আজকে অনেকদিন পর বড়বেলার গল্প লিখতে বসলাম। মাঝখানে অনেকদিনই মনে হয়েছে এইটা লেখা দরকার,ঐটা লেখা দরকার, কিন্তু কিছুই লেখা হয় নাই। আজকের বিষয়, দিল্লী কা লাড্ডু.. খাইলেও পস্তাবেন, না খাইলেও পস্তাবেন। চারিদিকে এখন বিয়ের মৌসুম চলতেছে। নিজের স্কুল, কলেজের বহু বান্ধবী এমনকি বন্ধুরও চোক্ষের সামনে বিবাহ হইতে দেখলাম, তাই কয়েকটা মজার ঘটনা না লিখে থাকাটা অসম্ভব লাগছে।
প্রথমেই লাভ ম্যারেজ। এই ধরণের বিবাহে বিড়ম্বনা ঘটার সম্ভবনা খুবই কম। যদি না পাত্র অথবা পাত্রীর মা এই বিবাহে হালকা একটু নাখোশ থাকেন তো!!! নাখোশ থাকলে যাই করুন না কেনো উনার মন ভালো হবে না। আর উনার মুখেও হাসি খুঁজে পাবেন না। সবসময় ভ্রুটা কুঁচকানোই থাকবে।
কিন্তু আসল মজা হয় অ্যারেন্জড ম্যারেজে। বিয়ে কথাটা উচ্চারণের পর থেকেই যত বিভ্রাটের শুরু হয় এখানে। ঘরে আপনার বিবাহযোগ্য পুত্র অথবা কন্যা। প্রথম কাজ হলো পাত্র অথবা পাত্রী খুঁজা। কিছু কিছু বাসায় এটা খুবই খুশির কথা যে তাদের ছেলেমেয়ে লাভ ম্যারেজ করছে না। কিন্তু অনেক বাসায় এটা হতাশাজনক কারণ এখন তাদেরকে কষ্ট করে ছেলেমেয়ের জন্য পারফেক্ট ম্যাচ খুঁজতে হবে। এই ব্যাপারে একটা মজার কাহিনী আমি আমার ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম। এখানেও শেয়ার করতে চাই।
অবরোধের কারণে ক্লাস বন্ধ, তাই আমিও বাসায় পার্মানেন্ট বসে আছি। ভাবলাম কোন কোন ফ্রেন্ড ফাঁকা আছে একটু খোঁজ নিয়ে আড্ডা মারা যাক। তো এক ফ্রেন্ডকে পেয়ে গেলাম। ওকে নিয়ে বেইলীরোডে কিছুক্ষণ হাঁটার পর ভাবলাম কফি খাওয়া যাক কোথাও বসে। তো আমরা কফির অর্ডার দিয়ে কোণার একটা টেবিলে বসে গল্প করছিলাম। হঠাতই একসাথে প্রায় ছয় সাতজন মানুষ ঢুকলেন। আমরা একটু অবাক হয়ে তাদেরকে দেখলাম। ২ মিনিট পরই বুঝতে পারলাম আসলে এটা পাত্রী দেখা সংক্রান্ত ব্যাপার। এটা বুঝে তো আমাদের কিউরিসিটি আরও বেড়ে গেলো। নিজেরা কি কথা বলবো?? ঐ দিকেই আমাদের কান আর সব অ্যাটেনশন। ৫ মিনিট পর গার্ডিয়ান শ্রেনীর সবাই উঠে যেতে গেলো। কিন্তু পাত্র-পাত্রী বেচারারা বসে রইলেন। আমি বোকার মত ঘাড় ঘুরিয়ে তখন উনাদেরকেই দেখছিলাম। এমন সময় আমার টেবিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক আন্টি বললেন, "কি দেখছ? এখানে পাত্রী দেখা হচ্ছে!!" উনা কথার মাঝে একটু খেদও হয়তো ছিল। হয়তো উনি আমাকে আর আমার বন্ধুবরকে কাপল ভেবেই আরও খেদ ঝাড়লেন!!!! মজার টুইস্টের এখনও অনেক বাকি ছিল। আমরা দুই এক মিনিট নিজেদের নিয়ে গল্প শুরু করলাম। হঠাত একটু উত্তেজিত মেয়েলি গলা শুনে থেমে গেলাম। বুঝলাম বেচারী পাত্রীটিকে হয়তো নিজের সম্পর্কে বলতে বলেছেন পাত্র মহাশয়। আর তাতেই বলার সুযোগ পেয়ে উনি অবিরত নিজের মনের কথা বলে যাচ্ছেন। ৫ মিনিট পরে হঠাত উনার মনে হলো সামনের জন তো কিছুই বলছে না। তাই উনি বললেন, আপনি তো কিছুই বলেছেন না?? চোখ ঘুরিয়ে আমি দেখতে পেলাম মেয়েটার সেই পাত্রীসুলভ মুখের হাসি। কিন্তু সন্দেহ হলো যে ওর সামনের মানুষের মুখের হাসি মনে হয় এতক্ষনে আর নাই!!!! যাই হোক, আমাদের কফি শেষ হলো তাই আমরাও উঠে গেলাম।
ভাই এখানেই শেষ নেই। আর কোথাও না হোক পৈত্রিক বাসাটি আপনার কোথায় এটা বিবাহের সময় আপনাকে অনেক বড় প্যারা অথবা সুখ দিতে পারে। এমনকি আপনি পাত্রী হলে আপনি কোন কলেজে অথবা ভার্সিটিতে পড়ছেন এটার উপরও আপনার বাজার উপর নিচ হতে পারে। সব থেকে বেশি প্যারা উচ্চশিক্ষিত পাত্রীর , হয় আপনাকে একজন মধ্যবয়স্ক পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে বিয়ে করতে হবে অথবা আপনাকে নিজের বিভিন্ন পছন্দের তালিকাকে কমিয়ে আনতে হবে। তবে এটা ডাক্তার পাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য না। সব শ্রেনীর মায়েদের কাছেই ডাক্তার পাত্রী খুবই পছন্দের!!! এমনকি পাত্রদের কাছেও। এদিক থেকে ইন্জিনিয়ার পাত্রীর স্কোর খুবই নিম্ন পর্যায়ের!!! ( ) পাত্ররাও কোনো এক অদ্ভুত কারণে তাদের প্রতি নাখোশ!!! তবে ইন্জিনিয়ার পাত্রদের কথা আলাদা। বিবাহ বাজারে তাদের ব্যাপক চাহিদা!!! (প্রেমের বাজারেও!!!) ওহ, আর আপনার বেতন যদি মোটা অংকের হয় তাহলে আপনার টাকওয়ালা মাথাটা নিয়েও আপনি বউ পেয়ে যাবেন মনের মত!!!!
শুরুটা করেছিলাম লাভ ম্যারেজ দিয়ে। শেষটাও ওটা দিয়েই করতে চাই!! প্রেম যতই গাঢ় হোক না কেন, ভুলেও পালিয়ে বিয়ে করার কথা চিন্তাও করবেন না (মেয়েদের জন্য এটা বিশেষ উপযোগী)। কারণ আপনার স্বামীদেবতাটির গায়ে কিন্তু একটুও দাগ বসবে না যা আপনার গায়ে লাগবে। বাবা মা আপনাকে দূরে ঠেলে দিবেন আর আপনার স্বামীর বাড়ির লোকজন আপনাকে কি কি নামে ডাকবে তা নাহয় নাই বললাম। আমার নিজ চোখে দেখা একটা প্রেমিক যুগলের কথা বলি। প্রেমে পাগল হয়ে দুইজন পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন একটু কম বয়েসেই!! বাবামার একমাত্র পুত্র তাই মা শেষ পর্যন্ত বউকে ঘরে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটির বাবা মা আর কখনোই মেয়েটির শ্বশুর বাড়িতে আসতে পারেনি। ছেলেটি মেয়েটিকে খুব ভালোবাসত, তাই সবসময় বলতো, তুমি আরেকটু ধৈর্য ধর, মা আর কতদিনই বা বাঁচবেন, তারপর তো আমারই একসাথে থাকব। কিন্তু মেয়েটির উপরে চলা নির্যাতন থামে না। নিজের ভালোবাসার মানুষের উপর চলা এমন নির্যাতন থামাতে না পেরে ধীরে ধীরে ছেলেটি অসুস্হ হয়ে যায়। এরই মাঝে তাদের ঘরে তিনটি সন্তান আসে। কিন্তু শ্বাশুড়ি আর ননদদের দেওয়া কষ্টের বোঝা থামে না। একসময় বদ্ধ পাগল হয়ে যায় স্বামীটি। আর ঘোরের মাঝে বিড়বিড় করে, " মা, ওকে তুমি আর কষ্ট দিও না মা।" স্বামীটি মারা যায়। তার কয়েক বছর পর মারা যায় স্ত্রীটিও। তারও কয়েক বছর পর তার শ্বাশুড়ি!!! হ্যা , তারা সংসার তো করেছিল, কিন্তু সুখী হতে পারেনি। একজন আরেকজনের সাথে ছিল, কিন্তু সেটা শুধু দুজনকে কষ্টই দিয়েছে।
তাই যদি আপনার পছন্দের মানুষটি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে, তাকে বলুন আপনাকে যেন সে সম্মানের সাথে নিয়ে যায় তার বাসায়, আপনার এবং তার বাবা-মার সম্মতি নিয়ে। পৃথিবীতে কিছুই অসম্ভব না। কিছু সময় আগে একটা হিন্দি মুভি দেখেছিলাম " মেরে ব্রাদার কি দুলহান" , কাহিনীর মধ্যে এই একটা জিনিসই আমার পছন্দ হয়েছিল যে, পালিয়ে বিয়েকে না বলা। আর আমার নিজ চোখে দেখা একটা প্রমাণও আমার হাতে ছিল। আর হ্যা, যে মানুষ আপনাকে, আপনার ফয়ামিলিকে সম্মান দিতে পারবে না তার সাথে কখনোই আপনি সুখী হবেন না। তাই বুঝে শুনে নিজের লাইফ পার্টনার নির্বাচন করুন!!!! ভালো থাকুন!!