somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

-পুলিশ আংকেলটিও আজ গাড়ির চাপায় মারা গেলেন

০২ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এই মাত্র আব্বু বাসায় ফোন দিলেন। জানালেন, আব্বুর ব্যাচ ম্যান পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর সগির আংকেল মারা গিয়েছেন।


ছগির আংকেল-কে নিজ কর্মস্থল বান্দরবনে, গত ২ দিন আগে ডিউটি থেকে হেটে হেটে বাসার ফেরার পথে একটি মটর সাইকেল ধাক্কা দেয়। মাথায় আঘাত লেগেছিল। আজ একটু আগে ঢাকায় কোমাতে মারা গিয়েছে। গতরাতে আব্বু তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে সান্তনা দিয়েছিলেন। কাকী বলেছিল মাত্র মাথা নেড়েছেন প্রথম বারের মত। কাকী ফোনে কাঁদছিলেন। ২ টি সন্তান তার। বেশ তরুন আর চৌকস পুলিশ অফিসার ছিলেন ছগির আংকেল। আগ্রাসী সড়কের শিকার হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

প্রান, সেটি হোক কোন পুলিশের কিংবা ছাত্রের, সমান মূল্যমানের। আর দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই সড়কের নিরাপত্তা দেয়ার কাজটি দেয়া হয়েছে একটি নির্বাচিত সরকারকে। কিন্তু দেশের আরো অনেক ক্ষেত্রের মত এই ক্ষেত্রের অনেকটাই অচল তারা। (অনেক কিছুতে সচলও আছেন)। যার প্রমান গত ২ দিনে ঢাকার আন্দোলনে পুলিশের সার্জেন্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রী অব্দি তাদের অনিয়ম চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন ছোট ছোট ছাত্র/ছাত্রীরা।

গতকাল আমি বাসা থেকে সামান্য দূরে আমার একটি গন্তব্যে যাব। একটি বেসরকারী এপস এর মাধ্যমে বাইক ডেকে নিলাম। প্রায় ১ ঘন্টা পরে এসেছিল বাইকটি। বাইকে উঠেই বুঝতে পারলাম ড্রাইভারের হাত খুব কাপছে। পথের মাঝে বেশ কয়েক স্থানে থেমেও ছিল বাইকটি। উনাকে আমি নির্ভয় দিলাম তবে নিজের তার উপর কোন বিশ্বাস ছিল না। যদিও সে আমাকে পৌছে দিয়েছিল।
ফিরে আসার পথে আমি হেটেই আসলাম। সত্যি বলতে সাহস হচ্ছিল না নতুন করে বাইকে উঠার। বেসরকারী সেই এপস কোম্পানী অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স রেখেই তাকে এই দায় দিয়েছেন। তাহলে এবার প্রশ্ন জাগবে যাদের থেকে এই লাইসেন্স টি সে পেয়েছে তারা কি সঠিক বিচার করে তাহলে এটি দিয়েছিল।
আর হা, আমাকে কোন হেলমেটও দেয়া হয় নাই।

বেশ অনেক বছর পরে দেশে এসেছি। এর মাঝে দেশের অনেক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। অনেক উন্নতির জয়গান। ২ জি থেকে ৪ জি। আর স্যাটেলাইট থেকে শুরু করে মেট্রোরেল, অনেক উন্নতি দেশে ঘটেছে। তবে বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে, যেই ঢাকার রাস্তা দেখে গিয়েছিলাম আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে, ফিরে এসে ঠিক সেটাই, হা! একদম ঠিক সেটাই আমি পেয়েছি। কোন সিগন্যাল ছিল না। মানুষ নিজ ইচ্ছে মত রাস্তার এপার ওপার করছিল। ধুলা বালি আর চোখের সামনেই পুলিশের অনিয়ম।
তবে আমি বলছি না যে, সবখানেই এমন। অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়া থেকে শুরু করে নিষ্কাশনহীন সেই ড্রেন গুলো আজও দেশ ব্যাপি।

দেশের স্যাটেলাইটে যদি বেপরোয়া বাচ্চাদের দেখা যায়, তাহলে এই সব কি দেখা যায় না?

প্রতিদিন সকাল হতেই সড়ক দুর্ঘটনার খবরের সাথে ঘুম ভাঙ্গে এখন। কেউ না কেউ তার আপনজন হারিয়েছেন। আমরা শুনে সেখানে আফসোস করে দায় সেরে ফেলি। কিন্তু হায়দার সাহেবের সেই গানের কথা এখানে মনে পড়ে যায়, "যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রনা" ।

ঢাকা সহ দেশের বড় বড় শহর গুলোতে চলমান গাড়ি গুলোর বড় একটা অংশ ফিটনেসহীন। সেদিন পরিচিত একজন ঢাকার রাস্তায় লুকিং গ্লাসহীন গাড়ির ছবি তুলেছিলেন। তারে দেখা গিয়েছে অসংখ্য গাড়ীতে এই অংশটি নেই।

মহাসড়কের কথা বাদই দিলাম। আমার আব্বু আজ আসামি নিয়ে একটি শহর থেকে অন্য আর একটি শহরে যাচ্ছেন এখন। আর আমরা বাসায় বসে শুধু চিন্তাই করে যাচ্ছি। নিরাপদে বাসায় কখন ফিরে আসবেন।
যে সড়ক থেকে নিত্য এই মৃত্যুর খবর আসে। ঘর থেকে বের হতে ভয় হয় সেখানে কি এটাই সাধারন না?
আমরা মানুষের মরে যাওয়ার আগে একটি মৃতুপুরীতে বসবাস করছি বলে মনে হয়। আর এই ভয় কাটানোর জন্য যখন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া উচিত তখন আমরা পাঠশালা বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা আন্দোলনের সৈনিকদের ভয়ও দেখাচ্ছি আর কিছু পুলিশের উলঙ্গ আচরনও সেখানে প্রতিয়মান।

আচ্ছা, আমরা তো অনেক আন্দোলনের কথা ইতিহাসে পড়েছি। সেই ৪৭ থেকে ৫২ আবার ৭১ কিংবা ৯০। ছাত্রদের ভুমিকা কি ছিল সেখানে, সেটাও আমরা জানি। আমরা কেন সেই ইতিহাসের শিক্ষাকে শুধু মাত্র পরিক্ষার পাশের জন্য মনে করি। কেন সেখানে যারা বীর ছিলেন তাদের নতুন প্রজন্মকে বীর হিসেবে মেনে না নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে মিলিয়ে যৌক্তিক এই আন্দোলনকে কলঙ্কিত করতে গিয়ে বারবার বিশ্বের বুকে নিজেদের ছোট করছি।
আমাদেরও সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাতে ইচ্ছে হয়।

অফিস থেকে বার বার নক করছে। তোমাদের ঢাকাতে কি হচ্ছে? তুমি দ্রুত কভারেজ দিচ্ছ না কেন? কিন্তু আমি বসে বসে চিন্তা করি আমি কিভাবে লিখব আমার দেশে স্কুলের ছেলেদের বাসের নিজে পিষে মারা হচ্ছে। আর তার প্রতিবাদের যারা রাস্তায় আছে তাদের প্রতিও হচ্ছে অনেক নির্যাতন? আমার দেশ যে ছোট হয়ে যাবে।

ছগির আংকেল চলে গিয়েছেন। এই দিনেই অজানা অনেকের আপনজন জীবন হারিয়েছেন।আমাদের বিবেক বাবু ফিরবে কবে?

আমাদের দেশে একটি নির্বাচিত সরকার আছেন। মায়ের মত একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন। আমরা তবুও কেন অনিরাপদ। মা কি তবে তার সৎ সন্তানদের আগলে রাখতে গিয়ে নিজ সন্তানকে কোরবানী দিচ্ছেন?
#নিরাপদসড়কচাই
#শহরঅচলহোক
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২৯
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×