somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তমনা ব্লগার
কেহ বিশ্বাস করে, কেহ করে না। যে বিশ্বাস করে সেও সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, যে অবিশ্বাস করে সেও না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটা নির্ভর করে মানুষের খুশির উপর। ধর্মান্ধতা নিপাত যাক, মুক্তচিন্তা মুক্তি পাক।

প্রাতঃকালের ভাবনা

২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তথাকথিত ধর্ম গুলোর বাস্তবিক তাৎপর্য না থাকলেও এর একটা মানবিক ও সামাজিক দিক ছিলো বলে আমি জানতাম। অধুনা ধর্মের হয়ে মানবতার বিরুদ্ধে যে ক্রুসেড শুরু হয়েছে তার উদাহরণ গুলোর সাথে এটিও যুক্ত হলো।

যেখানে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসকের ছদ্মবেশে ধরে আসা বন্দুকধারীদের হামলায় ৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আফগান কর্মকর্তারা।

মুরতাদ নিধনের নামে শেষ পর্যন্ত হসপিটালও আর মানুষের জন্যে নিরাপদ নয়! সেখানেও আত্মঘাতী বোমা হামলা! যুদ্ধক্ষেত্রেও হাসপাতাল আক্রান্ত হয়না, যুদ্ধরীতিতে। সর্বশেষ বিশ্বযুদ্ধের কালেও সেইসব ঐতিহাসিক নজির আছে। আর এখন বিশ্বব্যাপী যা ঘটে চলেছে তা না ধর্মীয়, না সামরিক, কোন রীতিতেই পড়ে না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে যে ধর্মটা আসলে তাহলে কি জিনিস?

আমার কাছে প্রকৃতি বর্ণনায় অতিপ্রাকৃততার মস্তিষ্ক প্রসূত ব্যাখ্যা। বিজ্ঞান-পূর্ব যুগের মানুষের ভাবনা, মিথ বা দর্শন। সেখানে আছে ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, সৃষ্টির উদ্দেশ্য আর স্রষ্টার প্রতি মানুষের করণীয়। ক্রমঃক্ষয়ীষ্ণু এসব মিথ গুলো একপাশে রেখে অধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন জায়গা করে নিয়েছে সভ্যতার আধুনিক সময়ে। সেখানে রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন কিংবা বৈজ্ঞানিক দর্শন গুলোর ক্রমোন্নতির সাথে দার্শনিক যৌক্তিকতায় যূথবদ্ধ। যেখানে ক্ষয়িষ্ণু মিথ গুলো হয়তো জায়গা করে নেবে উত্তরাধুনিক যুগের আধুনিক ঠাকুরমার ঝুলিতে! সমাজবদ্ধ মানুষের সমাজাধিপতিদের প্রতি কিংবা গোত্র-প্রধানদের প্রতি গোত্রের প্রত্যেকটি মানুষ যেমন নিরেট দাস কিংবা প্রজা, ধর্মারোপের পরে ঠিক তেমনি মানুষ পরিণত হয়েছে আরও বড় এক গোত্রপ্রধানের দাসে। গোত্রপ্রধানের ক্ষমতা, আকুতি কিংবা স্বার্থ-ভাবনার সাথে কথিত ঈশ্বর কিংবা স্রষ্টার কোন পার্থক্য সে’কারণেই নেই। তথাকথিত গোত্রপ্রধানেরা ঈশ্বরের প্রতিনিধি, প্রতিভূ! তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই ধর্মগ্রন্থগুলোতে মেনে নেবার রায় প্রতিফলিত হয়েছে। ফলে অবয়বহীন ভাবিত ঈশ্বরের ভাব আরশে তাই আজ এরাই গদিনসীন! সেকারণেই এসেছে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জিকির। কারণ, প্রযুক্তি নির্ভর কালে মানুষের কাছে প্রাকৃতিক গঠন-ঘটন সমূহ আর থাকছেনা কিছুই জানালার ঝাপসা কাঁচের ও’ধারে। অবয়ব, বোধ ও ব্যাক্ষ্যা চলবে সমান্তরালে, তত্ত্ব, তথ্য আর এর সংযোগ যুগের সন্ধিক্ষণে এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। তথাকথিত রক্ষণশীলতার ধারকেরা তাই চায়না এসব, অবারিত তথ্য-প্রবাহের যুগে প্রাগৈতিহাসিক বাঁধনের সেকলে জং ধরবেই, চিন্তায় চেতনায় মানুষ মানুষ থেকে আলাদা হবেই, ঐসব মিথের সুতোয় এখন আর সভ্যতাকে এক কলসিতে ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। তাই স্বার্থ সংরক্ষণের হিসেব মেটাবার পালা তাদের সামনে। সেখানে সন্ত্রাস এক সাধারণ উপসর্গ! বলি হবে সমাজের সেইসব অংশই, যারা ভিন্নমতাবলম্বী, প্রথা-বিরুদ্ধবাদী কিংবা চেতনায় চৌকস। চোখ ধাঁধানো নৃশংসতার আবরণে যতক্ষণ সম্ভব সভ্যতাকে বন্দী করতে চাইবে তারা এও স্পষ্ট। অন্তত: মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাস তাই বলে। এদের সাথে সেই একই স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে কোথাও কোথাও বা সর্বত্র ভূ-রাজনৈতিক, অঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক কিংবা বৈশ্বিক-রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয় এক সহজাত প্রবৃত্তি, যেহেতু স্রষ্টার ধর্মরাজ্য আর বৈশ্বিক রাজ-পাটের নিবিড়তা বিদ্যমান তথাকথিত মিথগুলোতে। সেইজন্যেই অধুনা আরোপিত খিলাফতের নামে চালিত নৃশংসতা তাই মানবতার ধার ধারেনা। এ যেনো যথার্থই বিজ্ঞান-পূর্ব যুগের রক্ষণশীল মিথের সাথে বিজ্ঞান-উত্তর উন্মুক্ততার যুগের উত্তরাধুনিকতার লড়াই। নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এইসব কল্পবিলাসী ধূর্তজনের সামাজিক রক্ষণশীলতা উগ্রতার বেশে মানবতাকে গ্রাস করতে চেয়েছে বহুবার! আর প্রতিবারই এ সামাজিক অরাজকতার ফায়দা লুটেছে রক্ষণশীলতাই! এটি যেমন নেতিবাচক ঠিক তেমনি এর ইতিবাচক দিকটি বড় কম নয়! কারণ রক্ষণশীলতাও বার বার তাদের বেশভূষা পাল্টেছে ক্রমান্বয়ে, এসে পৌঁছিয়েছে উত্তরাধুনিক যুগে! এরা নতুন ক্ষেত্রে আসে, রক্ষণশীলতার বীজ বপন করে। ক্রান্তিকালে মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের অর্বাচীন উল্লম্ফনের জানান দেয়।

একটি রেনঁসার জন্ম হয় আধুনিক মননের তেজোদ্দীপ্ততায়, বিবর্তিত পরিস্থিতিতে বসন পাল্টে এরা ঠিকই তেলাপোকার মতোই কালের যাত্রায় টিকে থাকে এবং বোধ হয় অনন্তকাল অবধি থাকবেও। কিন্তু সুপ্রসন্ন ও প্রগতির অগ্রগতি কখনো থামাতে পারেনা। কালচক্রের অমোঘ নিয়মে পরাজয়ই এদের কপাল লিখন! দুঃখটা শুধু এখানেই নয় যে, কালচক্রে যুগে যুগে রক্ষণশীল অর্বাচীনতার উল্লম্ফনে ঝরে যাবে অযুত নিযুত জীবনসম্পদ, বরং ঐসব রোপিত বীজের উত্থিত ডগায় ফলন্ত বিষের প্রভাবে হিসেব বিহীন ক্ষতির বোঝা বয়ে নিযে বেড়াবে মানবসভ্যতা। এর পরিসমাপ্তি আপাতত: না থাকলেও কালের অগ্রযাত্রায় মুক্তি হয়তো একদিন মিললেও মিলতে পারে সেদিন, যেদিন কোন আন্তঃনাক্ষত্রিক বুদ্ধিমান প্রাণসত্ত্বা ধরা দেবে হঠাৎ আমাদের উত্তরাধুনিক আঙ্গিনায়!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×