somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

পুরনো আলমারিটা (The Old Larder)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





শীতকাল।মাঘ মাসের প্রথম কিছু দিনের কথা।কুয়াশাচ্ছন্ন দিন।সকালে একটা মোটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বাহিরে বের হলাম।পথিমধ্যে অচেনা একজন অতিবৃদ্ধ লোকের সাথে দেখা।পিঠটা কুজো তার।আমার দিকে একবার তাকালেন।মনে হলো কিছু একটা বলতে চান।আমি এড়িয়ে গেলাম।গ্রামের রাস্তা, মেঠো পথ।তাছাড়া দুর-দূরান্ত পর্যন্ত কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।ভালো করে বলতে গেলে বলতে হয়, সামনের রাস্তা কুয়াশায় ঢাকা ছিলো।প্রচন্ড ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বাজারে লোকনাথা দাদার হোটেলে গিয়ে বসলাম।এটা আমার প্রত্যহ দিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘেরা, ছোট্ট একটা ঘর।এই হোটেলের বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে, এখানে একটা কাঠের বিশাল আলমারি রয়েছে।একটা ছোট্ট বৈদ্যুতিক বাল্ব নিভু নিভু করে সবসময় জ্বলে থাকে।আর সবসময় কড়াইতে লোকনাথ দাদার পটু হাত আমি ব্যস্ত থাকতে দেখেছি।লোকনাথ দাদার মত অন্যসব আসবাবপত্র যেমন, কাঠের চেয়ার, কাঠের টেবিল এবং পুরনো একটি জগ সহ সবকিছু পুরনো এখানে।কিন্তু একটা জিনিস এখানে সবসময় নতুন আর সেটা হলো, নতুন মানুষের আনাগোনা।আজও তাই দেখছি।সাত সকালে এসব মানুষ কোথা থেকে যে এই হোটেলে এসে হাজির হয় বলা দূরুহ।ওসবে আমার আবার কোন কৌতুহলও নেই।যাইহোক এই হোটেলের ব্যাপারে সবার মুখে একটা রহস্যময় কথা শুনেছি,

“লোকনাথ দাদার সাথে একজন অশরীরি বসবাস করেন।টানা ত্রিশ বছর তিনি এই হোটেলে প্রথম চা বিনে পয়সায় সবাইকে দিয়ে দেয়।তারপর কেউ কিছু খেলে তিনি বিল নেন।এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে ঐ অশরীরির জন্য।শুধু কি তাই! এজন্য লোকনাথ দাদা এতদিন কোন মেয়েমানুষের দিকে ঝোঁকেননি পর্যন্ত।আর ঐ আলমারিটা তিনি কখনো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাননি।খুব সম্ভবত ঐ আলমারিটাতেই ঐ অশরীরিটা লুকিয়ে রয়েছে।”

কিন্তু আমি আধুনিক ছেলে।আমি এসবে বিশ্বাস করি না।আমার বরং হাসি পায়।অশরীরি পর্যন্ত বানোয়াট গল্প তাও না হয় ঠিকাছে আছে বলে ধরে নিলাম কিন্তু এখানে আবার “মেয়েমানুষ”।ছিঃ ছিঃ মানুষ সত্যি পারেও।
আমিঃ লোকনাথ দাদা, চা কখন পাবো?
লোকনাথ দাদাঃ এই তো হয়ে গেছে বাবু! আসলাম বলে…আপনাকে গতকাল দেখলাম না যে।
আমিঃ দাদা! দেখবেন কি করে বলুন।জ্বরে ভুগছিলাম।
লোকনাথ দাদাঃ এখন কি তাহলে হাল্কা অনুভব করছেন?
আমিঃ সেসব থাক।আপনি এত ভালো বাংলা কি করে বলেন বলুন তো?
লোকনাথ দাদাঃ হাসালেন বটে।এক বিষয়ে ফেইল কিন্তু মেট্রিক তো পাস করেছি বলুন।তারপরেই তো কি সব জানি হয়ে গেলো…
আমি(কন্ঠে কৌতুহল নিয়ে)বললামঃ তারপর…তারপর কি হলো?
লোকনাথ দাদাঃ গ্রামের সবাই জানে অথচ আপনি জানেন না! যাইহোক, আমার আবার আরেক টেবিলে চা দিয়ে আসতে হবে।পরে কথা হবে ‘খন।


অদ্ভূত একজন মানুষ।খুব সুন্দর করে কথাগুলো কেমন করে নিজের দিয়ে ঘুরিয়ে নিতে হয় জানা আছে।এলাকার সবার দাদা যে তিনি।এমনি এমনি তো আর এতদিন এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেননি।পয়েন্ট আছে।নিজেকে বুঝালাম এসব চিন্তা বরং এখন থাক, পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে।এখন বরং চা খাওয়ায় মনযোগ দেওয়া যায়।
হঠাৎ লোকজনের চ্যাঁচামেচি কানে আসলো।কিছু একটা গোলমাল বেঁধেছে মনে হয়।এরপর উঠে দাঁড়ালাম…কিন্তু একি শরীরটা এমন অবশ হয়ে আসছে কেন? মাথাটা ঘুরছে আর মনে হচ্ছে চোখ দুটো যেন নিজের কোঠর থেকে লাফ দিয়ে বের হয়ে যাবে।মনে হলো কোন এক বৃদ্ধ মহিলার একটা অস্পষ্ট গোঙানি শুনতে পেলাম আর এরপর ধড়াম্ করে পরে গেলাম মেঝেতে।

জ্ঞান ফিরতেই বুঝলাম আমাকে সবাই মিলে বেশ ভালো করে হোটেলের এক টেবিলে শুয়ে রেখেছে।কেউ কেউ মাথায় জল ঢালছে।কেউ কৌতুহল নিয়ে শুধু আমার দিকে চেয়ে আছি।আমি উঠে বসলাম।সবাই জিজ্ঞাসু চেহারায় “হা” করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছিলাম না।শরীরটা মনে হয় একটু দূর্বল ছিলো।তাছাড়া কয়েকদিন হলো তেমন খাওয়া-দাওয়া করিনি।আর গতকাল রাত্রেও অল্প এক টুকরো পাউরুটি ছাড়া পেটে কিছু পড়েনি।হয়তো সেজন্যই আজ হঠাৎ করে আমার সাথে এমন হলো।


এরপরের সময়গুলো কেটেছে খুব ঘোরের মধ্যে।একটা মনে থাকছে তো আরেকটা বাদ পড়ে যাচ্ছে।ধরুন, আপনি বাড়ি থেকে বাজারে শাক-সবজি কিনতে এসেছেন কিন্তু বাজারে এসে আপনার সেসব কিছুই মনে পড়ছেনা।আমার সমস্যাটা ঠিক এই রকম।ভাবলাম এভাবে চলতে থাকলে তো আর হবে না, আমার অবশ্যই একজন মানসিক ডাক্তার দেখানো উচিত।কিন্তু হঠাৎ এক ভয়াবহ খবরে আমার অবচেতন মন পর্যন্ত নড়ে উঠলো।আমার এক বন্ধুবর সেদিন আমার সাথে দেখা করতে এসে বিষয়টি জানালেন,
“বন্ধু! গতকাল ঠিক সন্ধ্যায় লোকনাথ দাদার ঐখানে এক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। তুই শুনলে ভয়ে শিউরে উঠবি।লোকনাথ দাদার যে এক পুরনো আলমারিটা রয়েছে সেটা থেকে হঠাৎ এক কটু গন্ধের উদ্ভব ঘটে।প্রথম অবস্থায় আমরা সবাই নাকটা চেপে ধরলাম।ভাবলাম কোথাকার কোন অমঙ্গল বায়ু হয়তো আমাদের এসে আক্রমণ করেছে।কিন্তু পড়ে আমরা বুঝলাম যে, আসলে গন্ধটা আলমারিটা থেকেই আসছে।আমাদের মধ্যে একজন বেশ সাহসী ছিলো।ছেলেটার কি যেন নাম…ও..ও…মনে পড়েছে, “দূর্জয়”।তো দূর্জয় গিয়ে আলমারিটা খুলবার চেষ্টা করলো।প্রথম অবস্থায় লোকনাথ দাদা বেশ খেপে গেলেন।তিনি কিছুতেই রাজি নন তার পুরনো আলমারিটাতে কেউ হাত দিক।কিন্তু কেউ সেসব কথায় কান দিলো না বরং আরো দুইজন দূর্জয় কে সাহায্য করলো আলমারিটা খুলতে।একসময় দানবাকৃতির ওই আলমারিটা ঝুঁকে পড়ল আমাদের উপর।মনে হচ্ছে এখন পড়ে যাবে।তাই আমরা সবাই বাহিরে অবস্থান নিলাম।একসময় দূর্জয় এবং তার সহযোগীরাও আলমারিটা ছেড়ে দিয়ে আমাদের কাছে চলে আসলো।এরপর আলমারিটা বিকট শব্দে পড়ল পাশের চেয়ার-টেবিলের উপর।ভেঙে গেলো এর বেশ কিছু অংশ।লোকনাথ দাদার চোখে জলবিন্দু আমি লক্ষ্য করলাম।
এরপর আমরা সবাই চাইলাম আলমারিটা ঠিক করে জায়গা মত রাখতে।তাছাড়া লোকনাথ দাদার এতদিনের পরিশ্রমের সাক্ষী হলো ঐ আলমারিটা।পারতাম বল! ওমন ষাটঊর্ধ এক বুড়োর আলমারি ভেঙে ফেলে আসতে! যে কিনা প্রতিদিন আমাদের এক কাপ চা খাওয়ায় তাও বিনে পয়সায়!
কিন্তু আলমারিটা তুলে ধরতেই একটা মাথার স্কাল দেখতে পেলাম।তারপর রীতিমত একটা কঙ্কাল বের হয়ে আসলো সেখান থেকে।যতদূর মনে হয় ওটা একটা মহিলার দেহের কঙ্কাল হবে।কঙ্কালটা পড়ে রইলো মেঝেতে আর আমরা সবাই অবাক হয়ে “হা” করে দেখছিলাম।থানায় খবর দেবার পর পুলিশে এসে লোকনাথ দাদাকে ধরে নিয়ে গেছে আর কঙ্কালটা তদন্তের জন্য এখনো ওখানে পড়ে রয়েছে।পাশের গ্রামগুলো থেকে মানুষজন ভীড় জমাচ্ছে একবার কঙ্কালটাকে দেখবার জন্য।”



আমি মনে মনে কিছু শব্দগুলোকে মেলানোর চেষ্টা করছিলাম।এই যেমন, লোকনাথ দাদা-আন্ডার মেট্রিক পাস একজন ষাটঊর্ধ বুড়ো-বিনে পয়সায় চা-অশরীরি-হঠাৎ করে আমার মাথা ঘুরানো এবং সর্বশেষে একজন মহিলার কঙ্কাল।কিন্তু কিছুই মেলাতে পারছিলাম না।এরপর একটা ফোনকল পেরলাম।থানা থেকে একজন অজ্ঞাত পুলিশ অফিসার ফোন করেছেন।

“স্যার আমি জানি যে, আপনি এখন ছুটিতে আছেন।কিন্তু কি করবো বলুন? কেসটা অত্যন্ত জটিল বৈকি।আমাদের দিয়ে কোন হিল্লে হবে বলে মনে হচ্ছে না।তাছাড়া আপনার নিজের গ্রাম।যদি কিছু না মনে করেন তো…”

ভেবেছিলাম নিজের গ্রামে কয়েকটা দিন একটা পরিচয়হীন ঘুমে কাটাবো।কিন্তু না, না তা আর আমার কপালে কুলালো না, একদম।গোয়েন্দাদের জীবন বলে কথা।অতঃপর আমি নেমে পড়লাম মাঠে।স্যুট-বুট, সাথে একটা ছোট্ট নোটবুক এবং একটা বলপেন কলম নিয়ে ছুটলাম রহস্য উন্মোচনের জন্য সোজা লোকনাথ দাদার হোটেলের দিকে।পৌঁছাতেই দেখলাম কঙ্কালটা পড়ে আছে হোটেলের মেঝেতে।বুকে একটা গর্ত লক্ষ্য করলাম।মনে হয় একটা বুলেট তার প্রাণ নিয়েছিলো।তাছাড়া আলমারির চারপাশটা বেশ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা বেশ ভালো করে গাঁথানো রয়েছে যাতে করে কোনভাবেই মৃত লাশের গন্ধ বাহিরে না যায়।ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।আপাতদৃষ্টিতে তো এরকমই মনে হচ্ছে।।আর লাশটা সুন্দর করে একটা পলিথিনে গুঁজানো ছিলো।মাথায় মনে হয় মহিলাটি কোন এক বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য ফুল দিয়ে নিজেকে সাজিয়েছিলেন।সেসবের কিছু কিছু চিহ্ন অস্পষ্ট বুঝতে পারলাম।গলার হার এখনো চকচক করছে।পুরো শরীর জুড়ে তিন-চার ভরি সোনার গহনা দেখে এটা বুঝতে আর বাকি রইলো না যে, এই মহিলাটি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। কিন্তু এই মহিলাটির সাথে লোকনাথ দাদার কি সম্পর্ক? আর কেনইবা তিনি এই মহিলাটিকে হত্যা করার পর নিজের আলমারিতেই তুলে রাখলেন? একজন হত্যাকারী কখনোই চাইবেনা যে তার হত্যার কোন তথ্য ফাঁস হয়ে যাক।কিন্তু লোকনাথ দাদা এরকম কিছু করেননি, ঠিক কেমন জানি মনে হচ্ছে একজন হত্যাকারী চাইছে আমিই এই হত্যাটা করেছি এখন আমার ফাঁসি দিন।কিন্তু এই ব্যাপারটা আরো একটু অন্যদিকে মোড় নিলো।আমি এক এক করে গ্রামের সব বৃদ্ধ মুরুব্বীদের একত্র করলাম কঙ্কালটা শনাক্ত করতে।কেউ কিছুই বলতে পারছিলো না।হঠাৎ একজন বৃদ্ধ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলেন।বয়সের ভারে বৃদ্ধটি একদম কুজো হয়ে হাটছিলেন।একসময় কঙ্কালটার কাছে গিয়ে পড়ে গেলন এরপর সোজা হয়ে বসে হাত দিয়ে কঙ্কালটির মাথা নিজের কোলের উপর তুলে নিলেন।লোকটিকে আমি চিনি।এলাকার মাথা তিনি।সবাই চৌধুরী সাহেব বলে ডাকেন।বয়েস হয়ে গেছে, এখন প্রায় শ’এর উপর বয়েস তার।
আমিঃ এই যে চৌধুরী সাহেব!¬¬ আপনি কি করছেন? আপনি কি মহিলাটাকে চেনেন?
তিনি কিছুক্ষণ বেশ চুপচাপ থাকলেন।তারপর চোখে জল নিয়ে আড়চোখে একবার আমার দিকে তাকালেন আর কি সব বলতে শুরু করলেন।আর আমি রেকর্ডিং ডিভাইসের স্টার্ট বাটনে প্রেস করলাম।
চৌধুরী সাহেবঃ আজ থেকে পঁচিশ বছর আগের কথা।এই মেয়েটাকে দেখছেন না? এটা আমার মেয়ে।আল্লাহ্ আমাকে কি দেননি বলুন? আমার অনেক ধন-সম্পদ, জমাজমি রয়েছে।এই একটাই মেয়ে আমার।আমি চেয়েছিলাম কোন এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলের সাথে ওর বিয়ে হোক।কিন্তু শেষমেশ সে একটা ভুল করে বসলো।প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলো ওদের।তাও আবার পাশের পাড়ার সনাতন ধর্মের এক নিচু বর্ণের ছেলের সাথে।গ্রামের মোড়ল আমি।আর আমার ঘরে এতবড় একটা পাপ জন্মাইলো! আমি কি করতাম? হ্যাঁ, আমি ওর বিয়ে ঠিক করলাম।দেখেশুনে একটা বড় মুসলিম পরিবারের ছেলের সাথে।বেশ ধূমধাম করে বিয়ের আয়োজন চলছিলো।ভেবেছিলাম প্রথমে হয়তো একটু ওর কষ্ট হবে তারপর সব ভুলে যাবে।সময়ের স্রোতে আমরা কত কি না ভুলে যেতে বাধ্য হই! কিন্তু তাই বলে আমাদের ছেড়ে বিয়ের রাতে ছেলেটার হাত ধরে পালিয়ে যাবে ভাবিনি।
এরপর চৌধুরী সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তারপর বেশ রাগ্বত কন্ঠে কি সব বলে উঠলেন…
“সবার কাছে মাথা কাটা যাবে আমার ভেবে পুরনো বন্দুকটা বের করলাম।দেখলাম উঠান পেরিয়ে বেশ দূরে ওরা উঠিপড়ি করে সামনে দৌঁড়াচ্ছে।পেছন থেকে লক্ষ্য ঠিক করলাম।আমার মেয়ে নয়, ঐ ছেলেটাকে।কিন্তু আমার মেয়ে টের পেয়ে যায় আর এরপর নিজের বুকে বুলেটটা পেতে নেয়।”


অতঃপর কয়েকজন পুলিশ এসে চোধুরী সাহেবকে নিয়ে গেলো।আমি শুধু দেখছিলাম, চৌধুরী সাহেবের চোখের কোণে কয়েকবিন্দু জল এসে হাজির হলো তারপর আলতো করে ছেড়ে দিলেন।উষ্ম জল বিন্দুগুলো চুইয়ে-চুইয়ে পরছিলো গাল বেয়ে।একসময় মনে হয় তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন আর চিৎকার করে বললেন,
“পাগলীটা আমাকে একবার জানাতে পারতো।মোড়লগীরি করাও ছেড়ে দিতাম।বুকের ভিতরটা তুই কি জানিস!”



কয়েক হপ্তাহ পর…
“লোকনাথ দাদা! আপনার চা দারুণ হয়েছে।আরো এককাপ কি পাবো?”-বললাম আমি।
লোকনাথ দাদা মাথা নাড়ালেন।আর এরপর আরো এককাপ চা নিয়ে এসে আমার টেবিলে রাখলেন।আমার পাশে চৌধুরী সাহেব বসে আছেন।আর শান্ত মনে এই প্রথমবার তিনি লোকনাথ দাদার দোকানে এসে বিনে পয়সার চা খেয়ে যাচ্ছেন।নেই কোন দ্বিধাদন্দ।
কিন্তু একটা প্রশ্ন আমার থেকেই গেলো, লোকনাথ দাদা বিনে পয়সায় চা দেন কেনো? আর কে তাকে এজন্য সাহায্য করে? কম করে হলেও প্রতিদিন শতাধিক লোকের আনাগোনা এখানে।
কিন্তু চৌধুরী সাহেব শুধু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিলেন আর বললেন,
“সব রহস্যের সমাধান হয় না বাবু।মি. মাহফুজ হাসান! এতবড় গোয়েন্দাগীরি করে না হয় আমাদের বাঁচালেন।কিন্তু ঐ যে একদিন আপনার বাসায় এক সনাতন ধর্মের মেয়েকে দেখলাম.....আপনাকে দেখে আমার বড্ড করুণা হয় জানেন তো আর..... আমি শুধু ভাবি যে, আপনি ঐ কেসটা কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন? প্রয়োজন হলে বলবেন, ওর বাবা আমার খুব কাছের বন্ধু।আর জানেন তো?... ওরা কিন্তু উচ্চ বর্ণের।”
দেখলাম লোকনাথ দাদাও এক কাপ চা নিয়ে এসে বসেছেন চৌধুরী সাহেবের পাশে আর সবাই হো...হো... করে হাসিতে ফেটে পড়লেন।






সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×