somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রি-চক্রায়ন

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফোনবুক থেকে কল লিস্টে এসে দুইটি যোগযোগ নম্বর প্রিয় তালিকায় ঝুলছে।দ্বিপদ নামকরণের জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস কেও এই বান্দা ছেড়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।এক ব্যক্তির নাম মুঠোফোনে সংরক্ষণ করে রেখেছেন “মহানন্দা নন্দলাল মহা-অকর্মা শ্রী-অবচেতন ঢেকি রাও” আর ওপর ব্যক্তির নাম রেখেছেন “কৃষ্ণ মহাখায়ক স্বপ্নবিলাসী আরাম কুমার কুমড়া সিং”।কোনটা গণ? আর কোনটা যে প্রজাতি? সেটা শুধু উপর আল্লাহ্ জানেন।তৃতীয় ব্যক্তির নাম, ফর্মালিন।এই নামটা খুব ছোট এবং বেশ মিষ্টি।বাকিদের নামগুলো তাদের দাদীমা করে যান নি এসব মি. ফর্মালিনের ফর্মালিন যুক্ত কাজের প্রতিফলন মাত্র।অবশ্য সংক্ষেপে অন্য দুজনের তিনি আলাদা-আলাদা ডাকনামও রেখেছেন, একটা হলো প্রিয় ঢেকি রাও আর অন্যটা হলো প্রিয় মিষ্টি কুমড়া সিং।আরো সংক্ষেপে মি. ঢেকি এবং মি. কুমড়া।
মি. ফর্মালিন বন্ধুমহলে খুব ফর্মালিটি মেনে চলেন এজন্য তার নামকরণে এমন বিশদ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে মি. ঢেকি এবং মি. কুমড়ার দাবী রয়েছে।অন্যদিকে মি. ফর্মালিন রাগে ত্বরান্বিত হয়ে উঠে নিউটনের তৃতীয় সূত্র-“প্রত্যক ক্রিয়ার একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে”, এটা মন ও মগজ দিয়ে পুরোপুরি অনুসরণ করেছেন।সবমিলিয়ে নাম গবেষণায় বাজার থেকে একে অন্যর জন্য বেশ রমরমা নাম আমদানি করতে পেরেছেন বলে তাদের বিশ্বাস।


নাম নিয়ে যদি তাদের জীবনে এতবড় ঝোল পেকে যায় তাহলে একটু ভাবুন, জীবন নিয়ে তাদের জীবনে যথারীতি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, নিঃসন্দেহে।মি. ফর্মালিন নিজের প্রতি প্রচন্ড যত্নশীল এবং কাজের প্রতি অতি-শ্রদ্ধাশীল।কাজ ছাড়া তিনি কিছুই ভাবতে পারেন না।কাজ তার স্বপ্ন, কল্পনা, সাধনা এবং সংসার।তাই সংসার নিয়ে ভাববার সময় বা সুযোগ কোনটাই হয়ে উঠেনি।কিন্তু মি. ঢেকি কাজে বিমুখ।একদম কাজ করতে রাজী নন তিনি।দিনে যদি তিনবেলা খাবার তিনি পেয়ে যান তাহলে বিশ ঘন্টা ঘুম থেকে আর কেউ তাকে আটকাতে পারবেনা।ভাবছেন বাকি চারঘন্টা তিনি কি করে কাটান? সহজ সমীকরণ-বাকি চারঘন্টার দুই ঘন্টা তিনি আগে খেয়ে নেন আর পরবর্তী দুই ঘন্টা একটু অন্যদের মগজ ধোলাই করেন।যাকে সংক্ষেপে বলা যায়-“প্যাচাল পারেন”।কথা শুনলে মনে হবে জীবন দর্শন একত্র সব যেন গুলে খেয়েছেন।অন্যদিকে মি. কুমড়া একটু বেশিই আবেগী ধ্যাচের।কথায়-কথায় হোঁচট খান, ব্যাথা পান তিনি।সম্পর্কের প্রতি যথেষ্ট খেয়ালী।তাই নারীজাতির প্রতি একেবারে নিজের জান-প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছেন।কপাল খারাপ তার।নদীর জলে অনেকগুলো জাল ফেললেও সে জালে একটাও মাছ এই পর্যন্ত উঠেনি।নদী নামের মেয়েটা তাকে সোজাসুজি না করে দিয়েছেন।তাই মি. কুমড়া এখন দেবদাস হয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরছেন।


“জীবনে কিছু একটা করতে হবে”-তাদের হাজারো মিমাংসাহীন অমিলের মধ্যে এই বাক্যেটিতে তিনজনের অগাধ মিল রয়েছে।এ ব্যাপারে মি. ফর্মালিন একটা সুস্পষ্ট বক্তব্য ঝেড়েছেন যে, জীবনে কিছু করতে হলে আমার মতো পরিশ্রমী হতে হবে নতুবা তোদের কপালে কিচ্ছু মিলবে না।অন্যদিকে মি. ঢেকি বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন।তার বক্তব্য, যদি পরিশ্রম করেই সব হত তবে গাধা হত বনের রাজা, সারাজীবন তোর মত ক্লার্কের চাকুরি আমি অন্তত করে যেতে পারবো না।
অবশ্য মি. কুমড়া কিচ্ছু বলছেন না।তার বক্তব্য, প্রিয় বন্ধুরা! জীবন তো জীবনের মত হওয়া চাই।যে জীবনে নদী থাকবে।
এই রকম নানাবিধ ঝগড়াঝাঁটিতে তাদের দিন যেমন-তেমন বেশ ভালো-মন্দ চলছিলো।হঠাৎ একদিন মি. ঢেকি একটা নকশার খোঁজ পেয়ে যান।কে যেন এই ম্যাপটি তার বিছানার প্রিয় বালিশের নিচে গুঁজে রেখেছিলো।নকশার শেষ অবস্থান দেখানো হচ্ছে একটা স্বর্ণকূপের।যেখানে গেলে অঢেল স্বর্ণ-রৌপ্য মিলবে।মি. ঢেকির দৃঢ় বিশ্বাস যে, এটা সেই নকশা যেটা প্রতিদিন রাত্রে তার ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখা দেয়।
এটা একটি অলৌকিক নকশা।


“প্রিয় বন্ধুরা! আজ আমার হাতে একটা অলৌকিক নকশা আছে।যে নকশা আমাদের পৌঁছে দিবে একটা স্বর্ণকূপ পর্যন্ত।আমরা রাতারাতি ধনী হয়ে যাবো।আর এজন্যই আজ সন্ধ্যায় তোদের সবাইকে আমি ডেকেছি।”-সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বলল মি. ঢেকি।নকশাটা হাতে নিয়ে হেয়ালিপনায় মেতে উঠলো মি. ফর্মালিন।
মি. ফর্মালিনঃ হুম।অনেকদিন পর তুই একটা ঢেকি মার্কা জিনিস আমাদের কাছে এনেছিস।
মি. কুমড়াঃ দেখ না ভাই।এই নকশাটিতে ঠিক কি লেখা আছে?
মি. ফর্মালিনঃ লেখা আছে, প্রথমে শহর থেকে আমাদের উত্তর-পশ্চিম কোণে পঁচিশ কিলোমিটার যেতে হবে।আবার সেখান থেকে পূর্ব-উত্তর কোণে মোড় নিয়ে আরো একশত কিলোমিটার সামনে যেতে হবে।এভাবে আরো কিছু কিলোমিটার যথাক্রমে পূর্ব-দক্ষিণ কোণ, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ এবং সর্বশেষে পশ্চিম-উত্তর কোণে আনুমানিক বিশ কিলোমিটার অংশ যেতে হবে।সামনে একটা নদীও পড়বে।
মি. ঢেকিঃ কি বলিস? কুমড়ার নদী? আমাদের কুমড়া যেখানে ডুবে আছে?
মি. ফর্মালিনঃ আরে না, না।এটা সত্যি সত্যিই একটা নদী।
মি. কুমড়াঃ তাহলে তো আমাদের একটা নৌকার প্রয়োজন হয়ে পড়বে।
মি. ফর্মালিনঃ সবগুলোন গর্দভ।এই নকশার দিক নির্দেশনা এমন পেচ্যানো যে, আমাদের শহরের পাশের নদীটা আর তার পাশে যে জঙ্গল আছে সেটাকে নির্দেশ করছে।শুধু শুধু ঝামেলা পাকানো হয়েছে এছাড়া আর কিচ্ছু না।আমি অবশ্য ঐ জঙ্গলটার কথা লোকমুখে অনেক শুনেছি কিন্তু বিশ্বাস হয়নি।
মি. ঢেকিঃ তাহলে আমার কথা শেষমেশ ঠিক হলো বল?
মি. কুমড়াঃ আজ টাকা থাকলে নদী আমাকে না করে দিতে পারতো? তোরা তো সব জানিস!
মি. ফর্মালিনঃ একটু থাম তোরা।আমরা এখনো স্বর্ণ-রৌপ্য পাইনি।


অনেক সন্ধানের পর একদিন রাতে ওরা সেই চিহ্নিত অবস্থানটি সত্যিই খুঁজে পায়।সবাই সবার হাতে-হাতে একটি করে কোদাল এনেছে মাটি খননের জন্য।প্রথম পাঁচফুট মাটির গভীরে খননের পর মি. ঢেকি নিরাশ হয়ে পরে।তার মতে, অনেক খনন চলেছে আর তার দ্বারা এটা খনন করে যাওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু মি. ফর্মালিনের উৎসাহে আরো তিনফুট খনন করতে বাধ্য হয়।শেষমেশ কোদাল একদিকে তো মি. ঢেকি আরেকদিকে।বিশাল বড় পেট নিয়ে আর কিছুতেই লড়তে পারছেনা।ঘেমে গেছে সমস্ত শরীর।ঐ দিকে তার চোখেমুখে স্পষ্ট ঘুমের ছাপ।তাই সে বাড়ি চলে যায়।বাকি পাঁচফুট খনন করে মি. কুমড়া ভাবেন এর চেয়ে কত সহজ ছিলো মেয়েটাকে পটানো।এই সময়টা খননের কাজে না ব্যয় করে নদীকে এই সময় দিলে নদী আজ না করতে পারতোনা।তাই খনন কাজ বৃথা বলে সেও এক সময় বাড়ি চলে যায়।কিন্তু মি. ফর্মালিন নাছোড়বান্দা।সে এর শেষ দেখে নিবে।কিন্তু একা-একা মাটি খননের কাজ অনেক কষ্টের।তবুও কোদাল চালিয়ে যাচ্ছে সে।হাতে ফোসকা পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়।আনুমানিক আরো তিনফুট খননের পর সে একটা বাক্স দেখতে পায় এবং বুঝতে পারে পরিশ্রম সফল হয়েছে।


দশবছর পর।
শহর ছেড়েছে মি. ফর্মালিন।ঢাকা শহরে বিলাসবহুল নিজস্ব বাসা করেছে।নিজস্ব বাড়ি-গাড়ি আর আছে নিজস্ব পরিশ্রমে গড়ে তোলা একটি বিশাল ইন্ডাস্ট্রি।অবশ্য মূলধন সবগুলো কুড়িয়ে পাওয়া।ঐ স্বর্ণ-রোপ্য ছাড়া এতকিছু করা সম্ভব ছিলো না।মি. ফর্মালিন রয়েছে আগের মতই।আগে দুজন বন্ধু ছিলো কিন্তু এখন তারাও নেই।না কোন সংসার করা হয়ে উঠলো, না কোন শান্তির বাবা হতে পারলেন।সারাক্ষণ কাজ আর কাজ।ভাবছেন কাজকেই একদিন বিয়ে করে নিবেন তিনি।আয়নার সামনে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলেন বয়েসর ছাপ স্পষ্ট।
মি. ঢেকি এখন ক্লার্কের চাকুরীটা খুব যত্ন করে সামাল দিচ্ছেন।তার বড়-বড় উচ্চাকাঙ্খাগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে।অন্যদিকে মি. কুমড়া এখন শহরের বিখ্যাত বার-টেন্ডার।টাকার অভাবে অনেক পুড়তে হয়েছে তাকে।নদীর জলে হাবুডুবু খেয়ে এখন ব্যর্থ প্রেমিক সে।নিজে তো মদ খায় সাথে অন্য ব্যর্থ প্রেমিকদেরও খাওয়ায়।এটাই হলো তার সেই জীবনের মতো জীবন


একদিন মি. ফর্মালিনের পুরনো সিমকার্ডটি সক্রিয় হতেই দুইটি অদ্ভূত নাম থেকে ফোনকল আসলো।আবার সবার একসাথে কোন একদিন কোন এক সন্ধ্যায় দেখা হলো।
সুখ-দুঃখের অনেক গল্প চলল অনেকখন ধরে।এরপর হাতে মদের গ্লাসটা নিয়ে সবাই হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলে উঠলো, বন্ধুরা! “জীবনে কিছু একটা করতে হবে”।
চেয়ার’স!

ছবি কৃতিত্বঃ বন্ধু ইন্টারনেট।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×