somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুগল কী করবে? - প্রথম পর্ব

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন ধরে একটি বই পড়ছি। এক কথায় অসাধারণ। ২৩ তারিখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। যাবার পথে জিল্লুরের গাড়িতে বইটি দেখি। গাড়িতে আসা যাওয়ার পথে কয়েক পাতা পড়লাম। এবং বুঝলাম না পড়লে মিস করবো। জিল্লুরের কাছ থেকে ধার নিয়ে পড়তে শুরু করেছি। আজকাল এক নাগাড়ে পড়ার সময় পায় না। তাই আস্তে আস্তে এগুচ্ছি।

বইটি লিখেছেন জেফ জার্বিস। মনে হয় কোন এক কেউকেটা, তবে আমি আগে তার নাম শুনিনি। বই এর নাম থেকে বোঝা যায় এটি একুশ শতকের অন্যতম শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুগলকে নিয়ে লেখা। ইন্টারনেট জানে কিন্তু গুগল চেনে না এমন লোক মনে হয় খুঁজে পাওয়া মুশ্কিল। তবুও যাদের গুগলের শুরুর দিন আর আমার কেন গুগল নিয়ে আগ্রহ তা জানতে ইচ্ছে তারা আমার আগের একটা ব্লগপোস্ট দেখে নিতে পারে

তা এই বইটি গুগলের ইতিহাস নয়। মূলত দুইটি ভাগে বইটি বিভক্ত। গুগলের নীতি (গুগল রুল) এবং শিক্ষা, সংবাদপত্র, মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, ম্যানুফ্যাকচারিং ইত্যাদি যদি গুগল চালায় তাহলে সেটি কেমন হবে তার একটি যৌক্তিক অনুমান (হোয়াট উড গুগল ডু)। আমার পড়া এখনো শেষ হয়নি। এখনো প্রথম পার্ট নিয়ে আছি।

জার্ভিসের লেখার একটি বড়গুণ হলো এই বই‌এর বিষয়বস্তুর সঙ্গে তার একটি যোগাযোগ আছে। জার্ভিস এ যুগের সে লোকগুলোর অন্যতম যারা ব্লগ লিখে, সাবাদিকতা করে, লোক আর বাযবসায়ীদের পরামর্শ দেয় এবং সর্বোপরি ইন্টারনেট যুগে আমাদের বদলে যাওয়াকে তীখক্ষ্ণ চোখে দেখে। সে কারণে তার এনালিসিস গুলো একেবারে মর্মে গিয়ে পৌঁছে।
বইটি শুরু হয়েছে জার্ভিসের নিজের একটি অভিজ্ঞতা দিয়ে। ডেল কোম্পানির একটি ল্যাপটপ কেনার পর বেচারা ঠিকমতো কাস্টোমার সার্ভিস পাইনি। শেষমেষ সেটি তিনি তার ব্লগে লিখেন। এরপর নানা ঘটনার মাধ্যমে ডের কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাবগুলো মেনে নেয় এবং তার সমস্যাকবলিত ল্যাপটপটি বদলে দেয়। এ থেকে আস্তে আস্তে গুগলে ঢুকে পড়েন তিনি।

ইন্টারনেট আর গুগল মিলে একটি নতুন জগৎ তৈরি করছে। এ জগতের অনেক খানি আর আগের ব্যবসার নিয়ম মানে না। দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি প্রায়ই বক্তৃতা দিতে যায়। ওপেন সোর্সের বক্তৃতা হলে যেমন গুগলের কথা আসে তেমনি ব্যবসার কথা হলেও সেটি আসে। ওপেন সোর্সের সুবিধা যে আমরা সবাই ভোগ করি তার উদাহরণ হিসাবে আমি গুগলের কথা বলি। গুগলের সব সার্ভার ঐ ওপেন সোর্সে চলে। একইভাবে গুগলের হোম পেজের কথা বলতে হয় তার সিম্পিসিটির জন্য। অনেকের পক্ষে বোঝা মুশ্কিল যে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা গুগল কেমন করে করে। তার রেভেনিউ আসে তার ‘সাইড ডোর’ থেকে। আমি যখন পড়লাম এই কোম্পানি জীবনে এক ফুটো পয়সাও বিজ্ঞাপনে ব্যয় করেনি তখন প্রথমে খুব অবাক হলাম। পরে দেখলাম তাইতো কোনদিন তো গুগলের কোন এডের কথা শুনি নাই! তারপর থেকে হাসছি। আমি কেন হাসছি তা সরাসরি বলা নিষেধ তবে তারা সমঝদার তারা নিশ্চয়ই আমার হাসির কারণ বুঝতে পারছেন।

যাকগে, বই-এর কথায় আসি। গুগলের ১০টি সোনালী নীতির কথা সবাই জানে। জার্ভিস সেগুলোকে সামনে এনেছেন। সঙ্গে অন্য অনেক প্রাসঙ্গিক কথা। ভাল লেগেছে জার্ভিস আমার একটি কথা, যা আমি বলে বেড়াই, তার সঙ্গে একমত হয়েছেন জোর গলায়। ‘Do mistakes well’ ঠিকভাবে ভুল করো। আমরা সবাই সফল হতে চাই, ঠিক কাজটাই করতে চাই কিন্তু কখনো ভুল করতে চাই না। আমি বলি আমাদের নতুন প্রজন্মকে সাফল্যের সঙ্গে ফেইল করার সুযোগ দিতে হবে। নতুবা আমরা সাকসেস স্টোরি পাবো না। একটি ছড়াও বানিয়েছি
উদ্যম আর উদ্ভাবনে মনকে উদার করো
একটি গুগল পাওয়ার তরে হাজর গুগল গড়ো।


জার্ভিস প্রায় সুর মিলিয়ে ভুলের কথা বলেছে। ভুল না করলে এগুনো যাবে না এই সময়ে। কারণ ঠিক কোনটিতে আপনি সফল হবেন সেটা কে জানে।

এরপরে জার্ভিস জোর দিয়েছেন নেটওয়ার্কিং‌-এ। এ যুগে টিকে থাকার অপর নাম নেটওয়ার্ক - সামাজিক, ব্যবসায়িক কিঞবা কাস্টোমার কেয়ার। চোখ কান খোলা রেখে নিজের রেভিনিউ খুঁজতে হবে। সোজা রাস্তায় সেটি নাও আসতে পারে। এ জন্য নেটওয়ার্ক করতে হবে। বেশ কিছু ঘটনার বর্ণা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে জুকারবাগের আর্ট কোর্সে গ্রেড ভাল করার গল্পটিও আছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো সে ভাবে কেবল একা জুকারের গ্রেড ভাল হয়নি, ক্লাসের সবার গ্রেড ভাল হয়েছে। জানিয়েছেন ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট এসত্রাদাকে উৎখাত করার সময় কীভাবে মোবাইল ফোনের এসএমএস কাজে লেগেছে। আমার মনে পড়লো বাগেরহাটের প্রত্যন্ত এলাকার একটি গ্রামের লোকেরাও নিজেদের একত্রিত করতে এখন এসএমএস ব্যবহার করে।

জনগণের যে প্রযুক্তি জনগণ তৈরি, উন্নয়ন, বিকশিত করে, সে ওপেন সোর্সের প্রতি গুগলের আস্থার কথা জার্ভিস লিখেছেন। লিখেছেন প্রযুক্তির নির্বাচনে যেন ভুল না হয়।
আরো বলেছেন এখন সংগঠিত হওয়ার জন্য তথাকথিত সংগঠন লাগে না। এই সময়ের এই জায়গাটিতেই আমার সবচেয়ে বেশি আশা। এক-দুইদিন আগে ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি জরিপের কথা লিখেছেন। যেখানে আমাদের নতুন প্রজন্ম পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে যেমন আগ্রহের কথা বলেছে তেমনি এখনকার রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহের কথাও বলেছে। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের সংগঠনবিহীন সংগঠিত হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। সংগঠিত হওয়ার নতুন এই সুযোগ, আমি নিশ্চিত, নতুন প্রজন্মকে নতুন রাজনীতির সংগঠন গড়ে তুলতে উৎসাহিত করবে। আমাদের দেশেও ফেইসবুক-আর ব্লগে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যে সমাবেশ আর আন্দোলন করা যায় সেটা আমরা এরমধ্যে দেখেও ফেলেছি। বন্টু-মিন্টুর আড্ডা কিংবা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আন্দোলন দুইটি ছোট্ট উদাহরণ মাত্র।

বইটির বেশিরভাগ অংশ এখনো আমি এখনো পড়িনি। পড়তে পড়তে সবার সঙ্গে শেয়ার করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো, যতদূর পারা যায়।

জিল্লুর বইটি সিঙ্গাপুর থেকে কিনেছে। ঢাকায় কোথাও পাওয়া যায় কী না আমি জানি না। কেহ জানলে দয়া করে অন্যদের জানিয়ে দেবেন।

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×