somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

ভাবনার বিচার

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- আচ্ছা সমস্ত স্মৃতি যা আমাদের জীবনে জড়ো হয়ে আছে তাকে যদি একটা ছোট্ট ফাইলে ভরে পুড়িয়ে দেয়া যেত! তাহলে ঠিক কেমন হত?
- মানে তুই বলতে চাচ্ছিস সমস্ত স্মৃতির যদি একত্রে একটা ছোট্ট স্মৃতি থাকতো তবে তা ক্যামন হত? তাই তো?
- ঠিক তাই।আমাদের বয়েস বাড়ছে।আর তার সাথে সাথে হাজারো ধরণের স্মৃতিও মস্তিষ্কে একত্র হয়ে আমাদেরকে সময় সময় পিছনে নিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমি চাচ্ছি সমস্ত স্মৃতির একটা জিপ অংশ থাকবে।যাকে আনজিপ করলে সেই স্মৃতি হবে “আমার কোনো স্মৃতি নেই”।ব্যস! এতটুকু।
- তাহলে পুরোপুরি স্মৃতিকে মুছে ফেলা হয়ে যাচ্ছে।সেখানে তোর বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবীও রয়েছে।যদি স্মৃতি মুছে ফেলা হয় তাহলে বাজে স্মৃতিগুলোর পাশাপাশি ভালো স্মৃতিগুলোও মুছে যাবে।এবং এতেও বেশ ভোগান্তি।যেমন সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে বললি, “আমার নাম কি?”
আর নিজের বাবাকে গিয়ে বললি যে, “কে আপনি? আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না!”
- আমি শুধু একটা বাজে স্মৃতিকে মুছে ফেলতে চাই।
- কিন্তু সেটা করবি কীভাবে?
- জানিনা।কিন্তু যতদিন ঐ বাজে স্মৃতিটা থাকবে ঠিক ততদিন আমায় ভোগান্তি কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে।
- তাত্ত্বিক আলোচনা ভালোই চললো।এখন একটু প্রাকটিক্যাল হই।মানুষটা কে? যার স্মৃতি তুই মুছে ফেলতে চাস?
- বন্ধু...ট্রেন আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছে।চল এখন নামতে হবে।
- ঠিকাছে...শোন রোহান যখন ইচ্ছে নেই তখন না বলাটাই শ্রেয়।তবে ট্রেন থেকে নেমে আমাকে অন্য রাস্তা ধরতে হবে।ভালো থাকিস।

রোহান অনেক গোছানো।বেশ শান্ত এবং চুপচাপ প্রকৃতির।ও জীবনটাকে একটু অন্যভাবে দেখতে পছন্দ করে।সবকিছু নিয়ে দুই ধাপ আগে থেকেই বেশি ভেবে রাখে।একটা ঘটনা তার সাথে কেন ঘটলো? সেই ঘটনা ঘটার কতটুকু যুক্তিযুক্ততা ছিলো? এবং সেটা আরো দশজনের সাথে না ঘটে তার সাথেই ঘটলো কেন?
যাইহোক, একটা গল্প ওর জীবনে ছিলো ঠিক এরকম.....

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।সেদিন ছিলো রবিবার।প্রথম বর্ষের একটা অ্যাসাইনমেন্টের পেপার গোছাচ্ছিলো সে।তারপর হঠাৎ দমকা হাওয়ায় সেগুলো হাত থেকে উড়ে যায়।সেই পাতাগুলো এমন সুন্দর বিচ্ছিন্নভাবে আকাশে উড়ছিলো যে দেখার মত ছিলো।তারপর একটা একটা করে মাটিতে নামা আরম্ভ করলো।রোহানের চিন্তাগুলো স্থির হতেই সে পাতাগুলো সংগ্রহ করতে গেলো।হঠাৎ সে দেখতে পেলো একটা মেয়ে তাকে পাতাগুলো একত্র করতে সাহায্য করছে।তারপর বেশ কিছু পাতা রোহানের হাতে দিয়ে একটু মুচকি হাসলো।অতঃপর কিছু না বলেই চুপচাপ প্রস্থান করলো।কিন্তু পুরো বিষয়টা রোহানের কাছে সাধারণ মনে হয়নি।কারণ ক্যাম্পাস জুড়ে তো অনেকেই রয়েছে।আর এত নিষ্পাপ মুখ দেখা হয়নি কোনোদিন।এটাকে অতিরঞ্জিত করলে বলা যায়, স্বর্গ থেকে যেন পরি নেমে এসেছিলো।

আজকাল বেশ নিয়মিত মেয়েটার সাথে রোহানের দেখা হয়।মেয়েটা পাশের ডিপার্টমেন্টে পড়ে।ওরা সমবয়সী।মেয়েটার নাম ঈশিতা।এরপর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে মনের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত দুজনে কানেক্টেড হয়ে গেছে।অবশ্য এটা রোহানের কাছে একটা অ্যাডভেঞ্চার।কারণ সে আবার প্রত্যেকটা বিষয় খুব কাছে থেকে দেখতে পছন্দ করে।শুধু তাই নয়, বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে সেগুলোর একটা সঠিক বিশ্লেষণপুর্বক একটা উপসংহারে পৌঁছায়।রোহানের মতে পৃথিবীর সবকিছু একে অন্যের সাথে অনেক বেশি যুক্ত।একটার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি অস্বাভাবিক হয়ে গেলে বাকিগুলোর অবস্থায়ও তাই হবে।সুতরাং সে কিছু পয়েন্ট পেলো।এই যেমন, এক- সেদিন সকালে হঠাৎ করে বাতাস উঠেছিলো, দুই- সেই বাতাসে ক্যাম্পাসে আর কাউকে সমস্যায় পড়তে হয়নি শুধু সে বাদে, তিন- এত মানুষ থাকতে শুধু ঐ মেয়েটা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছিলো।সুতরাং রোহানের মতে পুরো বিশ্ব চেষ্টা করছে রোহান এবং ঈশিতাকে একত্রে করতে।তাহলে রোহানের কি উচিত নয় ঈশিতাকে নিজের করে নেয়া!

অবশ্যই উচিত।তাই রোহান একদম দেরি না করে ঈশিতাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে।ঈশিতা অবশ্য বেশি সময় নেয়নি।শুধু জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘কিন্তু আমাকেই কেনো রোহান?’ প্রত্যুত্তরে রোহান তার বক্তব্য নির্দ্বিধায় ঈশিতার কাছে পেশ করেছিলো।কিন্তু রোহানের বক্তব্যের মাথামুণ্ডুও বুঝলোনা ঈশিতা।যততুকু বুঝেছিলো সেটা হলো, ‘রোহান তাকে ভালোবাসে’।যাইহোক, এরপর একটার পর একটা দিন শেষ হতে লাগলো।জড়ো হতে থাকলো অনেক অনেক স্মৃতি।বেশ মিষ্টি মিষ্টি রোমান্টিক স্মৃতি।একসাথে রেস্টুরেন্টে বসা হয়, একসাথে স্টাডি করা হয়, একসাথে চায়ের কাপে চুমুকও দেয়া হয়।আস্তে আস্তে ওদের সম্পর্ক ডালপালাযুক্ত এক বিশাল বটগাছে পরিণত হলো।ক্যাম্পাসের সেরা ক্যাপল হয়ে উঠলো ওরা।সবাই ওদের দেখে ঈর্ষার্ন্বিত।বন্ধুরা ভাবতে শুরু করলো, ইশ্! জীবনটা যদি রোহানের মত করে হত!
কিন্তু জীবন ধাঁধাঁ আদার চেয়েও অনেক ঝাল, আর দাবার চেয়েও অনেক জটিল।তাই মসৃণ গল্পগুলোতে আয়রন লাগে সবার আগে।তারপর একদিন ভঙ্গুর দশা, এবং ভেঙ্গেও যায়।

বছর দুয়েক পর
এখন রোহান পড়াশুনা করছে তৃতীয় বর্ষে।কিন্তু ঈশিতাকে আর রোহানের সাথে দেখতে পাওয়া যায় না।একদিন রোহান ক্লাস শেষে হলে ফিরছিলো ঠিক তখন দেখতে পেলো, একটা রিক্সা পাশ কেটে গেলো।রিক্সায় রয়েছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।ছেলেটাকে রোহান না চিনলেও মেয়েটাকে চিনতে পেরেছে ঠিকই।রিক্সার হুড নামানো।খোলামেলা চুমুর দৃশ্যে আড়ষ্ট হয়ে চোখ নিচে নেমে এলে রোহানের।কারন ওটাই ছিলো রোহানের ঈশিতা।

তারপর কিছু সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছিলো রোহান।কিন্তু ভাবনা চোট খেলো অন্য আরেকটা কারণে।ফোনকল ভাইব্রেশনে মুক্ত হলো চিন্তার মস্তিষ্ক।স্ক্রিনে ভেসে উঠা কন্টাক্ট নম্বর সেইভ করা “জান” লিখে।যেটা কিনা আগে ঈশিতার নম্বরের কন্টাক্ট নেইম ছিলো।নামটা একই রয়েছে কিন্তু মানুষটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।একটু সময় নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলো সে।তারপর বেশ কড়া একটি কন্ঠ ওপার থেকে ভেসে আসলো,
“আমাকে তুমি কতক্ষণ এই রেস্টুরেন্টে বসে রাখবে।ঘড়িটা দেখেছো?”
রোহানের কাছে সেদিন বড় একটা প্রশ্ন উদয় হলো, “এক জীবনে আর কয়টা জান দেখতে হবে? আর কতগুলো জান আমার এই এক জীবনে যুক্ত?”
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×