somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অতীন্দ্রিয়া
আমি ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম,ঝর্ণার মত চঞ্চল।বিধাতার মত নির্ভয়,প্রকৃতির মত সচ্ছল।আমি আকাশের মত বাঁধাহীন,আমি মরু সঞ্চার বেদুঈন,আমার বন্ধনহীন জন্ম–স্বাধীন,চিত্ত মুক্ত শতদল।ঠিক যেমনটা নজরুল বলেছেন

বাবার ক্যান্সার

২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


.



আজকে বাসার সামনে এসে দেখি এ্যাম্বুলেন্স। বাসার সামনে একগাদা লোক। আমি দ্রুত উপরে উঠলাম। যাস্ট পাগলের মত। সিড়ি থেকে চিৎকার করে কান্নার শব্দ শুনছিলাম। যাস্ট মনে হচ্ছিলো যে কোনো সময়ে পড়ে যাব। উঠে দেখি আমাদের পাশের রুমের এক আঙ্কেল মারা গেছেন। উনার লিভার ক্যান্সার ছিলো।
উনি উনার ছেলে, বৌমা আর বউয়ের সাথে এসেছিলেন। আমি যাস্ট দ্রুত আমার রুমে ঢুকি। গিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ আব্বুর পায়ের পাশে বসে ছিলাম।
কাল অপোরেশন সাকসেসফুল না হলে হয়তো এই সময়টা আমারও আসবে। মাথা মনে হয় ঝিম ধরে আসছিলো। আম্মু আমাকে বলল, আঙ্কেলের ওখানে যেতে। লাশ নিয়ে হসপিটালে গেলাম।
একজন বিদেশী মারা গেলে এখানকার ফর্মালিটি অনেক। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় যেতে হয়, স্বাস্থ্য বিভাগে যেতে হয়। ভাবছিলাম,
আমারো যাতে সে বেগ পেতে না হয় তাই আগে থেকেই ব্যাবস্থা করতে হবে
.ধুরোহ..কি ভাবছি! আব্বু কে সুস্থকরতেই হবে.... কিযে পাষানের মত ভাবি আজকাল!
পাষান হবো নাই বা কেন! ২১ বছরের ছেলেকে যখন পরীক্ষার ভাইবা বোর্ডে জিজ্ঞেস করা হয়! তোমার বাবার না ক্যান্সার? এখনো বেচে আছেন কি করে! টাকা পয়শা জোগাড় করতে কি চাঁদাবাজিকরছো নাকি!
তাদের কথা এমন যে..তোর বাপ এখনো মরেনি? আরে বাপ, তোদের বাপের টাকায় কি আমার বাপের চিকিৎসাকরাই?
এতদিন যার বিড়ির টাকার হিসাব থাকতো না.. তাকে যখন কটি টাকার ঋণের হিসাব..সংসার খরচ, আয় করের হিসাব তার উপর লাল ফিতার উৎকোচের হিসাব ও কষতে হয়......সে ছেলে পাষান হবে নাতো কি! তার উপর আছেন কিছু বুদ্ধিজীবী! অফিস সেরে আারাম করে সোফায় পা তুলে দিয়ে, টিভি দেখতে দেখতে ফোন করে উপদেশ দিতে থাকেন!

এতক্ষণ হসপিটালেই ছিলাম। মাত্র বাইরে এসে চুপচাপ বসে আছি
বুঝতে পারছিলাম না লাশটানিয়ে কি করা উচিত ছিলো!একে তো বিদেশ! তার উপর তেমন কিছুই জানিনা ভারতের কার্যালয় সম্পর্কে।
আমারও তো কাল সারাদিন হসপিটালে দৌড়াতে হবে। পরশু অপারেশন। অনেক টাকা ম্যানেজ করতে হবে। দেশ থেকে টাকা আনার ব্যাবস্থা করতে হবে। আমেরিকা থেকেও কাজিন কিছু টাকা পাঠাবে
, ব্যাপারর না এসব..
একটু পর বাসায় যাবো...

খোলা রাস্তায় হাটছি..সামনের কাছে মেয়েটারে পাক্কা প্রস্টিটিউট মনে হয়।।যাউগ্গাহ..
আসার পর থেকে দেখলাম..পকেটে টাকাও বেশি নাই..কাল দেশ থেকে টাকা না আসলে অপারেশন তো হবেই না..এটাকা দিয়ে দেশেও যেতে পারবো না..যা আছে তা দিয়ে এ রাত প্রস্টিটিউটটার সাথে আরামেই যাবে মনে হচ্ছে

...এই .ট্যাক্সিহ...

মেয়েটা পাশে বসতে চাইলো, গেট খুলিনাই। হুট করে সামনের সিটে বসে পড়সে। এদের গালি দিয়ে নামানো যায়..কিন্তু আবালের মত বসে আছি..থ্যাংক ইউ বলে সামনের সিটে বসে পড়েছে মেয়েটা ....বেশ সুশ্রী, টাকাটা কাজে লাগাবো কিনা ভাবছি..

ঠান্ডা মাথায় সব খরচগুলো হিসাব করে নিলাম। কিছুটাকা চুরিও করে পকেটে পুরেও রাখলাম..দেশে গেলে প্রেমিকার পিছনে ঢালতে হবে...এ অবস্থায় তো আর বাসার থেকে টাকা নেয়া যাবেনা...নিজে সারাদিন না খেয়ে বিড়ি খেয়ে কাটালে কি হবে?ডেটে প্রেমিকাকে বেলি রোড না নিতে পারলে প্রেস্টিজ থাকবে নাহ...

আরে না.. প্রস্টিটিউটটারে যায়গা দেই নাই..গাড়িতেও না..প্রথমে নামতেই চায়নি.... পুলিশের ভয় দেখিয়ে নামালাম..
যাওয়ার সময় কাগজে কিছু লিখে ছুড়ে মারলো ট্যাক্সির জানালা দিয়ে আমার দিকে..
ফোন নম্বার লিখেছে..হাতের লিখা খুব সুন্দর মাশাল্লাহ....সুরন্জনার থেকে বহু গুনে ভালো...পকেটে রেখে দিলাম কাগজটা..দেশে গেলে সুরন্জনাকে খেপানো যাবে..

কালকে আব্বুর টেস্টগুলার জন্য ঠান্ডামাথায় এপয়েনমেন্ট নিলাম..ওদিকে আব্বু কে খাওয়াতে গেলাম..
সোনা বাবা, লক্ষ্মী বাবা.আর অল্প একটু..আর এক লোকমা.... মুখে দিতে না দিতেই বমি করে ভরিয়ে দিলো....নিজ হাতে পরিষ্কার করলাম..বমি আসছে আমারো... এই গল্প সুরন্জনাকে বললে সে এই হাত ধরতে আবার আপত্তি করবে নাতো! সে যাই হোক..

একটুপরে সাইন করতে যাবো,লিখা থাকবে আমার বাবার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ি, এর আগেও সাইন করেছি..হাত কাপছিলো একটু।ডাক্তার বলেছেন..সে অপোরেশনের পর এতদিন পেশেন্টের বেচে থাকাই মিরাকেল! অথচ বুদ্ধিজীবি সব আত্নীয়স্বজনের বিপক্ষে গিয়ে.. বাপের আর সবার লাইফরিক্স নিয়ে অপোরেশনটা পুরো গায়ের জোরেই করিয়েছিলাম... তারপর সব ঠিক.
.নাহ এবার আর হাত কাপবে না..

একটু আসেপাশে ঘুরে আসি..
মুম্বাইতে আছি..জীবনে আবার আসবো কি না কে জানে! ছবি তুলে কয়েকটা স্ট্যাটাস দেই ফেসবুকে..এমনিও কত মানুষ ম্যাসেজ করে রেখেছে..রিপলাই দেয়ার সময় কই! একই কথা বার বার বলতে শুনতে বিরক্ত ই লাগে..যাদের চাইনা তারা সিমপ্যাথির ডালা সাজায় বসে আছে..আর যাদের চাই তারা যেন তাকাচ্ছেও না..কপাল আরকি!

সুরন্জনাটা অনলাইনে...নির্ঘাত ফ্লার্ট করছে কারো সাথে...১৩ টা ম্যাসেজ দিলাম সিন করে নাই...
আরেহ.!!.প্রেমিকের সাথেইতো গভীর আলাপ করে,দুষ্ট ছবি তুলে তো প্রেমিকরেই পাঠায়! দু একটা দুস্টু কথা আর ছবি আবদার করেছি বলে রাগের কি আছে কে জানে!ধুর..

বাবার খাওয়া.. ইউরিন..মলত্যাগ সব বন্ধ..পেট ব্যাথায় কাতরাচ্ছে..মা বসে বসে কাদছে...একটু খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলাম দুপুরে..পুরো বাচ্চাদের মত..খেতেই চায়না..তিন ঘন্টা ধরে আধ প্লেটও খায়নি....মাঝে ইচ্ছা করছিলো প্লেটটা আছাড় মেরে সব ছেড়ে পালিয়ে যাই..
নাহ..আমি তো আর সবার মত না..হাল ছাড়বো না আমি

কেমো দেয়ার পর বাবার একটু মল হয়েছে....বেডে জামায় ভরিয়ে একাকার..আমাকেই পরিষ্কার করতে হবে..এখন ঘুমুচ্ছে বাবা...আমারো ঘুম পাচ্ছে,রাতে ঘুম হয়নি ভালো..শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে.., খাট দেখলে অভুক্ত শকুনের মত তাকিয়ে থাকি।বাবা রাতে বার বার ডাকে, ভালবাসে তো! এই পরবাসে দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত পিতা যে একমাত্র ছেলে ছাড়া সে বড় অসহায়..একমুহুর্তের জন্য কোথাও যেতে দিতে চায় না...খেতেও না ইয়ে করতেও না,ঘুমুতেও না. .. বাবার এখন পেট ব্যাথা কম..মা তার ওড়না দিয়ে বাবার গা ঢেকে দিয়ে বেডটায় মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে..
আমি দেখছি..হুট একমুহুর্তের জন্য মানুষটাকে নিষ্প্রাণ ভাবতেই গা শিওরে উঠলো....যদি এই মানুষটা না থাকে তো..আমার মা কি করে বাচবে? আমরা কি করে বাচবো? আমার মা টা কি পাগল হয়ে যাবে?
আমার কান্না পাচ্ছে..মাথা ধরছে খুব..আর পারছিনা..না.. আর কিছু ভাবতে পারছিনা..যা হওয়ার হবে...অবেচতন মনে সারাদিনের অক্লান্ত মেরুদন্ড আমার শেষ আশ্রয় হিসেবে খুজে নিলো হাসপালের দেয়ালটা..মুহুর্তেই পিঠটা সরিয়ে আনি.. এ হাসপাতালে পিঠ ঠেকাতেও লাখটাকা লাগে..!
এবার দেশে গেলে বিশাল অর্থসংকটে পড়বো পুরো পরিবার...বিশাল অংকের লোন.উপার্যন শুধু মায়ের!...তাই সব আমাকেই সামলাতে হবে..এর পর হয়তো আর কখনো আব্বুকে এত বড় অপেরশন..এত ভালো ট্রিটমেন্ট দিতে পারবো না..খরচের সীমা যে আবেগ থেকে ছোট.. বোনটাকে ঘরোয়া করে বড় করেছি..বিয়েও তো দিতে হবে..এত খরচআর . এত ঋণ যে পোষাবে না হয়তো..জানি ছেলে হয়ে অর্থাভাবের কথা ভেবে বাবাকে কম চিকিৎসাদেয়ার কথা ভাবছি! কি নিষ্ঠুর আমি! কিন্তু আমি যে ভাইয়ো...
নিজের ভবিষ্যৎ নাহয় বাদই দিলাম..
সত্যি পাথর হয়ে যাচ্ছি

রাত ১১ টা ১০..আত্মীয়সজনদের আরেক দফা ঝারি দেয়ার সময়..সবাই অফিস থেকে বাসায় এসে..ডাল ভাত খেয়ে আরাম কেদারায় দুপা দোলাতে দোলাতে টিভিতে জলসা মুভি দেখতে দেখত একটু জ্ঞান ঝাড়বে..ওফ..ফোনটা বন্ধ করে রাখতে পারতাম যদি!

ওহ..সুরন্জনাটা রিপ্লাই দিচ্ছে না..মেয়েটা যে কি করে! এ অসময়ে একটু কথা বলতে পারছে না ঠিক করে? আমার যে একা লাগছে বড্ড একা লাগছে..পারছিনা আর ভাবতে..ভার্সিটিতে ক্লাসমেটরা হয়তো নতুন নতুন প্রজেক্ট জমাদিচ্ছে..ফিস্ট করছে.ইশ কতদিন রাত জেগে কার্ড খেলা হয়না! এখানে আাসার পর তো বিড়িও টানার সময় পাচ্ছি না
...
রাত ১.৩০ বাজে..দুদিন ঘুমাইনি তবুয়ো ঘুম আসছে না...কাল ১০ টায় অপরেশন...একা আমি..পকেটে ৬০০ রুপি..নির্জন রাস্তা আর আঙুলে প্রস্টিটিউটটার দেয়া কাগজটা ঘুরাচ্ছি......
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×