somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুমমেট

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







জয়।আমার রুমমেট।একটা মফঃস্বল শহর।তিন তলা বিশিষ্ট ছোট্ট একটি বাড়ি।এর তৃতীয় তলায় আমরা থাকি।আমি একজন ব্যাংকার আর জয় একজন ক্ষুদে লেখক।আমার কাছে জয়ের পরিচিতি এতটুকুই।এর বেশি কিছু জানি না আমি ওর সম্পর্কে।একটু বেশিই চুপচাপ।যখন কথা বলে তখন আমার মনে হয় জয় হিসেব করে করে কথা বলছে।বেশ পরিপাটি, শান্ত এবং স্থির।জয়ের মুখের হাসিটা আমার সারাদিনের বিষাদ দূর করে দেয়।এত সুখী একটা মানুষকে দেখে মনে মনে আমিও সুখী হয়ে গেছি কখন জানি।জীবনকে সহজভাবে নেওয়া শিখেছি আমি ওর কাছে থেকে।সবমিলিয়ে অদ্ভূত এক ব্যক্তিত্ব, এমনকি প্রথম দেখায় যে কারো পছন্দের মানুষ হয়ে যেতে পারে সে।ওর কথায় একরকম জাদু আছে।মানুষকে বশীভূত করার জাদু।কিন্তু আমার মনে হয় জয় শুধু একজন লেখক হতে পারে না।কখনো কখনো তো মনে হয় যে সে একজন বিশেষ নাট্যব্যক্তিত্ব।একটা বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করছে।হয়তো কোন একদিন সেই চরিত্র থেকে বের হয়ে এসে বলবে, “আমি ডিটেক্টিভ শার্লক হোমস্”।কিন্তু সেসব চিন্তাগুলো চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই আটকে পড়ে আছে এখনো।একদিন হয়তো সত্যিই প্রমাণ হয়ে যাবে সব।

যাইহোক একদিন স্যুটকেস হাতে নিয়ে দুপুর রাতে একটা ইন্স্যুরেন্স পলিসির কাজ শেষ করে রুমে ফিরছিলাম।বলে রাখা ভালো, একটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে আমি পার্ট টাইম চাকুরী করি।মানুষকে অনেক বুঝাতে হয়।মৃত্যুর পরের টাকাগুলো তাদের জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।কেউ কেউ অবশ্য সেজন্য আমায় স্বাগত জানায় আবার কেউ কেউ আমার সামনে দরজাটা ধড়াম করে বন্ধ করে দেয়।কিন্তু আমার চাকুরী তো আমাকে করে যেতেই হবে।আমার একটা পরিবার আছে।বলতে গেলে, যৌথ পরিবার।তিনটা ভাই আর দুইটা ছোট বোন, বাবা-মা কিছুদিন আগেই চলে গেছেন।ভাই-বোনদের মধ্যে অধিকাংশ পড়াশুনা করছে।আর একজন একটা চাকুরী পেয়ে নিজের অবস্থান গুছিয়ে নিয়েছে।তাই বাকিদের দেখাশোনার দায়িত্ব আমার উপর থেকে যায়।কারণ আমি সবার বড়।অবশ্য বিয়ে নিয়ে ভাবার সময় এখনো আসেনি আমার।সবার একটা ভালো অবস্থান করে দিতে পারলে আমার ভালো লাগবে।জীবনে খুব বেশি কিছু নয় এতটুকুই চাওয়া আমার।যাইহোক, সেদিন রাতে আমি কিছু ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আমি আমার স্যুটকেসটা হারিয়ে ফেলি।ঐ স্যুটকেসে আমার ক্লায়েন্টদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিলো।সেদিন আমি কোনরকমে জীবন নিয়ে রুমে ফিরতে পেরেছিলাম।আর ভাবছিলাম, যেসব কাগজপত্র আমি হারিয়ে ফেললাম ঐ সব মূল্যবান কাগজপত্র ছাড়া আমি কীভাবে আমার ক্লায়েন্টদের তাদের জমানো টাকা ফেরত দিবো।সবমিলিয়ে প্রায় দশ লাখ টাকার ধাক্কা।কথা দিয়েছি আগামীকাল তাদের কষ্টকরে জমানো টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দিবো।কিন্তু সেই টাকাগুলো আমি এখন কোথা থেকে পাবো।ব্যাংকার হলেও ব্যাংকে আমার কোন ইমার্জেন্সি ফান্ড নেই।এক পয়সাও কোথাও জমা রাখা হয়নি।যা বেতন পাই সব টাকা পরিবারকে দিতেই শেষ হয়ে যায়।সেদিনের রাত ছিলো আমার জন্য এক বিভীষিকার নাম, আমার জীবনের এমন একটি রাত যে রাতে আমাকে ভাবতে হয়েছে “আমার কথার দাম নিয়ে”।

কিন্তু জয়ের কাছে থেকে কোন কিছু লুকানোর ক্ষমতা নেই আমার।জয় ঠিকই ধরে ফেলেছিলো যে, কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে।একসময় আমার পাশে এসে বসলো জয়, আর বললো, ‘কি হয়েছে জানতে পারি? এই মেয়েটাও তোকে ছ্যাকা দিয়েছে না কি ভাই? মানতে হয় এবার খুব খারাপ হয়েছে তোর সাথে।’
চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছিলো।ভাবছিলাম কি হবে এখন আমার।আগামী এক বছরের বেতন দিয়েও হয়তো এই বড় অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে পারবোনা।তারপর পরিবার চলবে কীভাবে? পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে আমার মিষ্টি ছোট বোনটার।সামনের মাসে ওর জন্মদিন, ওকে একটা নতুন মোবাইল ফোন কিনে দিতে চেয়েছিলাম।কি জবাব দিবো ওকে? বলবো তোর ভাই পৃথিবীর কাছে এত দূর্বল যে একটা কম মূল্যের ফোনও তোকে উপহার দিতে পারলো না।এর সাথে বাকিদের চেহারা আমার চোখের সামনে একে্র পর এক ভেসে আসা শুরু করলো।মাথাটা ধরে কোনমতে শুয়ে পড়ছিলাম।কিন্তু জয়ের এই হাস্যকর মন্তব্যে সময় সময় না চাইলেও মুখে হাসি আসতেছে।এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও রসিকতা যে মানুষ করতে পারে তাকে অতিমানব ছাড়া আর কি আখ্যা দেয়া যেতে পারে।তাই সহজ ভাষায় উত্তর দিলাম, ‘এবারের ব্যাপারটা আসলেই অনেক খারাপ ছিলো’।জয় হাসছিলো আর মুখে একটা সিগারেট নিয়ে অবিরাম ধূয়া ছেড়ে পুরো ঘরটা অন্ধকার করে দিচ্ছিলো।দেখে মনে হতে পারে কিছু ব্যাপার নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করছে।একটুপর আমার জন্য এক গ্লাস ব্রান্ডি অফার করলো।আর আমি সেটা ঢকঢক করে এক চুমুকে সব গলাধঃকরণ করলাম।চোখদুটো আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছিলো।বুঝলাম আমি এখন পুরোপুরি মাতাল হয়ে গেছি।শেষ যে দৃশ্যটি আমি দেখলাম সেটা হলো জয়ের মুখে একটুখানি মুচকি হাসি।

সবার মত আমিও আরো একটি সকাল উপহার পেলাম।ভাবছি আজ ব্যাংকে যাবো না।আর কিছু করার নেই আমার।যা হবার তা হয়ে গেছে।একটুপর জয় আমাকে এক কাপ কফি এনে দিলো আর বললো, “তুই মনে হয় রাতের বেলা কোন একটা স্যুটকেস কোথাও ফেলে রেখে এসেছিলি।একজন সুহৃদয় ব্যক্তি সেটা আজ সকালে ফেরত দিয়ে গেছে।আর সাথে একটা দামী আইফোনও ছিলো না কি?’
স্যুটকেসের ব্যাপারটা ঠিক ছিলো কিন্তু আইফোন(তাও সর্বাধুনিক) এটা আমার মাথায় ঢুকছিলো না।জয় আরো বলল, ‘তোর শার্টটা আমি ইস্ত্রি করে রেখেছি।আর ব্যাংক আইডি কার্ড সহ যাবতীয় কাগজপত্র আমি টেবিলে গুছিয়ে রেখেছি।ভাবলাম গতকাল রাতে তুই নেশাগ্রস্ত ছিলি তাই সকালে উঠতে দেরি হতে পারে।তাছাড়া তুই সচরাচর ড্রিংক্স করিস না।
ঠিক ঐ মুহূর্তে সমস্ত দুশ্চিন্তা আমার মাথা থেকে একদম নাই হয়ে গেল।আমি বুঝতে পারছি, আমি ভালো অনুভব করছি।জয়কে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো সেই ভাষাটাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।কিন্তু ভাববার বিষয়, স্যুটকেসটা তো ছিনতাইকারীরা নিয়ে গেছিলো।তাহলে কোন দুঃখে আবার সেটা তারা আমার কাছে ফেরত দিতে চাইবে।অবশ্য স্যুটকেসে কগজপত্র ছাড়া আর কোন মূল্যবান কোন কিছু ছিলো না, হয়তো এজন্য।এরপর জয়কে আবার টাইপরাইটারে হাত চালাতে দেখলাম।ওর একটা রুল আছে যে, “লেখালেখির সময় কোন শব্দ করা যাবে না”।তাই নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়লাম ব্যাংকে যাবার জন্য।

অফিস থেকে ফিরে বেশ হাল্কা লাগছিলো।ক্লায়েন্টদের টাকাগুলো পরিশোধ করে দুশ্চিন্তাগুলো থেকে মুক্ত হয়েছিলাম।কিন্তু মোবাইল ফোনের ব্যাপারটা আমি তখনো মেনে নিতে পারছিলাম না।কারণ ফোনটি আমার নয়।আর এটা কার ফোন হতে পারে কে জানে! জয় তখনো বেশ চুপচাপ ছিলো, নতুন উপন্যাস লিখছে বলে মনে হয়।চিন্তা-চেতনার অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে।একসময় বন্ধ হলো তার লেখালেখি।আবার তার ঠোঁটে সিগারেট শোভা পেয়েছে।এভাবে চলবে, একটার পর একটা সিগারেটের যবনিকাপাতন।ধূয়ায় অন্ধকার হয়ে যাবে পুরো রুমটি।যাইহোক, আমিই প্রথম মুখ খুললাম,
‘জয়।একটা ব্যাপারে তোর সাথে আলোচনা করতাম।’
‘বল।শুনলাম তোর ব্যাংকে তোর সাথে পাশের ডেস্কে যে মেয়েটা কাজ করে সে না কি খুব সুন্দরী।সে ব্যাপারে কিছু?’
‘তথ্যটি সত্য।তবে মূল কথা হচ্ছে, স্যুটকেসটি আমার কিন্তু আইফোনটি আমার নয়।’
‘তো? কার? আইফোনটা তাহলে কার? আমার? কাছের প্রতিবেশীর? না কি ঐ সুন্দরী মেয়েটার? যাইহোক, একদিন ওর সাথে আমার পরিচয় করে দিস তো।’
‘সিরিয়াস বিষয় নিয়েও তোর ফাযলামি।ফোনটা যারই হোক তবে সেটা আমার নয়।ব্যাপারটা কি এখন তোর কাছে স্পষ্ট?’
‘ব্যাপারটা আসলেই গুরুতর।ফোনটির নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেই কি বলিস?’
‘ভালো আইডিয়া।কাজটা তাহলে তুই করে দিচ্ছিস।’
‘দিতে পারি।তবে একটা শর্তে।’
‘আবার কি শর্ত? বল?’
‘তোর সুন্দরী কলিগের সাথে আমাকে একবার দেখা করিয়ে দিতে হবে।অনেক গল্প শুনেছি আমি তোর মুখে ঐ মেয়েটার।’
‘আচ্ছা আচ্ছা।অনুমতি গৃহিত হলো।হয়ে যাবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই।’


জয় সাধারণত চুপচাপ থাকে।কিন্তু যখন মুখ খোলে তখন অদ্ভূত সব কথপোকথনে আমরা মেতে উঠি।এর মাঝে অবশ্য বের হয়ে আসে দারুণ দারুণ সব আইডিয়া যেটা একমাত্র জয়ের পক্ষেই বের করা সম্ভব।অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ।কিন্তু হঠাৎ করে আমার কলিগ সূপর্নার সাথে দেখা করতে কেন চায় সে? সেটা আমার মাথায় ঢুকছেনা।যাইহোক, পরের সপ্তাহে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় আমার কাছে রয়ে যাওয়া আইফোনটির মালিক কে সেটা সন্ধানের জন্য একটি বিজ্ঞাপন।বিজ্ঞাপনে ফোনটির সব বর্ণনা দেয়া হয় শুধু একটি বিষয় বাদে।যাতে করে ফোনটির প্রকৃত মালিককে খুঁজে পেতে সুবিধে হয়।এরপর পত্রিকায় দেয়া আমার ফোন নম্বরে বেশ কিছু ফোনকল আসতে থাকে।কিন্তু ঐ একটা আলামত সম্পর্কে কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারছেনা।আর সেটা হলো ফোনটির পিছনে স্পষ্ট করে ছোট্ট একটি লাল বর্ণের দাগ কাটা আছে।একমাস প্রায় হয়ে গেল কিন্তু ফোনটির সঠিক মালিককে তবুও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা।অন্যদিকে আবার জয়ের পীড়াপীড়ি যে, তাকে আমার সুন্দরী কলিগের সাথে পরিচয় করে দিতে হবে।কারণ সে তার কাজ করেছে সুতরাং এখন আমার কাজ আমার করার পালা।কিন্তু মনে মনে একটা দ্বিধাও কাজ করছে।সত্যি বলতে, আমি মেয়েটাকে অনেক পছন্দ করি।কিন্তু কোনদিন বলা হয়নি সে কথা।আজ যখন জয় ওর সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলো তখন ভিতরে ভিতরে কেমন জানি একটি অদ্ভূত ক্ষোভ কাজ করতে শুরু করলো জয়ের উপর।এবং একটা সময় জয়ের এই আচরণকে আমার অহেতুক বলে মনে হওয়া শুরু হলো।


‘সূপর্না? আমার কাছের এক বন্ধু আপনার সাথে দেখা করতে চায়।’-কথাটা বলে কোনরকমে মনে হচ্ছিলো নিজেকে লুকাতে পারলে বাঁচি।
‘সন্ধ্যায় ফ্রি থাকবো।সন্ধ্যা সাতটা, কফিবার মাল্টিপ্লেক্স রেস্টুরেন্ট।’-বলে আবার কাজে মনযোগ দিলো সুপর্না।
কিছু সময়ের জন্য হা… করে থাকলাম সূপর্নার দিকে।ভাবছিলাম এই জয় কি জাদু করেছে যে বলতেই রাজী হয়ে গেল।যাইহোক, জয় সূপর্নার ফোন নম্বর চেয়েছিলো।কিন্তু আমি কোন মেয়ের কাছে থেকে কখনো কোন ফোন নম্বর চাইনি।কিন্তু আজ এটাও আমাকে বলতে হবে।জয় হারামজাদা ভালো করে জানে আমি আমার কথা রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করি।কিন্তু এখন কি হবে!
‘ইয়ে মানে সূপর্না…’-সূপর্না এখানেই আমাকে আটকে দিলো আর বললো, ‘আমার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরটি আপনার ফোনে ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে’।

সন্ধ্যা সাতটা।রেস্টুরেন্টে একা একা বসে আছি।একটু পর জয় এবং সূপর্না উভয়েই আসবে।আমি খাবার ইতোমধ্যেই অর্ডার করেছি।আইটেমে রয়েছে, চিকেন ফ্রাইড রাইস, ফ্রাইড চিকেন, মিক্সড ভেজিটেবল আর ড্রিংক্স হিসেবে রয়েছে জুস।আশা করছি ওদের ভালো লাগবে।একটু পর সূপর্না আসলো।লাল শাড়ি পড়েছে তাই একটু ব্যতিক্রম লাগছে।সবসময় জিন্স টি-শার্ট সাথে কোর্ট পড়া মেয়েটি হঠাৎ একদম বাঙালী নারী হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।লাল শাড়ি পড়া মেয়েদের আমার ভালোলাগে কিন্তু সেটা সূপর্না জানলো কি করে? অবশ্য হতে পারে যে, এসব জয়ের দেয়া নীতিমালা আর কি! সে যাইহোক, জয় কোথায়?
‘হ্যালো সূপর্না! প্লিজ বসুন।’-চেয়ারটা এগিয়ে ধরে বললাম আমি।
‘আপনার বন্ধু কোথায়? আসেনি?’-বলল সূপর্না।
‘হয়তো রাস্তায় জ্যাম।তাই একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে।আপনি চিন্তা করবেন না।নিশ্চিত চলে আসবে।’-বললাম আমি।
‘চলুন খাওয়া-দাওয়া শুরু করা যাক।আমার মনে হয় আপনার বন্ধু আজ আসবেনা।’-সূপর্নার দীর্ঘশ্বাস।
‘হ্যাঁ! অবশ্যই।কিন্তু জয় আসবেনা সেটা আপনি কি করে বুঝলেন?’-কন্ঠে কৌতুহল আমার।
‘যখন বিশেষ দুজন ব্যক্তি ডিনার করার জন্য একত্র হয় তখন সেই কাবাবে কেউ হাড্ডি হতে আসে না।’-সূপর্না হাসছে।
এইসব গোলক ধাঁধাঁ বুঝতে একটু সময় লাগলেও একসময় ঠিকই বুঝে গেলাম।জয় আসলোনা।তারমানে জয়ের এটা পূর্বপরিকল্পিত প্ল্যান ছিলো।আর বুঝতে পারছি সূপর্না আমাকে নিয়ে ঠিক সেটাই ভাবে যেটা আমি এতদিন ওকে নিয়ে ভেবে আসছি।এই সন্ধ্যাটা আমার কাছে অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকলো।গল্পে গল্পে কখন যে সময় পার করে দিলাম ঠিক বুঝতেই পারিনি।সূপর্নার মিষ্টি বিদায় অভ্যর্থনা জানান দিলো, ডিনারে আরো একদিন দুজনে একসাথে বসাই যায়।এমনকি চাইলে চাকুরী জীবনের পুরো সময়টায়।


রুমে ফিরে আজ আমি জয়কে মন থেকে ধন্যবাদ দিবো।কারণ জয় আমার জন্য যা করেছে তার ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারবোনা।কিন্তু জীবন মানেই অনিশ্চয়তা আর অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনার সমষ্টি মাত্র।ঠিক তাই হলো।জয় রুম ছেড়ে দিয়েছে।টেবিলের উপর একটা চিরকুট দেখতে পেলাম।লেখা আছে,
“চলে যাচ্ছি ঢাকায়।একটা ভালো গল্প পেয়েছি।গল্পটি নিয়ে একটি নাটক বানাতে চাই।ভালো থাকিস।”
এরপর একটু পরেই একটা ফোনকল পেলাম।আমার সেই মিষ্টি ছোট বোনটি ফোন দিয়েছে, ওপার থেকে বলল, ‘হ্যালো ভাইয়া! শুনলাম তুমি না কি প্রোমোশন পেয়েছো? তোমার এক বন্ধু বলল।আর এজন্য তুমি না কি আমার জন্য একটা আইফোন কিনেছো।কই? পাঠাবে না? আগামীকাল আমার জন্মদিন।’
আমি শুধু বললাম, ‘তুই ভাবিস না।ফোনটি একটু পরেই কুরিয়ার করছি।’


অনেকদিন হলো আর জয়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই আমার।জানিনা সে কেমন আছে? কি করছে? কোথায় থাকে? এসবের কিচ্ছু না।শুধু এইটুকু মনকে বলে বুঝায়, একদিন জয় ফিরে আসবে আর আমার সব সমস্যার সমাধান করে দিবে।আর মনে মনে মজা করে জয়কে সময় সময় গাল দেই, এটা বলে যে, “হারামজাদা প্রোমোশনটাও করে দিয়ে যা”।




সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×