somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)
নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার 'কলম'।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (শেষ পর্ব)

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩০ মে বার্সেলোনা থেকে প্যারিসের উদ্দ্যেশ্যে আমার বাস ছাড়বে দুপুর আড়াইটায়।সংক্ষিপ্ত সফরের দুটি দিন স্বপ্নের মতই পার হয়ে গেলো।বার্সেলোনা আগমনে উজ্জ্বল ভাই, নতুন পরিচয় হওয়া কাতালান প্রবাসী বাঙ্গালী বন্ধুদের আদর আপ্যায়ন এবং আতিথেয়তায় মনে হলো অনেকদিন পর যেন কোন নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে এসে গভীর এক মমত্বের বন্ধনে আটকা পড়ে আবার সুদূরে চলে যেতে হচ্ছে।
যে মানুষটির আমন্ত্রণে সুন্দর একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হলো সেই কামরুল হাসান উজ্জ্বল ভাই সম্পর্কে একটু না বললে লেখাটা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
সমাজতান্ত্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা ও প্রচন্ড রকমের সংস্কৃতিমনা এই মানুষটি প্রবাস জীবনের শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নিজস্ব চিন্তাধারায় নিজেকে এখনো স্থির রেখেছেন।সপ্তাহে ছয় দিন সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করে ছুটির দিনে অবসর না কাটিয়ে সাংগঠনিক বা কোননা কোন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে কখনো ক্লান্তিবোধ করেননা।কখনো বড় আয়োজনের সুযোগ না হলে নিজের বাসায়ই বিশ রকমে ভর্তা ভাতের আয়োজন করে সংস্কৃতিমনা বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রবাসের বুকে আয়োজন করে ফেলেন বৈশাখী কিংবা কোন নবান্ন উৎসব ।আবার কখনো প্রবাসী পারিবারিক বন্ধুদের নিয়ে কোন ছুটির দিনে বিশেষ কোনো স্থানে ঘোরার আয়োজন করে সবাইকে তৈরী করে দেন নির্মল আনন্দের ব্যবস্থা।বড় কোন সাংস্কৃতিক আয়োজনে অনুষ্ঠান পরিকল্পনার পাশাপাশী নিজেই হাতেই তুলে নেন মঞ্চ সজ্জার কাজ ,আপন মনে অনুষ্ঠানের বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কখনো পেশাদার শিল্পীর মত শৈল্পীক মঞ্চ তৈরী করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে।কারণ রঙ তুলির সাথে তার সখ্যতা সেই ছেলে বেলা থেকেই।কোন শিল্পী ,সাহিত্যিক বা কোন গুনে গুণান্বিত মানুষদের প্রতি রয়েছে তার উদার ভাবে ভালাবাসার একটি অন্তর ,তাই এই দূর প্রবাসের বুকে এমন কোন মানুষের খোঁজ পেলে তিনি মনে করেন মহামূল্য কোন রত্নের সন্ধান পেয়েছেন।এমন মানুষদের সঙ্গে নিজে থেকেই যোগাযোগ স্থাপন করে তাদেরকে সাধ্যমত আদর আপ্যায়ন ও সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেন।এই সুদূর পরবাসে যে মানুষগুলোর চেষ্টা ,ত্যাগ ও পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশী বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক সংগঠন ও যাদের আয়োজনে মাঝে মাঝে প্রবাসের দূরত্বের কষ্ট ভুলে গিয়ে প্রবাসি বাঙ্গালীরা মেতে ওঠে দেশজ উৎসব আনন্দে,কামরুল হাসা উজ্জ্বল সেই সব স্বপ্ন দেখা ত্যাগী মানুষদেরই একজন।

মধুর কিছু স্মৃতি সঙ্গী করে ৩০মে সকাল নয়টায় হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সারে নয়টায় প্লাসা ম্যাগবা ময়দানে কাব্য কামরুল দম্পতি এবং হাসনাত জাহান আপা’র সাথে সাক্ষাৎ হলো।আমাদের আগমন একসাথে হলেও প্যারিসে ফেরাটা হচ্ছে যার যার মত ,হাসনাত আপা ৩১মে’র বিমান টিকেট বুকিং করেছেন আর কাব্য দম্পতি পুনরায় ফিরবেন যুইবুচ(Ouibus)এ ,ফলে ওনারা ৩0মে’র সারা দিন বার্সেলোনার কিছু দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের পরিকল্পনা নিয়ে বেরিয়েছেন, আর আমার বাস দুপুরে ছাড়ার কারনে বাকীটা সময় ওনাদের সাথে কাটানোর উদ্দেশ্যে আমরা একসাথে ছাগরেদা ফামিলা পরিদর্শনের জন্য প্লাস দো কাতালোনিয়া থেকে মেট্র ট্রেনে উঠলাম।ছাগরেদা ফামিলা মেট্র ষ্টেশন থেকে ওপরে উঠতেই চোখে পড়লো স্থাপত্যেই এই অমর নিদর্শন। আকাশচুম্বী নির্মাণাধীন চারটি মিনার দাড়িয়ে আছে,মিনারের মাঝামাঝি অবস্থানে যীশু’র একটি দন্ডায়মান মূর্তি অনেকটা ঝুলন্তের মত।পর্যটকের দল ঊর্ধমূখী হয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে এর বিশালতা।জেনেছি এটি একশত বছর ধরে নির্মাণাধীন খ্রীষ্ট ধর্মীয় গীর্জা।কিন্তু আমরা যেখানে দাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছি সেখান থেকে পুরা-নিদর্শনের ছিটে ফোটাও খুঁজে পেলাম না। তাই কাব্য কামরুল কিছুটা সংশয় নিয়ে চারপাশটা ঘুরে দেখতে উদ্যত হলেন।গীর্জাটির অপর পাশে পৌছুতেই সংশয় সত্য হলো।এখানেও দন্ডায়মান চারটি মিনার কিন্তু গীর্জাটির প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু করে মিনারের মাঝামাঝি পর্যন্ত খ্রীষ্ট ধর্মের নানা চরিত্রের ছোট ছোট মূর্তি আকারের প্রতিকৃতিসহ বৈচিত্রময় কারুকার্যেখঁচিত।স্থাপত্যটির রংবিহীন দেহ’ই বলে দিচ্ছে তার বয়স।ভেতরের শিল্পকর্ম দর্শনের জন্য বাইরে পর্যটকদের লাইন।কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য সেই লাইনে সামীল না হয়ে শুধু ছাগরেদা ফামিলা’র বাইরের রূপ দেখেই আমরা বিদায় নিলাম।স্থপতি এন্টনি গাউদির নকশায় নির্মানাধীন এই গীর্জাটি দর্শন করতে প্রতি বছর প্রায় ২.৮ মিলিয়ন দর্শনার্থী এখানে ভীড় করেন।১৮৮২ সালে এই স্থাপত্যটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় যা এখনো চলমান।২০২৬ সালে এন্টনি গউদির মৃত্যুর একশত বছর পূর্তি হবে।তাই তার মৃত্যুর একশত বছর বিশেষভাবে উদযাপনের জন্য ছাগরেদা ফামিলা ২০২৬ সালে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে চলছে।












এখান থেকে আমরা চলে গেলাম এন্টনি গাউদির আর একটি বিখ্যাত স্থাপত্য নিদর্শন কাসা বাৎলো (CASA BATILLO)পরিদর্শনের জন্য।কাসা বাৎলো বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা কল্পকাহিনীর সিনেমার বাড়ীর মত।যে কারো হঠাৎ মনে হতে পারে বাড়ীটিতে হয়ত অশরীরী আত্মা অথবা পরীদের বসবাস।




যারা স্থাপত্য নিয়ে কাজ করেন,এই শিল্পকে ভালোবাসেন,এর উপর পড়াশোনার করেন তাদের কাছে বার্সেলোনা একটি স্বপ্নের শহর,কারণ এই শহরেই রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি এন্টনি গাউদির বিখ্যাত ও অনন্য কাজগুলোর অনেক নিদর্শন।কাসা ভিসেন্স,ফিন্সা গুয়েল,সাগ্রাডা ফামিলিয়া,পালাউ গুয়েল,কোল-লেগি দে লেস তেরেসিয়ানেস,কাসা কালভেট,মিরালেসের গেট ও বেড়া বিল্ডিং,পার্ক গুয়েল,কাসা বাৎলো,কাসা মিলা,এসকোলেস দে লাঁ সাগার্ডা ফ্যামিলিয়া উল্লেখযোগ্য।এর মধ্যে থেকে অনেকগুলো কাজ বিভিন্ন সময়ে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। যে স্থপতি এই শহরের সমৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন,যার অবদানকে আজ বার্সেলোনা তথা স্পেনের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়, সেই মানুষটির মৃত্যুর গল্পটি বেশ বেদনাদায়ক।
প্রাত্যাহিক দিনের মত ৭ জুন ১৯২৬ সালে ক্যাথলিক ধর্মপ্রাণ গাউদি অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে সেন্ট ফেলিপ গীর্জার দিকে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে হাঁটছিলেন।জিরোনা ও বেইলিন স্ট্রিটের মাঝে গ্রান বিয়া দে লেস কোর্তেস কাতালানিস-এর মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় তিনি একটি ধাবমান ট্রামের সাথে ধাক্কা লাগার ফলে আহত হন এবং চেতনা হারিয়ে ফেলেন।তার পরনের জীর্ণ পোশাক ও পরিচয়সুচক কোন প্রমানপত্র বা কাগজপত্র কাছে না থাকায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন।এরপর একজন পুলিশ অফিসার ট্যাক্সিতে করে তাঁকে সান্তা ক্রিউ হাসপাতালে নিয়ে যান কিন্তু সেখানে পূর্ণাঙ্গ যত্ন পাননা বরং অবহেলার স্বীকার হন।দুর্ঘটনার পরেরদিন সাগার্ডা ফামিলার যাজক মোঁসে গিল পারেস তাকে চিনতে পারেন।কিন্তু এতক্ষণে গাউদির অবস্থা চরম অবনতি ঘটে,উচ্চতর চিকিৎসা দেয়ার অবস্থা আর থাকেনা।১০ই জুন, ১৯২৬ সালে ৭৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুর দুইদিন পর অবহেলায় মৃত্যুবরণ করা গাউদিকে মাউন্ট কার্মেলের লেডির চ্যাপেলের সমাধিস্থলে বিশাল মানুষের সমাগমে শেষ বিদায় জানানো হয়।

কাসা বাৎলো থেকেই বিদায় নিতে হলো আমার তিন ভ্রমণসঙ্গীর কাছ থেকে।তিনদিন একত্র যাপনের পর ওনাদের রেখে একা চলে যাওয়ার সময় একটু বিরহ বেদনা অনুভব করলাম ,যদিও প্যারিসে আবার সবার সাথে নিয়মিতই দেখা হবে।বার্সেলোনা থেকে ফিরছি কিন্তু আমার ছোট্ট মামুনি মিশেলের জন্য কিছু না নিলে কেমন হয় ,তাই আবার ফিরে এলাম রামলায়।সুভেনীরের দোকান ঘুরে কিনলাম ওর প্রিয় কার্টুন চরিত্র কীতি মীমী’র একটি পুতুল আর ওর মামুনী’র জন্য হাত ঘরি।বার্সেলোনার তার্কিস কাবাবে’র স্বাদটা শেষবারের মত নেয়ার জন্য পথের খাবার হিসেবে সঙ্গে নিলাম একটি তার্কিস কাবাবের পুলিন্দা।পরেরো ঘন্টার যাত্রা তাই পানীয় সামগ্রীর মজুদটাও বেশ ভারী করতে হলো।তিন দিনের ঘোরাঘুরিতেই শহরটা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিলো,মনে হচ্ছিলোনা এই শহরে আমি ক্ষণিকের অতিথি হয়ে এসেছিলাম।
নির্ধারিত সময়ের ত্রিশ মিনিট পূর্বেই চলে এলাম বাস ষ্ট্যান্ডে।এবারো আমার নির্ধারিত সীটে আরেক তরুণীর অবস্থান ,তবে এবার আসার দিনের মত আর বিশেষ সৌজন্যতা না দেখিয়ে আমার প্রিয় জানালার পাশের আসনটি বিনীত অনুরোধে বুঝে নিলাম। ঠিক আড়াইটাই বাস যাত্রা শুরু করলো প্যারিসের উদ্দেশ্যে।আবার কবে আসার সুযোগ হবে স্থাপত্য ,ফুটবল ও মুক্তিকামী মানুষের এই নগরীতে,ভেবে বাসের জানালা দিয়ে নগরীর রূপটাকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম ,আর হুমায়ূন আজাদের বিখ্যাত একটি কবিতা ‘ভালো থেকো’র লাইনগুলোর মতোই মনে মনে বলছিলাম, ভালো থেকে বার্সেলোনা, ভালো থেকো।আসার দিন রাতের অন্ধকার ও ঘুমন্ত অবস্থায় ফ্রান্সের সীমা পারি দিয়ে স্পেনের ভূমিতে পৌঁছেছিলাম, তাই দেখা হয়নি স্পেনের ভূপ্রকৃতি এবং ফরাসী ভূমির অনেকাংশ।দিনের আলোয় যাত্রা শুরু করায় ফেরার পথে মিললো সেই সুযোগ।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের সীমানা পারি দিয়ে বাস প্রবেশ করলো বিস্তৃর্ণ পাহাড়ী ভূমির মধ্যদিয়ে বয়ে চলা মহাসড়কে।চারিদিকে উঁচুনিচু পাহাড়ী ভূমির মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেছে কাতালান জনগোষ্ঠীর বসতি ,এই বৈরী ভূপ্রকৃতির মধ্যেদিয়ে তৈরী করা হয়েছে যোগাযোগের রাস্তাঘাট।কোথাও কোথাও এই ভূমিকে তৈরী করা হয়েছে কৃষি কাজের উপযুক্ত করে,ফলান হয়েছে নানা প্রজাতির ফসল।তবে স্পেনের ভূপ্রকৃতি আমার কাছে মনে হয়েছে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত এবং প্রকৃতি যেন আপন মনে নিজেকে সাজিয়ে রেখেছে।অনেক এলাকা জনমানবের বসতিবিহীন কঠিন পাথর আবৃত পাহাড়ী ভূমিতে শিকড় আঁকড়ে দাড়িয়ে আছে বুনো বৃক্ষরাজির দল।মাঝে মাঝে মনে ইচ্ছে জাগছিলো যদি বাস থেকে নেমে এই বুনো প্রকৃতি দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করতে পারতাম।কিন্তু ইচ্ছে থাকলেইতো দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা যুইবুচ(ouibus)কখনোই আমার ইচ্ছে পূরণের জন্য ক্ষণিকের জন্য থেমে দাঁড়াবে না,তাই শুধু আক্ষেপে মনটা শূন্যতায় ভরে উঠছিলো,আর ভাবছিলাম কবে এমন প্রকৃতির মধ্যদিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারবো।বাসের জানালার কাচেঁর ভেতর থেকে ক্যামেরার সাটারিং স্পিটিট কয়েকবার পরিবর্তন করে চলন্ত বাস থেকে প্রকৃতির স্থিরচিত্র ধারণের চেষ্টা করলাম কিন্তু মন মতো ছবি না পাওয়ায় বিরত থাকলাম,তার উপর পাশের সহযাত্রীনীর অসুবিধের কথাও ভাবতে হলো।মনোনিবেশ করলাম নিবিড় করে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবগাহনের দিকে।প্রায় সারে তিন ঘন্টা যাত্রার পর পৌছুলুম আপন সীমানায়,ফরাসী পুলিশের পরিচয়পত্র পরিক্ষা পর্ব শেষ করে বাস এবার ছুটে চলতে লাগলো ফরাসী ভূমির উপর দিয়ে।ফরাসি ভূপ্রকৃতির দিকে তাকালে যে কারো মনে হবে,এ যেন এক শুশৃংখল সাজানো গোছানো শিল্পী রঙ তুলীতে আঁকা এক ক্যানভাস।শিল্পী যেভাবে চেয়েছে ঠিক সেই রূপে আকৃতি ধারণ করে প্রকৃতি যেন মানবকুলকে বিমোহিত করছে।




ফরাসিরা একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের জাতি,প্রতিটি কাজে শৃংখলা,শিল্পবোধ ও শতভাগ শুদ্ধতা কামনা করে এবং কোন কাজ সেইভাবে সম্পূর্ণ না হলে কিছুতেই যেন মানুসিক তৃপ্তি নিতে পারেনা।এই অভ্যস যেন ওদের অস্থিমজ্জাগত হয়েগিয়েছে।প্রাত্যাহিক জীবনের প্রতিটি কাজকর্ম থেকে শুরু করে,প্রশাসনিক ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে তা বিদ্যমান,তা থেকে বাদ যায়নি তাদের ভূপ্রকৃতিও।ক্ষেত খামার থেকে শুরু করে পর্বতমালা,নদী এবং বনবাদারের ডালপালাগুলো যেন নিয়ন্ত্রণাধীন।এ দেশের যে কোন দিকে তাকালে মনে হবে এ যেন সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কোন এক বাড়ীর আঙিনা।তারই প্রভাব চাক্ষুস ধরা পড়লো এই ফেরার পথে।কোথাও বিস্তৃর্ণ সমতল ফসলী জমি,সেই ধু ধু মাঠ জুরে বপিত হয়েছে আঙুরের চারা।শুনেছি আঙুর বাগানের কথা,কিন্তু এবার প্রথম বারের মত দেখা মিললো আঙুর ক্ষেত,যা আমাদের দেশের ধান গম বা অন্যান্য ফসলী ক্ষেতের মত।বুঝতে পারলাম পানির দরে কিভাবে ফ্রান্সে মদ কিনতে পাওয়া যায়।কারণ এখানকার উৎপাদিত আঙুর চলে যায় নামিদামী মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানাগুলোতে আর সেখানে ব্যবহার হয় মদ তৈরীর মূল কাঁচামাল হিসেবে।আঙুর ও মদের সহজলভ্যতার কারণে ফরাসিদের প্রাত্যাহিক দিনের খাবার টেবিলে ওয়াইন এবং উৎসব আনন্দের দিনে শ্যাম্পেন ভরা একটি গ্লাস থাকা যেন ঐতিহ্য।মদের গ্লাস ব্যতিত রেস্তোরার টেবিলের আড্ডা যেন অর্থহীন।পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ফরাসি মদের বিশেষ চাহিদা ও সুনাম রয়েছে।
সুদূরে সূর্যের অপরাহ্ণের আলো পড়েছে বিশাল পাহাড়ের বুকে,।বাসে বসে দূরের এই পর্বতমালাগুলো দেখতে মনে হচ্ছিলো অনেকটা রূপালী বর্ণের জ্বলন্ত নক্ষত্রের মত।ভাবছিলাম, ফ্রান্স যে কতটা বৈচিত্রময় ভূপ্রকৃতি দেশ তা সড়ক পথের এই ভ্রমণে না আসলে অজানাই থেকে যেত।শহরের ইট পাথরের মধ্যে বসবাসের কৃত্রিম জীবন যাপন থেকে শুধু ইন্টার্ণেটের চিত্র দেখে এই বৈচিত্রতা উপলব্ধি করা কখনোই সম্ভব নয়।মনে হলো সুন্দর ও সার্থক একটি ভ্রমণ শেষ করতে যাচ্ছি,যা স্মৃতির পটে অম্লান হয়ে থাকবে দীর্ঘ দিন।বার্সেলোনা থেকে ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল দিনে যাত্রা শুরু করেছিলাম কিন্তু ভোরের আলো ফোটার আগে প্যারিসের পৌঁছে দেখতে পেলাম প্রকৃতির ভীষন গোমরা রূপ,বৃষ্টিরূপে অঝরে ঝড়ছে প্রকৃতির কান্নার জল,ভোর পাঁচটার ব্যারসি বাস ষ্টেশনে নেমে প্রকৃতির সেই কান্নার জলে গা ভিজিয়েই পৌঁছুলুম আপন নীড়ে।
বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-১)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-২)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-৩)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-৪)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ(উজ্জ্বল)
প্যারিস ,ফ্রান্স।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×