somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুক্তমনা ব্লগার
কেহ বিশ্বাস করে, কেহ করে না। যে বিশ্বাস করে সেও সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না, যে অবিশ্বাস করে সেও না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটা নির্ভর করে মানুষের খুশির উপর। ধর্মান্ধতা নিপাত যাক, মুক্তচিন্তা মুক্তি পাক।

প্রসঙ্গ: হেফাজতের রাজনীতি এবং তার দালালগ

৩১ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছরে বেশ কয়েকবার আমরা নাটক মঞ্চস্থ করতাম, আমাদের এলাকায়। অবশ্যই আলোচনা, গণসঙ্গীত পরিবেশন করা হত নাটক মঞ্চায়নের আগে। আশপাশের শ্রমিক, রিক্সা চালক, নিম্নবিত্তরা’ই ছিল মূলত আমাদের দর্শক-শ্রোতা। স্কুলের ছাত্ররাও আসত, তবে সংখ্যায় কম। এর মধ্যে মাদ্রাসার দু’জন ছাত্রকে পেয়েছিলাম। তারা প্রায় নিয়মিত আসাতে মুখ চেনা হয়ে গিয়েছিল। কেমন মায়া হল আমার। নিজে আগ বাড়িয়েই কথা বলেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেমন লাগে আমাদের অনুষ্ঠান। ভাললাগা ব্যক্ত করেই বলেছিল, “ইচ্ছা করে আমরাও অভিনয় করি”। আমিও আগ্রহভরে বললাম, “অবশ্যই করবে”। উত্তর এলো “না, আমরা অভিনয় করতে পারব না। অভিনয় করলে, হুজুর আমাগোরে মাদ্রাসা থাইক্যা বাইর কইরা দিবে”। সেদিন আমি খুব অসহায় বোধ করেছিলাম। মনে দাগ কেটেছিল বলে ঘটনাটি আজও মনে রয়ে গেছে।

এই ঘটনাটি কি একজন স্কুল ছাত্রের বেলায় ঘটবে? এখনকার কথা জানি না, সেই ৮৮-৮৯’এর দিকের কথা বলছি। উত্তর হবে, না। মাদ্রাসার ছাত্রদের নিজেদের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। তাদের নিজস্ব মতামতেরও কোন মূল্য নেই। প্রতিষ্ঠান যেভাবে চালাবে, তারা সেভাবেই চলবে, চলতে বাধ্য।

স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন (ছাত্র ধর্ষিত হয়েছে , এখনও কানে আসেনি) ছাত্রী লাঞ্চিত হলে, বা ধর্ষিত হলে সাধারণতঃ যেভাবে ছাত্রদের মধ্যে বিক্ষোভ সঞ্চারিত হয়, মাদ্রাসায় ছাত্র (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) বা ছাত্রী ধর্ষিত হলে সেরকম কোন বিক্ষোভ দৃষ্টিগোচর হয় না। তার মানে এই নয়, তাদের মধ্যে ক্ষোভ অনুভূত হয় না, হয়। কিন্তু এই নিয়ে বিক্ষোভ করার সাধ্যি তাদের নেই।

বলতে চাচ্ছি, মাদ্রাসা ছাত্রদের হাত পা বাঁধা। উপরের হুকুম মেনে চলাই তাদের ভাগ্য। আর এদের ভাগ্য নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছে একদল ধর্ম্মব্যবসায়ী। মাদ্রাসা ছাত্রদের সমাবেশ ঘটিয়ে, সরকারে কাছে নানা দাবীনামা পেশ করে, তারা হাতিয়ে নিচ্ছে নানা সুযোগ সুবিধা (শুনেছি, এর মধ্যে রেলের জম্নিও রয়েছে)। নিজেদের ছেলেমেয়েদের নামীদামী স্কুলে পড়াচ্ছে। আর ওদিকে, এদেরকে আশ্রয় করে, শাসকগোষ্ঠী ইচ্ছেমত ইস্যু উৎপাদন করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করার খেলায় মেতেছে। আমরা দেখেছি ব্লগার হত্যা হয়, বিচার হয় না। আমরা দেখেছি, ইসলাম অবমাননার নাম করে, হিন্দুর বাড়িঘরে হামলা করা হয়, আগুন দেয়া হয়। অনুসন্ধানে অপরাধী হিসাবে বেরিয়ে আসে মুসলমানের নাম। বিচার হয় না। অথচ শিক্ষক শ্যামল কান্তি’কে জেলে পাঠানো হয়। তাকে কানে ধরিয়ে উঠবস করিয়ে আইনভঙ্গকারী, শাসকগোষ্ঠীর অংশ ওসমান পরিবারের বিচার হয় না। রাব্বীর ছেলে খুন হয়, কি এক অদৃশ্য মন্ত্রবলে আসামী হয়ে যান পিতা রাব্বী নিজেই।

তালিকা দীর্ঘ হবে, তাই বিরতি। মূল কথাটা হল, সরকার চাইলে, এগুলোর সমাধান করে দিতে পারত বহু আগেই। কিন্তু করা হবে না। তাহলে ইস্যু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।

উৎপাদিত ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করার জন্য এখন রয়েছে হেফাজত নামক ধর্ম্ম ব্যবসায়ী সংগঠন। আগেও ছিল ভিন্ন ভিন্ন নামে। সমাজের সচেতন অংশ সে-সব ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন। সরকারও এটাই চায়। একটার পর একটা ইস্যুতে লেজেগোবরে হয়ে থাকুক আমজনতা।

আমরা কী করতে পারি?

আমরা অবশ্যই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করব, কিন্তু এখানে থেমে গেলেই সমস্যা, যেটা শাসকগোষ্ঠী মনেপ্রাণে চায়। নানা ঘটনায় জনমনে সঞ্চারিত ক্ষোভকে কি ভাবে শাসকগোষ্ঠীর দুর্গাভিমুখে আঘাত হানার লক্ষ্যে পরিচালিত করা যায়, এই নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে খুব করে ভাবা দরকার।

জনগণের স্বার্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় সফল; অগ্রসর চিন্তক বলে পরিচিত একদল কলাম লেখক, ফেইসবুকার, সমাজকর্ম্মী, ইত্যাদি; সরকারের পক্ষে যোগ দিয়েছে বাড়তি উপদ্রব হিসাবে। তারা হেফাজতের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী উপাদান আবিষ্কার করে চলেছেন।

হেফাজতের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা’টা কি? হাইকোর্টের সামনে বিদেশী মূর্তি (মূর্ত্তি)? একটি বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেছে, “আমরা বারে বারে বলেছি, ইসলামে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণা একটি মৌলিক ধারণা বা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এমনকি ইনসাফ কায়েম ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য। সেই ন্যায়ের বা ইনসাফের কোনও প্রতীকায়ন যদি গ্রিক ঐতিহ্য থেকে ধার করা হয়, তবে প্রকারান্তরে এটাই ধরে নেওয়া হয় যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও ধর্মে ন্যায়ের কোনও ধারণা বা অবস্থান ছিল না। এটা ঔপনিবেশিক ভাবাদর্শ।” বিস্তারিত এখানে দেখুন: ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনে মর্মাহত আহমদ শফী, বাস্তবতা বোঝার অনুরোধ সরকারকে।

কথা হল, এই ন্যায় বা ইনসাফ অথবা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা কোথায় থাকে, যখন ট্যাংরাটিলা’য় গ্যাস পুড়ে, কিন্তু ক্ষতিপূরণ মেলে না। কোথায় থাকে, যখন সুন্দরবন বিনাশকে সামনে রেখে কয়লাভিত্তিক কারখানার জন্য ভারতীয় পূঁজির ভাগাড় হয়ে উঠে? কোথায় থাকে ইনসাফ যখন বাঁশখালীতে লাশ পড়ে? তবুও চায়নার কয়লাভিত্তিক কারখানার কাজ এগিয়ে চলে। কোথায় থাকে রূপপুরে পারমাণবিক কারখানা বসানোর আয়োজন, রাশিয়ার পূঁজির ভাগাড়?

গার্মেন্টেসে শ্রমিক মরে, মুজুরী পায় না। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি পাচার হয়ে যায়। এদের ইনসাফের নাড়াচাড়া নেই। এ কেবল নড়ে উঠে, অনুভূতি গনগনে হয়ে উঠে, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হয়ে উঠে, একটা মূর্তি দেখে। কত হাস্যকর হলে, এরকম কথা বলে পার পাওয়া যায়? আরও হাস্যকর হল, এদের পেছনে বুদ্ধির রসদের যোগানদার হিসাবে হাজির হয়ে যায় একদল বুদ্ধিজীবী।

একটি মাত্র মূর্তি ভাঙ্গার প্রশ্নে যেভাবে , শিল্প, আগ্রাসন, উপনিবেশ, প্রতিকায়ন’এর প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি, তার সিকিভাগ যদি জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে হত, দেশটা আর যাই হোক, বিদেশী শক্তিগুলোর ভাগাড়ে পরিণত হত না।

তো এই ধর্ম্মব্যবসায়ীদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রগতিশীলতার মুখোশ পরিহিত, সমাজে অগ্রসর চিন্তক বলে পরিচিত বুদ্ধি-ব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচিত করব কেমন করে? যেহেতু এদের পেছনে রয়েছে আবার অনেক সাধারণ মানুষ, তাদের মধ্যে অনেক আন্তরিক মানুষও রয়েছেন যারা সমাজকে পুরুষ-প্রকৃতির বসবাসের উপযোগী দেখতে চান। তাই এ নিয়েও আমাদের ভাবা দরকার।

এদের সখ্য-তালিকা থেকে বিদায় করে দিলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? কি করা যায়, কেমন করে, এই নব্য দানবদের একঘরে করা যায়, জানার আগ্রহ থেকেই আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×