ কোয়ালিটি এবং কুটকৌশল ও বিশ্বাসঘাতকতায় পরিপূর্ণ সেই সব দিনগুলি (২য় পর্ব)

১২ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

খালেদ মোশাররফের বিশ্বাসঘাতকতা
১৫ আগস্টের পর থেকেই খালেদ মোশাররফ ক্ষমআ দখলের উদ্দেশ্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। যে কোন উপায়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে উৎখাত করে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করাই ছিল খালেদের অদ্বতীয় উদ্দেশ্য। তিনি নানাভবে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই বাংলাদেশের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের সূচনাকারী।

"কিছুদিন পর একদিন জেনারেল জিয়া জানালেন, তার কাজে অন্তরায় সৃষ্টি করছে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল শাফায়াত জামিল। তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে কিছু বাকশালপন্থি অফিসার। ব্রিগেডিয়ার খালেদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু ভীষন উচ্চাভিলাষী। তার উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য অতি কৌশলে যুদ্ধের সময় থেকেই তিনি তার শক্তি এবং প্রভাব বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা করে আসছিলেন। মুজিব সরকার এবং বাকশালীদের সহানুভূতিও ছিল তার প্রতি। আচমকা বাকশাল সরকারের পতনের ফলে তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাই তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন যে কোন উপায়েই তার পরিকল্পনা কার্যকরি করে তার উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে। তার এই হীন চক্রান্তমূলক কার্যকলাপ থেকে তাকে কিছুতেই নিরস্ত্র করতে পারছিলেন না জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে আগস্ট বিপ্লবের পূর্ব অবস্থায় দেশকে নিয়ে আযাবার এক গভীর ষড়যন্ত্রের সূচনা ঘটানো হল ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মাধ্যমে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপর্টেও এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যেতে লাগল। ব্রিগেডিয়ার খালেদের প্রধান উস্কানিদাতা ছিল কর্নেল শাফায়াত। ব্রিগেডিয়ার খালেদের মোশাররফ এবং কর্নেল সাফায়াত জামিলের ঐদ্ধত্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। জেনারেল জিয়ার প্রায় সব নির্দেশই উপেক্ষা করে চলেছেন তারা। প্রতি রাতেই মধ্যস্থতার জন্য ছুটে যেতে হচ্ছে তাদের বিরোধের মীমাংসা করার জন্য। সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীন অবস্থাকে ভীষণভাবে অস্থিতিশীল করে তুলেছেন তারা। ক্রমান্বয়ে আর্মির chain of command-কে অকেজো করে তুলেছে CGS ব্রিগেডিয়ার খালেদ এবং ঢাকা Brigade Commander কর্নেল শাফায়াত জামিল। জেনারেল জিয়া তাদের হাতে প্রায় জিম্মি হয়ে পড়লেন। চিফ অফ আর্মি স্টাফ হিসেবে তার দৈনন্দিন কার্যক্রমেও বাধা সৃষ্টি করতে লাগলেন। " (যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি: লে কর্নেল (অব) ডালিম, পৃষ্ঠা: ৫০১, ৫০৮, ৫১০)

"১৯৭৫ সালের ৫ ও ৬ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টসহ সারা শহরে ছড়ানো হলো হাজার হাজার প্রচারপত্র। এই কাজগুলো করল বামপন্থী জাসদ। এ সময় রাজনৈতিক দল জাসদ ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু তারা কাজ করছিল বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এবং বিপ্লবী গণবাহিনীর আবরণে। একটি ব্যাপারে ডান ও বাম উভয় রাজনৈতিক দলই একমত ছিল, আর তা হচ্ছে—খালেদ মোশাররফ একজন বিশ্বাসঘাতক, ভারতের দালাল এবং সে ঘৃণিত বাকশাল ও মুজিববাদ ফিরিয়ে আনতে চাইছে।" (বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অফ ব্লাড: অ্যান্থনি মাসকারেনহাস)

"পঁচাত্তরের নভেম্বর সম্পর্কে মার্কিন দলিল গুরুত্বপূর্ণ; তার চেয়ে বেশি মূল্যবান সেই সময়ের রাজনৈতিক দলগুলোর দলিল, প্রচারপত্র প্রভৃতি। খালেদ মোশাররফের দোষ স্খলনের একটা চেষ্টা চলছে কয়েক বছর ধরে, এখন হচ্ছে তাঁকে একজন চমৎকার নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আয়োজন। মিজানুর রহমান খান তাঁর ‘১৯৭৫ নভেম্বর মার্কিন দলিল ৫’-এ লিখেছেন, ‘রব-জলিল এক যৌথ বিবৃতিতে খালেদ মোশাররফকে “বিশ্বাসঘাতক” এবং “ভারত, রাশিয়া ও আমেরিকার উসকানিতে বাংলাদেশের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চক্রান্ত” করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন।’ হাসানুল হক ইনু এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা জাসদের কোনো দলিলে কখনো খালেদ মোশাররফ সম্পর্কে এমন মত দেইনি।...তবে তিনি উচ্চাভিলাষী, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ও সামরিক শাসনের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠাকারী।’ ইনু সাহেবের শেষ বাক্যটির সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই, কিন্তু প্রথম কথাটি সঠিক নয়। জাসদের অসংখ্য প্রচারপত্র প্রমাণ দেয় মিজানুর রহমান খানের কথাই ঠিক। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬, তাঁদের এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছিল: ‘১৯৭১-এর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আধিপত্যবাদী ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করল। জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত অগণিত মানুষের জমাট রক্তের বিনিময়ে সুখের সৌধ নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ল নব্য বুর্জোয়া শাসক ও শোষকগোষ্ঠী। ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদের কাঁধে ভর দিয়ে ক্ষমতা আত্মসাৎ করল মুজিবেরই এককালীন দোসর খোন্দকার মোশতাক, ৩রা নভেম্বর আবার ঘটল সামরিক অভ্যুত্থান, কুখ্যাত ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ভারত-রাশিয়ার প্ররোচনায় প্রতিক্রিয়াশীল মহল দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বকে চিরতরে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করল; তারপর ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বরে জাসদ ও বিপ্লবী গণবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর বিপ্লবী জওয়ানরা মহান সিপাহি অভ্যুত্থানে ফেটে পড়ল; কিন্তু আবার দেশি-বিদেশি শোষকরা জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো, অর্জিত হলো না লক্ষ্য,...।" (সৈয়দ আবুল মকসুদ: প্রথম আলো, ৯/১১/১০)

"শোষণের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পুতুল তো লাগবে। ফলে পর্দার পেছনে বাংলাদেশবিরোধী যড়যন্ত্র জোরদার হয়ে উঠল। নতুন পুতুলেরা ক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন খন্দকার মোশতাক আহমদ। আবারো প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ক্ষমতা অপরিসীম লোভে সামনে এগিয়ে আসে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের শুরুতেই খালেদ মোশাররফ কার্যত বঙ্গভবন দখল করে নেন। এবং ৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনে রাষ্ট্র রাহুমুক্ত হয়েছে ভেবে যারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন তারাও প্রমাদ গুনলেন। নাগরিকদের মনে এই মর্মে আবার শঙ্কার সৃষ্টি হলো যে, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আবারো বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ৩ নভেম্বরের ক্ষমতা দখলকারীরা স্বাধীনতার ঘোষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় অসন্তুষ্ট ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ।" (ড: রেজোয়ান সিদ্দিকী: নয়া দিগন্ত, ০৬/১১/২০০৯)


খালেদ মোশাররফের অভ্যূত্থানে চার নেতার সায় ছিল
"খালেদ মোশাররফের অভ্যূত্থানের বিষয়ে জেলে চার নেতা অবহিত ছিলেন। এটা ছিল একটা মুজিবপন্থি একটা পাল্টা অভ্যূত্থান। কারন চার নেতা বীরদর্পে জেল থেকে বের হয়ে এসে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।" (Leadership Crisis in Bangladesh: জিল্লুর রহমান খান)

জিয়া ক্ষমতা নিতে অস্বীকার করেছিলেন
২ নভেম্বর থেকে নিজ বাসায় বন্দী থাকায় প্রকৃত ঘটনা জিয়ার জানা ছিল না। অফিসার এবং সৈনিকদের জোরাজুরির পরও তিনি ক্ষমতা নিতে অস্বীকৃতি জানান। বলা যায় ভালবাসার টানে এক প্রকার জোর করেই ক্ষমতায় আসীন করা হয়।

"রাত ১২টায় সুবেদার মেজর আনিসুল হকের ইঙ্গিতে শুরু হল সিপাহী বিদ্রোহ। চারিদিকে অসংখ্য বুলেটের তীব্র আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠল পুরো সেনানিবাস। সৈনিকদের নয়নের মণি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে তারা আজ বদ্ধ পরিকর। যেকোন মুল্যে জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে সেনাপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করাই তাদের মুল লক্ষ্য। ১২ টা থেকেই তাহেরের বিপ্লবী গণবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত সিপাহীরা জিয়াকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে জিয়ার বাসায় চারপাশে সমবেত হতে লাগল। জিয়াকে মুক্ত করতে আসা কয়েকটি ইউনিটের মধ্যে মেজর মহিউদ্দীন ও সুবেদার মেজর আনিসের নেতৃত্বে টু ফিল্ডের কতিপয় সৈন্য সর্বপ্রথম জিয়ার বাসভবনে পৌছায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে জিয়াকে পাহারারত ফার্স্ট বেঙ্গল রেজিমন্টের এক প্লাটুন সৈনিক শুন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে উল্টো দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। গেট খুলার মত সেখানে উপস্থিত কেউ না থাকায় সৈন্যরা গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে "জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই" স্লোগান দিয়ে বেশ কিছু সৈনিক জিয়ার বাসায় ঢুকে পড়ে। তারা জিয়াউর রহমানকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে পীড়াপীড়ি শুরু করেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান বন্দী থাকার কারনে পরিস্থিতি না বুঝায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে মেজর মহীউদ্দীন বলেন, "স্যার আমরা আপনাকে নিতে এসছি, আপনি আসুন" প্রতিউত্তরে জিয়াউর রহমান বলেন, "আমি রিটায়ার্ড করেছি। আমি কিছুর মধ্যে নাই। আমি কোথাও যাব না। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।" মেজর মহীউদ্দীন আবার বলেন, "আমরা আপনাকে নিয়েই যাব। আমরা আপনাকে আবার চিফ বানাতে চাই। দোহাই আল্লাহর আপনি আসুন।" এভাবেই জেনারেল জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করা হয়।"(তিনটি সেনা অভ্যত্থান ও কিছু না বলা কথা, লে: ক: আব্দিল হামিদ)

"বাস্তবতাকে অস্বীকার করা বোকামি। বোস্টার বোকা ছিলেন না। তাই তিনি তাঁর ছাদের ওপর থেকে তাকিয়ে দেখে লিখেছিলেন: ‘জেনারেল জিয়া ৭ নভেম্বর সম্পূর্ণ ক্ষমতা করায়ত্ত করার একটি চমৎকার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি চাইলেই ক্ষমতা নিতে পারতেন। রাজপথে আমরা ৭ নভেম্বর যা দেখেছি, তা যদি কোনো অর্থ বহন করে থাকে, তাহলে এটাই প্রমাণ দেয়, জিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।" (সৈয়দ আবুল মকসুদ: প্রথম আলো, ৯/১১/১০)

"নাগরিকদের মনে এই মর্মে আবার শঙ্কার সৃষ্টি হলো যে, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আবারো বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ৩ নভেম্বরের ক্ষমতা দখলকারীরা স্বাধীনতার ঘোষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় অসন্তুষ্ট ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ। এর ফলে নতুন অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে সঞ্চারিত ক্ষোভ বিদ্যুৎ গতিতে সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পরিব্যাপ্ত হয়। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বস্তরের মানুষ ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, মজুর এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা কোনো নেতৃত্ব ছাড়াই প্রতিবাদ-প্রতিরোধে একযোগে নেমে আসে রাজপথে। ঘটায় সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব।" (ড: রেজোয়ান সিদ্দিকী: নয়া দিগন্ত, ০৬/১১/২০০৯)

সারাদেশে আনন্দের বন্যা
জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার খবরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে সারাদেশ। সর্ব প্রকার মানুষ নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।

"রেডিওতে ক্রমাগত সিপাহী-জনতার বিপ্লবের ঘোষণা এবং জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের খবর শুনে হাজার হাজার লোক স্রোতের মতো রাস্তায় নেমে এলো। তিনদিন ধরে তারা বিশ্বাস করছিল যে, ভারত খালেদ মোশাররফের মাধ্যমে তাদের কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে। এখন সেই দুঃস্বপ্ন কেটে গেছে। সর্বত্র জওয়ান এবং সাধারণ মানুষ খুশিতে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করল, রাস্তায় নামল। সারারাত তারা স্লোগান দিল, ‘আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সিপাহী বিপ্লব জিন্দাবাদ।" (বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অফ ব্লাড: অ্যান্থনি মাসকারেনহাস)

"১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সারা দেশে যে কী অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছিল, সেটা প্রত্যক্ষদর্শীরা ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশের শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে ঘর থেকে পথে নেমে এসেছিল কোটি মানুষ। উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত সব মানুষ। তারা রাজপথে নেমে আসা ট্যাঙ্কের গলায় পরিয়ে দেয় ফুলের মালা। দু’বাহু বাড়িয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে বুকে বুক মিলায়। সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে নগর-বন্দর প্রদক্ষিণ করে জানিয়ে দেয় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষ একাট্টা।" (ড: রেজোয়ান সিদ্দিকী: নয়া দিগন্ত, ০৬/১১/২০০৯)

"শুক্রবার সকালে রেডিও বাংলাদেশ থেকে ঘোষিত হয়— ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। এর কিছুক্ষণ পর জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। মিছিল মিছিল আর মিছিল— বিপ্লবের, বিজয়ের, উল্লাসের মিছিল। স্লোগান আর স্লোগান— কণ্ঠের আর বুলেটের মিলিত স্লোগান। করতালি আর করতালিতে প্রাণের দুন্দুভী। আকাশে উিক্ষপ্ত লাখো হাত একের পর এক হচ্ছে প্রভাতের স্বর্ণ ঈগল। পথে পথে সিপাহী আর জনতা আলিঙ্গন করছে, হাত নেড়ে জানাচ্ছে অভিনন্দন— কাঁধে কাঁধ হাতে হাত— এক কণ্ঠে এক আওয়াজ— ‘সিপাহী-জনতা ভাই ভাই; জওয়ান জওয়ান ভাই ভাই; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ; মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ; খন্দকার মোশতাক জিন্দাবাদ; আমাদের আজাদী রাখবোই রাখবো; হাতের সঙ্গে হাত মেলাও— সিপাহী-জনতা এক হও।’ এত আনন্দ, এত উল্লাস— সিপাহী ও জনতার হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের কোরাস, স্লোগানের মাঝে কামানের এমন অর্কেস্ট— এ এক অজানা ইতিহাস। ঢাকা উল্লাসে টালমাটাল; বাংলাদেশ আনন্দে উদ্বেল। এই রিপোর্ট আমরা যখন লিখছি তখনো পথে পথে একের পর এক বিজয় মিছিল যাচ্ছে—ট্রাকে চেপে, পায়ে হেঁটে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ, আনসার ও দমকল বাহিনীর এক একটি দল যাচ্ছে—করছে রাজধানীর পথপরিক্রমা। তাদের সাথে এক ট্রাকে-লরীতে রয়েছে নানা স্তরের জনগণও। পথে পথে ঘুরছে ট্যাংক আর আর্মাড কার। পেছনে পেছনে জনতা। কোনো কোনো ট্যাংক ও আর্মাড কারেও জনতা উঠে বসেছে। স্লোগানে স্লোগানে আকাশে নিক্ষিপ্ত সিপাহীদের গুলিতে— আনন্দে-উচ্ছ্বাসে উদ্বেল নগরী।" (দৈনিক বাংলা, টেলিগ্রাম: ০৭/১১০১৯৭৫)

"তখনো আকাশে অন্ধকার ছিল। গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত শেষ রজনীর ঢাকা। শ্বাসরুদ্ধকর। মুহূর্তগুলি ছিল যুগের মতো। বিনিদ্র রাত্রিতে আতঙ্কিত নগরবাসী হয়তো ভাবিতেছিল একাত্তরের সেই পাষাণ ঢাকা দিনগুলির কথা। এমনি সময়ে রেডিও বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রের ঘোষকের কণ্ঠে ধ্বনিত হইল স্লোগান— ‘সিপাহী বিপ্লব জিন্দাবাদ’। উত্কণ্ঠ নগরবাসীর শ্রবণেন্দ্রিয়। এই অসময়ে রেডিও কি বার্তা শুনাইবে? ঘোষকের কণ্ঠে ঘোষিত হইল : ‘সিপাহী বিপ্লব সফল হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাত থেকে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করা হয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকাল মুখরিত হইল জনতার জয়নিনাদে। সামরিক বাহিনীর গাড়িতেই নহে—বাস ট্রাকে সেই একই দৃশ্য— সিপাহীদের পাশে জনগণ। খন্দকার মোশতাক আহমদ আর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ছবি লইয়া রাস্তায় রাস্তায় মিছিলের ঢল । গাড়িতে করিয়া সেনাবাহিনী প্রতিটি মহল্লায় গিয়া জনগণকে আদব ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাইয়াছেন, দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আকুল আবেদন রাখিয়াছেন— কামনা করিয়াছেন জনগণের ঐকান্তিক সহযোগিতা। সিপাহীদের সহিত জনতার আনন্দোচ্ছল প্রাণের স্পন্দন একই লয়ে স্পন্দিত হইয়াছে গতকাল।" (দৈনিক ইত্তেফাক: ০৮/১১/১৯৭৫)

"রাজধানী ঢাকা গতকাল শুক্রবার ছিল বিজয় উল্লাসের আনন্দে উদ্বেল এক উত্সবমুখর নগরী। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় দুটোয় রেডিও বাংলাদেশ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের দায়িত্বভার গ্রহণের সংবাদ ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধভাঙা বন্যার স্রোতের মতো রাজপথে নেমে আসে করতালি আর স্লোগানে মুখর স্বতঃস্ফূর্ত লাখো জনতার ঢল আর আনন্দ মিছিল। সে এক অবর্ণনীয় অভূতপূর্ব দৃশ্য। শহরের পথে পথে, অলিগলিতে ফুল, মালা আর হৃদয়ের সমস্ত অর্ঘ্য দিয়ে জনসাধারণ বরণ করে নেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার নিরাপত্তা রক্ষাকারী অকুতোভয় সেনাবাহিনীর সিপাহীদের। আগের দিন গভীর রাত থেকে গতকাল প্রায় সারাদিন ধরে সেনাবাহিনী আর জনতা একাত্ম হয়ে মিশে গিয়ে হাতে হাত রেখে সারা শহরকে প্রকম্পিত করে রাখে গগনবিদারী স্লোগানে। সিপাহী আর জনতার সমবেত কণ্ঠে ধ্বনি ওঠে—বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, সিপাহী-বিপ্লব জিন্দাবাদ, মোশতাক আহমদ জিন্দাবাদ, সিপাহী-জনতা ভাই ভাই ইত্যাদি। শুধু মিছিল আর মিছিল। ট্যাংকের মিছিল। বাস, ট্রাক, জিপ, রিকশার মিছিল। পায়ে হাঁটা জনতার এ মিছিল সেনাবাহিনী আর জনতার মিলিত মিছিল, আবালবৃদ্ধবনিতার মিছিল। পাশাপাশি আনন্দ-করতালি, কাওয়ালি, গান, ব্যান্ড পার্টি আর নৃত্যে মুখর সিপাহী-জনতার গাড়ি আর মিছিল ঘুরেছে সারা শহরজুড়ে। মুহূর্তে মুহূর্তে সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা তাদের স্টেন রাইফেল থেকে উত্সবের আনন্দে উপরে গুলি ছুড়ে ফাঁকা আওয়াজ করেছেন, আর রাস্তার ধারে বাড়ির দরজা জানালায় ছাদে দাঁড়ানো জনতাকে আরো উল্লসিত করে তুলেছেন। যে পথ দিয়ে সেনাবাহিনীর বীর সিপাহীরা অতিক্রম করেছেন, আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের ফুলের মালা দিয়ে আর হাত তুলে জানিয়েছে আন্তরিক অভিনন্দন। সূর্য সারথী সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা শুধু গাড়িতে চেপেই শহরে ঘোরেননি, তারা কলোনিতে, পাড়ায়-মহল্লায় গিয়ে ঈদের আনন্দে জনগণের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছেন, হাত মিলিয়েছেন। এ সময় তাদের মুখে কেউ তুলে দিয়েছেন মিষ্টি, করেছেন আদর-আপ্যায়ন। একাত্তর সালের ষোলো ডিসেম্বরের পর ঢাকার রাজপথে জনতা-সেনাবাহিনীর মিলনের এমন তুলনাবিহীন দৃষ্টান্ত আর অযুত জনতার আনন্দমুখর মিছিল দেখা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অফিস-আদালতের কর্মচারী, শিল্প-কারখানার শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকেও গতকাল ঢাকা শহরে আনন্দ আর বিজয় মিছিল বের করা হয়।" (দৈনিক সংবাদ: ০৮/১১/১৯৭৫)

"সকল সংশয়, দ্বিধা আর দুঃস্বপ্নের মেঘ অতিক্রম করিয়া গত শুক্রবার বাঙ্গালী জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব বিজয় সূচিত হইয়াছে। এই বিজয়ে স্বর্ণোজ্জ্বল দলিলে জনতার প্রাণের অর্ঘ্য দিয়া লেখা হইল বাংলার বীর সেনানীদের নাম। আর দলিলের শিরোনামে শোভা পাইল একটি নাম— মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীরোত্তম, পিএসসি— একটি প্রিয় ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব। শুক্রবারের প্রভাত জাতির জন্য ছিনাইয়া আনে এক সূর্য-সম্ভব উজ্জ্বল ভবিষ্যত্, পরাভবহীন এক অপূর্ব আত্মপ্রত্যয়। সিপাহী-জনতার এই মিলিত আবেগ, উল্লাস, জয়ধ্বনি, আনন্দের কল-কল্লোল, সহস্র কণ্ঠের এই উচ্চকিত নিনাদ সেদিন ঘোষণা করিল সৈনিক ও জনতার একাত্মতা।" (দৈনিক ইত্তেফাক: ০৯/১১/১৯৭৫)

জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব
৭ নভেম্বর পরবর্তী দুই তিনের অবস্থা ছিল সবচেয়ে বেগতিক। বিপ্লবী তাহের বাহিনীর প্রচারনায় সিপাহীদের একটি অংশ শরীক হলে ক্যন্টনমেন্টের অভ্যন্তরীন অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। তারা অফিসারদের শেষ করে দেওয়ার অভিযানে নামে। এমন কঠিন অবস্থায় জেনারেল জিয়ার রহমান তার বলিষ্ট নেতৃত্ব দিয়ে অবস্থা সামাল দেন।

" (৮ নভেম্বর) আসলে ঐ সময় সৈনিকরা খুবই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছিলো। অফিসারদের তারা ক্যন্টনমেন্টের যেখানেই পেয়েছে, তার র্যা ঙ্ক খুলে ফেলেছে, ধরে অপমান করেছে। মিটিং-এ একজন বিপ্লবী সৈনিক সম্বোধন করলো, জনাব জিয়াউর রহমান.....। সঙ্গে সঙ্গে জিয়া তাকে সংশোধন করলেন, 'আমি জিয়া নই, আমি জেনারেল জিয়া'। সৈনিক নেতা থতমত খেয়ে গেল। অতঃপর সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।" (তিনটি সেনা অভ্যত্থান ও কিছু না বলা কথা: লে: ক: আবদুল হামিদ)

"৯ নভেম্বর সকাল নয়টা। শহর থেকে এবং আশপাশ থেকে গোটা ত্রিশেক অফিসার আর্মি হেডকোয়ার্টারে সমবেত হয়েছিলেন। তারা প্রায় সবাই সিভিল ড্রেসে। যে কজন ইউনিফর্ম পরে ছিলেন তাদের র্যাাঙ্ক পরেন নি। র্যা ঙ্ক দেখলেই সিপাহীরা ধরে টান দিয়ে ছিড়ে ফেলেছে। অদ্ভুদ অবস্থা। সবারই চোখে মুখে ভীতির ছায়া। সিপাহীদের আক্রমনে অফিসারদের মৃত্য সংবাদ, লুটপাট, বিচ্ছিন্ন আক্রমন সবাইকে আতঙ্কগ্রস্ করে রেখেছিলো। জিয়া এলেন। সংক্ষিপ্ত ভাষন দিলেন। নিচু স্বরে বলললেন, আপনারা সরে পড়েছেন। ঠিকই আছে। এই সময় ফ্যামিলি দূরে রাখাই ভাল, আমি চেষ্টা করছি ওদের বুঝাবার। ইনশাআল্লাহ শীগ্র সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনারা ধৈর্য ধরুন। সিপাহীরা কিছু উত্তেজিত আছে। হঠাৎ সুর উচু করে বললেন, But you must face them...........।"(তিনটি সেনা অভ্যত্থান ও কিছু না বলা কথা: লে: ক: আব্দিল হামিদ)

"৯ তারিখ জিয়াউর রহমান বিভিন্ন ইউনিটের জেসিও এনসিওদের সাথে বেশ কিছু মিটিং করলেন। জিয়া সুকৌশলে জেসিও এবং এনসিওদের তার কাছে ভেড়াতে সক্ষম হলেন। ঐ সময় জিয়া ছাড়া আর সব কমান্ড চ্যানেল ভেঙ্গে যায়। আর্মি চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জিয়া সরাসরি জেসিও এমনকি সিপাহী প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করছিলেন।" (তিনটি সেনা অভ্যত্থান ও কিছু না বলা কথা: লে: ক: আব্দিল হামিদ)

নভেম্বর বিপ্লবে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সম্পর্কে লে: ক: আব্দুল হামিদের মুল্যায়ন:
"বরাবরই জিয়া ছিলো মেজাজী এবং প্রবল আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন একজন সৎ ও সচেতন অফিসার। কিন্তু সে অসৎ অফিসারেদের কানে ধরে কাজ করাতে সুবিধা হয় বলে মনে করত। তার সাথে জেনারেল ওসমানী, মুশতাক আহমেদ, জেনারেল খলিল প্রমুখদের বনিবনা না থাকা সত্ত্বেও যেভাবে সবার সাথে একা লড়াই-ফাইট করে উপরে উঠে আসে তা ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার, লিডাটরশীপ কোয়ালিটির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।" (তিনটি সেনা অভ্যত্থান ও কিছু না বলা কথা, লে: ক: আব্দিল হামিদ)

"ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ অফিসার। কথাবার্তায় চাল-চলনে রাজকীয় ব্যক্তিত্ব। আমার কিছু জুনিয়র থাকায় তার সাথে সম্পর্ক থাকলেও তত ঘনিষ্ঠতা ছিল না। অন্যান্যদের মতো তিনিও ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী। কিন্তু ভাগ্যলক্ষী তার প্রতি সদয় ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধে এক বীর সেনানায়ক খালেদ মোশাররফ নেহায়েত দুর্ভ্যার স্বীকার হয়ে অকালে সৈনিকদের হাতে প্রান হারান" (তিনটি সেনা অভ্যত্থান ও কিছু না বলা কথা, লে: ক: আব্দিল হামিদ)

"কর্নেল তাহেরও ছিলো আমার অনেক জুনিয়র, তাই সরাসরি আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তাহের ছিল একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা অফিসার। ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর ও কর্নেল জিয়াউদ্দিনের সাথে ছিলো তার ভালো সম্পর্ক। এ তিনজনই কমবেশি বামঘেষা হলেও তারা ছিলো নীতিবান অফিসার। পরবর্তীতে জিয়ার সাথে তাহেরের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। শ্রেনীহীন সেনাবাহিনীর প্রবক্তা কর্নেল তাহেরই ছিলেন প্রমৃতপক্ষে নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের প্রধান স্থপতি। কিন্তু জিয়ার সাথে ক্ষমতার দ্বন্দে পরাজিত হয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে তাকে প্রান দিতে হয়।" (তিনটি সেনা অভ্যত্থান ও কিছু না বলা কথা, লে: ক: আব্দিল হামিদ)


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৮
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×