somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গড়ের মাঠে গড়াগড়ি

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি বলি, কয়েকটি খেলায় তামিমের মোট রান ১৫৩ আর সাকিবের ১০২। তাহলে কে ভালো ব্যাট করে?
তাহলে সিংহভাগ পাঠকই হয়তো লাফিয়ে উঠবেন, ‘কেন, তামিম।’
তবে, কয়েকজন ভ্রুকুঁচকে জানতে চাইবেন, ‘আচ্ছা, দুজনই কি সমানসংখ্যক ম্যাচ খেলেছে?’
ঠিক। ব্যাপারটা আসলে তাই। কারণ, যদি এমন হয় ১৫৩ রান তামিম করেছে দুই ম্যাচে আর সাকিবের ১০২ এক ম্যাচে, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ থাকে না। থাকে না বলেই গণিতজ্ঞরা গড়ের ধারণার আমদানি করেছেন।
সাধারণভাবে একই ধরনের রাশির ব্যাপারে যদি কয়েকবার ঘটে, তাহলে রাশিগুলোর যোগফলকে ঘটনা সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে গড় সংখ্যাটি পাওয়া যায়। ধরি, তামিমের ১৫৩ রান এসেছে তিনটি ম্যাচ থেকে। তাহলে এই তিন ম্যাচে তামিমের গড় রান হবে ১৫৩ ÷ ৩ = ৫১।
গড়ের ধারণায় কিন্তু একটি বড় ফাঁক আছে, যা আমরা অনেক সময় মনে রাখি না। অন্য যেকোনোভাবে ১৫৩ রান করলেই তামিমের গড় রান ৫১-ই হতো। যেমন যদি তামিম এক ম্যাচে ১৫৩ রান আর বাকি দুই ম্যাচে কোনো রান না করে তাহলেও তার রানের গড় হতো ওই ৫১-ই।
আবার গড় করার সময় একই জাতীয় রাশির কথা মনে রাখতে হয়। তেমনটি বিবেচনা না করলে কী হয় তার একটি অভিজ্ঞতা আমার আছে। চাচা ঈশ্বরদীতে থাকার সময় তাঁর বাড়িতে এক গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। চাচি প্রতিদিন গাছ থেকে আম পাড়িয়ে তা বাজারে বিক্রি করতে পাঠাতেন বশির মিয়াকে। বশির মিয়া একটি ঝুঁড়িতে ৬০টি পাকা আম আর একটি ঝুঁড়িতে ৬০টি কাঁচা আম নিয়ে বাজারে যেত। বশির মিয়া প্রতি জোড়া পাকা আম পাঁচ টাকা আর কাঁচা আম পাঁচ টাকায় তিনটি বিক্রি করত। এভাবে প্রতিদিনই বশির মিয়া আম বিক্রি করত।
একদিন বশির মিয়া চাচার সঙ্গে চলে গেল অফিসে। আমি ভাবলাম, বিক্রির কাজটা আমি করি। চাচিও সায় দিলেন। বললেন, তোমার আলাদা করে বিক্রি করার দরকার নেই। তুমি হরেদরে পাঁচটা ১০ টাকা করে বিক্রি করে এসো।
আমার তো প্রবল উৎসাহ। নিজেই ঝাঁকা নিয়ে বাজারে গেলাম এবং দুপুরের মধ্যে ১০ টাকায় পাঁচটা করে সব আম বিক্রি করে বাসায় ফেরত এলাম। বাসায় ফিরে সব টাকা চাচিকে দিলাম।
চাচি টাকা গুনে বললেন, ‘আর টাকা আছে?’
-‘না, নেই।’
-‘কেন? এখানে তো ২৪০ টাকা। আর বশির মিয়া তো আমাকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা দেয়। বাকি ১০ টাকা?’
সেদিন চাচিকে বোঝাতে আমার প্রাণ যায় অবস্থা। কিন্তু রাতে চাচা এসে সব পরিষ্কার করে দিলেন। চাচা চাচিকে বললেন, ‘বশির মিয়া সব আম বিক্রি করে ২৫০ টাকা পায় আর আমার ভাতিজা সব আম বিক্রি করে পেয়েছে ২৪০ টাকা।’ এটা সম্ভব হয়েছে ‘হরেদরে’ বা গড় করার কারণে। বশির মিয়া ৬০টি পাকা আম প্রতি জোড়া পাঁচ টাকা হিসাবে ১৫০ টাকায় আর ৬০টি কাঁচা আম প্রতি তিনটি ১০ টাকা হিসাবে ১০০ টাকায় অর্থাৎ মোট ২৫০ টাকায় সব আম বিক্রি করে। আমি যেহেতু হরেদরে বিক্রি করেছি, তাই ১২০টি আম (১২০ ÷ ৫ = ২৪×১০) = ২৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। বশির মিয়ার কাঁচা আম আর পাকা আম সমান সমান। কিন্তু, বিক্রির দাম সমান নয়। আমি গড় করাতে প্রথম দিকে পাঁচটি আমে দুইটি পাকা আর তিনটি কাঁচা আম দিতে পারলেও একসময় কাঁচা আম সব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পাকা আম অনেক থেকে যায়। তখন পাঁচটি পাকা আম ১০ টাকায় বিক্রি করেছি, অর্থাৎ আগের চেয়ে কম দামে! ফলে আমার মোট বিক্রির টাকা কমে গেছে। এই হচ্ছে গড়ের মাহাত্ম্য!
আরও একটি সমস্যার কথা ভাবা যায়। একবার ময়মনসিংহ গণিত উৎসবে যাওয়ার সময় আমরা হিসাব করে দেখলাম, যদি গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার হয়, তাহলে আমরা সেখানে পৌঁছাব সকাল নয়টায়। আর যদি গাড়ি আস্তে আস্তে অর্থাৎ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলে তাহলে পৌঁছাব বেলা ১১টায়। তো ঝটপট আমরা ভাবলাম ৩০ আর ২০-এর গড় অর্থাৎ ২৫ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চললে আমরা ১০টায় পৌঁছাব। তাই না?
মোটেই না!
কারণ, এখানে আমরা একটি জটিল হিসাব করছি। যাত্রার সময় নির্ভর করে পথের দূরত্বের ওপর। আমাদের যাত্রার স্থান থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব জানা থাকলে হিসাব করাটা সহজ হতো। কিন্তু এখন একটু ভিন্নভাবে করা দরকার। আমাদের গাড়ি ৩০ কিলোমিটার গতিতে বেলা ১১টা পর্যন্ত চললে আমরা ময়মনসিংহ ছাড়িয়ে আরও ৬০ কিলোমিটার চলে যেতাম। অন্যদিকে একই সময়ে ২০ কিলোমিটার বেগে চললে বেলা ১১টায় সময় আমরা ময়মনসিংহে থাকতাম। এর মানে ৩০ কিলোমিটার আর ২০ কিলোমিটার বেগে বেলা ১১টা পর্যন্ত চললে ব্যবধান হতো ৬০ কিলোমিটার। এখন ৩০ কিলোমিটার আর ২০ কিলোমিটার বেগে ঘণ্টার ব্যবধান হয় ৩০-২০ = ১০ কিলোমিটার।
সে ক্ষেত্রে ৬০ কিলোমিটার ব্যবধানের সময় লেগেছে ৬০ ÷ ১০ = ৬ ঘণ্টা!
অর্থাৎ ২০ কিলোমিটার বেগে ছয় ঘণ্টা চলাতেই ৬০ কিলোমিটার ব্যবধান হয়েছে। এই ছয় ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়া পথই ময়মনসিংহের দূরত্ব = ৬×২০ = ১২০ কিলোমিটার। এখন ১১টার বদলে যদি ১০টায় ময়মনসিংহে পৌঁছাতে চাই তাহলে এই ১২০ কিলোমিটার পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে পাঁচ ঘণ্টায়। সে ক্ষেত্রে গাড়ির গড়বেগ হতে হবে ১২০ ÷ ৫ = ২৪ কিলোমিটার!!
বোঝাই যাচ্ছে, গড়ের মাঠে গড়াগড়ি খেতে চাইলে সতর্ক থাকতে হবে নানা বিষয়ে।
এখন বের করার চেষ্টা করো—বাসা থেকে বৈশাখী মেলায় যাওয়ার সময় তোমার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার আর ফেরার পথে (তখন ক্লান্ত) তোমার গতি ছিল ঘণ্টায় আট কিলোমিটার।
আসা-যাওয়ায় তোমার গড় গতিবেগ কত?

গড়পণ্ডিতের ভরাডুবি
যেকোনো বিষয়ের গড় করতে সিদ্ধহস্ত গড়পণ্ডিত একবার এক খালের পাড়ে এসে দাঁড়ান। জানতে পারেন পাড়ের দিকে খালের গভীরতা দুই ফুট কিন্তু মধ্যে আট ফুট। তিনি হিসাব করে বের করলেন খালের গড় গভীরতা পাঁচ ফুট। নিজে যেহেতু ছয় ফুট লম্বা, তাই তিনি বুঝলেন এই খাল তিনি হেঁটে পার হতে পারবেন। এই ভেবে তিনি হাঁটতে শুরু করেন এবং মাঝখানে গিয়ে তাঁর সলিল সমাধি হয়!!



সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোকঅ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×