somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভির রিভিউঃ Chance Pe Dance

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মুভির নামঃ Chance Pe Dance
ধরণঃ Dance, Drama.
মুভিটিতে অভিনয় করেছেনঃ Shahid Kapoor, Genelia D’souza এবং আরো অনেকে।
পরিচালনায় ছিলেনঃ Ken Ghosh
ব্যাপ্তিকালঃ ১৫৮মিনিট।
ভাষাঃ হিন্দি।
মুক্তি পেয়েছেঃ ১৫ই জানুয়ারি ২০১০।
ব্যক্তিগত রেটিং ৮/১০ (হাস্যকর হলেও সত্যি যে, এই সিনেমাকে এত রেটিং কোন সিনেমা ক্রিটিক্স দেননি)।

প্রথমেই বলে রাখছি এটি একটি আন্ডাররেটেড সিনেমা।এই সিনেমার ব্যাপারে উচ্চবাক্যে করার মত আমার-আপনার কাছে হয়তো তেমন কিছু নেই।মুভিটির প্রতি ব্যক্তিগত ভালোলাগা এবং ভালোবাসা রয়েছে বিধায় আমি এই রিভিউ দিতে চলেছি।তাই পোস্টে কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে এই দুই লাইন অবশ্যই পড়বেন।


চলে যাচ্ছি মূল গল্পেঃ মুভিটির মূল গল্প জুড়ে রয়েছে একটি প্রধান চরিত্র, সামির বেহেল(শহিদ কাপুর)।যিনি দিল্লী থেকে মুম্বাই আসেন একজন অভিনেতা হবার জন্য।এখানে তার সময় কাটে বেশ কঠিনভাবে এবং সমস্যার মধ্যে দিয়ে।সামিরের বাবা কখনোই চাইতেন না যে, সামির একজন অভিনেতা হোক।কারণ তার ধারনা এই মিডিয়া ফিল্ডে তেমন ভালো কিছু করা সম্ভব নয়, অন্তত সামিরকে দিয়ে।তাই সামিরের বাবা তাকে দিল্লী থেকে মুম্বাই আসার সময় ফিরতি টিকিট তার হাতে ধরিয়ে দেয়।কিন্তু সামির নাছোড়বান্দা।তাকে অভিনেতা হতেই হবে।যে কোন উপায়ে।অন্যদিকে সামির চায় নিজের জীবনকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে তাই সে বাবার কাছে এজন্য কোনরকম আর্থিক সাহায্য চাইতো না।মুম্বাই আসার পর সামিরকে দেখা যায় একজন কুরিয়ার বয় হিসেবে কাজ করতে।এরপর সামির একের পর এক অডিশনে অংশগ্রহণ করে এবং ব্যর্থ হয়।একদিন সামিরের বন্ধু এবং রুমমেট তাকে জানায় যে, শুধু শুধু অডিশন দিয়ে লাভ হবে না বরং একটু ডিপ্লোম্যাট হতে হবে, না হলে এই মিডিয়া জগতে সহজে প্রবেশ করা যাবে না।তাই তার বন্ধু তাকে নিয়ে যায় একটা পার্টিতে, যেখানে উপস্থিত থাকবে বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক রাজিব শার্মা।ঠিক তাই হয়।তাই বন্ধুর কথা অনুযায়ী সামির এই পার্টিতে বেশ ভালো ড্যান্স করে যাতে সেটা রাজিব শার্মার চোখে পড়ে।গল্পের সূত্র ধরে সত্যি সত্যিই সামিরের নাচ রাজিব শার্মার খুব ভালো লেগে যায় এবং পরবর্তীতে এক সিনেমায় মূল ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য সামিরকে নির্বাচন করেন তিনি।আবার এত এত অডিশন দিতে দিতে এক মেয়ের সাথে সামিরের পরিচয় হয়ে যায়।মেয়েটার নাম টিনা(জেনেলিয়া)।সে সামিরের এই সিনেমায় কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করার জন্য নির্বাচিত হয়।কারণ টিনা বেশ আগে থেকেই পরিচালক রাজিব শার্মার সাথে কাজ করতো।কিন্তু গল্পটা এত সুন্দরভাবে চললে তো হতোই!

সামির যথাসময়ে বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় তার বাড়িওয়ালা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।যখন সামির বাড়ি ছাড়া হতে চলেছে তখন দেখা যায় তার বন্ধু সামিরকে ফোনে বলছে, আমি কাজে ব্যস্ত আছি।কিন্তু একসময় সামির তার বন্ধুকে খুঁজে পায় এক মেয়ের সাথে ডেট করতে।বিপদের এই সময়টায় বন্ধুর কাছে থেকে কোন সাহায্য তো দূরের কথা পাওনা টাকা পর্যন্ত না পেয়ে সামির ভিতরে ভিতরে একটু ভেঙ্গে পড়ে।মুম্বাই শহর বেশ বড়।কিন্তু সামির এখন কোথায় যাবে? কি করবে? আবার সামনে তার প্রথম সিনেমার শূটিং, সেটাই বা করবে কি করে সে?
শেষমেশ সামির তার নিজের কারে দিন কাটাতে বাধ্য হয়।একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কার, যেটা সে কিনেছিলো সাউউ ইন্ডিয়ান একটা লুঙ্গির বিজ্ঞাপন করার পাওনা টাকা দিয়ে।অন্যদিকে সে (হারপিক) ডেলিভারি/কুরিয়ার বয় হিসেবে কাজে অনিয়মিত থাকায় তাকে কাজ থেকে বাদ দেয় তার বস।পরবর্তীতে তাকে দেখা যায় একজন স্কুলে শিক্ষক হিসেবে।যিনি কিনা ছেলেমেয়েদের নাচ শেখাবেন।কিন্তু সামির বাচ্চাদের একদম পছন্দ করতো না।অপশন না থাকায় বাধ্য হয় সে এই কাজটি বেছে নিতে।একসময় মুভিটি থেকেও বাদ পড়ে যায় সামির।তাই এখানেই তার স্বপ্নের মাটি চাপাও হয়ে যায়।পরিচালক সামিরকে জানায় যে, তিনি নতুন মুখ নিতে চান।আর যে ব্যক্তি হাজার হাজার মানুষের প্রতিযোগীতায় মধ্যে প্রমাণ করতে পারবে যে সেই সেরা, শুধু মাত্র সেই ব্যক্তিটি এই মুভিটাতে কাজ করতে পারবেন।এ দিকে টিনা সামিরকে মুভি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ায় সে নিজেও তার কোরিওগ্রাফির কাজ ছেড়ে দেয়।একসময় টিনা খুঁজে পায় সামিরকে তার কারে রাত কাটাতে।তারপর সামির জানতে পারে টিনা তার কাজ ছেড়ে দিয়েছে এবং বুঝতে পারে, তার জন্য টিনার মধ্যে একটা সফট্ কর্ণার রয়েছে।কিন্তু পুরো ঘটনা এক নিমিষে পাল্টে যায়, যখন সামির জানতে পারে যে, দিল্লীতে তাদের বাড়ি ধ্বস নেমেছে।

এখন সামির কি করবে? দিল্লীতে ফিরে যাবে? না কি মুম্বাই থেকে আবার অভিনেতা হওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাবে? আর টিনাকেই বা সে কি বলবে?
পরবর্তী কাহিনী জানার জন্য মুভিটি আপনাকে অবশ্যই একবার দেখে নিতে হবে।


মুভিটি ভালো লাগার কারণঃ
*ডায়ালগঃ মুভিটির বেশ কিছু ডায়ালগ রয়েছে যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে, আমি কিছু কিছু তুলে ধরছি এখানে,
(হিন্দি থেকে বাংলায় রুপান্তর করা হয়েছে)
১।কে বলতে পারবে যে, এই বাচ্চা বড় হয়ে কি হবে! এদের ভাগ্য ছাড়া।এরকম বলা হয় যে, কোন কোন বাচ্চা ভালো ভাগ্য নিয়েই জন্মগ্রহণ করে আর কেউ কেউ নিজে পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য তৈরি করে।আর কিছু কিছু বাচ্চার ভাগ্য আপনি ওর চেহারা দেখেই বলে দিতে পারবেন।
২। অদ্ভূত, তাই না? অদ্ভূত এক ভাগ্য।কিছুই বুঝতে পারছিনা।স্রেফ এক সুযোগের জন্য আমরা অপেক্ষা করি।আর সেই সুযোগ একবার মিলেও যায়।কিন্তু আবার ভাগ্যটা খারাপ হয়ে যায় কেন! বারবার...বারবার শুধু আমার সাথেই এটা হয়।এই ইডিয়ট ভাগ্যটা কেন বুঝেনা যে, কেউ ভেতর থেকে ভেঙ্গেও যেতে পারে।
৩।হাই স্যার।আমার নাম সামির বেহেল।ইয়েস স্যার।আমি একজন অভিনেতা।ড্যান্সও পারি।আমার উচ্চতা ৫ফুট ১০ইঞ্চি।স্যার! এক চ্যান্স দিয়ে দেখুন।অডিশনে আমি সবাইকে কনভিন্স করে দিবো।নাম্বারটা মনে থাকবে তো স্যার?
৪।আর কি বা করতে পারি আমি? আমার হাতে তো আর কোন অপশনও নেই।
কিন্তু তুমি তো জানো আজ আমি ভেতর থেকে ভেঙ্গে গেছি।এখন শুধু যদি একজন এসে আমার হাতটা ধরে বলতো, এটাই সেই রাস্তা...
৫।ব্যস! একমাত্র আমার মা ছিলো যে আমার মধ্যে একজন স্টার আছে মনে করতো।মনে আছে আমি আমার সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ড এ স্কুল প্লে তে আমি একটা প্রাণী সেজে ছিলাম।সেখানে ডায়ালগও ছিলোনা।কিন্তু আমার মায়ের কাছে সেটাই সেরা পারফর্মেন্স ছিলো।
৬।যখন বড় বড় তারকাদের দেখি তখন শুধু মনে হয় এদের মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই? তাই আমি মুম্বাই চলে আসলাম।এটা চিন্তা করে যে বড় পর্দার শুধু আমার খোঁজ।কিন্তু মুম্বাই আসার পর, ধড়াম!
অন্ধকার থিয়েটারে মধ্যে শুধু নেই, থিয়েটারের বাহিরেও আছে।আর যতটুকু অভিনয় পর্দায় হয় তার কয়েকগুণ বেশি পর্দার বাহিরে হয় বস।
৭।যেখানেই যাই সেখানেই আমার মত আরো শত-শত লোককে দেখতে পাই।তাদের বাবা-মাও হয়তো তাদের নিয়ে একই স্বপ্ন দেখছে।

* দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে মুভিটির অসাধারণ গান এবং নাচ।

*তৃতীয় কারণটি হচ্ছে একটা ভালো গল্প জানতে পারলাম।একজন স্ট্রাগলিং অভিনেতার কি কি বিষয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে।

*চতুর্থ, জেনেলিয়ার মিষ্টি হাসি।

সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি মুভি।এই ধরণের মুভি আন্ডাররেটেড কেন! সেই প্রশ্ন আমার মনে তাই বারবার জাগে।রেটিং দিয়ে অনেককিছু হয় হয়তো কিন্তু কিছু কিছু বিষয় বাদও পড়ে যায়।শুভকামনা শহিদ কাপুর।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×