সুইডেন এর সাথে সুইজ্যারল্যান্ড খেলা ছিল সেদিন। খেলার সুইডেন জিতেছিল ১-০ গোলে। গোলটি আমার চোখের সামনেই হয়েছিল। কারন সেদিনও আমার ডিউটি পড়েছিল মাঠের ভেতরে
এখানে বলে রাখি এক লেখাটি ২ দিন পরে লিখছি কারন আসলে খুব একটা লিখতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। অলসতা কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না। যাই হোক, ৩ তারিখের খেলার দিন আসলে আমার জন্য খুব বিরক্ত নিয়েই শুরু হয়েছিল। তবে কিছু শিক্ষাও ছিল বেশ ভাল।
আগের রাত খুব কম ঘুমিয়েছিলাম। ভোরের পরেই ঘুম এসেছিল। তবে ডিউটির শুরু ছিল ১১ টায়। এলার্মও দেয়া ছিল। আবার নিজ জ্ঞানেই সেটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ফলাফল ঘুম থেকে উঠতেই বেজে গেল ১১ টা। রুমমেট ডাঃ আব্দুল মতিন ভাই ডেকে না দিলে বোধায় তখনও উঠা হত না। দ্রুত গোছল সেরে আমি চলে গেলাম স্টাডিয়ামে। কিন্তু ততক্ষনের কাজের ট্রেন ছেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ আমি যেতে যেতে আমার টিম আমার জন্য অপেক্ষা করে করে তারা চলে গিয়েছে। সময় তখন ১২ টার বেশি।
আর্জেন্টিনার খেলার দিনে 2B থাকলেও এবার ছিল 2D। এবার আমি আমার টিম খুজছি। একবার ভলান্টিয়ার সেন্টার আর একবার মাঠের ভেতরে যাই। এবার প্রায় ৩-৪ বার গিয়েও কাউকে খুজে পেলাম না। এদিকে শুরু হল বৃষ্টি। ভিজেই গেলাম পুরো বৃষ্টিতে।
শেষ অব্দি আমার সুপারভাইজার আনাকে খুজে পেলাম। আর তার মাধ্যমেই টিম খুজে নিয়ে কাজে যোগ দিলাম। তবে নাকে মূখে খাওইয়ার মত কিছু খেয়ে নিলাম সেই সাথে। হাতে এক খানা মাইক ধরিয়ে দেয়া হল। মাঠের ভেতরে আসা দর্শকদের মাইকে বিভিন্ন কানুন সম্পর্কে অবহিত করা ছিল সেদিনের কাজ।
আগেই বলে রাখি মাঠের ভেতরে কাজ করা টা আমার জন্য আর্জেন্টিনার খেলার দিল বেশ ভাল ছিল। কিন্তু সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর ভেতরে কাজ করব না। কারন খুব বিরক্তিকর। আর সুইডেনের খেলা নিয়ে মোটেই আগ্রহ ছিল না। সত্যি বলতে ২-৩ বার বোধায় মাঠের দিকে ফিরে তাকিয়েছিলাম। বাকি সময় ভেতরে ডুকে বসে ছিলাম। মাঠের ভেতরে কাজ করলে অনেকটা সময় অকারনে বসে থাকতে হয়। খেলা শুরু হলে বিরতির আগ অব্দি খেলা দেখা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। আবার শেষে দর্শকদের বের করে দেয়ার সময়। যেটা আমার ভাল লাগে না। কারন কাজ করতেই ভালবাসি।
সেদিন, দিন শেষে টিম রিপোর্টে আমি পরের দিনে আমার চাহিদার জায়গা লিখেও দিয়ে এসেছি। এটাই প্রথম যে, আমি কোন জায়গা লিখে দিলাম। জানি না কতটা কাজ করবে। ৩য় দিনের স্থানটি আমার জন্য খুব প্রিয় ছিল। অনেক মানুষ অনেক কাজ।
মাঠেই সুইডিশ দর্শক অনেক বেশী ছিল। আমরা ভলান্টিয়ারা সবাই মনে মনে দোয়া করছিলাম যে, খেলা যেন আর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে না যায়। কারন তখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো ১ ঘন্টা।
সেদিনের টিম লিডারটাকে খুব বেশী ভাল লাগে নাই। এটাই সত্য। আসলে সকালেই তার উপর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। খেলার শুরুতে খুব একটা সমস্যা পোহাতে হয় নাই। কারন দর্শক সবাই ৩ ঘন্টা অব্দি ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছে। কিন্তু বিরতিতে এটা সামাল দেয়া খুব কঠিন ছিল। মাইকে কথা বললেও গলা কিছুটা ভেঙ্গে গিয়েছিল। মাঠে সাধারনত বিয়ার এর চাহিদা বেশি থাকে। তাই বিয়ারের দোকানের সামনেই লাইন ছিল অনেক বড়।
আর মাঝে ১ জন টিকেট হাড়িয়ে ফেলেছেন। আমাদের কাছে এসে জানালে আমি মাইকে ঘোষনা করে দিলাম। কিছুক্ষন পর সেই টিকেটটি আবার অন্য জন পেয়ে আমার কাছে দিলেও গেল। কিন্তু ততক্ষনে প্রথম ব্যাক্তিকে আর খুজে পাই নাই। ইন্ডিয়ান কিছু পরিবার এর সাথে দেখা হয়েছিল। একজন তো আমাকে ইন্ডিয়ান মনে করে বলেই বসল, “ তোমার ঘোষনা টি হিন্দিতে দাও”। আমি বললাম আমি বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান না। একজন মধ্য বয়স্ক আন্টি এসে বললেন, ‘’তুমি বাংলাদেশী? আমি অল্প অল্প বাংলা বুঝতে পারি তবে বেশী বলতে পারি না”। এটাও অবশ্য উনি বাংলাতেই বলেছিলেন।
খেলা শেষে দর্শকদের বের করে দিতে দিতে তখন সময় প্রায় বিকেল ৯ টা। মাঠের বাহিরে এসেই দেখা হল একজন বাংলাদেশীর সাথে। মিনহাজুর রহমান তার নাম। বাড়ি চট্টগ্রামের হালিশহরে। কোমড়ে বাংলাদেশের পতাকে দেখে আমিই তার কাছে এগিয়ে গিয়েছিলাম। দুজনে ছবিও তুললাম। কিছু সময় পরে বিদায় নিলাম।
সামনে এগিয়ে যেতেই তার্কিশ পতাকা পিঠে ৪-৫ জন মানুষ দেখতে পেলাম। আসলে সেই শুরুর খেলার দিন থেকেই আমি তার্কিশ লোক খুজছিলাম। কিন্তু তেমন একটা পাই নাই। এবার পেলাম। কাছে গিয়ে সালাম বিনিময় করলাম। উনারা আমাকে দেখে বেশ অবাকই হলেন। অনেক্ষন কথা বলতাম তাদের সাথে। বেশ ভাল লাগছিল অনেকদিন পর খোলা প্রানে তার্কিশ বলতে পেরে।
এবার ডিনারের জন্য যাব। তবে মারিয়া বলেছিল তার জন্য অপেক্ষা করতে। সেই অপেক্ষা করতে করতে অনেক সন্ধা ১১ টা। খাওয়া শেষ করলাম। আমাদের ২ জনের পথও একদিকেই। আমরা ২ জনই চলে এলাম নিজ নিজ আবাসনে।
দিনটি সকালে খুব বিরক্তির সাথে শুরু হলেও পরে আর সেটা থাকল না। শেষ অব্দি ভাল একটি দিন কেটেছে বলা যেতেই পারে।
দিনের সব থেকে বড় ভাল অংশ ছিল হোটেলে ফিরে এসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর ইরস্মুস+ ইন্টার্নশীপ এর স্ক্লারশীপ এর মেইল পাওয়া। যদিও সমইয়ের অভাবে যাওয়া হবে না।
সামনে খেলা আছে ১০ তারিখের প্রথম সেমি-ফাইনাল আর ১৪ তারিখের ৩য় অবস্থান নির্ধারন। আমাদের মাঝে মস্কোর সাথে সব থেকে বেশী ৭ টি খেলা পড়েছে। সেটা বলে রাখা ভাল। এখন অব্দি অনেক মাঠের খেলা শেষ। আমরা আর ২ ট খেলার পর সমাপ্তি টানব। ফাইনাল হবে মস্কোতে।
ও, সকালে মাঠ থেকে ভলান্টিয়ার সেন্টার আবার মাঠ করে করে কতটুকু হেটেছিলাম জানেন?
রাতে বাসায় এসে ফিটবিট দেখি ১৪ কি,মি পথ হেটেছি।১ হাজার এর বেশী পা ফেলেছি আর ৩৬ তলা উপরে উঠেছি। আর এর কারন মূলত আমি। আসলে সবাই তো টাইম মেনে একটি ট্রেনের বগির মত চলে। আমি দেরি করে ফেলায় আমার সেই বগিটি ছুটে গিয়েছিল। সময়ের প্রতি আরো বেশী আনুগত্যশীল হওয়া উচিত ছিল।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১৮