somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টু বি অর নট টু বি

০৯ ই আগস্ট, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালকে ইংলিশ ক্লাসে ঢুকেই মনে হলো কিছু একটা ভুল হচ্ছে। প্রতিদিন মিস এ্যকার্স - আমাদের অতি মজাদার ও শিক্ষনীয় শিক্ষিকা - এর মুখ দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, তাই অন্য কারও মুখ ইংলিশ ক্লাসে আর মানায় না। ওনার জায়গায় একটা অচেনা লোককে সবাই তৈরি হচ্ছিলো কাঁদিয়ে ছাড়ার জন্য, কিন্তু দশ মিনিট যেতে না যেতেই ক্লাসের ভাব পাল্টে গিয়েছে। আমরা 'আইডিয়ালিসম' ও 'রিয়েলিসম' নিয়ে কথা বলছিলাম। দু'টো ঠিক রেখে চলা সম্ভব কিনা, ও দু'টো ঠিক রেখে চলা 'দরকার' কিনা। টিচারটা একসময় রিয়েলিসম এর এক্সাক্ট ডেফিনিশন দিলেন এভাবে: যা কিছু বিজ্ঞান দিয়ে ভুল প্রমানীত করা যেতে পারে, সেটাই ঠিক প্রমানীত করা যায়।

তার মানে বিজ্ঞান ও ধর্ম আসলে পুরো উলটো জিনিষ না, শুধু বৈজ্ঞানিকভাবে 'একজন ওপরওয়ালা'র কোন ডেফিনিশন নেই, কারন তিনি যে নেই এর কোন প্রমান নেই। যারা বলে খোদা নেই, কারন 'আসল' (!) প্রমান নেই, তাদের কথা ঠিক মেলে?

সেই ইংলিশ ক্লাস থেকেই লিটারেসি এক্সটেনশন প্রোগ্রামের জন্য বাছাই করা হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে। গত বছর খুব করতে চেয়েছিলাম এটা, তাই এর জন্য বেছে নেওয়া মেয়েদের মধ্যে আমার নাম দেখে প্রথমে খুব খুশি লেগেছিলো। দশ/বারো জন নাইন টেনের ছাত্রীরা ছয়টা বই পড়ে এর থেকে সবচেয়ে ভালো বই বের করে। এ বছর সবাই নিজেদের পছন্দের বইয়ের জন্য দারুন চেষ্টা চালিয়েছে। কারন দেখিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছিলো প্রতিদিনই। এভাবে বেশ কয়েকদিন স্কুলের পরে বা লাঞ্চটাইমে একসাথে হয়ে মন ঠিক করলাম আমরা সবাই। গত রাতে এ উপলক্ষ্যে একটা ডিনার ছিলো, যেটাতে রোটারি ক্লাব থেকে দাওয়াত দিয়েছে আমাদেরকে। 'স্পেশাল গেস্ট' হিসেবে সব ছাত্রীদের জন্য ছিলো ফ্রি, কিন্তু অন্য সবার টাকা দিতে হয়েছে!
আমরা বাসা থেকে রওনা দিয়েছি একটু দেরিতে, তারপর আবার রাস্তায় আটকে ছিলাম অনেকক্ষণ। আমি পেছনের সিটে বসে ঘড়ি দেখছিলাম আর কোনভাবে চোখ দিয়ে সময় থামাতে চেষ্টা করছিলাম। গাড়ির বিরাট লাইন পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছি ঠিক সাড়ে ছয়টায় - শুরু হওয়ার সময়। ভেতরে যেতে যেতে শুরু হয়েই গিয়েছে, তাই ঢোকার সাথে সাথে সবগুলো চোখ আমাদের ওপর এসে পড়লো। লাল হয়ে খালি চেয়ার দেখে মা বাবাকে নিয়ে বসে দেখি আশেপাশে সব বুড়ো রোটেরিয়ানটরা। আমার বন্ধুরা বসে আছে একদম অন্য প্রান্তে! মানসম্মান বিসর্জন দিয়ে উঠে ওদের কাছে এসে দেখি যেটাকে মনে করেছিলাম একটা খালি চেয়ার, সেটা আর খালি নেই। সেখানে বসা ভদ্রলোক বললো অন্য কোথাও থেকে চেয়ার এনে ওখানেই বসে যেতে। বসার পরে খেয়াল করলাম চামচ নেই। আবারও উঠে গিয়ে আরেক টেবিল থেকে সেগুলো এনে বসলাম।
লজ্জাশ্কর মুহূর্তগুলো যেতে না যেতেই আমার কথা বলার সময় এসে গেলো। আমার স্পীচ ছিলো বই পড়া নিয়ে, কেন সেটা গুরুত্বপূর্ন, নাম দিয়েছিলাম 'টু রীড অর নট টু রীড'। হার্টবীটের শব্দের জন্য কানে শুনছিলাম না, কিন্তু প্রাণপণে মুখে হাসি টেনে মাইকের কাছে গেলাম। এর পরে সব অস্পষ্টভাবে মনে আছে। এক পাশ একজন ভিডিও করছিলো... সামনে মা ছবি তুলছিলো... মাইকটা বেশি দূরে ছিলো... সামনে একটা লোক হাসিমুখে বসে ছিলো... ইত্যাদি ইত্যাদি।

রোটারি ক্লাবের মেম্বারদের দেখে মনে হলো ওরা আমার থেকে সম্পুর্ণ আলাদা। টাকায় মোড়া হৃদয় নিয়ে টাকাজনীত ব্যস্ততায় কাটিয়ে দিচ্ছে জীবন। ঠিকভাবে কাটা চামচ ধরা থেকে ব্যাজ ভর্তি কোটকে সুন্দর করতেই সময় চলে যায় ওদের। আদবের পরিপূর্ণতাই ওদের আদর্শ। আমাদেরকে বেছে নেওয়া এর মধ্যেই পড়ে, 'আদর্শবান' বানানোর জন্য। আর বুড়োরাই বেশির ভাগ মেম্বার কেন? সময় বেশি, কাজ কম, তাই? ফাঁকা জীবন চাই না, তাই এখন থেকেই সেটাকে ভরে ফেলার চেষ্টা করছি। শেষ বয়সে মিথ্যে আদর্শে ধোয়া পানি না খেয়েও যেন বেঁচে থাকতে পারি, তাই।
৩২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×