somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

-বিশ্বকাপের মঞ্চে ৩য় দিন, ব্রাজিলের সাথে যা দেখলাম

২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খেলা ছিল ব্রাজিল এর সাথে কোস্টারিকার। গত ২২ তারিখে সন্ধা ৬ টায় ব্রাজিল এর খেলার কথা বলেছি। যেখানে ব্রাজিল ৬ মিনিট অতিরিক্ত সময়ের ২ টি গোল দিয়ে জিতে নিয়েছে।


যদিও একজন আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হিসেবে আমি খুব কইয়ে চাচ্ছিলাম ব্রাজিল হেরে যাক। কারন আমরা যে আগের খেলায় হেরেছি।

খেলা রাশিয়ান সময় বিকেল ৯ টায় হলেও আমাদের ডিউটি শুরু হয়েছিল বিকেল ৩ টায়। ব্রাজিলের খেলায় আমার শুরুতে থেকে শেষ অব্দি আমার ডিউটি ছিল মাইক নিয়ে। ৮ থেকে ৯ নং গেইটের ভেতরে তবে মূল মাঠের বাহিরে মাইক নিয়ে নানান বিষয়ের নির্দেশনা দেয়া ছিল আমার কাজ। শুরু বিকেল ৬ টার পর দর্শকদের প্রবেশ শুরু হয়েছিল। আর শেষে স্পেশাল গেইটে ছিলাম বের হওয়ার নির্দেশনা নিয়ে। শুরুর কথায় আসি। ৬৮ হাজার দর্শকের খেলার দেখার সুযোগ থাকার এই সেন্ট পিটার্সবার্গ মাঠে কোন সিট খালি থাকে না। মানুষের মহাস্রোত। এদের মাঝে বেশ কিছু বাংলাদেশীদের সাথেও দেখা হয়েছে আমার সাথে। মূলত অনেকের কাছে বাংলাদেশের পতাকা দেখেই আমি গিয়েছিলাম তাদের কাছে। পরিচয় দিলাম। তাদের আমরা দুই পক্ষই খুশি। অনেকে সেলফওি তুলতে চাইলেন। এটাই আমাদের স্মৃতি বললেন একজন।

তাদের মধ্যে একজন ছিল; যাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ নড়াচড়া চলছে। যার হাতে শেখ মুজিবুর রহমান এর ছবি দেখা গিয়েছে। আবার সেখানে পরে খালেদা জিয়ার মুক্তির পোস্টারও দেখা গিয়েছে। এই বিষয়ে আমার মতামত খানা আগে লিখি; এখানের কোন ছবিই আসল না বলে মনে হয়। যদি আমার দেখা ঠিক হয়ে থাকে। এই লোক ব্রাজিল আর কোস্টারিকার খেলা দেখতে এসেছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ এর মাঠে। আমি তখন এই মাঠে ডিউটিতে ছিলাম। গেইট ৮ এর সামনে আমি মাইক হাতে যখন আগত দর্শকের তথ্য দিচ্ছিলাম তখন উনি সেখান থেকে ডুকেছেন। উনার হাতে বাংলাদেশের পতাকা দেখে আমি নিজেই গিয়েছিলাম তার কাছে। পরিচয় দিলেন উনি ফেনী থেকে এসেছেন। এটাও বলেছিলেন যে, ফেনী ফুটবল ক্লাব থেকে উনি একাই এসেছিলেন। উনার হাতে শুধু পতাকা ছিল। তার মাথায় বাধা পতাকা আমি নিজেই তখন বেধে দিয়েছিলাম। উনি বলছিলেন যে, উনাকে কেউ একজন বেধে দিয়ছিলেন কিন্তু গেইটে খুলে দিয়েছে । এখন বাধতে পারছেন না। তার হাতে আমি আর কোন ছবি দেখি নাই। শুধু পতাকা ছাড়া। তবে হা যদি অন্য কোন বাংলাদেশীর থেকে পরে নিয়ে থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়।

কলকাতার বেশ কিছু বাংলাদেশীর সাথে দেখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ২ জনের মজার ঘটনা শেয়ার করি। ২ জন মধ্য বয়স্ক। খেলা দেখার জন্যই এসেছেন। কিন্তু ঘটনা ক্রমে তাদের ২ জনের টিকেট হচ্ছে আলদা স্থানে। উনার বুদ্ধিমানী করে ব্রাজিল এর এক সাপোর্টার এর সাথে কথা বলে তাদের কাছে থাকার ২ টা টিকেট কিভাবে যেন পরিবর্তন করেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, উনার যে টিকেট নিয়েছেন সেটা হচ্ছে “লিমিটেড পিপল” বা “অসুস্থ বা পঙ্গু” লোকের জন্য। উনারা গেইট দেখে যখন ডুকতে গিয়েছেন উনারদের প্রশ্ন করা হল; “আপনাদের হুইল চেয়ার কোথায়? কারন আপনাদের টিকেটে তো হুইল চেয়ার লেখা”।
খেলা শুরু হইয়ে গিয়েছে। আমার আশে পাশে যখন অনেকটা ফাকা হয়ে গিয়েছে। আমি তাকিয়ে দেখি উনারা ২ জন এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম। আমাকে ঘটনা খুলে বলল। ডুকতে পারছে না। তাদের হুইল চেয়ার দরকার। আমি আমাদের নির্ধারিত বিভাগের কাছে জানাতে তারা তাদের জন্য ২ টি হুইল চেয়ার এনে সুস্থ মানুষ দুটোকে বসিয়ে টেনে নিয়ে গেলেন।

ব্রাজিল এর এক মহিলা বয়স ৫৫-৬০ হবে। গেইট থেকে ডুকে মাঠে ডোকার আগে টিকেট হারিয়ে ফেলেছে। খুব ছটফট করছিল। কি করবে বুঝতে পারছিলেন না। পুলিশের স্পেশাল বিভাগকে জানানো হল। তারা তাকে ভেতরে নিয়ে গেল।

খেলা শেষ। দর্শকের মহাস্রোত শুরু হল। আমার গলা এখন ব্যাথা করছে। প্রায় ৬ ঘন্টার মত মাইকে চিৎকার করে যাচ্ছি। দর্শকের ভিড় কমে যাওয়ার পর তাকিয়ে দেখি কোস্টারিকার এক চাচা। বয়স ৭০ এর বেশী। তাকে যে নিয়ে এসেছে তাকে হারিয়ে ফেলেছে। ইংলিশ বুঝে না। শুরু আমাকে ইশারায় বুঝালেন। আমি চেষ্টা করলাম তাদের মিলিয়ে দিতে।
আরো প্রায় ৩ ঘন্টা পর আমি যখন মেট্রো ষ্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম, ষ্টেশনের সামনে সেই চাচাকে দেখলাম রাস্তার উপর বসে আছে। হঠাৎ চোখ পড়ল আমার তার উপর। কাছে গেলাম। বুঝালেন এখানে বসে আছেন যদি এখান থেকে যায় তাহলে দেখতে পাবেন বলেন। তার মানে সে এখনও খুজে পায় নাই তার সাথে লোকটিকে। এবার আমি তার ফোন দিয়ে ফোন দিলাম সেই লোককে। আমিই কথা বলে ম্যাপ পাঠিয়ে দিলাম। পরে উনি এসে নিয়ে গেলেন সেখান থেকে।

খেলা যেহেতু ব্রাজিলের, বাংলাদেশের আগ্রহ এখানে একটু বেশীই থাকবে এটা বুঝাই যাচ্ছে। খেলায় কোস্টারিকার থেকে ব্রাজিলের দর্শক বেশী ছিলেন। তবে আমার কাছে খুব ষ্পষ্টভাবে মনে হয়েছে ব্রাজিলের নিজ দেশের দর্শকরা আমাদের বাংলাদেশের ব্রাজিলের অতিউৎসাহী কিংবা অসহনশীল না।
আর্জেন্টিনার খেলা আগামী ২৬ তারিখ। তাদের কথা খেলা শেষেই বলতে পারব।

আচ্ছা আপনি বাংলাদেশে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার দুই পক্ষকে একই ছবিতে আনন্দ করতে দেখেছেন? আমি কিন্তু কোস্টারিকার সাথে তারা পতাকা মিলিয়ে এক ছবিয়ে আবদ্ধ হয়েছে। ব্রাজিলের দর্শকদের বেশ ভদ্র আর খেলার যে আসলে শুধুই আনন্দের জন্য, এটার জন্য মানুষের মাঝে বিবাদ না করা উচিত, সেই আদর্শ ব্রাজিলের দর্শকের মাঝে আমি দেখতে পেয়েছি। আসলে এখন প্রশ্ন থেকে যায় তারা তাদের নিজের দেশের হয়েও তাদের আনন্দ ভোগ যেন মাত্রা অতিরিক্ত না হয়। যেন কোন মানুষ তাদের আনন্দে কষ্ট না পায়, এগুলো খেয়াল রাখেন। আপনি বা আমি কি সেটা পারছি?


আমাদের ভলান্টিয়ার টিমের ট্রেনিং সেশনে একজন ব্রাজিলিয়ান মহিলা ছিলেন। এখন আমার পাশের রুমেই থাকেন। উনি মূলত সেখানের একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর। তাকে বললাম, “আমাদের দেশে তো অনেক ব্রাজিলের পক্ষে মানুষ আছে। আপনি কি সেটা জানেন?” জবাব দিলেন; “না সেটা তো বেশী জানি না। তবে আমি চান ব্রাজিল কাপ না জিতুক”। “কেন?” প্রশ্ন করলাম। তার জবার অনেক বিশ্লেষন মূলক। তিনি এই খেলার তার দেশে এখনও অনেক দারিদ্রের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতি অনেক গুলো পয়েন্টে কথা বলেছিলেন। এটা নিয়ে দরকারে আর একদিন লিখব।

শুরুতে যে লিখেছিলাম, আমি চাচ্ছিলাম ব্রাজিল হেরে যাক আসলে সেটা সত্য। আসলে আমার এটা চাওয়াও উচিত হয় নাই। কারন এখানে যে ভাল খেলবে তারই জয় হবে। আমাদের ভাল কিছুর পক্ষে থাকা উচিত। এখানে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা ছাড়া আরো ৩০ টি দল বিশ্বকাপ খেলে। কেউ খারাপ না বলেই এখানে এসেছন। তার ভাল এর পূজারী হই। পারিবারিক মিরাসের মত সাপোর্ট করা পরিহার করা উচিত।

মেট্রোতে ডুকে দেখি বিশাল এক বাঙ্গালীর দল। কলকাতার। একজন সিলেটেরও ছিলেন। অনেকটা আড্ডা দিতে দিতেই ফিরে এলাম আমি সেদিনের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৭:৪৬
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×