somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

Smoking Kills

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কথা হবে "ধূমপান এবং বাংলাদেশ" নিয়ে।আমি চেষ্টা করছি ধূমপান সংক্রান্ত মোটামুটি সমস্ত বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবার।প্রথমেই চলে যাচ্ছি বাংলাদেশে ধূমপায়ীদের পরিসংখ্যানে,
বাংলাদেশে প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ ধূমপান করেন।পুরুষদের পাশাপাশি ধূমপায়ী নারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।২০১৬ সালের শুরুর দিকে ক্রোয়েশিয়া ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথের এক প্রতিবেদনে, নারী ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শীর্ষ স্থান দেয়া হয়েছে।প্রতিবেদন অনুযায়ী দুই কোটিরও বেশি নারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তামাক ও ধূমপানে অভ্যস্ত।শীর্ষস্থানে ধূমপায়ী দেশগুলোর মধ্যে সেরা দশে বাংলাদেশ রয়েছে(তথ্যসূত্র- দ্য ল্যানসেট)।এছাড়া “গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজেস” শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, সারা বিশ্বে দশটি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী ধূমপান।চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি রাশিয়ার মত দেশগুলোর গাঁ ঘেঁষে বাংলাদেশ নামটি অবস্থান করছে।“দ্য ল্যানসেট” এক টুইটে জানিয়েছে, সারা বিশ্বে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন ধূমপান করেন।

এখন আসা যাক ধূমপানে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
১. ব্রেন অ্যাটাক বা স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস, ২. রেটিনার রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ায় অন্ধত্ব, ৩. বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার যেমন মুখগহ্বর, গলা, ফুসফুস প্রভৃতির ক্যান্সার, ৪.হার্ট অ্যাটাক, ৫.গ্যাস্ট্রিক আলসার, ৬. উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি।
(লিখেছেন-তাশফীন হাসান, http://www.beshto.com)

ধূমপান করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কি কোন আইন রয়েছে?
২০০৫ সালে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপান করার জন্য ৫০টাকা জরিমানার কথা বলা হয় এবং পরবর্তীতে আইনটি সংশোধন করে জরিমানার পরিমাণ ৫০টাকা থেকে বেড়ে ৩০০টাকা করা হয়েছে।

কে বা কারা ধূমপান করছেন?
আমাদের অনেকের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা রয়েছে যে, শুধুমাত্র নিম্নশ্রেণীর মানুষগুলো ধূমপান করছেন।কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ভুল।যার ধূমপানের ঐ আইনটি রক্ষা করে চলার কথা তিনিও ধূমপান করছেন তাও প্রকাশ্যে।একজন ডাক্তার যিনি মানুষকে ধূমপান থেকে অন্যদের বিরত থাকতে বলছেন দিনশেষে নিজ চেম্বার থেকে বেরিয়ে তিনিও ধূমপান করছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে তা প্রকাশ্যে।একজন শিক্ষক এবং একজন অভিভাবক যিনি তার সন্তানকে ধূমপানে অভ্যস্ত হতে নিষেধ করছেন অন্যদিকে আবার তিনি নিজেই তা ছাড়তে পারছেন না।ঠিক এমন করে ধূমপান ছড়িয়ে গেছে আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা স্তরের মানুষের মধ্যে।ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়িক থেকে শুরু করে একজন রিক্সাচালক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্যে অভ্যস্ত।



কেন মানুষ ধূমপান করেন?
একজন মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে নিজেকে।নিজের ব্যাপারে সবাই শতভাগ সচেতন এবং ষোল আনা বুঝে নিতে বদ্ধ পরিকর।তাহলে নিজেই কেন নিজের ক্ষতিটা করছেন? সিগারেটের প্যাকেটে লেখা অন্তত এই বাক্যেটি কি তারা পড়েননি?

“Smoking is injurious to health” Or “Smoking causes cancer”

অথবা বর্তমান সময়ে দেওয়া সিগারেট প্যাকেটের উপর বিভিন্ন চিত্র কি তাদের একবারও চোখে পড়ে না?
আসলে এসব উদ্ভট প্রশ্ন।সত্যি বলতে, এমন কোন ধূমপায়ী নেই যিনি জানেন না এর জন্য তাকে কি মাশুল গুনতে হবে।হয়তো একটু কম-বেশি হতে পারে তবে আমি নিশ্চিত তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ লোক এটা ভালো করে জানেন।তাহলে প্রশ্ন হলো কেন তারা ধূমপান করেন?
১. প্রেমিক/প্রেমিকার দেওয়া ছ্যাকার(অন্য কোন শব্দ জুতসই পেলাম না) জন্য, ২. হতাশা বা বিষণ্ণতার জন্য, ৩. বর্তমান সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে তুলে ধরার জন্য বা মানিয়ে চলার জন্য, ৪.শুধুই একটা অভ্যাস, ৫. হীনমন্যতার জন্য, ৬. কাজের অতিরিক্ত চাপের জন্য না কি ৭. নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার জন্য।
সত্যি বলতে, সঠিক উত্তরটা আমি জানিনা।



ধূমপান কারীদের সাথে অ-ধূমপায়ীদের কি করা উচিত?
এস, আর. ও নং ৭১-আইন/২০০৫- ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এর ধারা ১ এর উপ-ধারা(২) অনুযায়ী, পরোক্ষভাবে যিনি ধূমপান করছেন সে ব্যাপারে আপনার কিছু করার নেই কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে যিনি ধূমপান করছেন সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে পুলিশ-প্রশাসনকে ডাকতে পারেন।
(হাস্যকর ব্যাপার হলেও সত্যি যে, ঘটা করে আপনি একজন ধূমপায়ীর ৩০০টাকার ক্ষতি করতে তো পারবেন।)


নিকোটিনে এমন কি আছে?
নিকোটিন ফুসফুসে পৌঁছলে দুম করে রক্তে পৌঁছে যেতে পারে।সবাই জানে ফুসফুসের আন্দরমহলে রক্তের সঙ্গে বাতাসের দেখা হয়।ধূমপান করে সেই বাতাসের সঙ্গে ধূমপায়ীদের নিকোটিন মিশিয়ে দেয়।বাতাসের মতো করে নিকোটিনও তখন একমূহুর্তে রক্তে চলে যেতে পারে।খানিক অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বনে বানানো নিকোটিন মানুষের ত্বক আর মিউকাস মেমব্রেন ভেদ করে প্রবেশ করতে পারে।এরপর তা এড্রেনালিন হরমোন ছেড়ে দিতে বলে।এড্রেনালিন একাধিক অনুভূতির সঙ্গে জড়িত।এসব অনুভূতির সঙ্গে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুততর হওয়া আর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।এড্রেনালিনের জন্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।গ্লুকোজ হচ্ছে শরীরের জ্বালানী।তাই রক্তে জ্বালানী বেড়ে যাওয়া মানে বেশি শক্তি খরচের জন্য শরীর প্রস্তুত হয়ে যাওয়া।এছাড়া নিকোটিন মস্তিষ্কে অ্যাসিটাইলকোলিন নামের এক নিউরোট্রান্সমিটার ছাড়তে অনুপ্রাণিত করে।এর কাজ হচ্ছে আপনার মস্তিষ্ক এবং শরীরকে উত্তেজিত করা।কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সতর্ক করা।পরীক্ষার আগের মূহুর্তে বইয়ের পাতা ওল্টানোর জন্য যে সতর্ক ব্যস্ততা সেইরকমের সতর্কতা।এজন্য সিগারেট খেলে সতেজ ও এনার্জেটিক বোধ হয়, জটিল চিন্তায় মনোনিবেশ করা সহজ হয়ে যায়।তাছাড় ডোপামিন(লোভ) নামের আরেক নিউরোট্রান্সমিটার সুখানুভূতির যোগান দেয়।
নিকোটিনের মূল বিষয়টা হচ্ছে, ভালো থাকার লোভ আর খারাপ থাকার ভয়।
(লিখেছেন-অনার্য সঙ্গীত, http://www.sachalayatan.com, কিছুটা সাজানো তবে অপরিমার্জিত)


পরিসমাপ্তিঃ ধূমপান স্ব্যাস্থের জন্য ভালো নয়।এটা আমাদের সবারই জানা।যদি ভাবেন তো আমাদের সমাজের জন্য এটি একটা ব্যাধিও।বড় বড় ফিকশন চরিত্রগুলোও ধূমপান করে।বড় বড় লেখক ধূমপান করতেন বা করেন।বড় বড় তারকা ধূমপান করতেন বা করেন।বিজ্ঞানী আইনস্টাইন থেকে শুরু করে বর্তমানের তারকা আমির খান(বলিউড তারকা) ধূমপান করেছেন বা করছেন।এমনও তো হতে পারে, কেউ কেউ নিজের জীবনের আর কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না আর সেজন্যই ধূমপান সহ আরও এক্সট্রিম ড্রাগ বেছে নিচ্ছেন।তাদেরকে অপমান করে, হেয় করে, সমাজের উচ্ছিষ্ট ভেবে পেছনে ফেলে যাওয়া হয়তো ঠিক হবে না।এইভাবে কাউকে বলবেন না যে,
“ধূমপান বাদ দিন”
এতে কোন ফায়দা হবে না বরং বলুন
“আমার চোখের সামনে অন্য কোন মানুষের বরবাদি দেখলে কষ্ট হয়”
এতে হয়তো ধূমপান বন্ধ নাও হতে পারে কিন্তু বাড়বে না।
কথা দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩০
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×