somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুষ্পপটে ব্রাত্য মিনতি পুস্তকের বাকি অংশ

১৪ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিন্দুক

একটি লোহার সিন্দুক; ময়লা ও পুরানা
কিন্তু অভূতপূর্ব, দেখলেই শানশওকতের ছবির ভেতর
উড়ে যায় অনেক মলিন মুখেদের টুকরো টুকরো ছবি।
এই শানশওকতের নিস্তব্ধ ছবি তোমার পিছন দিকে,
হেঁশেল ঘরের কাছে ফেলে রাখলে এমন কিছুই হতো না, তবু,
তাকে বুকে আগলেই রাখি
বহুদিন থেকে একলা একলা, তোমাকে যেমন সারাক্ষণ
বহন করে বেড়াই সেরকমই ওই, ওই কিম্ভূতকিমাকার,
প্রাচীন বস্তুটাকে আমি বয়ে বেড়াচ্ছি। এই দায়, এই অতি
সতর্কতা, ওইটার জন্য আমি বরাদ্দ রেখে আমার আর সকল
কাজগুলি সম্পন্ন করি।
আমার যে জগত সে জগতে এইটার কোন মূল্য নাই, তবুও,
তাকে বহু বহু যুগের আপন মনে করেই ওটাকে আমি ফেলে দিতে
পারি না, তাকে আত্মীয় ভেবে যেখানেই স্থায়ী হই, সেখানেই
এইটাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হয়।
ভাল-বেসে যতœ করে সাজিয়ে রাখতে হয়। এটা এখন বহন
করতে করতে না থাকলেও খারাপ লাগবে হয়তো, হয়তো বুকের
ভেতরটা হাহাকারের সীমানা ছেড়ে যাবে..
বাসা বদলালেও সেটা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাই,
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া, এই সিন্দুক যদিও এখন অব্যবহৃত,
পরিত্যক্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকে।
ভাবি, তারপরও, তার কী দাপট! আমরা তাকে নিয়ে সবসময়
তটস্থ থাকি, সতর্ক থাকি, এই লোহার জগতে, এই পুঁজির দুনিয়ায়
ওই লোহার সিন্দুক, ওই নিস্তব্ধ যাদুকরী ময়লা, পুরানা
সম্পদ এখনো কী রকম এক ডাঁটের সাথে আমাদের
সাথে টিকে আছে।
এইটা যখন ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল আমার দাদা, তখন
বহু গ্রাম গঞ্জ থেকে বহু নারী-পুরুষ
দেখতে এসেছিল।
সে এক দেখার জিনিস ছিল! এখন এর শ্রী তেমন নেই।
জীর্ণ দানব চেহারার এই জিনিসটাকে, এই আত্মীয় কে, এই ঝামেলাপূর্ণ
ভালবাসাকে, আমি অনেকবার ফেলে দিতে চেয়েছি, একবার বিক্রি
করেও দিতে চেয়েছিলাম
ভাংড়ি দরে। আমার স্ত্রীর বাধার কারণে তা
বিফলে গেছে। তাকে রেখে কী ফল, আমার, আমার বংশধরদের?
এটাকে আগলিয়ে রাখার সময় আমার নেই।
আমি অনেক দিন হলো এটার কোন খোঁজ খবর রাখি না।
আগেও যে খুব একটা রেখেছি তা না।
তবু এই শীতে, ঠাণ্ডার গহীনে ঢুকে আজ কেন মনে আসছে?
দূর অতীতের দিকে
আমি মনকে, আমার ভাব সম্পদকে, নিয়ে যেতে চাই না।
তারপরও মনে আসছে! আহা! লোহার সিন্দুক!
মনে আসছে বৃষ্টির ভেতর আমার দাদা ভিজতে ভিজতে
সিন্দুকটা, কোলে করে, শিশুকে যেমন করে মা, তেমনিভাবে আদরে
ঘরে তুলেছিল, এইটাকে সে সন্তানতুল্য মনে
করে সবসময় আগলিয়ে
রাখতো।
আমি আমার জীবন বীণে, কাঁটাতারে, লোভ-লালসায়
এই সিন্দুকের প্রয়োজনীয়তা
অনুভব করি না। এই ডিজিটাল যুগে, পণ্য ও বেসাতির কালে
ঘুম থেকে জেগে উঠে যেই মাহেন্দ্রক্ষণে, এই সিন্দুকের
কথা ভাবি, মনের গহীনে খচখচ করে ওঠে,
তার নিকট অতীতেও আমি তো গ্রন্থিত মেঘদল
আর কাঁটা-গুল্মে পরিপূর্ণ শয্যায়
তোমার বক্ষ উন্মোচিত করে, যেই বৃষ্টির রাত, যেই কোলে
তুলে ঘরে তুলে রাখা শিশুর আহ্লাদ
দেখেছিলাম, ওখানে অনেকগুলো ধনসম্পদ রাখার তাক,
ছককাটা হরেকরকম ঘরও আমি দেখেছিলাম
নাকি দেখি নাই?
সেই তাকগুলো, সেই ঘরগুলো কি এই সিন্দুকের মধ্যেও আছে?
আমি এখন, এই লোহা পিরিতের জগতে
সিন্দুকের ভেতর বাহির
খুলে দেখার চেষ্টা করছি, যেটাকে এতদিন অবহেলা করে
অনুভব করি নি, সেটাকে
এখন, এইক্ষণে, ডালিমের ন্যায় লাগছে, ঘুমের মধ্যে
ছুঁয়ে ছেনে দেখছি কাড়িকাড়ি টাকা-কড়ি,
দূর অতীতের গহনাগুলো ঝুমঝুম বেজে উঠছে শয়নকক্ষের তাকে।

পথভোলা

সবুজ নেশার পথভোলা আলো সিংহ
মেঘের ধ্বনিতে ঘরছাড়া
মহুয়ার উন্মুক্ত জগতে, খড়ের গাদায়, একা।

চারিদিকে খোলা, যেইদিকে নদী পথ সেইদিকে
মুখ করে গাঢ় এক আকাক্সক্ষায়
মানুষ দেখবে বলে ঠাই বসে থাকে।

মানুষেরা আসে না, ঘাট ছেড়ে উঠে আসে ডাঙায়
একে একে হরেকরকম ভালুকেরা
তাদের মুখে মানুষের গন্ধ, মাংশের কণা।

এইসব দেখে আর দূরতম দিগন্তে অসম্ভব মেঘের
পিঠে উড়ে যায়, আর নাঙ্গাভুখা
আকাক্সক্ষার সর্বস্ব খুলে রক্তবর্ণ তৃষ্ণার
সিংহিনীর খোঁজ করে।

সিংহিনীরা লুকিয়ে আছে মানুষের গায়ের গন্ধে, মাংশের
কণায়, পথভোলা তাই বসে থাকে,
যেইদিকে দৃষ্টির বক্ষ খোলা দুয়ার
সেইদিকে মুখ করে।

তোমার মুখের স্বদেশী পক্ষীকুল আর মেঘের ডাকে
আমাদের প্রচলিত বিধি-নিষেধের তীর ছেড়ে
ঝোপের গভীর মুখশ্রীতে—পথভোলা ঘুমিয়ে রয়েছে।


রান্নার প্রস্তুতি

নীল চাবুকের অবুঝ ও অন্ধ মেয়েরা আয়নায় সন্ধ্যামালতী, আমি ক্রসচিহ্নে
যাদের মুখ ভেসে যেতে দেখি, তারা সুগন্ধী প্রহরগুলো কুড়িয়ে নিয়ে
ফিরে যায় ঘরে।
শববাহকের দল দেয়ালের ভেতর ঢুকে গেলে বাদ্যযন্ত্রীরা পানশালায় উড়াতে
থাকে মুখরতার নাভীবন। আমি গৃহত্যাগী সবুজ খরগোশগুলোকে
মৃত-নদের ক্রন্দন শোনাই।
আর যে চিল পুরুষেরা জ্যোৎস্নায় উড়ে উড়ে এখন অবসরে,
বাঘের ছালে নিঃশব্দে ঘুমায়; আমি তাদের ঋদ্ধ হাড়-মাংশ গভীর রাতে
একাকী কষাই।
চারিদিক হয়ে ওঠে শুনশান, নিশ্চুপে আমার ঘরে জমা হয় শত শত গিরগিটি,
যোগিনী পাড়ার কেউ কেউ উঁকি দিয়ে ফিরে যায়, আমি রোল কলের খাতায়
লিখে রাখি সব।
আওলানো ভাঙা চোয়ালের গিরগিটিদের বাড়ির পাশেই, আমি স্কুলব্যাগ খুলে
করোটির রুলপেন্সিলে গেঁথে তুলি ঘোৎঘোৎ করা পূর্বজদের হাড়,
বাদামি-স্লেটের আকাশে উড়িয়ে দিই ক্ষুধার্ত বেড়ালের
কালো নখর।
ডোবার ভিটেতে দাঁড়ানো নিমগাছের নিচে, যারা কালোদেহ, তাদের মাথানিচু
ছায়ায় গড়ে উঠেছে যেই রন্ধনশালা, সেইখানে, কচি খরগোশগুলো আমি
টুকরো টুকরো করে, মাংশ রান্নার প্রস্তুতি নিই।


গুপ্তচর

কাঙাল বালকেরা চিরদিনই অন্যের দুয়ারে
হাত পেতে বড় হয়, ঘাসের ভেতর, ঝোপের ভেতর,
যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে
ছুটে চলে, মনের জংলা-কাদায় বেড়ে ওঠে
আশা-নিরাশার বুনোফুল,
জুঁই-টগরের গা থেকে রোদ ছিটকে পড়া ক্ষণে কখনো কখনো
এরা গান গেয়ে ওঠে।

চাবি সারাইকারীরা এসব বালকদেরকে দুয়ার খুলে রাখা
রাজকুমারীর গল্প শেখায়।

আমি এইসব বালকদের যূথবন্ধনী খুলে হরিৎ
বনে ছেড়ে দিয়ে আসি, বনজ প্রহরের খুলিতে, গ্রীবায়,
জংঘায় ভাষাহীন এক মায়ার জগতে
এরা বেড়ে উঠতে থাকে, ছুটোছুটি করতে থাকে।

চোখাচোখির বাইরে কীরকম এক আলুথালু ভাব, উড়–উড়– মন
পাখির সাথে, গাছের সাথে, হরিণের চোখে,
ঘাসে ও পাতায় উড়ে উড়ে যায়, ঘুরে ঘুরে আসে।

রাত্রি-দিন বলে কিছু নাই, শুধু মিলনের কাক্সক্ষা,
উড়ে উড়ে ভুবন দেখার স্বাদ,
আর পাখনার শব্দে জেগে জেগে পাখনার রঙে বিভোর হয়ে
আকাশে, বন-সবুজে মিশে যাওয়া
আমি জেনে গেছি - হাড়ের ভেতর সমুদ্র ঢেউয়ে
কে তোমার সাগ্রহের পর্যটক, কার কার মুখের বালুভূমিতে
কাঁকড়া ও কাছিমের বসতি।

সমুদ্র ছায়ায় থিতু হয়ে মুক্তা আহরণকারী
গুপ্তচরের নাম বিষাদ। তার বাড়ির পাশে কাঙাল বালকেরা
ছলনাময়ী—
কুলশীল বংশের ঘাতকদের ওঁৎ পেতে থাকা
ছুরিতে প্রত্যহ ঘুম থেকে জেগে উঠে
দেখে অসংখ্য দুয়ারে গুপ্তচরের নাম ফুটে আছে।

ক্যামেরা

(১)

দৃষ্টির আড়ালে শিহরিত পুষ্পবাণ—
উড়ে চলা অসংখ্য পাখিদের পাখার শব্দ মাথার ভেতর শব্দসমুদ্র, নীলিমার কাঁটাতার আর
তৃণভোজীদের ঘাড় থেকে মায়াবী নর্তকীদের মেঘে
উড়ে যাবো। ঝুমঝুম বাজবে হাড়ের স্বপ্ন।
কাল কেউটের মাথায় গভীর মগ্নতায় যেইসব ঋষি-বালকেরা অলীক উলুবনে, শাদার ভেতর
কালো-ডোরা ছকে—পুঁতে রাখে চাঁদ ও কামুকে উল্লাস, সেইখানে, রাধা চুলের বিছানো
ঘাসের নিচে
নৈরাজ্য দেখবো, ফুটফুটে ঘড়িদের বাচ্চারা দূরে দাঁড়িয়ে—
দেখবে কামরাঙা গাছের তলে দুইজোড়া পা।
উদ্দেশ্যহীন বিছানার পৃষ্ঠায় জ্বলে উঠবে সু-পরীদের মন, সূর্যাস্তের দেওয়াল।

(২)

ওপারে মুগ্ধ হয়ে বুদ হয়ে মায়ার দংশন দেখবো, বুক ভেঙে যাওয়া মানুষেরা হাহাকার করবে,
বৃষ্টির শব্দ শুনবে মাংসাশী প্রেমিকারা, তাদের জিভে -
ভিজে উঠবে, বিড়ালিনীর রান্নাঘর থেকে যেই শব্দ ভেসে আসবে, সেই শব্দ,
খুন হয়ে যাবে জানালার পাশে।
দুদিকে মুখ করে পড়ে থাকবে দুদিকের ভাঙা-নদী, উজাড় হয়ে যাওয়া মধুবন থেকে ভেসে
আসবে হাসি, পেতনিদের চুল পড়ে থাকবে শুধু, বর্ষাগ্রন্থ খুলে যে নারীরা মেঘপুঞ্জের
ধ্বনিতে রাত জেগে রয়, তাদের কাক্সিক্ষত পুরুষেরা
ফেরে না গৃহান্তরে।
বর্শার পাশে পড়ে থাকে ভাঙাচুড়ি, শস্যকুমারীর আলতা রাঙানো পায়ে রাত্রি নামে,
ভেবে দেখছি, নিখুঁত হাহাকারে ভেসে উঠছে
মধুপ ও নিপুণ মনের ফাটল।
জগত সংসারের আয়না ও বিছানার তল থেকে উড়ে যাচ্ছে তীর
ক্যামেরা শুধু ছবি তুলে রাখছে।


আলো সম্ভাবনা

ঘাই মেরে ওঠে রাতে খুব নিবিড় দেহভঙ্গির বাঁক
চেনা নয়, অজ্ঞাত, অন্য কেউ, গভীর পদধ্বনি
উড়ে যায় মেঘে মেঘে

না চেনা মুখের রঙে ভাসে
নিজেরই আলোসম্ভাবনার ঘের, কৈ লাফিয়ে ওঠে
তার কানকোতে
স্তব্ধতার গুহাতে—অজ্ঞানতার সাপ, বুনোজন্তুদের
ভিড় ঠেলে—
মন ওইখানে যেতে চায়—তীব্রতীরের শৃঙ্গারে
সেই নেশাপুরের বাগান ঘেরা মোমঘরে

একা
একা উঠে আসে সেইঘরে পূর্বমেঘেদের দেখা চোখ,
কাতরতা, অন্য হয়ে ওঠা,
যেইরুপ তোমার উজ্জ্বল মাংশের কড়াই, ঘ্রাণ ভেসে
থাকে, থাকে আরো বুনো চঞ্চল সর্প ফণা—বাঁকানো দেহ
সেইখানে অমৃত ভাণ্ড ভেঙে গড়ায়ে নাকি যায়!

তার পাশে যারা জাগে
তাদের সংরাগে, সন্তাপের ঝোপঝাড়ে, চায় যেতে
বসন্ত, হেমন্ত, শীত নাই, সদাই জুঁইফুল হাওয়া বয়
আনন্দ রেণুর উচ্ছ্বাসে চারিদিকে শিউলি
আর ঘুমন্ত গ্রাম একই সহদর, পিঠাপিঠি

তবু যারা কুপির আলোয় গ্রন্থকীট, খুবলে খুবলে দেখে
মাটি, গন্ধ শুকে শুকে চিনতে চায়
বাগানের ফুল, পাপিয়া, ওই প্রাচীর ভাঙার পর,
উড়ন্ত পাখিরা চিনে নেয়
বাসগৃহ তোমার

ওখানে পথভুলে,
গোলমেলে ও জেব্রার দাগ ছেড়ে যেতে চায় পবন বান্ধব
নৌকার মাঝিরা ওইখানে হাহাকার
আর নীল বেলুনের সাথে ওড়ে, ট্রাকের শব্দ তুবড়ানো গালের
মাংশে সেটে রয়, রাতে ঝুমুরে ওড়না ওড়ে
এই সাজানো গোছানো
ছকের বাইরে ছিটকে যাওয়া আলুথালু পথহারা
আলোগান গাইতে গাইতে ঢুকে যাবে
অন্ধকার আর পিপাসার ব্যঞ্জনায়
ফুটে থাকবে নাইট স্কুল, মোমঘর
নাচ ও নাচমুদ্রার বাঘ
সিংহদ্বারের প্রহরী হার্ট খুলে ঘুমিয়ে থাকবে
বাগানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পায়ের ছাপগুলো হয়ে উঠবে ময়ূরপেখম
তুমি মাটির ময়নাটারে দেখে রেখো,
উৎখাত হয়ে যাওয়া
পথহারা—ঘর থেকে, স্তন থেকে
কিছুই নেইনি, মধুপের দলে মিশে গেছে তার ছায়া শিকারি আঙুল
আর
গভীর রাতের চাকে ও চুম্বনে
হারানো মানুষেরা, বনভোজনের নৃত্যশীল মেঘেরা
তার
পিছন তাকের কালিঝুলিতে ঝুলে থাকুক
সুরের ভেতর ডুবে গিয়ে, কাঁটাগুল্মের দেশে ভ্রমণ শেষে
আবার ভেসে উঠবে যেই বর্শা, যেই ঘুণপোকা
তাদের গ্রন্থিতে,
গূঢ় আকাক্সক্ষার কাচে ঢুকে, বাসনার পেটে চাকু বসিয়ে সাগ্রহে
দেখে নেবে পিঠের ওপোর গাঁট হয়ে বসে থাকা
যাদুকরের আঙুর থোকা
ও ভ্রমণ পথের হলুদযাত্রীদের
পিছন ফেরানো পা আর অপরিশীলার কোমর ধরে
যারা বীর্যপাতে ভরে তুলছে শহর, তাদের হাড়ের ভূগর্ভে ছড়িয়ে
ছিটিয়ে দিবে ভ্রাতৃসঙ্গ, পাতাল কুমারীর চুল

ওখানেই মন যেতে চায়, চায় আরো ওখানে বাসনা
ফুটুক, ফেটে যাক রমণের অজ্ঞাত ফল...


শাপগ্রস্ত বেণীর আকাশে

শাপগ্রস্ত বেণীর আকাশে কামাক্ষীর হলদে পাখিরা
বিষাদের গ্রন্থি থেকে উড়ে যাবে—
ফুলশয্যায় পড়ে থাকবে মেঘপুঞ্জ। চূর্ণ কাচে ভরে উঠবে শহর।

সন্ধ্যার প্রণয়শীল বেড়ালেরা দেয়াল টপকিয়ে তোমার ঘরে
এসে দাঁড়াবে, সুতীব্র শীতের বেহালা
বেজে বেজে থেমে যাবে।

বাদ্যযন্ত্রী তার আঙুলের শিহরিত
অগ্নিগুচ্ছ থেকে আনুগত্য সরিয়ে নিলেই, আমি আর
চূর্ণকাচ থেকে উগরানো আলো —
শূন্যতার শাস্ত্র প্রণেতাদের দলে ঠিকই ভিড়ে যাবো।

শববাহকেরা
একে একে চলে যাবে সুশৃঙ্খল, শ্মশান ঘাটের তরঙ্গক্ষুব্ধ
বাতাস আর আমি তোমার ঘরে
ফিরে আসবো।

শহর উঠবে ভরে কাচে চূর্ণ ঘাসে। মেঘে।


প্রতিটি ভোরের সূর্যে

প্রতিটি ভোরের সূর্যে তন্দ্রাহীন জানালায়
লটকিয়ে রাখো দীর্ঘ চুম্বনের স্বাদ। অমৃত ওই চুম্বন সম্ভারে, সৌদামিনীর
প্রগাঢ় স্রোতে যেন ভেসে যায় বিষাদ মুখর নগরের ঝাঁক।
পানকৌড়ির রক্তলেগে থাকা রুমালে
তোমার অধীর, প্রকম্পিত স্পর্শ ছড়িয়ে দিয়ে, ফিরে যায় সময়হীন পালের -
শিরাসূর্যের বাঁকে।
মোহনার ক্ষুব্ধ তরঙ্গ সিম্ফনির রেশমি নাওয়ে—সঙ্গম শেষের রক্তিম সৌরভ
উথলিয়ে ওঠে, গভীর তন্ময়তায় নৈর্ব্যক্ত আঁধারে নোঙর ফেলে
প্রতিক্ষণে ছিন্ন হও তুমি।
বিদ্যুৎ চমকের মতো আবারও বিপুলশূন্যতার প্রশস্ত রাস্তার পাশে ফুটে
ওঠো—অতৃপ্ত তৃষ্ণার গাল।
রৌদ্রসমুজ্জ্বল উরুসুরঙ্গের নদে বানের তোড় এসে ভাসিয়ে নেয় ফের,
নিঃসঙ্গ দাঁড়ের বাহু ভেদ করে ছলাৎ ছলাৎ
হৃৎকম্পন ঢেউ তুলে যায়...
দীপ্ত নখরে নীলতারাদের সমুদ্র সৈকত পার হয়ে ভুলে যাওয়া দ্বীপের মত
একা, শুধুই দাঁড়িয়ে থাকি।
অঝোরে বৃষ্টির শব্দে সবুজ গাছের পাতাদের ফাঁকে মেঘ এসে
খুলে ফেলে নিঃসঙ্গ নেকাব। তুমিও নিঃশব্দে গভীর রাতের একাকিত্বে
বিষাদ মৈথুনের সঙ্গীত মূর্ছনায়,
নিস্তব্ধ রাতের টোলপড়া নীলে—চু’য়ে পড়ো লাল,
কুয়াশা জড়ানো ভোর, কাঠচেরাইয়ের মৌনতা ভাঙার গোপন শৃঙ্খল।


এখন যেমন

এখন যেমন জেগে আছি চেয়ারে পিঠ দিয়ে

কাল সূর্য উঠবে তখন চেয়ারের এদৃশ্য তলিয়ে
যাবে ময়ূর পাখা তোমার চোখ থেকে
ঘড়ির গলন্ত দেহের ওপোর এখন যেমন

তেমনি জেগে উঠবে হাতল ধরা যন্ত্রণা

যেখানে রাধাচূড়া নেই শীতল রাতের নৌকায়
ভেসে যাবে পিঠের রোদ পোহানো সর্ষেক্ষেত

এখন যেমন তার কোন চিহ্ন নেই

ক্যালেন্ডার

একটা দরোজার অর্ধেক অন্ধকার।
অর্ধেকে কাঠের আকাশ মেরুন রঙের তারার মধ্যে ছয়খানা ফুল
পাতা, সেলাইয়ের
দৃশ্য ভেঙে ফটোগ্রাফার
কচুপাতার ফোটা ফোটা পানি, বিকেল বেলার পাগলা গারোদ
মনোরোগির আঙুলে
এক চিমটি রোদ
ছাপ দিয়ে চুপিচুপি বেজে ওঠে কথার সেতারে। স্তব্ধতার
ফোলা ফোলা ঠোটে বাঁক নিচ্ছে ক্রসিং
ভলবো বাস থেকে নেমে যাচ্ছেন লিপিস্টিক তাকে ঘুঙুরে
মানিয়েছে, দড়ি খুলে
দেখি
মনের গভীরতায় খুট করে শব্দ হয়, পাশের পেপার ওয়েটে
পানির ভেতর লালফুল
অন্ধকার ফুঁড়ে দরোজায় হেলান
দিয়ে
ওড়না পেঁচানো একটা মুখ, হাসির অস্পষ্ট রেখা, দুচোখে
নির্জনতার অনেক পাখি
কানের দুলে চুয়ে পড়ছে রাত্রি, নীরবতা

ক্যালেন্ডারে তারিখ উড়ছে, কাঠের আকাশে একটি বিমান



ধূপ

ভাষার বাইরে কিছু নাই? তাকালেই তো বুঝি বৃষ্টির দিন
মেঘপুঞ্জ চোখের পাতায় সাজিয়ে তোলে হলুদ ফুল
তার গন্ধ চিল
ওড়ে ঠোঁটের নিচে চামড়ার মধ্যে ঢেউ ঠেলে
নেয় মাটি ভেঙে পড়ে চাকা চাকা ফোঁটা
ফোঁটা
পানি পড়ে না বলা না বোঝা কথার
গাছে ফোটে আয়না ও চোখ যার
চুলের ফিতায় গাঁথা থাকে পাখি
শিহরণের
নদী উথলে ভিজে
ওঠে মেঝের
চশমা
দেখা যায় ভাষার বাইরে থুতনিতে থুতনি লাগলে ঠোঁট
এগিয়ে ঠোঁটকে বাসা বাঁধতে দেয় হাতের মধ্যে লাল
সন্দেহ গর্ত খুঁড়ে তুলে আনে বাজিকরের চোখ
জানালা থেকে সরে যায় সাপের ফণা
না তাকালেও শিরশির শব্দ
দিয়াশলাইয়ে গান
গেয়ে ওঠে
ধূপ
গন্ধের এজন্য কোন ভাষা নেই চুম্বনেরও...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৮:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×