somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান : সমস্যা ও উত্তরণের উপায়। পর্ব- ১

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা একটি জাতির উন্নতির সোপান। দু:খজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের শিক্ষার সার্বিক মান এখনও আন্তর্জাতিকমানের নয় এবং দিন দিন এ ব্যবধান বেড়েই চলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে সরকারগুলির শিক্ষা নিয়ে সু-নির্দিষ্ট কোন প্ল্যান না থাকা এবং সেই সাথে শিক্ষাঙ্গনগুলির বেশ কিছু মৌলিক সমস্যা সমাধানে উদাসীন থাকা এর একটি প্রধান কারন।

এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ না হওয়া এবং তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটও শিক্ষার কাংখিত মান অর্জনে ব্যর্থতার একটি বড় কারন। তবে আশংকার কথা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা মানের ক্রমাবনতি ঘটছে।

বাংলাদেশ জন্মের অনেক আগে থেকেই এদেশের মানুষ দেখেছে উচ্চশিক্ষার পীঠস্থান এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কিভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে জাগ্রত করেছে জাতিকে, শিক্ষার আলো দিয়ে কিভাবে সংহতি আর একাত্মতায় প্রতিবাদী করেছে শাসকদের অন্যায় আচরণ রুখতে। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান, আলোচিত হয়েছে শিক্ষকমন্ডলীর গবেষণা নিষ্ঠা আর শিক্ষাদানে একাগ্রতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অভিহিত হয়েছে নানা প্রশংসাসূচক অভিধায়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি সেই স্বর্ণালী সময়ের কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এ সকল কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু যুক্তিসংগত কারণেই সাম্প্র্রতিক সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান প্রশ্নসূচক অভিধায় পর্যবসিত হচ্ছে বারবার।

শিক্ষার মান প্রকৃতপক্ষে একটি আপেক্ষিক ধারণা। যে শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে মানবজাতি ও দেশের সার্বিক কল্যাণে, তার অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, তাকে আমরা একটি ভালো মানের শিক্ষা বলতে পারি।

দেশে মুলত: দুই ধরনের বিশ্বিবদ্যালয় আছে- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।

অবিভক্ত বাংলার প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ১৮৫৭ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। সময়ের পথ পরিক্রমায় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। স্বাধীনতা পূর্বকালীন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে পরবর্তীকালে যুক্ত হয় আরো কিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আর ১৯৯২ সালে দেশে উন্মেষ ঘটে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের।

সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি ও শিক্ষক-রাজনীতি সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা, সেশন-জট, ধর্মঘট, আন্দোলন, কাস, পরীক্ষা বর্জন, মারামারি, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া প্রভৃতি ঘটনার কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিভাবকদের কাছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এ সকল অভিভাবকগণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প হিসাবে বেছে নিচ্ছেন বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। এর বাইরে সামগ্রিক মেধায় পিছিয়ে থাকা সমাজের উচু শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী যাদের অধিকাংশই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে অক্ষম, তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিয়ে এসেছে বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।

কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের অধিকাংশ বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেই বিশ্ববিদ্যালয় কঠামোর ভিতর ফেলা যায় না। সার্টিফিকেট প্রদানকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামানও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা নিম্ন মানের।

আমি এখানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের সাম্প্রতিক অবস্থা, মানের অবনতির কারন ও মানোন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু পর্বে লেখার আশা করি।

প্রথমেই জানিয়ে দেই এটি মুলত: একটি সেমিনার এ পঠিত মুল প্রবন্ধ যেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নীতি নির্ধারকগন উপস্থিত ছিলেন। তারা শুনেছেন, বাহবা দিয়েছেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত কোন পরিবর্তন হয়নি।

আসলে কোন পরিবর্তনের জন্য সমাজের সচেতনতা প্রয়োজন। শুধু সেমিনার এ পেপার পড়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয় এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এই ব্লগে লেখা।

আর কোথাও থেকে কপি-পেষ্ট করছিনা। এটি আমারই লেখা।

এখানে প্রবন্ধটি সংক্ষিপ্ত রুপে উপস্থাপন করলেও অনেক ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার একই রকম থেকে যেতে পারে। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। দেশের অন্যতম প্রধান এই সমস্যাটি দুর করার ক্ষেত্রে আপনারা আপনাদের মন্তব্য রাখবেন বলে আশা করি।

১। শিক্ষার মান ও প্রাসঙ্গিক ধারণা
আগেই বলেছি শিক্ষার মান একটি আপেক্ষিক বিষয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান কিছু সুনির্দিষ্ট সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয় এবং তার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির র‌্যাংকিংও করা হয়। দুঃখের বিষয় এই সূচকগুলির ভিত্তিতে করা বিশ্বের ৫০০ টি কিংবা এশিয়ার ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয় - এর মধ্যেও বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম নেই।

এখন দেখে নেয়া যাক শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান পরিমাপের সেই সূচকগুলি কি কি -
- ভর্তি প্রক্রিয়া
- পাঠক্রম ও বিষয়ের ব্যপ্তি
- ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত
- মেধা যাচাই প্রক্রিয়া
- গবেষণা
- গবেষণা প্রকাশনা ও এর মান
- পাশকৃত গ্র্যাজুয়েটদের গন্তব্য
- আন্তর্জাতিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোলাবরেশন

শিক্ষার মানের সূচকের আলোকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে পরবর্তী পর্বে আলোচনা করব।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৪০
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×