অর্থাৎ "নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম !............." (সুরাঃ আল- ইমরান, আয়াত-19)
'দ্বীন ও ইসলাম' শব্দের ব্যাখ্যা ঃ আরবী ভাষায় 'দ্বীন' শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে ! তন্মধ্যে এক অর্থ রীতি ও পদ্ধতি ! কোরআনের পরিভাষায় 'দ্বীন' সেসব মূলনীতি ও বিবিধ-বিধানকে বলা হয় যা হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সব পয়গম্বরদের মধ্যে সম্ভাবেই বিদ্যমান রয়েছে ! 'শরীয়ত' অথবা 'মিনহাজ' শব্দটি পরবর্তী পরিভাষা ! 'মাযহাব' শব্দটি 'দ্বীনের' বিভিন্ন শাখার বিধি-বিধান অর্থে ব্যবহৃত হয়, যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে ! কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে-
অর্থাৎ "আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য সে দ্বীনই প্রবর্তন করেছেন, যার নির্দেশ ইতিপূর্বে নূহ ও অন্যান্য পয়গম্বরকে দেওয়া হয়েছিল !"
এতে বোঝা যায় সব পয়গম্বরদের 'দ্বীন' এক ও অভিন্ন ছিল !
আমরা সকলেই জানি 'ইসলাম' শব্দের অর্থ শান্তি এবং মুসলমান বা মুসলিম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণকারী ! অথচ কোরয়ানপাকের এই আয়াতে দেখা যায়- ("ফা ইন হাজ্যুকা ফাকুল আসলামতু ওয়াজহিয়া লিল্লাহি ওয়া মানিত্তাবায়ানি, ওয়াকুলিল্লাযীনা উতুল কিতাবা ওয়াল উম্মিইনাআ আসলামতুম, ফা ইন আসলামু ফা কাদিহ তাদাওয়া ইন্ তাওয়াল্লাও ফাইন্নামা আলাইকাল বালাগুল অল্লাহু বাছিরুম বিল ইবাদী") অর্থ হচ্ছে- 'তাঁরা যদি তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও "আমি এবং আমার অনুসারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করেছি" ! আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের বলে দাও তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছো ? তখন তারা যদি আত্মসমর্পণ করে, তবে সরলপথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌঁছে দেয়া ! আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা' ! (সুরাঃ আল-ইমরান, আয়াত-20)
তাই, 'ইসলাম' শব্দের প্রকৃত অর্থ আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা এবং তাঁর অনুগত হওয়া ! এ অর্থের দিক দিয়ে প্রত্যেক পয়গম্বরদের আমলে যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাঁদের আনীত বিধি-বিধানের আনুগত্য করেছে, তারা সবাই মুসলমান ও মুসলিম নামে অবিহিত হওয়ার যোগ্য ছিল এবং তাদের ধর্মও ছিল ইসলাম !
এ অর্থের দিকে লক্ষ্য করেই হযরত নূহ (আঃ) বলেন- "ওয়া উমেরুতু আন আকাওনা মিনাল মুসলিমিনা" অর্থাৎ 'আমি 'মুসলিম' হওয়ার জন্যে আদিষ্ট হয়েছি' - (সুরাঃ ইউনুছ) ! এ কারণেই হযরত ইবরাহীম (আঃ) নিজেকে ও নিজ উম্মতকে 'উম্মতে মুসলিমা' বলেছিলেন: "রব্বানা ওয়ায আল্না মুসলিমাইনি লাকা ওয়ামিন যুররিইয়াতিনা উম্মাতাম মুসলীমাতাল্লাকা" ! হযরত ঈসা (আঃ) এর সহচরগণ এ অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখেই সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলো : "ওয়াশহাদ'বিয়াননা মুসলিমুনা" অর্থাৎ 'সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম" !
মোটকথা এই যে, প্রত্যেক পয়গম্বরের আমলে তাঁর আনীত 'দ্বীন'ই ছিল দ্বীন'এ ইসলাম এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ! পরে এগুলো একের পর এক রোহিত হয়েছে এবং পরিশেষে দ্বীন'এ মুহাম্মদীই 'ইসলাম' নামে অভিহিত হয়েছে- যা কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম বা প্রতিষ্ঠিত থাকবে ! যেহেতু পূর্ববর্তী আয়াতগুলোর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, আল কোরআনই সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ এবং পূর্ববর্তী সকল ঐশী গ্রন্থের সারমর্ম সমেত বিস্তৃত গ্রন্থ !
দ্বীন ইসলামই মুক্তির বাহন : আজকাল ইসলামের উদারতার নামে কুফর ও ইসলামকে এক করে বলা হয় সৎকর্ম সম্পাদন করলে ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে যে কোনো ধর্মাবলম্বীই মুক্তি পাবে- সে ইহুদী, খ্রিস্টান, মূর্তিপূজারী যা-ই হোক ! প্রকৃত প্রস্তাবে এটা ইসলামকে বিধ্বস্তকারী মতবাদ ! কারন, এর সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, ইসলামের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই! এটা একটা কাল্পনিক বিষয়, যা কুফরের পোশাকেও সুন্দর মানায় ! কোরআনের অসংখ্য আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, আলো এবং অন্ধকার যেমন এক হতে পারেনা, তদ্রুপ অবাধ্যতা এবং আনুগত্য উভয়টি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নয় ! যে ব্যক্তি ইসলামের কোনো একটি মূলনীতি অস্বীকার করে, সে নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর পয়গম্বরদের বিদ্রোহী শত্রু, প্রচলিত অর্থে সৎকর্ম বা নেক কর্ম ও প্রথাগত চরিত্রে সে যতই সুন্দর হোক না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না ! কোরআনে এমন লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- ('ফালা নুকিমু লাহুম ইয়াউমাল কিয়ামাতি ওয়াজনান' অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আমি তাদের কোনো আমল ওজন করবো না !
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭