২১ তারিখ সকাল। সূর্যি মামার জাগার আগেই আমি আর আব্বু চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। আগ্রাবাদের বাসা থেকে আসতে সব মিলে ৪৫ মিনিট সময় লেগেছিল। প্রথম গন্তব্য ঢাকা। US-Bangla সকাল ৬ঃ২৫ মিনিটের ফ্লাইট ধরে ৭ঃ১৫ তে ঢাকায়। যদিও ব্যাগ পেয়ে বেশ সময় লেগেছিল। আমার এবারের গন্তব্য কাতারের দোহা হয়ে তার্কির ইস্তানবুল
সকাল ১১ টায় ফ্লাইট। যদিও প্রধানমন্ত্রী সেদিন লন্ডয় যাওয়ায় সব ফ্লাইটের মত আমারটিও ২ ঘন্টা পিছিয়েছিল। খুব বিরক্তিকর ছিল এই সময়টা।
সকাল ৮টায় আমি ডমেস্টিক থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দের প্রবেশ করি। বেতর থেকেই প্রবেশ করলাম। কোন লাইন ছিল না। খুব ভাল লাগছিল। তবে দেশ ত্যাগের পূর্ব সময় যতটুকুর ভাল লাগার আর কি!
মাহমুদ, যিনি তুরস্কের একটি শহরে থাকেন, আগের দিন অনুরোধ করেছিলেন তার জন্য তার পরিবার থেকে একটি মোবাইল ফোন এর প্যাকেট দিবেন, আমি যেন সেটা নিয়ে আসি। যেহেতু আমি ভেতরে প্রবেশ করেছি আর তার পরিবারও আগে এসে দাঁড়িয়ে ছিল তাই বোডিং শেষ করার আগেই সেখানে যাওয়া দরকারী ছিল।
বিমানবন্দরে আসলে কেউ কারো ব্যাগ রাখতে চাইবে না। এটাই সাধারন। এতে অনেক রিস্ক থাকে। তবুও আমি আমার বিমানের একজনকে দেখতে পেলাম হাতে টিকেট সহ। তার কাছে আমার ডকুমেন্টস দেখিয়ে আমার ২ টি লাগেজ রেখে, শুরুতে ৬ নম্বর গেইট থেকে বের হতে গেলাম। আমাকে সেখান থেকে দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তি ৪ নং থেকে বের হতে বললেন। কিন্তু ৪ং থেকে আবার আমাকে ৬ নং এর পাঠাল। এভাবে ২ বার ঘুরে ৬নং থেকে বের হলাম। প্যাকেট নিলাম। মাঝে ২ মিনিট সময়। ৬নং এর সামনে আমি।
এবার আবার প্রবেশের পালা। বিমানবন্দরে প্রবেশ এর জন্য প্রায় ৫-৬ টি গেইট থাকার পরেও শুধু মাত্র ৪নং গেইট থেকে যাত্রী প্রবেশ করানো হচ্ছিল। ৫নং প্রধানমন্ত্রী আর তার সেই বিমানের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ। আমি অনুরোধ করে বুঝালাম যে আমার সব ভেতরে রেখে এসেছি। এখন না গেলে আমার লাগেজ সন্দেহের তালিকায় চলে যাবে। তবুও যেতে দিল না। ৬নং ফাঁকা। কেউ নেই। তবুও দিল না। ফিরে গেলাম ৪নং গেইটে। তবে সেখানের লাইন এত বড় ছিল যে আমি আমার ফ্লাইট মিস করব, যদি আমি সেখান থেকে প্রবেশ করি। তবে সেখানে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তাকে বুঝিয়ে বললাম। উনি আমাকে লাইন ছাড়া প্রবেশ করতে দিলেন।
এতক্ষন আমি শুধু এটাই ভাবছিলাম আমার লাগেজ সন্দেহের তালিকায় চলে যায় কিনা(!) দ্রুত করা ফিরে এসে সব ঠিক ভাবেই পেলাম।
তবে পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার মোবাইলটি নেই। শুরুতে সব ঠিক মত পরিক্ষা করে বুঝতে পারলাম কোথাও রেখেছি। কিংবা কেউ নিয়েছে। তবে খুব বেশী চিন্তিত ছিলাম না। আমি তখন শুরুতে একটি iphone খুজতেছিলাম। যেহেতু আমার ফোনটি iphone ছিল, তাই সেখানে "Find my iphone" থেকে আমি ফোন যেখানেই আছে খুজে পাব।
তখন মনে হল, আমি যখন একটু আগে ৪নং গেইট থেকে প্রবেশ করলাম সেখানে চেকিংএ দিয়েছিলাম। হয়তো বাকি জিনিষ নিয়ে এসেছি। আর তাড়াহুড়াতে ফোনটি বক্সে পড়ে ছিল। দৌড়ে সেখানে গেলাম। আনসারকে বললাম। কোন গুরুত্বই দিল না।
'আরে দূর মিয়া এখানে থাকলে আমরা পেতাম। আমরা কি লুকিয়ে রেখেছি' এসব বলে আমাকে সড়িয়ে দিলেন। যিনি চেকিং টেবিলে বসা তার কাছে গিয়ে বললাম, 'এখানের বক্সে থাকতে পারে। মাত্র ৫-৭ মিনিট আগের ঘটনা। একটু যদি বক্স গুলো খুজে দেখা যেত?'
'আরে না মিয়া। এখানে থাকলে আমরা পেতাম। ওসব দেখা যাবে না।' আচ্ছা আপনি দেখেন না? আমি বললাম। 'আমিও দেখতে পারব না।' বলে আমাকে বলে পাঠিয়ে দিলেন।
তখন আমি সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের সাথে দেখা করি। দৌড়ে গিয়ে হাফাতে হাফাতে তাকে ইংলিশেই বললাম। একটু ইচ্ছে করেই ইংরেজীতে বলেছিলাম। আর যখন বললাম ফোনটি iphone, তখন উনি বললেন, 'আচ্ছা চলেন দেখি। কোথায় রাখতে পারেন?' আমাকে প্রশ্ন করল। আমি তাকে ২ টা স্থান বললাম। আমরা তখন ৪নং গেইটের সামনে। উনি সবাইকে প্রশ্ন করলেন।
"না, না স্যার। আমরা দেখি নাই। এখানে নাই। অন্য কোথাও আছে।' এভাবেই বলে গেলেন সবাই মিলে।
এবার উনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে এবার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখব। এটা বলেই উনি কন্টোল রুমে নক করলেন।
আর আমি ২য় সন্দেহের স্থানের দিকে যাচ্ছিলাম। এর মাঝেই পেছন থেকে হইহই করে ডাক এলো। "এই যে ফোন। এখানে। পাওয়া গিয়েছে"।
হা, এবার ফোনটি পাওয়া গিয়েছে। সেই বক্সের মাঝেই। যেটা আমি একটু আগে দেখতে বলেছিলাম। কেউ গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমাকে ফোনটি দিয়ে দেয়া হল। আর পুলিশ অফিসার তখন গেইটে থাকা সেই লোকদের একটু চার্জ করেন, এই বলে যে, কেন একটু আগে আমি যখন বলেছিলাম তখন দেখা হল না। এখান কিভাবে বের হল। আর তিনি যখন শুরুতে বলেছিলেন তখন কেন না না করে দেয়া হয়। ইত্যাদি।
আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে হাত মিলিয়ে চলে এলাম।
আমি মনে করিনা সেখানের কেউ ইচ্ছে করে ফোনটি লুকিয়ে রেখেছেন। তবে সেই শুরুতে আমি যখন তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম বা বক্স দেখতে অনুরোধ করছিলাম তখন দেখলে পরের ঘটনাগুলো আর হত না।
আমি হয়তো সাহস করে পুলিশের কাছে গিয়েছি, কিন্তু গ্রাম থেকে সোজা বিদেশে যাওয়া কেহ হয়তো এটা ভাবতেও পারত না। জিনিষ হারিয়ে দেশ থেকে একটি কষ্ট নিয়ে বিদায় নিত।
সবশেষে, অনেক ধন্যবাদ সেই পুলিশ অফিসারকে। আর যাত্রীদের প্রতি আরো একটু সহনশীল আচরন করা, তাদের কথা গুলো শুনার এবং বুঝতে চেষ্টা করার পরমর্শ সেদিন গেইটে থাকা সেই দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রতি।।