somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

সিট নং ৫৫

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকাল থেকে অঝর ধারায় বৃষ্টি নামছে।আকাশটা সময় সময় গর্জে উঠছে।চারদিকে মেঘকালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।ঘড়ির কাঁটায় এখন সময় বেলা তিনটে।মাত্র আধাঘন্টা সময় হাতে আছে।“এই বুঝি ট্রেনটা আবার মিস করে ফেলি”- এটা ভেবে দৃপ্তের ভয় করছে।স্নান শেষে কোনমতে নিজেকে প্যান্ট আর শার্টের মধ্যে দখলবন্দি করে ফেলল।ব্যাগ গুছানোর ধার ধারে না সে।কখনো কোনদিন ঠিকঠাক ভাবে ব্যাগটাও গুছানো হয়নি।এমনকি সেরা পছন্দের বইটাও ছাড়া পরে যেত কখনো কখনো।কিন্তু নিজের ডায়েরীর প্রতি সে যথেষ্ট যত্নশীল এবং তার প্রিয় হেডফোনটার প্রতি।ভ্রমণ করার সময় কানে কোন মিষ্টি গান বাজবেনা তা কি করে হয়!
দৃপ্তের একটা অদ্ভূত চিন্তাকৌশল আছে।জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছুকে সে একটা সিনেমার মতো করে ভাবতে চেষ্টা করে।শুধু তাই নয়, এ্যাম্বুলেন্সের হর্ন, রাস্তায় দাঁড়ানো কঙ্কাল প্রায় বৃদ্ধ ভিখারী, প্রচন্ড জ্যাম, সুন্দরী রমণী, লোকাল বাস, চা-স্টলের খোশগল্প . . . ইত্যাদি ইত্যাদি।দৃপ্ত প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া এরকম হাজারো খন্ড খন্ড ঘটনাকে একটা উপসংহারে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।সে মনে করে এইসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা বিশ্লেষণপূর্বক মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া সম্ভব।মাত্র কয়েকদিন আগে দৃপ্তের সাথে এক মেয়ে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলো।কিন্তু দৃপ্তের লম্বা লেকচারের পর ঐ মেয়েটাকে আর দৃপ্তের আশেপাশে কেন পুরো একশ গজের মধ্যেও দেখতে পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।লোকমুখে যা শোনা যায় তা অত্যন্ত হাস্যকর।ঘটনাটা এরকম ছিল,
মেয়েটিঃ দৃপ্ত।একটা কথা বলবো?
দৃপ্তঃ বল?
মেয়েটিঃ আমরা কি ভালো বন্ধু হতে পারি না?
দৃপ্ত একটা লম্বা শ্বাস নিলো এরপর শুরু করলোঃ দেখ! স্বর্ণালী।বুঝতে চেষ্টা কর।পৃথিবীতে আমরা কোন মানুষের সাথে পরিচিত হই এইজন্য যে, এর পিছনে অবশ্যই কোন রহস্য আছে।কোটি কোটি মানুষের ভীড়ে কেন তুমি আমার বন্ধু হতে চাও? বিশ্বাস কর এর পিছনে রহস্য থাকতে বাধ্য।

সে যাইহোক, দৃপ্ত এখন ট্রেন ধরার তাড়ায় বেশ ব্যস্ত।রাস্তায় মোড়ে একটা সি. এন. জি পেয়ে গেল।মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে “সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন”।টিকিট কাটলো।প্রথমে টিকিট কাউন্টার থেকে জানতে পেরেছিলো সিট নেই।কিন্তু পরবর্তীতে একটা সিট সে পেয়ে যায়।সিট নং “ঝ এর W-55।একটু খুশি খুশি লাগছে ওর।জানালার পাশে বসার মধ্যে একটা অন্যরকম ভালোলাগা রয়েছে।স্টেশনে পৌঁছাতেই ট্রেনটার হুইসেল বেজে উঠলো।এখন দৌড় ছাড়া উপায় নেই।খুব কষ্টে ট্রেনটা ধরতে পেরেছে আজ সে।ব্যাগটা জায়গামত রেখে ট্রেনের সিটে হেলান দিয়ে বসলো।এরপর পুরো ব্যাপারটা একবার মেলানোর চেষ্টা শুরু করলো।
টিকিট পাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব . . . টিকেট মিললেও জানালার পাশের সিট . . . শেষমেশ ট্রেন ধরার জন্য দৌড়াদৌড়ি . . .
সিদ্ধান্তঃ অপ্রাপ্তি+প্রাপ্তি+অর্জন= একটি আনন্দঘন ভ্রমণ হতে যাচ্ছে এটাই দৃপ্তের ধারণা।

এভাবেই সে একঘন্টা সময় চিন্তা করে কাটিয়ে দিলো।এখন সিনেমার দৃষ্টিতে বিষয়টি ভাবলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এটা অনেকটা “Jab We Met” মুভিটির সাথে কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে।কারণ দৃপ্ত আজ টিকেট কেটেছে শেষ স্টেশন পর্যন্ত।অর্থ্যাৎ “খুলনা রেলওয়ে স্টেশন” পর্যন্ত।পথিমধ্যে কোথাও নেমে যাবার ইচ্ছাও রয়েছে ওর।সিনেমার কাহিনী মতে এখন কোন একজন এক্সট্রোভার্ট প্রকৃতির মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।আরো একঘন্টা পার হয়ে গেল কিন্তু পাশের সিটটা ফাঁকাই পড়ে রইলো।বেশ কয়েকটা স্টেশন পার হতেই একসময় হঠাৎ এক বৃদ্ধ মহিলার আবির্ভাব ঘটলো।বসে পরলো দৃপ্তের পাশের সিটে।এই প্রথম বারের মতো দৃপ্তের ক্যালকুলেশনে ভুল ধরা পড়েছে।এজন্য দৃপ্ত বেশ উৎকন্ঠিত।কথা শুরু করলো বৃদ্ধ মহিলাটি,
বৃদ্ধ মহিলাঃ হালো! আপনি বেশ চুপচাপ যে? একটা কথা বলি, আমরা বাঙালী।আর আমাদের একটা রেপ্যুটেশন আছে যে, যাতায়াতের সময় পাশের যাত্রীর সাথে খোশগল্প না করে আমরা থাকতে পারিনা।
দৃপ্তঃ আপনি ঠিকই বলেছেন।আমি দৃপ্ত।আপনি?
বৃদ্ধ মহিলাঃ আপনার নামটা সুন্দর।আমি স্বর্ণালী রায়।
দৃপ্তঃ আমার এক ক্লাসমেটের নাম এটা।তা আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
বৃদ্ধ মহিলাঃ “খুলনা রেলওয়ে স্টেশন”- একদম লাস্ট স্টপ।আর আপনি?
দৃপ্তঃ আমার গন্তব্যস্থল খুব সম্ভবত “খুলনা রেলওয়ে স্টেশন”।আমি ভ্রমণ প্রিয় মানুষ।কোথায়? কেন? অথবা কি উদ্দেশ্য আমি নেমে যাবো সেটা এখনো ঠিক করিনি।আর এটা হলো আপনার পরের প্রশ্নের উত্তর।

দৃপ্ত খোশগল্প খুব বেশি একটা পছন্দ করেনা।তার উপর এই ধবল বৃদ্ধার সাথে এত কথা বলার প্রশ্নই আসে না।এর চেয়ে ভালো চুপ করে থাকা।
বৃদ্ধাঃ আমরা পৌঁছে গেছি মি. দৃপ্ত।আপনি যদি আমার হাতটা ধরতেন তাহলে এই ভীড়ের মধ্যে আমার ট্রেন থেকে নামতে সুবিধা হতো।
দৃপ্তঃ অবশ্যই ম্যাডাম।

মি. দৃপ্ত আপনার “Jab We Met” সিনেমাটি কেমন লেগেছে? আমার কিন্তু দারুণ লেগেছ।দুইজন মানুষ যাদের জীবন দর্শন একে অপরের থেকে পুরোপুরি আলাদা ছিলো।কিন্তু শেষমেশ তারা একটা পারফেক্ট জুটি হতে পেরেছিলেন।–বলল বৃদ্ধা।
দৃপ্ত একটু অবাক হলো।এই চিন্তাটা তার মাথায় কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই খেলা করছিলো।কিন্তু এই বৃদ্ধ মহিলা সেটা কীভাবে অনুধাবন করতে পারছে? দৃপ্ত একটু ভ্যাবাচ্যাকায় পড়ে গেল।বুঝতে পারছিলো না যে, এখন তার কি বলা উচিত।

এবার বৃদ্ধ মহিলাটি আবার কথা বলা আরম্ভ করলো . . .
"জানো দৃপ্ত আমার এই মেকাপ নিতে পুরো চারঘন্টা সময় লেগেছে।মাথায় ছেঁড়া-ছেঁড়া এবং জোট পাকানো পাকা কেশ, মুখের উপর মুখোশ, নিজেকে একটু স্থুল দেখানোর জন্য ঢোলা সালোয়ার কামিজ এবং সবচেয়ে বড় অংশ হলো এই অভিনয়টা।আমি স্বর্ণালী রায়, তোমার ক্লাসমেট।তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারিনি এটা আমার অপ্রাপ্তি ছিলো, প্রাপ্তি হচ্ছে তোমার সাথে ভালো কিছু সময় কাটানো আর আমার অর্জন হচ্ছে আমি প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আমি তোমার চিন্তার অনুরূপ চিন্তাও করতে পারি।
তাহলে শেষ সিদ্ধান্ত যেটা হলোঃ অপ্রাপ্তি+প্রাপ্তি+অর্জন= আমি এখন নিঃসন্দেহে তোমার বন্ধু হতে পারি।
কিন্তু সমস্যা হলো, এটা তোমার হিসেব-নিকাশ।এখানে আমি নেই।আর আমি কখনো এই গল্পে ছিলামও না।গল্প আপনা-আপনি তৈরী হয় দৃপ্ত তাকে এমন কৃত্রিম জালে ফাঁসানোটা ঠিক হবে না।বিদায় দৃপ্ত।ভালো থেকো।"
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×