হঠাৎ ভাবলাম , এবার আমার ক্লান্ত হওয়া উচিত , অবসন্ন হয়ে নেতিয়ে পড়া অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু কি আশ্চর্য ! আমি কিছুতেই থেমে যেতে পারছি না । এপাশ-ওপাশ দেখলাম , প্রচন্ড গতিতে ছুটে যাচ্ছে আমার শৈশব , যুবাকাল, ধুলোমাঠ , খোলা বুক, এলো চুল, রঙ ঠোঁট, অপরাধ আর প্রণয়। মাথা ঘুরে ওঠলো আমার। চোখ বুঁজে অনেক কষ্টে বমি টা সামলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি । নাহ ! আমি যেন উবে দিতে যাচ্ছি আমার গোপন, আমার রাগ, লিপ্সা । না , আমি চাইনা ছেড়ে দিতে আমার পুষে রাখা অভ্যেস। আমি চোখ খুললাম আর তাকিয়ে দেখলাম, সে , যাকে আমি রেখে এসেছি প্রাইমারি স্কুলের কাঠ বাদাম গাছটার নিচে। ও এখানে কেন ? ওর ধার নেয়া কাগজের লাটিম আগেই তো ছিনিয়ে নিয়েছে । না, এই মাঝরাত্তিরে বমন তোলা যাত্রায় ওকে আমি চাই না । বরং আমি লাফ দেব, আমি দেব এক অনন্ত উড়াল । আমাকে ছুঁতেই পারবে না।.। আমার ডানায় এখন প্রচন্ড জোর , লেগে নেই বৃষ্টি ভেঁজা মাঠের কাঁদা । কটকটে রৌদ্রে শুকিয়ে এবার আমি ডানা মেলতে পুরোপুরি প্রস্তুত । পলাশদিকে এখন আর আমি চিনি না । অ পলাশদি তুমি এখন কত্ত বড়। নাকি তুমি বুড়ো এখন ! মুখটা মনে নেই ঠিকই। চুলের গন্ধ, পুকুর পাড়, কামজের রঙ ভুলিনি এখনও।
আমি আবারো চোখ বুঁজলাম । আমার কপালের ঠিক মাঝখানটাতে ডিগবাজি খেল পুরোটা কপাল । মন মাতাল করা আহা সেই বিকেল , হাটুময় ধুলোমাখা বিকেল আমার, হৈ চৈ , গোল্লাছুট বিকেল আমার, ঘুম চোর বিকেল আমার , রাত ভোর করা স্বপ্ন আমার। অই বিকেলেই অবসন্ন পিতা ফিরলেন , প্রতিদিন যেমন ফেরেন , হাতে কমলা , সার্ট-পেন্ট ইন করা, কিছু টা মায়া আর কিছুটা ভয় মাখা, পিতা এলেন, পিতা পিতা গন্ধ গা নিয়ে । সাথে আনলেন একটা অনন্ত বিচ্ছেদ । আহা !কাঠ বাদাম গাছ, ভেঁজা চুল এবার বিদায়। মাথা নিচু করে হেঁটে চলা আলম স্যার এবার বিদায় , ধবধবে পাজামা -পাঞ্জাবি, চকচকে কাচের চশমা এবার বিদায় ।