মানুষের জন্মেরও আগে মানুষ যখন জান্নাতে/স্বর্গে ছিলো তখন সে সব জানতো।কিন্তু পৃথিবীতে আসার পূর্বে স্বর্গের পরীরা বা ফেরেশতারা আমাদের স্মৃতি মুছে দেন।তাই আমরা পৃথিবীতে এসে আমাদের জন্মের আগের অতীত সম্পর্কে কোন ধারণা রাখি না।যদিও এটি একটি ধর্মীয় বিশ্বাস।সে যাইহোক, কিন্তু এমন যদি হয় যে স্বর্গের পরীরা আপনার পৃথিবীতে আসার পূর্বে আপনার স্মৃতি মুছে দিতে ভুলে যায়? জন্মানোর পরে যখন আপনি আপনার ভবিষ্যৎ মনে রাখতে পারছেন ঠিক যেমন করে আমরা অতীত মনে রাখি তাহলে ঠিক কি হতে পারে? কথা বলছিলাম ৬ই নভেম্বর ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া মুভি “মি. নো বডি” নিয়ে।
মুভির নামঃ Mr. Nobody
ধরণঃ ড্রামা/ফান্টাসি
সময়কাল ব্যাপ্তিঃ ২ঘন্টা ৩৭মিনিট
অভিনয়ে ছিলেনঃ Jared Leto, Diane Kruger, Sarah Polley, Juno Temple, Toby Regdo, Linh Dan Pham, Rgys Ifans, Natasha Little, Thomas Byrne, Clare Stone, Audrey Giacomini, Laura Brumagne, Allan Corduner, Daniel Mays, Michel Riley, Ben Mansfield, Laurent Capelluto & Leni Parker
স্ক্রিনপ্লেঃ Jaco Van Dormael
পরিচালনায় ছিলেনঃ Jaco Van Dormael
মুভিটির বাজেট ছিলোঃ ৪৭ মিলিয়ন ইউ.এস ডলার
রেটিং ৭.৯/১০, রোটেন টম্যাটোস ৬৬% এবং আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৮/১০
এই মুভিটিতে প্রথমে দেখা যায় একজন বৃদ্ধকে যিনি কিনা নিজেকে ৩৪ বছরের একজন মানুষ বলে ক্লেইম করছেন।সামনে আছে ২০৯২ সালের পৃথিবী, মানুষ তখন অমর হওয়া শিখে গেছে এবং একজন সাইকোলজিস্ট।যিনি কিনা হিপনোটাইজ করার মাধ্যমে জানবার চেষ্টা করছেন এই বৃদ্ধ লোকটির অতীত।
প্রশ্ন হলো বৃদ্ধ লোকটি কি তখন ২০৯২ সালে পৃথিবীতে অদৌ অবস্থান করছিলেন? না কি এসব তার দেখা নিজের ভবিষ্যৎ?
মুভিটিতে দুটি ডাইমেনশন আমি খুঁজে পেয়েছি।এক- পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব এবং এই অস্তিত্বের ফলে আমাদের নেয়া সিদ্ধান্তের ফলাফল।একই মানুষ কি করে একাধিক সময়ে বাস করতে পারে? শুধু তাই নয়, একই মানুষ দেখছে তিনটি ভিন্ন মেয়ের সাথে তিনটি ভিন্ন রকমের সম্পর্ক এবং তিনটি ভিন্ন রকমের জীবন।তিনি বিভিন্ন জীবনে বারবার মারা যাচ্ছেন এবং অন্য সম্ভাবনা খুঁজে বেড়াচ্ছেন বেঁচে থাকার জন্য।তাই হয়তো তিনি অমর।মুভিটি থেকে আমরা জানতে পারি যে, আমাদের জীবনে সিদ্ধান্ত নিতে হবেই।আমরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে কোন এক বিশেষ জায়গায় আবদ্ধ থাকতে পারবো না।কারণ সময় আমাদের তা করতে দিবে না।
যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন তখন আপনি সেটা আর ফেরত পাবেন না।কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবার আগে পর্যন্ত আপনার হাতে লিমিটলেস অপশন থাকে বেছে নেবার মত।নেমু আসলে কাকে চেয়েছিলেন? এলিস? এন্ন্যা? না কি জেন কে? আর যদি এলিসকে চেয়ে থাকেন তাহলে কেন চেয়েছিলেন?
উত্তর খন্ডন আমি পুরোপুরি করবো না।অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি করতেও পারবো না।নেমু আসলে সেই ছেলেটি যে ছেলেটি দেখছে তার বাবা এবং মায়ের একটি সুন্দর সম্পর্ক।তারপর তার মায়ের এক্সট্রা ম্যারিট্যাল আফেয়ার্সের কারণে তার বাবা এবং মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।আমরা দেখতে পাই, একটা রেলওয়ে স্টেশনে সে দাঁড়িয়ে আছে এক হাত বাবার হাতটা ধরে আছে এবং তার অন্য হাতটা মায়ের হাত ধরে আছে।এই মুহুর্তে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, সে তার মায়ের কাছে থাকবে না কি তার বাবার কাছে থাকবে? তাই সে শুরু করলো তার ভবিষ্যৎ দেখা।মায়ের সাথে থাকলে তার কেমন জীবন হতে পারে তার সম্ভাবনা এবং বাবার সাথে থাকলে কেমন জীবন পেতে পারে তার সম্ভাবনা।এবং এই ভবিষ্যৎ এর সাথে কি কি সম্ভাবনা যুক্ত হতে পারে তার সব।কারণ একবার যখন সে সিদ্ধান্ত নিবে তখন সে তার ভবিষ্যৎ ভুলে যাবে এবং যেটা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সেই মোতাবেক তাকে বাকী জীবন চলতে হবে।
আমার আরেকটা প্রশ্ন থেকে গেছে মুভিটির পরিচালকের কাছে আর সেটা হলো, “জীবন মানে ভোগান্তি”।এটা কি আপনি বিশ্বাস করেন?
আমার মনে হয় করেন।তাই শেষ দৃশ্যে নেমুর সিদ্ধান্ত আপনাকে বাতলে দিবে সিদ্ধান্ত যেটাই নেন না কেন এক মানুষ জীবনের সবক্ষেত্রে কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।যেহেতু সঠিক সিদ্ধান্ত আমাদের সঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছায় এবং ভুল সিদ্ধান্ত ভুল গন্তব্যে বা ভোগান্তিতে।সুতরাং জীবনে আপনি একবার হলেও ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন এবং এজন্যই জীবনে ভোগান্তি অনিবার্য।
মুভিটিতে সময় এবং স্থানের আপেক্ষিকতা এবং বিগ ব্যাঙ থিউরি নিয়েও ট্যাচ করা হয়েছে।বিজ্ঞান যেমন বিশ্বাস করে বিগ ব্যাঙের ফলে এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং একসময় এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আবার এক্সপ্লোসিভ ঘটার মাধ্যমে নতুন একটি পৃথিবী গঠিত হবে।আর মুভিটি বলছে ধ্বংস হবার আগের সময়টুকু একটু মঙ্গলে থাকলেই চলবে, একটু লম্বা শীতনিদ্রার মধ্যে থাকলেন।তারপর পুনরায় আপনি আপনার যৌবন এবং পৃথিবী দুটোই পাবেন।কারণ যা আমাদের নষ্ট করছে সেটা হলো, সময় এবং স্থান।কে জানে পরবর্তী পৃথীবীতে সময় হয়তো উল্টো দিকেও চলতে পারে।
যাইহোক, আজ এই পর্যন্তই।