somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দিনবদলের গল্প-২

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরেকটা দিন বদলের ঘটনা ঘটেছে। বলা যায় দিনবদলের প্রতিযোগিতা। এবং অবশ্যই অশুভ। সে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অথবা সম্ভাব্য সুবিধাভূগী না হওয়ার পরও তার ছোঁয়া লেগেছে আমার, আমার প্রতিবেশীদের জীবনে। মানে আমাদেরও দিন বদল ঘটেছে। কিছুটা।

৬ এপ্রিল অফিসে যাইনি। শরীর খারাপ ছিল বলে। বাসায় অপেক্ষা করছি সংবাদপত্রের জন্য। অফিসে যাবার আগেই সংবাদপত্রের পাতায় একটু চোখ বুলিয়ে নেয়ার অভ্যাস। বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকতেই এটি প্রতি দিনের অবশ্যম্ভাবী কাজের অংশে পরিণত হয়েছে। আর বদল হয়নি। কিন্তু ৬ এপ্রিল সকাল দশটা বাজার পরও যখন সংবাদপত্রের দেখা নেই, সদা হাসিখুশী মুখের কিশোর ছেলেটির কোন হদিস নেই, যে কয়েক বছর ধরে আমাদের সংবাদপত্র দিয়ে যায়, রোজ রোজ, খুব সকালে, তার অপ্রত্যাশিত বিলম্ব দেখে নিচে নামি। জানতে পারি, আমরা একা নই, প্রতিবেশিদের বাসায়ও সংবাদপত্র আসেনি। কিছুক্ষণ আগে রাস্তায় অনেকগুলো সংবাদপত্র পোড়ানো হয়েছে সে সংবাদও কানে আসে। মনে মনে ভাবি, হয়তো কোন বিশেষ পত্রিকা কোন বিশেষ কারো সম্পর্কে সংবাদ ছেপেছে। সেজন্য তার লোকজন হয়তো পত্রিকা পোড়াচ্ছে। একটু পর শুনি, বিষেষ কোন পত্রিকা নয়, সব পত্রিকা মানে গোটা পত্রিকার বান্ডিলই পোড়ানো হয়েছে। তার মানে কি সব পত্রিকাই ঐ বিশেষ সংবাদটি ছেপেছে? সরকারী দল অথবা বিরুধী দলের কোন ক্ষমতাবান নেতা সম্পর্কে সংবাদ? না, ওসব কিছুই না। বান্ডিল ধরে সংবাদপত্র পোড়ানোর কারণ, বিশাল এলাকা জুড়ে সংবাদপত্র বিক্রির মাধ্যমে বিদ্যমান বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কব্জা করা। নিজ দখলে রাখা। মানে অন্যকে সরিয়ে নিজেদের দিনবদলের প্রচেষ্টা। বৈধভাবে নয়, গায়ের জোরে, রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগে। আর ক্ষমতার প্রয়োগ হয়েছে এলাকায় ছাত্র লীগ-যুব লীগ কর্মী হিসেবে পরিচিতদের সমর্থনে, প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে। এর ফলাফল আমার, আমাদের নিজেদেরও দিনবদল। এখন আর সকাল সকাল সে কিশোর ছেলেটি দরজায় কড়া নাড়ে না। একগাল হাসি হেসে ফেলে যায় না একগুচ্ছা তাজা সংবাদ। বরং নিজেই সংবাদ শিরোনাম হওয়ার আশংকায় লুকিয়ে থাকে। চুপিসারে আসে। সুযোগ পেলে। অনেক বেলা করে। আমাদেরও পত্রিকা পড়তে হয় হয় অফিসে না হয় অফিস থেকে ফিরে রাতে। আমাদের দিন বদল হয়ে তাজ সংবাদের বদলে এসেছে বাসি সংবাদ। জানি না, এ বাসি সংবাদ নিয়ে আমাদের আর কতদিন দিন যাপন করতে হয়।

আমাদের চলমান বাসি সংবাদ পড়ার জীবন থেকে সকালের তাজা সংবাদ এর সাবেক জীবনে ফিরে যাবার সম্ভাব্য দু’টি পথ দেখা যাচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে পুলিশের 'রাজনৈতিক পুলিশ' এর কথিত খোলস উপড়ে ফেলে মেরুদন্ডসম্পন্ন দায়িত্ববান পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এবং যারা প্রকাশ্যে দিনের বেলায় রাস্তায় দাাঁড়িয়ে, পত্রিকা কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। তাদের কোন দলের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে না দেখে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা। একই সাথে যারা এতদিন ধরে সংবাদপত্র বিক্রির ব্যবসা করছে তাদের নির্বিঘœ জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা বিধান করা। কিন্তু এ সম্ভবনা খুবই কম। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে পুলিশের স্বাধীন ভূমিকা পালন যে এখন পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে না সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্বিতীয় পথটি হচ্ছে ছাত্র লীগ-যুব লীগের যে ক্ষুদ্র গ্র“পটি নিজস্ব দিনবদলের প্রক্রিয়া হিসেবে পত্রিকা বিক্রির বাণিজ্য কব্জায় রাখতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে, তাদের অবৈধ ক্ষমতার কাছে, রাজনৈতিক পেশীশক্তির কাছে প্রতিপক্ষের নতি শিকার। নিজস্ব ব্যবসা গুটিয়ে ফিরে যাওয়া। এ ফিরে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটলে এতদিন ধরে যিনি পত্রিকা বিক্রির ব্যবসা করছেন তার পুঁজির কী হবে জানি না। তবে সারাক্ষণ হাসিখুশী থাকা কিশোরটি, যে প্রতিদিন আমাদের পত্রিকা দিয়ে যায়, যে মুখটি অনেক দিন ধরে আমাদের প্রিয় মুখে পরিণত হয়েছে, সে কিশোরটির দিনবদল ঘটবে। নেতিবাচক গতিশীলতায়। জীবিকার ছোট্র সুযোগটিও তার হাতছাড়া হবে। যে কিশোরটি এখন পত্রিকা নিয়ে এ বাসা থেকে ও বাসায় ঘুরার কথা নয়, যার থাকার কথা বিদ্যালয়ে, পড়ার টেবিলে, যার থাকার কথা বাবা-মায়ের ভালবাসার বন্ধনে, শুধু রাষ্ট্র ও রাজনীতির ব্যর্থতার জন্য, অন্যয্য আর্থ-সামাজিক কাঠামোর হাতে ক্রমাগত জন্ম নেয়া দারিদ্রের কবলে বাধ্য হয়ে কেবল বেঁচে থাকার লড়াই-সংগ্রামে ব্যস্ত থাকা কিশোটির সে সংগ্রামের পথটিও বন্ধ হয়ে যাবে। আমি জানি না, সারা মাস তার কত পথ হাটতে হয়। কত দালানের কত তলা সিঁড়ি বাইতে হয় আর নামতে হয়। মাস শেষে যে বেতন পায় তা দিয়ে কতজনের সংসার চালাতে হয়? এতসব প্রশ্নের উত্তর না জেনেও বলা যায় সদা হাস্যোজ্জল এ কিশোরটির জীবন অনেক নাজুক। সে নাজুকতায় হয়তো যোগ হতে যাচ্ছে একটি বাড়তি মাত্রা। একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দিনবদলের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে। দু:খজনক হচ্ছে এ গুটিকয় অপরাধী তাদের অপরাধ সংঘটিত করছে সরকারি দলের পরিচয়ে, প্রশাসন ও পুলিশের নাকের ডগায়, প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায়, কখনও কখনও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। এ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দিনবদলের গল্পটা যদি থামানো না যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রত্যাশিত দিনবদল যদি সূচনা না করা যায়, তাহলে এ সংখ্যালগিষ্ঠের পাপের দায় এবং ফলাফল প্রধানত ক্ষমতাসীন দলকেই বইতে হবে। রাষ্ট্র যে চিরস্থায়ী বন্দবস্ত নেয়া যায় না, তার প্রমাণ পেয়েছে সাবেক জোট সরকার। এসব প্রমাণ ইতিহাসের চাকা বারবার হাজির করে। আর ইতিহাসের চাকা সচল হতে কতক্ষণ? বড় জোর আরেকটি নির্বাচন! যদি সে সত্যটা উপলব্দী করেই স্থানীয় ছাত্র লীগ-যুব লীগ এ রকম দিন বদলে নেমে পড়ে, আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এগুলো বন্ধে ব্যর্থতার খুঁটি একটার পর একটা খাড়া করতে থাকে, তাহলে অপ্রিয় কথাটা বলতেই হয় যে সময় তার নিয়মেই জবাব দিবে। আর আমরাও দিনবদলের প্রক্রিয়ায় হয়তো আরেকটু নিচে নামবো। আমাদের অবস্থা আরেকটু খারাপ হবে। এ রকম খারাপের দিকে ধাবিত হওয়াই হয়তো আমাদের দিনবদল।
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×